সিলেটের ইসকন মন্দিরে হামলার একটি ভিডিও ফুটেজ দেখলাম যেখানে দেখা গেল ১৫ থেকে২০ বছর বয়সী ১০/১৫ টি ছেলে মন্দিরের দেয়ালের বাইরে থেকে ভেতরে ইট পাটকেল ছুঁড়ছে। মন্দিরের সামনের তোরণের কাপড় ছিঁড়ছে। কাজটি যারা করেছে তারা জুম্মার নামাজটাও ঠিকমত আদায় করে কিনা সন্দেহ আছে অথচ তাদের বলা হচ্ছে মুসল্লী। এখানে মুসল্লী বলতে কাদেরকে বোঝানো হল সেটা বোধগম্য নয়। আমাদের মনে রাখা উচিৎ এই মুহুর্তে রাষ্ট্র যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে তারা নিজেদেরকে যতই ইসলামিক বলে প্রচার করুক না কেন রাষ্ট্র এবং সাধারন জনগন কিন্তু তাদেরকে দ্যার্থহিনভাবে স্রেফ জঙ্গি বলেই নির্দেশ করে।
হামলাটি কিন্তু কোণ ইমামের নেতৃত্বে বা বয়োজ্যাষ্ঠ মুসল্লিদের নেতৃত্বে হয় নি এমন কাউকে এই হামলায় অংশ নিতেও দেখা যায় নি। এখানে যারা সরাসরি হামলা করেছে তারা বড়জোর শুক্রবারের জুম্মার নামাজি। ইসলাম ধর্মের সাথে এদের সম্বন্ধ যদি কিছু থেকে থাকে তা কেবলই জন্মসূত্রে। এর বেশী কিছু বলে মনে হল না। তাদের পোশাক তাদের বয়স তাদের আচরণ সহজেই তাদের অবস্থার নির্দেশ করছে। এটা যে স্রেফ এক ধরনের উসকানি তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এ তো গেল একটি দিক অন্যদিকটি দেখুন।
শুক্রবারের জুম্মার নামাজ আদায়ের প্রায় এক ঘণ্টা আগে থেকে মসজিদে ইমাম সাহেবের বয়ান এবং খুতবা দান একটি প্রচলিত রিতি। যা জানেন না এমন কেউ নেই। এমনকি ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যেও এটা জানেন না এমন কেউ আছেন বলে মনে হচ্ছে না। অন্তত বাংলা দেশের প্রেক্ষাপটে থাকার কথা নয়।
অথচ "স্থানীয় জনতা এবং প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার জুম্মার নামাজের সময় মধু শহীদ জামে মসজিদের বিপরীতে ইসকন মন্দিরে ‘ভক্ত বেদান্ত ন্যাশনাল স্টুডেন্টস কম্পিটিশন’ এর বিভাগীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতা চলছিল। মন্দিরের ভেতর থেকে তখন উচ্চস্বরে গান-বাজনা ও বাদ্যযন্ত্রের আওয়াজ আসছিল। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মুসল্লিরা জুম্মার নামাজের পর সীমানা প্রাচীরের বাইরে থেকে ইসকন মন্দির লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করেন'' kalerkantho
প্রশ্ন হল মন্দিরটি মসজিদের বিপরীতে হওয়া স্বত্বেও মন্দির কর্তৃপক্ষ কেন ঐ সময়ে তাদের অনুষ্ঠান বন্ধ রাখলেন না?
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, এ দেশে প্রতিবছর মহা সমারোহে কয়েকদিন ব্যাপি দুর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বাদ্যযন্ত্র, গান-বাজনা সবই বাজানো হয়। কিন্তু প্রতি ওয়াক্ত আযান এবং নামাজের সময় গান-বাজনা বন্ধ রাখা হয়। এটা যে সরকারী নির্দেশনার ফলে করা হয় তা কিন্তু না। পূজা উদযাপন কমিটি তাদের স্ব স্ব পূজা মণ্ডপে স্ব উদ্যোগেই কাজটি করে থাকেন। আর এটাই এ দেশে আবহমান কাল ধরে হয়ে আসছে। সিলেটের ইসকন মন্দিরে কেন এর ব্যত্যয় ঘটল সেটা অবশ্যই তদন্তের দাবী রাখে।
মোট কথা হল, ইসকন মন্দিরের হামলাটি স্পষ্টতই দুই পক্ষ থেকেই একটি উসকানি মূলক আচরণের বহিঃপ্রকাশ। এই মুহূর্তে এমন একটি ঘটনাকে হালকা ভাবে নেয়ার কোণ সুযোগ নেই। সেই সাথে এঁকে মুসল্লিদের হামলা বলা হলেও ভিডিও ফুটেজ কিন্তু তেমনটি বলছে না। ছবিতে যাদের দেখা গেছে তাদের আদ্যোপান্ত পর্যালোচনায় মুসল্লি ছাপিয়ে ভিন্ন কোণ পরিচয় বেড়িয়ে আসলেও অবাক হব না। তদন্তকারী সংস্থা নিশ্চয়ই এর পেছনের সত্যটা বের করে নিয়ে আসবেন আমরা সেটাই কামনা করি।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ২:১৭