somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যাবজ্জীবন ও একটি গল্প

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৮:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


পুনরুত্থান দিবসে শেষ বিচার চলছে। ফেরেশতারা এক এক করে ডাকছেন মানুষজনকে আর জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। সমস্ত জবানবন্দী ও সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে সৃষ্টিকর্তা রায় ঘোষণা করছেন, কে কে যাবে স্বর্গে আর কে কে যাবে নরকে। কেবল বাংলাদেশিদের জন্য এ নিয়মের ব্যতিক্রম। সৃষ্টিকর্তা ফেরেশতাদের নির্দেশ দিলেন, জিজ্ঞাসাবাদ করে অহেতুক সময় নষ্ট করার কোন প্রয়োজন নেই, কারণ বাংলাদেশিদের স্বর্গে যাবার কোন যোগ্যতা নেই, তারা প্রত্যেকেই নরকে যাচ্ছে। স্বর্গে যাবার যোগ্যতা তারা প্রমাণ করতে পারবে না, তাই সাক্ষ্য গ্রহণের দরকার নেই। ফেরেশতারা অবাক হয়ে এর কারণ জানতে চাইলেন স্রষ্টার কাছে। স্রষ্টা বললেন, “বাংলাদেশিরা এমন এক জাতি যারা হাসতে হাসতে তাদের পিতাকে-ভাইকে হত্যা করতে পারে, মাকে-বোনকে অন্যের লালসার বলি করতে পারে। খুন, ধর্ষণ, লুঠতরাজ, অগ্নিসংযোগ, বিশ্বাসঘাতকতা হেন কোন অপরাধ নাই যা তারা নির্দ্বিধায় করতে পারে না।" ফেরেশতারা আবারও অবাক হয়ে বললেন, “প্রভু, এসব অপরাধ ত অন্য জাতিরাও করেছে অনেক সময়।' প্রভু মৃদু হেসে বললেন, “ হ্যা, অন্যেরাও করে। কিন্তু একটি জাতির মধ্যে যারা এসব অন্যায় করে তাদেরকে মৃত্যুদণ্ডের মত কঠিন শাস্তি দেয় জাতির অন্য ভালো মানুষেরা। আর বাংলাদেশিরা পাপীদের ত মৃত্যুদণ্ড দেয়ই না বরং যাবজ্জীবন দিয়ে নিজেদের পাপের ঘড়া আরও পরিপূর্ণ করে তোলে। কেননা যাবজ্জীবন কোন শাস্তি নয় বরং সহজ সরল আমজনতার কষ্টার্জিত অর্থ থেকে আগত রাষ্ট্রীয় আয়ে অপরাধীকে আরাম আয়েশের সাথে দিনের পর দিন বসিয়ে বসিয়ে খাওয়ানো। যেখানে সাধারণ মানুষকে পেটের ভাত জোটাতে মুখে রক্ত তুলতে হয়, রোগে ভুগে চিকিৎসাভাবে মারা যায়, পিকেটারদের মার খেয়ে শেয়াল-কুকুরের মত মরে পড়ে থাকে রাস্তায়, প্রচন্ড শীত কিংবা দারুণ বর্ষায় খোলা আকাশের নিচে দিন কাটে নিরাপত্তাহীনতায়, সেখানে এসব পাপীরা জেলে গিয়ে আরাম করে পেট পুরে ভালো খাবার খায়, মাঝে মাঝে হেলথ চেকআপ করায়, পত্রিকা বা বিভিন্ন বই পড়ে অথবা টিভি দেখে আরামে দিন কাটায়, শীতেরও কষ্ট নাই, বর্ষারও কষ্ট নাই, গরমেও আরাম, জেলের ভেতর না আছে পিকেটারদের মার, না আছে নিরাপত্তাহীনতা। এতসবের জন্য রোজগারের কোন চিন্তাও নাই, টাকা দেবে ত অই সাধারণ মানুষগুলোই। দুনিয়াতেই এরা স্বর্গের সুখ ভোগ করে ফেলেছে, এখন আর এদের আবারও স্বর্গে জায়গা দেবার দরকার নাই,অপচয়।" ফেরেশতারা আবার প্রশ্ন করল, “কিন্তু প্রভু, এই সাধারণ মানুষরা?” প্রভুর উত্তর, “ওরাও স্বর্গের অধিকার হারিয়েছে কারণ অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে তব ঘৃণা তারে যেন তৃণসম দহে। আমি ত ওদের পৃথিবীতে মানুষ হিসেবে পাঠিয়েছিলাম, সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব। বুদ্ধি দিয়েছিলাম চিন্তার জন্য, হৃদয় দিয়েছিলাম উপলব্ধির জন্য, ভাষা দিয়েছিলাম প্রতিবাদের জন্য, শক্তি দিয়েছিলাম পাপ প্রতিরোধের জন্য। আমি ত ওদেরকে অবলা মহেশ করে পৃথিবীতে পাঠাই নি যে কেউ ওদের বেঁধে রাখলো আর ওরা দাঁড়িয়ে থাকলো, কেউ বেঁচে দিলো আর বিক্রি হয়ে গেল, কেউ গালি দিল আর মুখ বুজে সইল, কেউ আঘাত করল আর ঠাস করে পড়ে মরে গেল।" ফেরেশতারা তখন সব বাংলাদেশিকে একটা লাইনে দাঁড় করিয়ে কোন জিজ্ঞাসাবাদ ছাড়াই নরকে ঢুকিয়ে দিল।

