somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ট্যুর ডি বান্দারবন - থাঞ্চি - রেমাক্রি - নাফাখুম - জিন্নাপাড়া - থুসাইপাড়া - আমিয়াখুম - পদ্মমুখ (পর্ব ২)

০৫ ই অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৩:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথম পর্বের লিংক


মান্নান উপস্থিত হবার একটু পরেই সবাই এক এক করে আসতে লাগলো, মোট দশ মিনিটের ভিতরে সবাই এসে হাজির। এদের অনেকেই এই গ্রুপে নতুন জয়েন করেছে এবং আগের গ্রুপ মেম্বার অনেকই নাই। ট্যুর এর লিডার আদি ভাই, তার বউ জরিনা, আদির ভাই নিঝু, আদির কাজিন স্যাম, মান্নান, রিটু, এরা সবাই পুরাতন মেম্বার। নতুন যারা জয়েন করেছে তাঁরা হল স্যাম এর বোন রুমা (পেশায় সাংবাদিক একটা খ্যাতনামা নিউজ চ্যানেলের) তার দুই সহকর্মী রাশফিয়া আর শিল্পা, বাকি সবাই স্যাম এর ইউনি ফ্রেন্ড অপু, রায়ান, রুবেল, মাহাদি আর মিঝু এরা সবাই নতুন সদস্য। মোট ১৪ জন। বাস আসবার অপেক্ষায় ওরা সবাই। সবাই একসাথে দাড়িয়ে আছে, হটাত করে এক লোক এসে বললও hey guy's follow me বেশভূষায় পুরাই ইয়ো। আচার আচরণ পুরাই ফিল্মি ক্যারেক্টার, কথাবার্তার শুনে বুঝলাম লোকটা হাল্কা মাল খেয়ে টাল হয়ে আছে। হতেই পারে হাজার হলেও ইদের রাত্র।


বাসে উঠার পরে ইয়ো গাইজ এর নতুন হামলা আমরা নাকি হিসাবে দুইজন বেশি আছি। আদি ভাই বললো প্লীজ আপনি একটু গুনে দেখেন। গুনার পড়ে বলল, না আপনারা দুইজন বেশি আছেন। এক্সট্রা টাকা দিতে হবে। আদি ভাই বলল আচ্ছা আমি গুনে দেখাই, এবার আবার ১৪ জন হল, খালি ওই লোকটা গুনলেই ১৬ জন হয়। পরে লোকটা আমাদের সাথে বাজি ধরল ১৪ জন হলে আমাদের সবার জন্য সফট দ্রিঙ্কস ফ্রি। কি আর করার বাজিতে হারার পর আমাদের সবাইকে সফট দ্রিঙ্কস আর চিপস খায়াবে। এবার পুরা ঝাঁজ গিয়ে পড়লো সুপার ভাইজারের উপর, জোরে জোরে বলতে শুনলাম "আমি আমার টাকার হিসাব চাই i want my money" লোকটার হাটা চলা কথাবার্তা পুরাই কার্টুন, যা দেখে আমরা ব্যাপক বিনোদিত হলাম।

এবার বাস ছেড়ে দিল আর কেউ কোন কথাবার্তা বলেনি। শুধু মাত্র জরিনা ফোড়ন কাটলো, মান্নান ভাইকে রাশফিয়া আর শিল্পার পাশে বসাতে পারলে ভালো হত। মান্নান কিছু বলল না, নীরবে হজম করে নিলো আর মনে মনে বলল why always me

হটাত নিঝুর ডাকে ঘুম ছুটে গেলো, বাস কুম্মিলার তাজমহল হোটেলে চলে এসেছে। সবাই ফ্রেশ হয়ে আবার বাসে উঠে পড়লো। সত্যিই এখানকার চায়ের সাধ আসলেই অনেক ভালো।

