৫ অক্টোবর ১৯৮৩, নড়াইল জেলায় জন্মগ্রহণ করেন ১৬ কোটি মানুষের প্রিয় মাশরাফি। ছোটবেলা থেকে মাশরাফি ছিলেন দুরন্ত। বাবা মায়ের আদর করে তাকে ডাকেন কৌশিক।
লেখাপড়া ভালোভাবে মনোযোগ না দিয়ে বাবা গোলাম মর্তুজার বাধা ডিঙিয়ে ফুটবল, ব্যাডমিন্টন নিয়ে পড়ে থাকতেন। পাশাপাশি বাড়ির পাশে চিত্রা নদীতে সাঁতার কাটাই ছিলো তার আসল কাজ।
বন্ধুদের সাথে ঘুরাঘুরি করা, নারিকেল গাছে উঠে ডাব খাওয়া, নড়াইলের ফেরিঘাটে গিয়ে আড্ডা মারা ছিলো তার অন্যতম কাজ। এখনও সময় পেলে গ্রামের বাড়ি নড়াইলে গিয়ে বাইক নিয়ে চিত্রা ব্রিজের উপর আড্ডা দিয়ে সময় পার করেন মাশরাফি।
বয়স তখন মাত্র ১৮ বছর। ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হোম সিরিজ। ডাক পেলেন কৌশিক।একই বছর ২৩শে নভেম্বর ওয়ানডে ক্রিকেটে মাশরাফির অভিষেক হয় ফাহিম মুনতাসির ও তুষার ইমরান এর সাথে।
তবে অনুর্ধ ১৯ দলের হয় খেলার সময় কৌশিকের গতিময় ও আক্রমনাত্বক বোলিংয়ের জন্য নজর কাড়েন তৎকালীন অস্থায়ী কোচ ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাবেক ফাস্ট বোলার এন্ডি রবার্টসের।
২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ থেকে অধিনায়কের দায়িত্ব কাধেঁ ওঠে ম্যাশের। ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস, প্রথম ম্যাচেই মারাত্বক ইঞ্জুরীতে পড়েন তিনি। কিন্তু দেড় বছর পর আবার স্বরুপে ফিরে আসার ইঙ্গিত নিয়ে ইউরোপ সফরে যান দলের সাথে। ইংলান্ডকে প্রথম বারের মত বাংলাদেশ পরাজিত করে মাশরাফির অধিনায়কত্বে। কিন্তু এরপর আবার ইঞ্জুরীতে, যার কারনে খেলা হয়নি ঘরের মাঠের ২০১১ বিশ্বকাপেও!
একদিন মাশরাফি বলেছিলেন ” জীবনে যে টাকা আমি আয় করেছি সে টাকা দিয়ে আমার ছেলেমেয়েরাও পর্যন্ত বসে খেতে পারবে, আমি দেশের জন্য ক্রিকেট খেলি, আমি আরো অনেক দিন ক্রিকেট খেলতে চাই দেশের স্বার্থে “
সৌরভ গাঙ্গুলী বলেছিলেন “ইশ! আমাদের যদি একটি মাশরাফি থাকতো।
তার দুপায়ের উপর দিয়ে গেছে কয়েকবার অপারেশন টেবিলের ছুরি। এরপরও তাকে কেউ রুখতে পারে নি। অপারেশনের পরও খেলে যাচ্ছেন বাংলাদেশের হয়ে। ইঞ্জুরিতে পড়ে অনেক বড় বড় খেলোয়ার অবসর নিয়েছে। ইঞ্জুরিতে পড়ার পর ব্রেটলি, শেন ভন, এন্ড্রু ফ্লিনটপের মত প্লেয়াররা ক্রিকেটে ফিরতে পারেন নি। কিন্তু মাশরাফি এরকম ইঞ্জুরি নিয়েও খেলে যাচ্ছেন। কারন তিনি মনে করেন বাংলাদেশের জন্য তার এই জীবন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযোদ্ধারা যেমন জীবন দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছেন ঠিক তেমনি তার জীবন দিয়ে খেলে বাংলাদেশকে জয় এনে দিতে চান।
চোটের সঙ্গে লড়তে লড়তে ক্লান্ত হননি, ভেঙে পড়েননি; সংশপ্তকের মতো উঠে দাঁড়িয়েছেন বারবার। নতুন উদ্যমে ফিরেছেন মাঠে। দেখিয়েছেন সর্বোচ্চ পারফরম্যান্স। হাঁটুর চোটের কারণে নি-ক্যাপ পরে মাঠে নামেন।
একজন মাশরাফির বিকল্প পাওয়া শুধু কঠিন নয়, প্রায় অসম্ভব। মনে রাখতে হবে, ক্রিকেটকে আজকের অবস্থানে এনেছেন ক্রিকেটাররা-মাশরাফিরা। নিশ্চিত করেই বলা যায়, মাশরাফি ছাড়াও বাংলাদেশের ক্রিকেট এগিয়ে যাবে। এভাবে না হলেও, মাশরাফিকে বিদায় নিতেই হতো। কিন্তু মানসিক কষ্ট বা আঘাত দিয়ে মাশরাফিকে বিদায় করার কোনও অধিকার আপনার নেই মি. পাপন। আপনাকে কেউ মনে রাখবে না, মাশরাফিকে কেউ ভুলবে না- কোনও দিন ভুলবে না...