প্রশ্ন -
কোরআন ও হাদীসে বর্ণিত , যে সকল বর্ণনাতে বলা হয়েছে , আল্লাহ্ ব্যতীত কেউই অদৃশ্যের জ্ঞান (ইলমে গায়েব) রাখে না এবং যে সকল বর্ণনাতে বলা হয়েছে নবী-রাসূলগণ তাঁর অনুমতিক্রমে গায়েবের জ্ঞান রাখতেন ---
কিভাবে এ দু’ধরনের বর্ণনাকে সমন্বয় সাধন করব ?
উত্তর দিয়েছেন -
আয়াতুল্লাহ্ নাসের মাকারেম সিরাজী --
উত্তর -
বিভিন্ন পদ্ধতিতে আমরা এ দু’ধরনের বর্ণনার মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে পারি ।
ক) -
প্রসিদ্ধতম যে পদ্ধতির মাধ্যমে এর সমন্বয়ের ব্যাখ্যা করা হয় তা হল ‘গায়েবের জ্ঞান’ সত্তাগত ও স্বাধীনভাবে আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট ।
অন্য কেউ স্বাধীনভাবে এ জ্ঞান রাখে না । বরং তাদের এ জ্ঞান আল্লাহ্ প্রদত্ত ।
যেমন সূরা জ্বীনের ২৬ নং আয়াতে বলা হয়েছে --
আল্লাহ্ কাউকেই গায়েবের রহস্য সম্পর্কে অবহিত করেন না , তাঁর মনোনীত রাসূল ব্যতীত।
নাহজুল বালাগাতেও এরূপ অর্থের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে ।
যখন হযরত আলী (আঃ) মুসলিম দেশগুলোতে মোঙ্গলদের আক্রমণের বিষয়ে খবর দেন তখন তাঁর এক সঙ্গী তাঁকে প্রশ্ন করেন ,“ হে আমীরুল মুমিনীন ! আপনি কি ’ইলমে গায়েব’ জানেন ?”
তিনি মুচকি হেসে বলেন , “এটি’ইলমে গায়েব’ নয় , এটি এমন এক ইলম যা ইলমের অধিকারীর (রাসূলের) নিকট শিক্ষা লাভ করেছি ।”
৩ এ সমন্বয় পদ্ধতিকে অনেক মনীষীই গ্রহণ করেছেন ।
খ) -
‘গায়েব’ - এর রহস্য দু প্রকারের ।
এক ধরনের গায়েব মহান আল্লাহর জন্য নিদিষ্ট এবং অন্য কেউ সে সম্পর্কে জানে না ।
যেমন কখন কিয়ামত সংঘটিত হবে ।
অন্য প্রকার গায়েব আল্লাহ্ তাঁর নবী ও আউলিয়াদের জানিয়ে থাকেন ।
নাহজুল বালাগায় উপরোক্ত খুতবাতেই হযরত আলী (আঃ) বলেছেন , ‘ইলমে গায়েব’ হল কিয়ামতের জ্ঞান এবং এই আয়াতে (সূরা লোকমানের ৩৪ নং আয়াত) যে বিষয়গুলোর কথা উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলো , যেমন কিয়ামতের সময় কেবল তিনিই জানেন । তিনিই বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং গর্ভাশয়ে যা থাকে সে সম্পর্কে অবহিত ।
(যদিও) কেউ জানে না আগামীকাল কি করবে এবং কোন্ ভূমিতে সে মৃত্যুবরণ করবে কিন্ত আল্লাহ্ তা জানেন ।
অতঃপর ইমাম (আঃ) এর ব্যাখ্যা করে বলেন , “মহান আল্লাহ্ যা কিছু মাতৃগর্ভসমূহে রয়েছে (কোন যন্ত্রের সাহায্য ছাড়াই) সে সম্পর্কে সার্বিক অবগত ।
পুত্র সন্তান না কন্যা ?
সুন্দর না অসুন্দর ?
দানশীল হবে না কৃপণ ?
সৌভাগ্যবান হবে না দুর্ভাগা ?
