নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের ১৩৬তম জন্ম ও ৮৭তম মৃত্য দিন আজ। নারীর চোখে মুক্তি স্বপ্নাঞ্জন বুলিয়ে কুসংস্কারের শৃঙ্খল ভাঙার গান যিনি শুনিয়েছেন তিনিই বেগম রোকেয়া। নারীদের শিকল ছিঁড়ে স্বমহিমায় আলোকিত জীবন গড়ার প্রদীপ জ্বালানিয়া এই রোকেয়ার পরিবার এবং অনুরাগীদের মনে ক্ষোভ এবং হতাশা। ছয় বছর আগে রোকেয়ার দেহাবশেষ কলকাতা থেকে মাতৃভূমিতে আনার যে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে- তা ফাইলবন্দি হয়ে পড়ে আছে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে।
তার স্মৃতি রক্ষায় জন্মভূমি পায়রাবন্দে করা রোকেয়া স্মৃতিকেন্দ্রটিও এখন ধবংসের পথে। শুধু তাই নয়, এর সাথে জড়িতদের মৌলিক চাহিদাও কেড়ে নেয়া হয়েছে। বেতন-ভাতা পান না এক যুগেরও বেশি সময় ধরে। এই স্মৃতিকেন্দ্রটি সংস্কৃত মন্ত্রণালয় থেকে বাংলা একাডেমিতে স্থানান্তর করার জন্য উচ্চ আদালতের আদেশ এবং বেতন-ভাতা দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারসংক্ষেপে নির্দেশ দিয়েছে তাও অজ্ঞাত কারণে উপেক্ষিত। সব মিলিয়ে মন ভালো নেই পরিবারটির এবং রোকেয়া অনুরাগীদের।
ইতিহাসের সূত্র মতে, নারীদের শিকল ছিঁড়ে স্বমহিমায় আলোকিত জীবন গড়ার প্রদীপ জ্বালানিয়া বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন ১৮৮০ সালের ৯ ডিসেম্বর রংপুরের মিঠাপুকুরের পায়রাবন্দের খোর্দ্দমুরাদপুর গ্রামের বিখ্যাত সাবের পরিবারের জহির উদ্দিন মোহাম্মদ আবু আলী হায়দার সাবের ঔরষে ও রাহাতুন্নেসা সাবেরা চৌধুরানীর গর্ভে জন্মগ্রহণ করেন। ১৮ বছর বয়সে খান বাহাদুর সাখাওয়াত হোসেন সাহেবের সাথে তার বিয়ে হয়। ২৮ বছর বয়সে স্বামী হারান তিনি। ১৯১০ সালের শেষ দিকে কোলকাতায় যান। এরপর তিনি দুই পাড়েই নারী জাগরণ ও উন্নয়নে কাজ করেছেন। লিখেছেন অবিরাম-অবিরত। সমাজের কুসংস্কার ভাঙতে করেছেন সাহসী উচ্চারন।
তার লেখা অবরোধ বাসিনী, সুলাতানার স্বপ্ন, অর্ধাঙ্গী, মতিচুর ছাড়াও অসংখ্য বই সেসময় নারী জাগরণ আন্দোলনকে উজ্জীবিত করে। আজও আন্দোলিত করছে বিশ্বনারী সভ্যতাকে। ১৯৩২ সালের ৯ ডিসেম্বর তিনি কোলাকাতায় মারা যান। কোলকাতার সোদপুরে তাকে সমাহিত করা হয়।
বিগত সময়ে পাকিস্তান থেকে বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীরের মরদেহ চাঁপাইনবাবগঞ্জে আনার পর এই অঞ্চলের মানুষ রোকেয়ার মরদেহটিও পায়রাবন্দে এনে সমাহিত করার দাবিতে জোড়ালো আন্দোলনে নামেন। ২০০৯ সালের ৯ ডিসেম্বর রোকেয়া মেলায় রংপুরের তৎকালীন ডিসি বিএম এনামুল হক দাবিটির প্রতি একাত্মতা ঘোষণা করে উদ্যোগ নেয়ার ওয়াদা করেন। এরপর থেকে বেগম রোকেয়া স্মৃতি সংসদ, বেগম রোকেয়া ফোরাম, বেগম রোকেয়া পাঠাগারসহ বিভিন্ন সংগঠন এই দাবি বাস্তবায়নে ডিসি ও সাম্প্রতিক সময়ে বিভাগীয় কমিশনারের মাধ্যমে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিক স্মারকলিপি প্রদান করেছে। সংবাদ সম্মেলন করে রোকেয়া অনুরাগীরা দাবিটি সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলেও জানিয়েছে। ২০১০ সালে রংপুরের ডিসি বিএম এনামুল হক বলেছিলেন, মরদেহ পায়রাবন্দে আনার ব্যপারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন আবেদন করা হয়েছে।
২০০৪ সালে বিবিসি পরিচালিত ২০ বিশ্বসেরা নারীর ৬ নম্বর তালিকায় স্থান পাওয়া বেগম রোকেয়ার মরদেহ ডিসি সাহেব ঘোষণা দিয়েছিলেন পায়রাবন্দে আসবে। কিন্তু সেই ঘোষণা ও সিদ্ধান্ত এখন ফাইলবন্দী। বেগম রোকেয়াকে নীতিনির্ধারক মহলে গুরুত্ব না দেয়ার কারণে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
বেগম রোকেয়ার ভাতিজি রনজিনা সাবের বলেন, প্রতিবছরই প্রতিশ্রুতি। এ প্রতিশ্রুতি আমরা আর শুনতে চাই না। তিনি বলেন, সারাবছরই রোকেয়া মারা যায়। আর ৯ ডিসেম্বর এলে জীবিত হয়। এটা তামাশা। রোকেয়ার জন্মভূমিতে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ কেউ আসেনি রোকেয়া দিবসে।
সরকারের কি এমন সমস্যা যে আমাদের এই সামান্য দাবিটুকুও পূরণ করতে পারছে না। অন্যদের মরদেহ যদি আনা যায়। তবে কেন রোকেয়ার মরদেহ আনতে সরকার এত টালবাহনা করছে। তা আমাদের বোধগম্য নয়।