বাংলা ভাষাভাষী মানুষ হওয়া স্বত্বেও আমাদের সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হলে ইংরেজিটা শেখা দরকার। শুধু শেখা দরকার না, বেশ ভালোভাবে শেখা দরকার। আর এই শিখতে গিয়ে সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা আমরা খাই Vocabulary অংশে।
আমাদের নিজেদের বাংলা ভাষার সব শব্দ যে আমরা জানি সেটা কি ঠিক? নিজেকে প্রশ্ন করুন তো। উত্তরটা হ্যাঁ হলে এখুনি এই পোস্ট পড়া বন্ধ করে বঙ্কিমের “কপালকুণ্ডলা” কিংবা “দুর্গেশনন্দিনী” পড়তে বসুন; নিদেনপক্ষে “দেবী চৌধুরানী”। যদি বুঝতে পারেন সবটুকু, তাহলে ইংরেজি Vocabulary নিয়েও আপনার কোন সমস্যা থাকার কথা নয়।
আর উত্তরটা না হলে পড়তে থাকুন শেষ অব্দি। দেখা যাক কতদূর কি করা যায়।
Vocabulary গড়ে উঠতে সময় লাগে। “Come”- শব্দটা আপনার কাছে পরিচিত। অর্থ বলতে বললে কিংবা বাক্যরচনা করতে বললে গড়গড় করে বলে দেবেন। কারণ কি? কখনও ভেবেছেন? জানি ভাবেননি। বলি তবে, শুনুন।
এই “Come” আপনি জীবনে বহু জায়গায় পড়েছেন। বহুবার এটা ব্যবহার করেছেন। কিন্তু “Bordeaux” শব্দটা? কখনও শুনেছেন? ব্যবহার করেছেন? পড়েছেন? ৯৮% মানুষের জানার কথা না। কারণ তাদের কখনও ফ্রান্স যেতে হয়নি। আবার সেখানকার মদ নিয়ে গবেষণাও করতে হয়নি। বোডৌ (উচ্চারণ এটাই হবে) ফ্রান্সের বোডৌ প্রদেশের এক প্রকারের উচ্চশ্রেণীর মদ। তাহলে আপনি কিভাবে পারবেন?
হতাশ হবেন না। এভারেস্টে কেউ ওঠেনি আজ অব্দি? উঠেছে! ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দেয়নি কেউ? দিয়েছে। বিসিএসে প্রথম হয়নি কেউ? হয়েছে! আপনিও পারবেন। দেখবেন কিভাবে?
প্রথমে কিছু বইয়ের নাম বলি। Vocabulary শেখার জন্য গেদার বাপ-গেদির মা অনেক বইয়ের নাম বলবে। আপনার ইচ্ছা হলে কিনবেন, নইলে না। সহজ সত্যি কথা বলে দেই? Vocabulary কোন বই পড়ে শেখার জিনিস না। তাহলে আমি কেন বইয়ের কথা বললাম? কারণ আমাদের পারিপার্শ্বিকতা ইংরেজি মাধ্যমে পূর্ণ না। আর প্রত্যেকটা বইয়ের নাম বলার সময় আলাদা করে আমি নিজেই কৈফিয়ত দেবো।
১. Barron’s SAT (প্রথমত বইটি বাংলাদেশ প্রচলিত কোন পরীক্ষারই নয়। কারণ এই দেশে মানুষ TOEFL, GRE, GMAT, IELTS ইত্যাদি নিয়ে ব্যস্ত। SAT অতটা প্রচলিত না। কিন্তু এখন বেশ প্রচলন হচ্ছে। এই বইয়ে ৫০টা ওয়ার্ড লিস্ট আছে। সবগুলো সুন্দর করে সাজানো। মোট শব্দ আছে ৩৫০০+। যেকোন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় আপনি “ফাটিয়ে” আসতে পারবেন সবগুলো আয়ত্তে থাকলে। তবে তার আগে নিজেকে “ফাটতে” হবে। এখানে সুবিধা হল, অপ্রয়োজনীয় শব্দ নেই এবং বেছে বেছে দেওয়া হয়েছে। বাক্য রচনা করে বুঝিয়ে দেওয়া আছে। এটাই আমার সাজেশনকৃত প্রথম এবং শেষ একাডেমিক বই। বাকিগুলো সব ডিকশনারি আর সাহিত্য।)
২. Oxford Advanced Learner’s Dictionary-9th Edition (ইংরেজির “বেদ” বললে কেউ মাইন্ড করবেন না আশা করি। খুব সহজে ইংরেজি শব্দের ইংরেজিতে ব্যাখ্যা দেওয়া আছে। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার এই ডিকশনারির উদাহরণ সরাসরি তুলে দেয়। আর কিছু বলবেন নাকি বইটা সংগ্রহ করবেন?)
