সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ: আমার এই লেখাটি সম্পুর্ণ অপ্রয়োজনীয় ও অসামঞ্জস্যপূর্ণ কথায় ভরপুর। সময় নষ্ট করতে না চাইলে শুধু শুধু পড়ার কোন দরকার নেই।
১.
প্রথমা গল্পটা আমার মার মুখে শোনা। ১৯৭৪ সাল। বাংলা সাহিত্যের ভর্তি পরীক্ষায় "একটি উপন্যাস নিয়ে সমালোচনা লিখ" টাইপের একটা প্রশ্ন আসল। মাত্র ক'দিন আগেই আম্মার "নন্দিত নরকে" ৰইটা পড়া হয়ে গেছে। আম্মা তাই খুব একটা চিন্তা ভাবনা না করে ঐ উপন্যাসটার উপরই সমালোচনা লিখে ফেলল। সমালোচনাটা বোধহয় ভালই লিখেছিল। কারণ, আম্মা কুমিল্লার ভিক্টোরিয়া কলেজে সুযোগ পেয়ে গেল! হুমায়ূন আহমেদের বয়স তখন মাত্র ২৬ বছর।
২.
১৯৯৪ সাল ( খুব সম্ভবত ), আমরা তখন খুলনায় থাকি। সারা সপ্তাহ গোমড়ামুখে ঘোরাফেরা করি আর মঙ্গলবার হওয়ার আশায় বসে থাকি, কারণ মঙ্গলবারে "ধারাবাহিক নাটক" হয়। একদিন নতুন একটা নাটক শুরু হল। নাটকের প্রথম দৃশ্যটা এখনো আমার চোখে লেগে আছে। দৃশ্যটা এইরকম: সুবর্ণা মুস্তাফা একটা অফিসে বসে আছে, টাইপরাইটারের সামনে। কিছুটা বিরক্ত ও আনমনা হয়ে হঠাৎ করে সূবর্ণা একটা লাইন লিখলেন, "আমার খুব মাথা ধরেছে"। আমি তখন বাংলা সবে পড়া শিখেছি, সেই কারণেই কিনা, চোখ বন্ধ করলেও আমি ঐ লাইনটা দেখতে পাই। নাটকটার নাম ছিল "কোথাও কেউ নেই"।
৩.
১৯৯৫ সাল। আব্বা ট্রান্সফার হয়ে ঢাকায় গিয়েছে। আমরা এখনো যাই নি। পাশের বাড়ির "অমির আম্মা" একটি দুঃসাহসিক প্রস্তাবনা দিয়েছে। সেটি হল, সবাই মিলে সিনেমা দেখতে যাব। এই নিরীহ ব্যাপারটা দুঃসাহসিক এই জন্য যে, আমরা সিনেমা দেখতে গিয়েছি এইটা যদি আব্বা জানে তাহলে আমাদের খবর আছে। তাই আব্বাকে ফোন ভুলভাল বলে আমরা সিনেমা দেখতে গেলাম। ওরে বাব্বা, কত বড় বড় লোক পর্দার সামনে দাঁড়িয়ে অভিনয় করছে, মানে তখন আমার তাই মনে হয়েছিল। আমি বসে বসে দেখলাম। সিনেমা শেষে গোঁ ধরলাম পর্দাটা একবার ছুঁয়ে দেখব, আম্মা খুব একটা পাত্তা দিল না। ওহ, সিনেমার নাম ছিল "শঙ্খনীল কারাগার"।
৪.