তাই আসুন, আমরা আমজনতারা প্রভুর কাছে প্রার্থনা করি, “হে প্রভু, তুমি আমাদের সব কিছু মুখ বুজে সইবার ধৈর্য না দিয়ে বরং অন্যায়ের প্রতিবাদ-প্রতিরোধের সাহস, শক্তি ও আত্মসম্মানবোধ দাও।" দাওয়া ছাড়া দোয়ায় কাজ হয়না, তাই এবার সবাই আসুন দোয়া শেষে দাওয়ার চেষ্টায় লেগে যাই।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আগে বুঝতে হবে রিসেট বাটন কি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১৭ ই অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১০:০৩

আগে বুঝতে হবে রিসেট বাটন কি......

বেশ কিছুদিন যাবত ডক্টর ইউনুস সাহেব এক সাক্ষাৎকারে "রিসেট বাটন" শব্দদ্বয় বলেছিলেন- যা নিয়ে নেটিজেনদের ম্যাতকার করতে করতে মস্তিষ্ক এবং গলায় রক্তক্ষরণ হচ্ছে। আমরা যারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধু ভগবান না হয় ইশ্বর!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১০:৫২



মানুষ বঙ্গবন্ধুর ওপর এতোই ত্যক্তবিরক্ত যে আজকাল অনেকেই অনেক কথা বলছে বা বলার সাহস পাচ্ছে। এর জন্য আম্লিগ ও হাসিনাই দায়ী। যেমন- বঙ্গবন্ধু কলেজ, বঙ্গবন্ধু স্কুল (হাজারের কাছাকাছি),... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ্‌ সাহেবের ডায়রি ।। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ১:২৮





বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে গত জুলাই-আগস্টের গণহত্যার মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজার নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মতিয়া চৌধুরীর মৃত্যু সংবাদ শুনে কোন গালিটা আপনার মুখে এসেছিলো?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৩:৩৬



"খবিশ মহিলা", গালিটি বা তার কাছাকাছি কিছু?

মতিয়া চৌধুরী (১৯৪২-২০২৪) ছিলেন একজন মুক্তিযোদ্ধা ও সৎ রাজনীতিবিদ। গত ৫৩ বছরে বাংলাদেশে তিনিই ছিলেন একমাত্র নারী মুক্তিযোদ্ধা ও সবচেয়ে নিবেদিত-প্রাণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্বে চরম দারিদ্র্যে বাস করা প্রায় অর্ধেক মানুষই ভারতের

লিখেছেন সরকার পায়েল, ১৭ ই অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৮


বিশ্বের ১১০ কোটি মানুষ দারিদ্রে দিন কাটাচ্ছে। তাদের প্রায় অর্ধেকই যুদ্ধ-সংঘাত লেগে থাকা দেশের বাসিন্দা। জাতিসংঘের উন্নয়ন সংস্থা ইউএনডিপির এক গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমন তথ্য।


ইউএনডিপির বরাতে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×