আবার যখন ঘুম ছুটে গেলো সবাই দেখল যে ওরা বান্দারবনে চলে এসেছে। সবাই ফ্রেশ হবার জন্য অস্থির হয়ে ছোটাছুটি শুরু করে দিয়েছে। মান্নানের চারপাশে সব সময় শনি ঘুরে, তাইতো মান্নানের সাথে একটা অঘটন ঘটেই গেলো রাশফিয়ার সাথে। সেটা দেখে ফেললো রায়ান, কেননা ওই সময়ে মান্নানের সাথে ছিল পিচ্ছি রায়ান। রায়ান ঘটনাটা চেপে না গিয়ে সবাইকে বলে দিলো। কে জানতো এই নিয়া বহু দুর গড়াবে। রায়ান নিজেও বুঝতে পারেনি।

তারপর থেকে সবাই মান্নান আর রাশফিয়াকে নিয়ে টিপ্পনী কাটা শুরু করে দিলো। প্রথমে প্রথমে মান্নান আর রাশফিয়ার ভালো লাগলেও একসময় বিরক্ত হতে শুরু করলো।

বান্দারবন থেকে একটা চান্দের গাড়ি ঠিক করে মুল উদ্দেশ্য যাত্রা শুরু হল। পথিমধ্যে মান্নানের পায়ের মাসেল পুল করলো। মান্নান এক জায়গায় অনেক সময় বসে থাকলে কিংবা ঘুমিয়ে থাকলে অথবা হাঁটলে কিংবা দৌড়ালে এটা হয়। মান্নান গাড়ি থামাতে বলল। সবাই গাড়ি থেকে নেমে ছবি তোলায়। জায়গাটা অনেক উঁচু পাহাড়ের উপরে আর নিচে মেঘ দারুণ দৃশ্য। এই সময়ে একটু হাঁটাচলা করে মান্নান স্বাভাবিক পর্যায়ে চলে আসার পর গাড়ি আবার চলা শুরু করে দিলো। গাড়ি গিয়ে থামলো একেবারে থাঞ্চিতে। এখান থেকে বিজিবির পারমিশন নিয়ে তারপর রেমাক্রিতে যেতে হবে। ইদের আগে তিন মাস নাফাখুমের ত্রেইল বিজিবি বন্ধ করে রেখেছে। তার কারন বর্ষাকাল। তার উপর আবার ১ সপ্তাহ আগে সাঙ্গু নদীতে চারজন বিজিবিকে নিয়ে নৌকা ডুবি হয়েছে যার ভিতরে একজন নিহত আর তার আর্মসটাও নিখোঁজ। এজন্যই এইখানে খুব কড়াকড়ি অবস্থা। ট্রেইন্ড সেনার এই অবস্থা, আমাদেরটা নাই বললাম।

থাঞ্চিতে মান্নান আরো একটা ভুল করলো, যেটা নিয়ে আবার কথা হবে মান্নান নিজেও তা বুঝতেও পারে নি। মান্নানের মুখে দুই সপ্তাহের দাড়ি ছিল, মান্নান ভাবলো শেভটা করা হয় নি, এতে ছবিতে ভালো আসবে না। শেভ করার পর মান্নানের খেয়াল হল টুথব্রাশ টাও আনা হয় নাই। বাজার থেকে তাই একটা টুথব্রাশ কিনে নিলো। গাড়ির কাছে এসে দেখে কেউ নাই, সবাই যে যার মতো ঘুরতে বের হয়েছে। গাড়িতে শুধু আছে রাশফিয়া, তার কাছেই টুথব্রাশ রেখে মান্নান চলে গেলো রিটু আর মিঝুর কাছে। আসার পর এসে আবার আদির কাছে থেকে শুনল "ও মান্নান ভাই, রাশফিয়াকে কি গিফট করলেন আর কি বুঝে শেভ করলেন"।

মান্নান আর রাশফিয়া বুঝতে পারলো তাদের সাথে মজা মারা হইতাছে, এখন মজা উপভোগ করা ছাড়া আর কিছুই করার নাই।