৩. Cambridge Advanced Learner’s Dictionary-4th Edition (অবহেলিত ইংরেজির “বেদ”, কিন্তু মজার বিষয় হচ্ছে Vocabulary তৈরি করতে দুটো বেদ একসাথে থাকলে লাভ আছে।)
৪. Longman Dictionary of Contemporary English (এটাকে “Living Dictionary” বলা হয়, কেন জানেন? অক্সফোর্ড/কেমব্রিজ ফেল মারলেও লংম্যান ফেল মারবে না। ব্যবহার করতে যেয়ে বিরক্তি লাগতে পারে। কারণ যেসব জিনিস অক্সফোর্ডে কিংবা কেমব্রিজে ছোট করে দেওয়া আছে, সেগুলো অনেক বিশদভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে এখানে।)
৫. Bangla Academy English-Bangla Dictionary (হাতের কাছে রাখবেন কিন্তু ব্যবহার করবেন না। কারণ বাংলা পেলে আপনার আর ইংরেজি পড়তে ইচ্ছা করবেন না। তখন বাকি ডিকশনারিগুলো চড়াদামে বিক্রি করে দিতে পারবেন কারণ সেগুলো নতুনই থাকবে। একেবারেই অপারগ হলে ব্যবহার করুন।)
এবার আসুন, কিভাবে শিখবেন সকল শব্দ? এই ৩৫০০+ শব্দ শিখলেই কি শেষ? নাহ, আরও শিখতে হবে। কিন্তু এগুলো শিখতে পারলে আর কোন জায়গায় আপনি ঠেকবেন না আশা করি।
কৌশল ১
নিজেকে উদ্বুদ্ধ করুন। সময় বেছে নিন। প্রতিটা ওয়ার্ড লিস্টের জন্য কমপক্ষে ২০ ঘণ্টা সময় প্রয়োজন। মানে মোটমাট ১০০০ ঘণ্টা। মানে ৪২ দিন বা ৬ সপ্তাহ। কিন্তু আমি জানি আপনি মানুষ। আপনার সুবিধা অনুযায়ী ভাগ করে নিন। দিন ৪ ঘণ্টা করে পড়লে ৫ দিনে কিংবা দিন ৫ ঘণ্টা করে পড়লে ৪ দিনে একটা ওয়ার্ড লিস্ট শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। আবার ২ ঘণ্টা করে পড়লে ১০ দিনে কিংবা ১ ঘণ্টা করে পড়লে ২০ দিনে শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। তবে অবশ্যই নিয়মিত পড়ুন। মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। এক বছর সময় নিন। মনে করুন আপনার দিন হয় ২০/১৯ ঘণ্টায় অথবা ২২/২৩ ঘণ্টায়। আপনার উন্নতি আপনি নিজেই টের পাবেন।
কৌশল ২
SAT থেকে একটা শব্দ নিন। ৩টা ডিকশনারিসহ SAT-এর উদাহরণও পড়ে ফেলুন। পেন্সিল দিয়ে লিখুন খাতায়। পরের শব্দটা লেখার ক্ষেত্রে আগের শব্দটা মুছে ফেলুন। একভাবে ১০ শব্দটা পড়ে-লিখে-মুছে ফেলার পর রঙ্গিন কলম দিয়ে লিখে ফেলুন এবং নিজের মত করে উদাহরণ (বাক্যরচনা) লিখুন একটি করে। এভাবে চলতে থাকুন।
বারবার কয়েক জায়গায় একই শব্দ খুঁজতে যেয়ে আপনার মাথায় বানান এবং অর্থটা গেঁথে যাবে। অর্থ জেনে বানান ভুলে গেলে লাভ কি? বাক্য রচনা করে ফেলতে পারলে আপনি ব্যবহার শিখে ফেললেন।
কৌশল ৩
একদম ৫ ঘণ্টায় একটা ওয়ার্ড লিস্টের সকল ওয়ার্ডের জন্য কৌশল ২ শেষ করতে হবে। পরের ৫ ঘণ্টায় আবার পুনরাবৃত্তি ঘটান কৌশল ২-এর। কি বুঝলেন? Vocabulary কোথায় যেয়ে পার পাবে? এবার একটা টপিক নিন। ফ্রি হ্যান্ড লেখা শুরু করুন ওয়ার্ড লিস্টের নতুন শেখা শব্দ দিয়ে। যেখানে পারবেন লাগিয়ে দিন। দরকারে গল্প লিখে ফেলুন। কাটিয়ে দিন ৫ ঘণ্টা।
কৌশল ৪
যেকোন একটা ডিকশনারি নিন। নিজে খুঁজে খুঁজে বের করুন শব্দগুলো। দাগিয়ে ফেলুন। খেয়াল করেছেন এখন পর্যন্ত আমি কিন্তু ডিকশনারিতে দাগ দেবার কথা একবারও বলিনি? কেন বলিনি? এই জন্যই বলিনি। দাগিয়ে ফেলুন ৩টা ডিকশনারিতেই, ৫ ঘণ্টা শেষ।
কি বুঝলেন? খুব খাটনি গেল? নিন, পানি খান। ঠাণ্ডা হয়ে বসুন। এভাবে ৫০টা ওয়ার্ড লিস্ট মুখস্থ করা খুব কষ্টের কাজ, তাই না? আমি নিজেও এই একই কষ্ট করেছি। লাভ পেয়েছি অনেক। নানান বই ঘেঁটে, ফ্ল্যাশ কার্ড-চিরকুটথেরাপি; কোন কাজ হয় না। এটা কষ্টের হলেও কাজের। নিয়মিত হতে হবে অবশ্যই। ইচ্ছা করে আর সামর্থ্যে কুলালে হোয়াইট বোর্ড আর মার্কার ব্যবহার করতে পারেন। আপনার এই বিশাল কর্মযজ্ঞের খরচের হিসাব দেই এবার?
Barron’s SAT (280BDT)+ Oxford Advanced Learner’s Dictionary-9th Edition (850BDT)+ Cambridge Advanced Learner’s Dictionary-4th Edition (650BDT)+ Longman Dictionary of Contemporary English (850BDT)+ Bangla Academy English-Bangla Dictionary (300BDT)+ A4 Size Papers (250 BDT)+ Pencil 3pcs (30BDT)+ Color Pen 3pcs (30BDT)= 3240BDT
বিঃদ্রঃ নীলক্ষেত প্রিন্ট বই নিলে আপনার খরচ অনেকাংশে কমে যাবে।