১৯৯৬ সাল। প্রথম ঢাকায় এসেছি। মোহাম্মদপুরের খুপরি টাইপের একটা ভাড়া বাসায় উঠেছি। একদিকে মার্চ মাসের গরম, তার উপরে বাসায় কোন জানালা নাই! সাংঘাতিক অবস্থা। একদিন সেই বাসায় একটা মেয়ে আসল, এই প্রথম আমি কোন "সেলিব্রেটি"কে সামনাসামনি দেখলাম। মেয়েটা বিটিভির একটা ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করত। নাটকে মেয়েটা একটা পাইপের মধ্যে থাকত। মেয়েটার নাটকের নামটা ধরে আমরা পিচ্চিপাচ্চারা চিল্রাচিল্রি করে ডাকাডাকি করতে থাকলাম। মেয়েটা চলে যাওয়ার সময় আমাদের হৈচৈ শুনে পিছন ফিরে দাঁড়াল। খুশি হয়েছে কি হয়নি এই টাইপের একটা নির্লিপ্ত চাহুনি দিয়ে চলে গেল। আমরা অবশ্য তাতেই খুশি। মেয়েটা যে নাটকে অভিনয় করত তার নাম ছিল "নক্ষত্রের রাত"।
৫.
আজ রবিবার। আজকে রবিবার না হলেও আরেকটা মজার নাটকের নাম। তিতলি আর কঙ্কা চরিত্রের দুইটা মেয়ে ছিল নাটকে। জাহিদ হাসান একটা আঁতেল টাইপের চরিত্রে অভিনয় করত। তিতলি-কঙ্কাকে তিতলি ভাইয়া আর কঙ্কা ভাইয়া বলত! নাটকের খুব মজার একটা দৃশ্য ছিল এমন:
জাহিদ হাসানকে কিছু বিমূর্ত ছবি দেখানো হচ্ছে, ব্যাপারটা বোধহয় কোন সাইকোলজিক্যাল এক্সপেরিমেণ্ট ছিল। জাহিদের উত্তরগুলো যাচাই বাছাই করে তার মানসিক অবস্থা বোঝার চেষ্টা আরকি। সংলাপ নিম্নরুপ:
চাচা: এই (একটি ছবি দেখিয়ে) ছবিটা দেখা তোমার কি মনে হয?
জাহিদ: হিজিবিজি!
চাচা: হিজিবিজি? আচ্ছা ( আরেকটা ছবি দেখিয়ে ) এই ছবিটা দেখে কেমন লাগে?
জাহিদ: এইটা আরো হিজিবিজি!
চাচা: (বিরক্ত)আরো হিজিবিজি? দাঁড়াও, এইটা ( তৃতীয় ছবি ) দেখে কেমন অনুভুতি হচ্ছে?
জাহিদ: হিজিবিজি হিজিবিজি!
৬.
২০০৩ সাল। গণহারে বই পড়ছি। সামনে যা পাই সেটাই পড়ে ফেলি। বহুদিন ধরে বাসায় "মিসির আলীর অমিমাংসিত রহস্য" নামের একটা বই আছে। বইয়ের মলাটে মানুষের হাত-পা-নাক টাইপের একটা ছবি! আগে নেড়েচেড়ে দেখেছি, কখনো খুলে দুই এক পাতা পড়েছি, তবে পুরোটা পড়িনি। এইবার সবটুকু পড়ে ফেললাম। শেষের দিকে এমন উত্তেজনা হচ্ছিল, মনে হচ্ছিল সব কিছু আমার চোখের সামনে ঘটছে। অসাধারণ! দেখি মিসির আলীর আরো একটা বই আছে বাসায়, "আমিই মিসির আলী"। ঐটাও পড়ে ফেললাম। দুইটা গল্পই এখনো চোখের সামনে ভাসে!
৭.
২০০৪ সাল, বাসায় কেউ নাই। টিভিতে একা একা বসে একটা সিনেমা দেখছি, নাম "আগুনের পরশমনি"। আমার খুব প্রিয় সিনেমা। যতবারই দেখি ততবারই ভাল লাগে। আর যখন আসাদুজ্জামান নূর বলে ওঠে, "ভোর পর্যন্ত টিকব বলে মনে হয় না", তখন ভ্যা করে কান্না শুরু করি!
৮.