এর ভিতরে শোনা গেলো পারমিশন পাওয়া যাবে না। কি আর করার রুমা আপা তার পাওয়ার খাটালো। ঢাকায় বেশ কিছু ঊর্ধ্বতন জায়গায় ফোন করে ঠিক ঠিক পারমিশন বের করে ফেললো। পারমিশন না পাওয়ার কারনে আমাদের মন সবার খারাপ হয়ে আছে, এর ভিতরে আপা এসে জানালো পারমিশন পাওয়া গেছে বাট নিজেদের রিস্কে যাওয়া লাগবে। দুর তাতে কি পারমিশন তো পাইছি। পারমিশন পাবার অন্যতম প্রধান কারন হল আমাদের প্রতেকের সাথে একটি করে লাইফ জ্যাকেট ছিল। যার কারনে পারমিশন পাওয়া সহজে হয়েছে।

যাই হোক মূল্যবান ৪ টি ঘণ্টা এই পারমিশন এর কারনে নষ্ট হয়ে গেছে তাই আর দেরী না করে দুপুরের খাবার থানচিতেই সেরে ফেললাম।

এতক্ষণে মান্নান রাশফিয়া আর শিল্পার সাথে অনেকটা সহজ হয়ে গিয়েছে। তারা একই নৌকায় গিয়ে বসলো সাথে আছে মান্নানের সার্বক্ষণিক বন্ধু রিটু আর মিঝু। সবার মাঝখানে মান্নান। আমার এই বন্ধুটির সব সময়ে সবার মাঝেই বসতে হবে।

ট্রলার চলছে পুরা পাঙ্খা স্পীডে। বড় পাথরের ওখানে এসে মাঝি বললো নামতে হবে। কারন ওখানকার নদী আমাদের সমতল ভূমির নদীর মতো নয়। অনেকটা সিড়ির মতো। সিঁড়ির মতো ওই সব জায়গায় পানি কম থাকে। তাই ওখান থেকে নেমে হেটে আবার গভীর পানির কাছে যেতে হবে। যাবার সময়ে তিনটা পাহাড় ডিঙ্গাতে হয়েছে। বান্দারবন একটু তার ডেমো এখানে দেখিয়ে দিলো। পাহাড়গুলো খুব খাড়া আর পিচ্ছিল। মান্নান এই পাহাড়ে ওঠার সময়ে তার পেন্ট ছিঁড়ল। সাধে কি তোরে কই? তোর পিছে শনি ঘুরে।

যাই হোক আবার নৌকায় গিয়ে বসলো মান্নান গুটিশুটি মেরে, যাতে পাছে কেউ দেখে না ফেলে তার পেন্টের আসল জায়গায় ফাটল ধরছে। মান্নান অনেক চিন্তিত কেউ না আবার দেখে ফেলে।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৩:৪৯
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাছে থেকে আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৪৬

আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

২০০১ সালের কথা। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটা আন্তর্জাতিক দরপত্রে অংশ গ্রহণ করে আমার কোম্পানি টেকনিক্যাল অফারে উত্তীর্ণ হয়ে কমার্শিয়াল অফারেও লোয়েস্ট হয়েছে। সেকেন্ড লোয়েস্টের সাথে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সংস্কারের জন্য টাকার অভাব হবে না, ড. ইউনূসকে ইইউ

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



বুধবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে ঢাকার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ঢাকায় নিযুক্ত ইইউর রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার এবং সফররত এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিসের এশিয়া ও প্যাসিফিক বিভাগের পরিচালক পাওলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নারী বুকের খাতায় লিখে রাখে তার জয়ী হওয়ার গল্প (জীবন গদ্য)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৩২



বুকে উচ্ছাস নিয়ে বাঁচতে গিয়ে দেখি! চারদিকে কাঁটায় ঘেরা পথ, হাঁটতে গেলেই বাঁধা, চলতে গেলেই হোঁচট, নারীদের ইচ্ছেগুলো ডিমের ভিতর কুসুম যেমন! কেউ ভেঙ্গে দিয়ে স্বপ্ন, মন ঢেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্রী ও কুশ্রী পদাবলির ব্লগারদের টার্গেট আমি

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫



আমাকে জেনারেল করা হয়েছে ১টি কমেন্টের জন্য; আমার ষ্টেটাস অনুযায়ী, আমি কমেন্ট করতে পারার কথা; সেটাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে; এখন বসে বসে ব্লগের গার্বেজ পড়ছি।

সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×