somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভারতীয় সিরিয়াল ও বাংলাদেশি নারীরা

২৪ শে আগস্ট, ২০১২ রাত ১০:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হলে টিভি রুমে ঢোকা যায় না সিরিয়ালের যন্ত্রণায়। বাসায়ও মোটামুটি একই অবস্থা। একই জিনিস বার বার দেখা হচ্ছে, দু মিনিটের ঘটনা দু দিন ধরে দেখাচ্ছে। বিচিত্র ও উদ্ভট সব কাহিনী আর অদ্ভুত সাজপোশাক।

আরও দুর্ভাগ্যজনক যে, আমাদের মেয়েরা শুধুমাত্র বিনোদনের জন্যই সিরিয়াল দেখে ক্ষান্ত নয়। তারা একে অন্তরে ও মস্তিষ্কে ধারণ করছে। বাস্তব জীবনের যেকোনো ঘটনায় তারা সিরিয়ালকে টেনে নিয়ে আসছে, সিরিয়ালের চরিত্রদের অন্ধের মত অনুকরণ করছে। মেয়েরা আড্ডার আসরে সিরিয়ালের চরিত্রদের নিয়ে এমনভাবে কথা বলে, মনে হয় যেন এরা বাস্তবের জীবন্ত চরিত্র। আমাদের মেয়েরা সাজপোশাকে ত সিরিয়ালের চরিত্রদের অন্ধ অনুকরণ করেই, তাদের চিন্তা-চেতনা পর্যন্ত অক্টোপাসের মত আষ্টেপৃষ্টে বেঁধে রেখেছে সিরিয়াল।

এসব নিয়ে কথা বললে মেয়েরা রেগে গিয়ে জবাব দেয়, সেকেলে হয়ে বসে থাকা কোন কাজের কথা নয়, আধুনিক হতে হলে কসমোপলিটান হতে হবে, বিশ্বের সাথে তাল মিলাতে হবে। গোঁড়া হয়ে নিজের সংস্কৃতি নিয়ে পড়ে থাকলেই চলবে না, অন্যের সংস্কৃতি থেকে উদ্বুদ্ধ হতে হবে। ভারতীয় মেয়েরা কত স্মার্ট, তাদের অনুকরণে ত সমস্যা হওয়া উচিত নয়।

মেনে নিচ্ছি এসব যুক্তি। আসলেই আমাদের আধুনিক, কসমোপলিটান ও স্মার্ট হওয়া খুব দরকার। কিন্তু আধুনিকতা কি সিরিয়ালের উদ্ভট কাহিনী নিয়ে মাথা ঘামানো? স্মার্টনেস কি কেবল অদ্ভুত সাজপোশাকে? কসমোপলিটান হওয়া মানে কি বাস্তবের ঘটনাগুলোকে সিরিয়ালের মত করে চিন্তা করে জীবনটাকে সমস্যাসঙ্কুল করে তোলা?

অনুকরণ তখনই সুফল বয়ে আনে যখন সেটা ইতিবাচক হয়। নেতিবাচক অনুকরণে কি উপকারিতা থাকতে পারে তা আমার বোধগম্য নয়। ভারতীয় মেয়েদের একান্তই যদি অনুকরণ করতেই হয়, তাহলে সত্যিকারের আধুনিক ও সফল নারীদের কেন আমরা অনুকরণ করছি না? অনুকরণ কেন শুধুমাত্র শোবিজ নারীদের প্রতি? আজকে ভারতীয় মেয়েরা শিক্ষায়, গবেষণায়, সমাজ সেবায়, খেলাধুলায়, লেখনীতে, বিজ্ঞান চর্চায় কত এগিয়ে গেছে, আমরা কেন এসব দেখে শিখছি না?

আজ থেকে আরও নয় বছর আগে যখন কল্পনা চাওলারা মহাকাশ গবেষণায় প্রাণ দিয়েছেন, তখন আজও আমরা আত্মার মরণ দেখছি অজ্ঞানতা ও কুসংস্কার বিশ্বাসে। ভারতীয় মেয়েরা আজ যখন অলিম্পিক থেকে গলায় পদক ঝুলিয়ে বিজয়ীর বেশে দেশে ফিরছেন, আমরা তখন গলায় মানানসই অলঙ্কার খুঁজতেই বেশি ব্যস্ত। ভারতীয় মেয়েরা যখন বিজ্ঞানের জটিল সব সমস্যা সমাধানে মাথা খাটাচ্ছে, পৃথিবীব্যাপী বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে, আমরা তখন হিংসা, পরচর্চা, পরনিন্দা, সন্দেহ দিয়ে ভরপুর কুটিল সব সমস্যা তৈরিতে মাথা খাটাচ্ছি, নিজেরাই শুধু অশান্তিতে ভুগছি না, অন্যদেরও অস্থিরতায় ফেলে রাখছি। নিজেরা এগোনোর চিন্তা ত করছিই না, উলটো কেউ এগোতে চাইলে তার পথে কাঁটা ছড়াতে চেষ্টা করছি। এর নাম কি আধুনিকতা? অনুকরণ যদি করতেই হয় তবে ভালো গুণগুলোকে নয় কেন? রূপচর্চার পিছনে ঘন্টার পর ঘন্টা সময় ব্যয় না করে কিছু সময় কি মেধাচর্চায় কাজে লাগানো যায় না?

তাছাড়া আধুনিক হবার জন্য ভারতীয় নারীদেরই অনুকরণ করাটা কি খুবই জরুরী? ইলা মিত্র, বেগম রোকেয়া, জাহানারা ইমাম, সুফিয়া কামালরা কি আমাদের সামনে নেই? লাখ লাখ বীরাঙ্গনারা যখন আমাদের মা, তখন আমাদের আত্মসম্মানবোধ কি আরও একটু বেশি হওয়া উচিত নয়? অন্যের তৈরি বিচিত্র কাহিনীর পিছনে না ছুটে আমরা কি পারি না নিজেরাই এক একটি বিজয় কাহিনীর সূচনা করতে? আমরা ত এমন সব সাহসী মানুষের উত্তরসূরি যারা মাত্র নয় মাসে এক অলৌকিক মহাকাব্যের সৃষ্টি করেছিলেন। তাই ত আমাদের মাঝেই আছে নিশাত কিংবা ওয়াসফিয়াদের মত মেয়েরা যাদের নিয়ে আমরা গর্ব করতে পারি। আমরা বিশ্বাস করতেই পারি, একটু চেষ্টা করলে আমরা বাংলাদেশের নারীরা এভারেস্টের চূড়া ছুঁয়ে দিতে পারি যার যার নিজের ক্ষেত্র থেকে।
৬টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩২



"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমিত্ব বিসর্জন

লিখেছেন আজব লিংকন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৪৮



আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।

"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×