মান্নান, তার বাল্য কালের অনেকটা সময় কেটেছে পাহাড়িদের সাথে কেননা মান্নানদের বাড়িতে দীর্ঘ ১২ বছরের মতো সময়ে বিভিন্ন উপজাতিরা ভাড়া থেকেছে। তাদের সবাই অবশ্য বিভিন্ন সরকারি ব্যাংকে চাকরী করতো, তাদের ভিতরে কেউবা চাকমা, মারমা কিংবা ত্রিপুরা। ওই সময়ে মান্নানের খুব প্রিয় বন্ধু ছিল সভিতা আর সাধন। মান্নানের ছবি আকার হাতে খড়ি এই পাহাড়িদের কাছে থেকেই, যার কাছে থেকে ছবি আকা শিখেছিল তার নাম নাথান বাবু। নাথান বাবু ছিল চারুকলার ছাত্র। মান্নানের বাবা তার আকা ছবি দেখে একদিন নাথানের রিকোয়েস্ট করে মান্নানকে ছবি আকা শিখিয়ে দিতে। মান্নান শুধু পাহাড়িদের কাছে ছবি আঁকাই শিখে নি, তাদের কাছ থেকে বরঞ্চ কুংফুটাও শিখে নিয়েছিলো। একসময় ওদের সবাইকে স্থানিয় কথিত সন্ত্রাসী কিংবা মুক্তিকামী সংগঠনরা শান্তি বাহিনীতে কাজ করার জন্য আনআর্মড কমব্যাট ট্রেনিং দেয়া হত। এই জন্য মান্নানের মনে সব সময় আদিবাসীর প্রতি একটা দুর্বল স্থান আজীবনের জন্য রয়েই গিয়েছে।
মান্নানের বহু শখ পাহাড় দেখবে, আদিবাসীদের গ্রাম দেখবে কিন্তু এই যাবে সেই যাবে বলে আর যাওয়া হয় না। অবশেষে একদিন ফেসবুক লগইন করে দেখলো স্যাম একটা অফার দিয়েছে নাফাখুম যাওয়ার। কোন সাত পাচ না ভেবেই মান্নান রাজি হয়ে গেলো। তবে ট্যুরের সময় সেপ্টেম্বরের শেষের দিক হতে অক্টোবরের শুরুর দিকে। মেলা দিন বাকি, যাই হোক ভালো ভাবে প্রস্তুতু হওয়া যাবে।
দেখতে দেখতে সেই সময় চলে এলো। সবাই প্রস্তুতি নিচ্ছে ট্যুরের ব্যাপারে। স্যাম বিশেষ করে লাইফ জ্যাকেটের উপর খুব জোর দিলো এবং জানিয়ে দিলো লাইফ জ্যাকেট ছাড়া ওখানে যাবার পারমিশন সহজে মিলবে না। আর মান্নান জোর দিলো সবাই যাতে অ্যান্টি ম্যালেরিয়ার ওষুধ সাথে করে নিয়ে যায়।
দেখতে দেখতে ট্যুরের দিন এসে গেলো। ওই দিন ছিল শুক্রবার তার উপর কুরবানির ঈদ। সারাদিনের ঝক্কি ঝামেলা শেষ করে রাত ৯টায় বাসা থেকে সবার কাছে বিদায় নিয়ে হাটা শুরু করলো, বাসস্ট্যান্ড বেশি দুরে না হেটেই চলে যাওয়া যায়।
বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখে কেউ নাই। কি আর করার মান্নান মনে মনে ভাবলো আরে, এখান থেকে আধা মিনিটের দূরত্ব মাত্র তন্ময়ের অফিস, গেলেই সব শালাকে এক সাথে পাওয়া যাবে। এই শালারা ট্যুরের ব্যাপারে কেউ কিচ্ছু জানে না, এরা সবাই মান্নানের এলাকার বন্ধ। ওখানে যেতেই সবাই হতভম্ব, "কিরে শালা ব্যাকপ্যাক এর সাথে লাইফ জ্যাকেট বাইন্ধা কই যাও মনু" বললও রাজু। মান্নান উত্তর দিলো তোমরা সবাই ধনীর ননির পুতুল তাই তোদের এই ট্যুরের ব্যাপারে কিছু জানানর দরকার বোধ করি নাই। এর ভিতরে একজন এসে বললো দেখতো বাইরে একটা ছেলে দাড়িয়ে আছে তোর মতো ব্যাকপ্যাক এর সাথে লাইফ জ্যাকেট বান্ধা, তোমার ভাই ব্রাদার হতে পারে। মান্নান পাত্তা দিলো না মনে মনে ভাবলো এরকম অনেকে যাচ্ছে। এরপরে রাজু বললও চল বাইরে গিয়া একটা সিগারেট খাই। তখন সেই মানুষটাকে চোখে পড়লো মান্নান জানতো না এও যে তাদের ট্যুর মেম্বার। সিগারেট টানতে টানতে হটাত দেখি রিটু ভাই এসে হাজির মান্নান কে এখনো দেখে নাই। মান্নান দেখলো রিটু এসে সেই ছেলেটার সাথে কথা বলছে। মান্নান বুঝতে পারলো "আচ্ছা চান্দ তুমি তাহলে আমাদেরই লোক"। যাবার সময়ে রাজু মান্নানকে আধ লিটারের মতো ব্রাণ্ডি সাথে করে দিয়ে দিলো আর বলে দিলো ক্লান্তি লাগলে একটু চুমুক খেয়ে নিস দেখবি ভালো লাগবে। এরপরে মান্নান তার বন্ধুদের বিদায় দিয়ে রিটু আর মিঝু কে সঙ্গে নিয়ে সামনের এগিয়ে গেলো।
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ১১:৪০