ঠিক কোন সময়ে হুমায়ূনের বই পড়া শুরু করেছিলাম মনে নেই। খুব অল্প বয়সেই হবে। তবে প্রথম যে বইটি পড়েছিলাম সেটির নাম মনে আছে। বইয়ের নাম ‘রূপার পালঙ্ক’। হুমায়ূন যে চন্দ্রাহত প্রথম বইটিই আমাকে তা বুঝিয়ে দেয়। একটি শিশুর ছোট্ট জগতে চাঁদের মায়াবী আলোর পরশ দিয়ে যায় প্রিয় হুমায়ূন।
এরপর পড়েছিলাম সম্ভবত ‘এই মেঘ রৌদ্র ছায়া’। মুগ্ধতার পারদ এক্সপোনেন্সিয়ালি বাড়তে শুরু করে তখন থেকেই। তাপর একে একে পড়েছি ‘উড়ালপঙ্খি’, ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’, ‘অনিল বাগচীর একদিন’ এবং আরো অনেক। কোনটা কিনে,কোনটা বন্ধুর কাছ থেকে ধার করে। যদিও ধার করা বই ফেরত দিয়েছি কমই! কোথায় যেন শুনেছি একমাত্র এই অপরাধটাই মার্জনীয়!
হঠাৎ স্কুল থেকে ফেরার পথে এক বইয়ের দোকানে দেখলাম ‘জোছনা ও জননীর গল্প’ । কত শুনেছি বইটার নাম। কিন্তু বইটার দামটাও যে আকাশছোঁয়া (স্কুল পড়ুয়া ছাত্রের জন্য তো অবশ্যই)। খুব মন খারাপ হয়ে গেল বটা না কিনতে পেরে!
মনে আছে পরের বছর বৃত্তির টাকা পেয়েই আমি এই বইটি কিনেছিলাম! ফলস্বরূপ বকুনিও খেয়েছিলাম অনেক।যাই হোক এই বইটি পড়েই আমি বন্ধুদের মাঝে ঘোষণা করেছিলাম,হুমায়ূন আহমেদ বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ লেখক! যাদিও আমার বিদ্যা ততদিনেও সুনীল-সমরেশেও পৌছয়নি। রবীন্দ্র-শরৎ-মানিক তো দূরের কথা!মোল্লার দৌড় মসজিদ পর্যন্ত আর কি!
অনেককে বলতে শুনেছি হুমায়ূনের ‘জোছনা ও জননীর গল্প’ নাকি প্রকৃত অর্থে মুক্তিযুদ্ধের কোন উপন্যাসই হয়নি। কিন্তু সত্যি কথা বলি,এত সহজে কোন লেখকই আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময়টাকে তুলে ধরতে পারেনি। অন্তত মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানার শুরুটা এতটাই সহজ ও সাবলীল হওয়া উচিত!
‘হিমু’ চরিত্রের কথা আলাদা ভাবেই বলতে হয়।এই চরিত্রের সাথে অবশ্য আমার পরিচয় অনেক পরে।আমি তখন ষোল বছরের তরূণ! মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যেই শেষ করে ফেললাম তখন পর্যন্ত রচিত সবগুলো ‘হিমু’। হিমু হওয়ার বাসনায় একদিন রাত তিনটায় সবাইকে না জানিয়ে একা একা ঘুরেছি ঢাকার রাজপথ।হঠাৎ করে নিজেকে কবরস্থানে আবিষ্কার করি কোন এক সময়! হিমু পড়েছে কিন্তু হিমুর মত ক্রে জীবনকে দেখতে চায়নি এমন তরুণ বোধহয় খুব কমই আছে!
সবশেষে বলব ‘মিসির আলি’র কথা। এই একটি লোক আমার চিন্তা চেতনার জগত সত্যিকার অর্থে ওলট-পালট করে দিয়ছে। যুক্তি দিয়ে যেকোন সমস্যা ভাবতে শিখিয়েছে। প্রকৃত অর্থে আমার যুক্তিবোধ তৈরি করে দিয়েছে এই ‘মিসির আলি’ বেশধারী ‘হুমায়ূন আহমেদ’। এর চেয়ে ভাল শিক্ষক আর কজন হতে পারে বলুন!
আসলেই একজন সত্যিকারের শিক্ষক হুমায়ূন আহমেদ যিনি তার জাদুকরী লেখার মাধ্যমে তার অগনিত ছাত্র(ভক্ত)-কে জীবন নিয়ে শিক্ষা দিয়েছেন প্রতিনিয়ত।
সর্বশেষে হুমায়ূন আহমেদের যেসব উপন্যাস আমাকে অনেক বেশি আলোড়িত করেছে তার একটি তালিকা দিলাম।
১.জোছনা ও জননীর গল্প
২.কৃষ্ণপক্ষ
৩.আকাশ জোড়া মেখ
৪.শঙ্ঘনীল কারাগার
৫.নন্দিত নরকে
৬.বাদশাহ নামদার
৭.কবি
৮.হিমুর দ্বিতীয় প্রহর
৯.হিমু
১০.বৃহন্নলা(মিসির আলি)
১১.দেবী(মিসির আলি)
১২.আগুনের পরশমণি
এবং আরো অনেক অনেক!
এই মহামানব আজ এই পৃথিবী ছাড়িয়ে অন্য এক জগতের বাসিন্দা। সে কিন জানে এই পৃথিবী তাকে খুব বেশি মিস করছে।
~~আমার প্রকাশিত প্রথম পোস্টটি এই মহামানবকে উৎসর্গ করলাম~~
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জুলাই, ২০১২ রাত ১২:৪০