বেহেশ্তবাসী হবে না দোযখবাসী ?... এ বিষয়গুলো হলো ‘ইলমে গায়েব’ যা তিনি ব্যতীত অন্য কেউ জানেন না ।
এগুলো সেই জ্ঞানের অন্তর্গত নয় যা তিনি তাঁর রাসূল (সাঃ) কে শিখিয়েছেন এবং তাঁর রাসূল (সাঃ) আমাকে শিক্ষা দিয়েছেন ।”
কোন কোন মানুষ হয়ত মাতৃগর্ভে শিশুর আকৃতিগত কিছু বৈশিষ্ট্য , বৃষ্টি পতনের সময় ও প্রকৃতি সম্পর্কে বেশ কিছু ধারণা দিতে সক্ষম ।
কিন্ত এর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রতিটি বিষয়ের বিশ্লেষণ দান তাদের পক্ষে সম্ভব নয় , অথচ মহান আল্লাহ্ এ সকল বিষয়ের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম সকল কিছু সম্পর্কে অবগত ।
মৃত্যুবরণের বিষয়টিও অনুরূপ ।
গ) -
এ বিপরীতধর্মী আয়াত ও হাদীসসমূহকে ব্যাখ্যা করার তৃতীয় পথ -
‘গায়েব’ - এর রহস্য বিভিন্ন বর্ণনা মতে দু’টি স্থানে লিখিত রয়েছে ।
প্রথমটি হল ‘লাওহে মাহফুয’ যা আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট ও অপরিবর্তনীয় ।
এ সম্পর্কে তিনি ব্যতীত অন্য কেউ অবহিত নয় ।
দ্বিতীয়টি হল ‘লাওহে মাহু ওয়া ইসবাত’ যা অবস্থার কারণে পরিবর্তনশীল ।
অন্যদের তিনি এ বিষয়ে অবহিত করেন ।
ষষ্ঠ ইমাম সাদেক (আঃ) হতে হাদীস বর্ণিত হয়েছে , তিনি বলেন ,“ আল্লাহর এক ধরনের জ্ঞান রয়েছে যে সম্পর্কে কেউই অবহিত নয় । অন্য প্রকার জ্ঞান সম্পর্কে তিনি তাঁর নবী ও ফেরেশতাদের অবহিত করেন । যে জ্ঞান তিনি নবী ও ফেরেশতাদের দিয়েছেন সে সম্পর্কে আমরা অবহিত ।”
ইমাম আলী ইবনুল হুসাইন (আঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে , তিনি বলেন , “ যদি কোরআনের একটি আয়াত না থাকত তবে অতীতে যা ঘটেছে এবং ভবিষ্যতে কিয়ামত পর্যন্ত যা ঘটবে সে সম্পর্কে আমি খবর দিতাম ।”
প্রশ্ন করা হল , কোন্ আয়াতটি ?
তিনি বলেন , “ যে আয়াতে আল্লাহ্ বলেছেন -
يَمْحُو اللَّهُ مَا يَشَاءُ وَيُثْبِتُ وَعِنْدَهُ أُمُّ الْكِتَابِ
" -- আল্লাহ্ যা ইচ্ছা মুছে দেন ও বহাল রাখেন এবং
মূল গ্রন্থ তাঁর নিকটেই --।”
সূরা - আর রা’দ / ৩৯ ।
তথ্যসূত্র -- জ্যোতি ১ম বর্ষ , ৪র্থ সংখ্যা ।
নিবেদনে -
সাকিল আহমেদ ।
সালামুন আলাইকুম ইয়া সাহেবুজ্জামান (আঃ) ইবনে হাসান আসকারী (আঃ) ওয়া আজ্জিল ফারাজাহুম ,
ইয়া সাহেবুজ্জামান (আঃ) আদরিকনী আদরিকনী ,
আল্লাহুমা সাল্লে আলা মুহাম্মাদ ওয়া আলে মুহাম্মাদ ওয়া আজ্জিল ফারাজাহুম ,
আল্লাহুম্মাল আন কাতালাহ আমিরিল মুমিনিন (আঃ) ।
লেখাটি সংগৃহীত ।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে এপ্রিল, ২০১৬ ভোর ৬:১৭