২০০৫ কি ২০০৬ বইমেলা থেকে বিশাল এক উপন্যাস কিনেছি। নাম "জোছনা ও জননীর গল্প", বইটার মলাটটা খুব সুন্দর, হাত দিয়ে স্পর্শ করলে মলাটে লেখা অক্ষরগুলো আলাদাভাবে টের পাওয়া যায়। বইটা পড়লাম, খুব সহজ ভাষায় লেখা। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে উপন্যাস আগেও পড়েছি, বিশেষ করে আনিসুল হকের "মা" আগেই পড়া ছিল। তাই ভাল লাগছিল, কারণ "মা" কিংবা "একাত্তরের দিনগুলি"র বাস্তব চরিত্রগুলোই ঘুরেফিরে আসছিল। তবে খুব আহামরি লাগেনি, আরো অনেক বেশি প্রত্যাশা ছিল। বইটার শেষটা পড়ে অবশ্য কান্নাকাটি করেছি, তবে এইটা নতুন কিছু না। বই পড়ে, সিনেমা দেখে আমি প্রায়ই কান্নাকাটি করি।
৯.
২০১০ সালের শেষ কি ২০১১ সালের শুরুর দিকের কথা। একদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের করিডর ধরে হাঁটছি। শুনলাম কেউ একজন আরেকজনকে বলছে, "জানেন, হুমায়ূন আহমেদের মেয়ে টিচার হয়ে আমাদের ভার্সিটিতে আসছে।" জিনিষটা শুনে আমার অনেক কৌতুহল হল। আমি হুমায়ূন আহমেদের মেয়েকে দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা শুরু করলাম। একদিন কেএসওয়াই স্যার আমাকে ডেকে বলল, "তারিফ, ড: নোভা আহমেদ এসেছেন, তার সাথে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দেখা কর"। আমি তখন দুরুদুরু বুকে দেখা করতে গেলাম ডক্টর নোভার সঙ্গে, হুমায়ূন আহমেদের মেয়ে! আমার এখন মনে হয়, নোভা ম্যাডাম হচ্ছে আমার ইচ্ছাপুরণের জ্বীন। তার কাছে যখন যা চাই, চোখের পলকে তা পাওয়া হয়ে যায়। ব্যাপারটা কিন্তু এমনও না যে ইচ্ছাগুলোর যোগাড়যন্ত্র করা ভীষণ সহজ! আমরা অবশ্য ম্যাডামের সামনে হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে কোন কথা বলি না, ভাবখানা এমন যে আমরা কিছুই জানি না!
১০.
হুমায়ূন আহমেদের তখন ক্যান্সার ধরা পড়েছে। ডাক্তার কড়া ভাষায় তাকে ভয়ংকর কিছু কথা শুনিয়েছেন, তাই তিনি কিছুটা হলেও বিচলিত। এমন সময় তিনি একটি কলাম লিখেছিলেন "মা" কে নিয়ে। কলামটি প্রথম আলোতে ছাপানো হয়েছিল। খুবই অসাধারণ একটা লেখা, ছোট কিন্তু প্রখর। হুমায়ূন আহমেদের লেখনি প্রতিভা নিয়ে কারো কোন সন্দেহ থাকলে এই লেখাটা একবার পড়ে দেখতে পারেন, তারপর আর সন্দেহ থাকার কথা না! তবে লেখাটা পড়ে মুহম্মদ জাফর ইকবালের একটা উক্তি আবারো মনে পড়ে গিয়েছিল, "" Humayun Ahmed has a great camera, but he only takes picture of birthday parties "।
শেষ কথা
কালকে রাতে রাকিন ফোন করল। বলল, "জান, হুমায়ূন আহমেদ মারা গেসে"। ৬৩ বছর বয়সটা বোধহয় খুব বেশি না, বিশেষ করে হুমায়ূন আহমেদের জন্য তো অবশ্যই না। ব্যাপারটা চিন্তা করতে গিয়ে আমার মন খারাপ রোগটা ফিরে আসল। এই রোগটা সারানো খুব সহজ কোন ব্যাপার হবে না
* "হুমায়ূন, তোর নেই কোন গুণ", এই লাইনটি হুমায়ূন আহমেদকে তার প্রিয় কোন শিক্ষক মজা করে বলতেন। কি যেন মনে হল, তাই এই লাইনটাই শিরোনামে দিয়ে দিলাম।১.
প্রথমা গল্পটা আমার মার মুখে শোনা। ১৯৭৪ সাল। বাংলা সাহিত্যের ভর্তি পরীক্ষায় "একটি উপন্যাস নিয়ে সমালোচনা লিখ" টাইপের একটা প্রশ্ন আসল। মাত্র ক'দিন আগেই আম্মার "নন্দিত নরকে" ৰইটা পড়া হয়ে গেছে। আম্মা তাই খুব একটা চিন্তা ভাবনা না করে ঐ উপন্যাসটার উপরই সমালোচনা লিখে ফেলল। সমালোচনাটা বোধহয় ভালই লিখেছিল। কারণ, আম্মা কুমিল্লার ভিক্টোরিয়া কলেজে সুযোগ পেয়ে গেল! হুমায়ূন আহমেদের বয়স তখন মাত্র ২৬ বছর।
২.
১৯৯৪ সাল ( খুব সম্ভবত ), আমরা তখন খুলনায় থাকি। সারা সপ্তাহ গোমড়ামুখে ঘোরাফেরা করি আর মঙ্গলবার হওয়ার আশায় বসে থাকি, কারণ মঙ্গলবারে "ধারাবাহিক নাটক" হয়। একদিন নতুন একটা নাটক শুরু হল। নাটকের প্রথম দৃশ্যটা এখনো আমার চোখে লেগে আছে। দৃশ্যটা এইরকম: সুবর্ণা মুস্তাফা একটা অফিসে বসে আছে, টাইপরাইটারের সামনে। কিছুটা বিরক্ত ও আনমনা হয়ে হঠাৎ করে সূবর্ণা একটা লাইন লিখলেন, "আমার খুব মাথা ধরেছে"। আমি তখন বাংলা সবে পড়া শিখেছি, সেই কারণেই কিনা, চোখ বন্ধ করলেও আমি ঐ লাইনটা দেখতে পাই। নাটকটার নাম ছিল "কোথাও কেউ নেই"।
৩.
১৯৯৫ সাল। আব্বা ট্রান্সফার হয়ে ঢাকায় গিয়েছে। আমরা এখনো যাই নি। পাশের বাড়ির "অমির আম্মা" একটি দুঃসাহসিক প্রস্তাবনা দিয়েছে। সেটি হল, সবাই মিলে সিনেমা দেখতে যাব। এই নিরীহ ব্যাপারটা দুঃসাহসিক এই জন্য যে, আমরা সিনেমা দেখতে গিয়েছি এইটা যদি আব্বা জানে তাহলে আমাদের খবর আছে। তাই আব্বাকে ফোন ভুলভাল বলে আমরা সিনেমা দেখতে গেলাম। ওরে বাব্বা, কত বড় বড় লোক পর্দার সামনে দাঁড়িয়ে অভিনয় করছে, মানে তখন আমার তাই মনে হয়েছিল। আমি বসে বসে দেখলাম। সিনেমা শেষে গোঁ ধরলাম পর্দাটা একবার ছুঁয়ে দেখব, আম্মা খুব একটা পাত্তা দিল না। ওহ, সিনেমার নাম ছিল "শঙ্খনীল কারাগার"।
৪.
১৯৯৬ সাল। প্রথম ঢাকায় এসেছি। মোহাম্মদপুরের খুপরি টাইপের একটা ভাড়া বাসায় উঠেছি। একদিকে মার্চ মাসের গরম, তার উপরে বাসায় কোন জানালা নাই! সাংঘাতিক অবস্থা। একদিন সেই বাসায় একটা মেয়ে আসল, এই প্রথম আমি কোন "সেলিব্রেটি"কে সামনাসামনি দেখলাম। মেয়েটা বিটিভির একটা ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করত। নাটকে মেয়েটা একটা পাইপের মধ্যে থাকত। মেয়েটার নাটকের নামটা ধরে আমরা পিচ্চিপাচ্চারা চিল্লাচিল্লি করে ডাকাডাকি করতে থাকলাম। মেয়েটা চলে যাওয়ার সময় আমাদের হৈচৈ শুনে পিছন ফিরে দাঁড়াল। খুশি হয়েছে কি হয়নি এই টাইপের একটা নির্লিপ্ত চাহুনি দিয়ে চলে গেল। আমরা অবশ্য তাতেই খুশি। মেয়েটা যে নাটকে অভিনয় করত তার নাম ছিল "নক্ষত্রের রাত"।
৫.
আজ রবিবার। আজকে রবিবার না হলেও আরেকটা মজার নাটকের নাম। তিতলি আর কঙ্কা চরিত্রের দুইটা মেয়ে ছিল নাটকে। জাহিদ হাসান একটা আঁতেল টাইপের চরিত্রে অভিনয় করত। তিতলি-কঙ্কাকে তিতলি ভাইয়া আর কঙ্কা ভাইয়া বলত! নাটকের খুব মজার একটা দৃশ্য ছিল এমন:
জাহিদ হাসানকে কিছু বিমূর্ত ছবি দেখানো হচ্ছে, ব্যাপারটা বোধহয় কোন সাইকোলজিক্যাল এক্সপেরিমেণ্ট ছিল। জাহিদের উত্তরগুলো যাচাই বাছাই করে তার মানসিক অবস্থা বোঝার চেষ্টা আরকি। সংলাপ নিম্নরুপ:
চাচা: এই (একটি ছবি দেখিয়ে) ছবিটা দেখা তোমার কি মনে হয?
জাহিদ: হিজিবিজি!
চাচা: হিজিবিজি? আচ্ছা ( আরেকটা ছবি দেখিয়ে ) এই ছবিটা দেখে কেমন লাগে?
জাহিদ: এইটা আরো হিজিবিজি!
চাচা: (বিরক্ত)আরো হিজিবিজি? দাঁড়াও, এইটা ( তৃতীয় ছবি ) দেখে কেমন অনুভুতি হচ্ছে?
জাহিদ: হিজিবিজি হিজিবিজি!
৬.
২০০৩ সাল। গণহারে বই পড়ছি। সামনে যা পাই সেটাই পড়ে ফেলি। বহুদিন ধরে বাসায় "মিসির আলীর অমিমাংসিত রহস্য" নামের একটা বই আছে। বইয়ের মলাটে মানুষের হাত-পা-নাক টাইপের একটা ছবি! আগে নেড়েচেড়ে দেখেছি, কখনো খুলে দুই এক পাতা পড়েছি, তবে পুরোটা পড়িনি। এইবার সবটুকু পড়ে ফেললাম। শেষের দিকে এমন উত্তেজনা হচ্ছিল, মনে হচ্ছিল সব কিছু আমার চোখের সামনে ঘটছে। অসাধারণ! দেখি মিসির আলীর আরো একটা বই আছে বাসায়, "আমিই মিসির আলী"। ঐটাও পড়ে ফেললাম। দুইটা গল্পই এখনো চোখের সামনে ভাসে!
৭.
২০০৪ সাল, বাসায় কেউ নাই। টিভিতে একা একা বসে একটা সিনেমা দেখছি, নাম "আগুনের পরশমনি"। আমার খুব প্রিয় সিনেমা। যতবারই দেখি ততবারই ভাল লাগে। আর যখন আসাদুজ্জামান নূর বলে ওঠে, "ভোর পর্যন্ত টিকব বলে মনে হয় না", তখন ভ্যা করে কান্না শুরু করি!
৮.
২০০৫ কি ২০০৬ বইমেলা থেকে বিশাল এক উপন্যাস কিনেছি। নাম "জোছনা ও জননীর গল্প", বইটার মলাটটা খুব সুন্দর, হাত দিয়ে স্পর্শ করলে মলাটে লেখা অক্ষরগুলো আলাদাভাবে টের পাওয়া যায়। বইটা পড়লাম, খুব সহজ ভাষায় লেখা। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে উপন্যাস আগেও পড়েছি, বিশেষ করে আনিসুল হকের "মা" আগেই পড়া ছিল। তাই ভাল লাগছিল, কারণ "মা" কিংবা "একাত্তরের দিনগুলি"র বাস্তব চরিত্রগুলোই ঘুরেফিরে আসছিল। তবে খুব আহামরি লাগেনি, আরো অনেক বেশি প্রত্যাশা ছিল। বইটার শেষটা পড়ে অবশ্য কান্নাকাটি করেছি, তবে এইটা নতুন কিছু না। বই পড়ে, সিনেমা দেখে আমি প্রায়ই কান্নাকাটি করি।
৯.
২০১০ সালের শেষ কি ২০১১ সালের শুরুর দিকের কথা। একদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের করিডর ধরে হাঁটছি। শুনলাম কেউ একজন আরেকজনকে বলছে, "জানেন, হুমায়ূন আহমেদের মেয়ে টিচার হয়ে আমাদের ভার্সিটিতে আসছে।" জিনিষটা শুনে আমার অনেক কৌতুহল হল। আমি হুমায়ূন আহমেদের মেয়েকে দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা শুরু করলাম। একদিন কেএসওয়াই স্যার আমাকে ডেকে বলল, "তারিফ, ড: নোভা আহমেদ এসেছেন, তার সাথে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দেখা কর"। আমি তখন দুরুদুরু বুকে দেখা করতে গেলাম ডক্টর নোভার সঙ্গে, হুমায়ূন আহমেদের মেয়ে! আমার এখন মনে হয়, নোভা ম্যাডাম হচ্ছে আমার ইচ্ছাপুরণের জ্বীন। তার কাছে যখন যা চাই, চোখের পলকে তা পাওয়া হয়ে যায়। ব্যাপারটা কিন্তু এমনও না যে ইচ্ছাগুলোর যোগাড়যন্ত্র করা ভীষণ সহজ! আমরা অবশ্য ম্যাডামের সামনে হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে কোন কথা বলি না, ভাবখানা এমন যে আমরা কিছুই জানি না!
১০.
হুমায়ূন আহমেদের তখন ক্যান্সার ধরা পড়েছে। ডাক্তার কড়া ভাষায় তাকে ভয়ংকর কিছু কথা শুনিয়েছেন, তাই তিনি কিছুটা হলেও বিচলিত। এমন সময় তিনি একটি কলাম লিখেছিলেন "মা" কে নিয়ে। কলামটি প্রথম আলোতে ছাপানো হয়েছিল। খুবই অসাধারণ একটা লেখা, ছোট কিন্তু প্রখর। হুমায়ূন আহমেদের লেখনি প্রতিভা নিয়ে কারো কোন সন্দেহ থাকলে এই লেখাটা একবার পড়ে দেখতে পারেন, তারপর আর সন্দেহ থাকার কথা না! তবে লেখাটা পড়ে মুহম্মদ জাফর ইকবালের একটা উক্তি আবারো মনে পড়ে গিয়েছিল, "" Humayun Ahmed has a great camera, but he only takes picture of birthday parties "।
শেষ কথা
কালকে রাতে রাকিন ফোন করল। বলল, "জানো, হুমায়ূন আহমেদ মারা গেসে"। ৬৩ বছর বয়সটা বোধহয় খুব বেশি না, বিশেষ করে হুমায়ূন আহমেদের জন্য তো অবশ্যই না। ব্যাপারটা চিন্তা করতে গিয়ে আমার মন খারাপ রোগটা ফিরে আসল। এই রোগটা সারানো খুব সহজ কোন ব্যাপার হবে না
* "হুমায়ূন, তোর নেই কোন গুণ", এই লাইনটি হুমায়ূন আহমেদকে তার প্রিয় কোন শিক্ষক মজা করে বলতেন। কি যেন মনে হল, তাই এই লাইনটাই শিরোনামে দিয়ে দিলাম।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুলাই, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:৫৫