somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রথম দিন ক্যাম্পাসে

১০ ই জুন, ২০০৯ রাত ১২:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজকে সকালে মনটা খুব লাফাচ্ছিল! রাতে ঘুম না হলেও উত্তেজনায় ক্লান্তি একেবারে উড়ে যাবার যোগাড়। আজ যে নর্থ সাউথের নতুন ক্যাম্পাসে যাচ্ছি প্রথমবারের মত ক্লাস করতে! বসুন্ধরাতে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের যে বড়সড় ক্যাম্পাসটি খুলেছে, ওয়েব সাইটে সেটির গ্রাফিক্যাল ছবিই দেখেছি এতদিন। দেখেই বুঝেছিলাম অসাধারণ কিছু হতে যাচ্ছে। আজ সশরীরে সেটাই অনুভব করলাম। দু'দফা আইডি কার্ড দেখিয়ে যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসে ঢুকলাম, অদ্ভূত এক ভাললাগা ছড়িয়ে গেল সারা মনে, যেটা বুঝিয়ে বলা আসলেই কঠিন।

গত বছরে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু করার পর থেকে আজকের আগ পর্যন্ত আমি ক্লাস করেছি কাকলি মোড়ের বনানী ক্যাম্পাসে। অবশ্য অনেকেই ছাড়া ছাড়া তিনটা-চারটা বিল্ডিং, আর তার মাঝে গাড়ি চলা রাস্তার সমাহারকে ক্যাম্পাস বলে মেনে নিতে চাইত না। আমি একটু অতি উত্সাহী টাইপের মানুষ, যা দেখি তাই ভাল লাগে, তবে অনেকেই আমাদের পুরনো বিল্ডিংগুলোকে মুরগীর খাঁচা বলে খুব মজা পেত। আমাদের "ফার্মের মুরগী" উপাধিটিও বোধ হয় ওখান থেকেই এসেছে :) । তবে গত সেমিস্টারেই আমাদের পুরনো ক্যাম্পাস ছেড়ে দেওয়া নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। তারপর বনানীকে কনসার্ট করে বিদায় দেয়া আর বেতন কমানোর দাবিতে ছাত্রদের হুলস্থুল আন্দোলনের কথা তো সবারই জানা। যাক সে কথা।

NSU র নতুন ক্যাম্পাসটা আমার কল্যাণপুরের বাসা থেকে বিশদ দুরে বলে আমার একটু সমস্যাই হয়ে গিয়েছিল। আর গোবেচারা আমি যেহুতু আগে ও পথে পা মাড়াইনি তাই আজকে সাহস করে ভোর ৬টাতেই রওনা হলাম গন্তব্যের উদ্দেশ্যে। তারপর পথে লেগুনা, বাস, ম্যাক্সি, রিকশাসহ ঢাকা শহরের যাবতীয় যানবাহনের সাহায্য নিয়ে যখন যমুনা ফিউচার পার্কের ঠিক পিছনে পৌছালাম তখন প্রায় ৭ টা বাজে। আমি যখন গিয়ে গেটের সামনে দাঁড়ালাম তখন দেখি আর মাত্র তিনজন এসে পৌঁছেছে ক্যাম্পাসের গেটে, তখনো ঢুকতে দেয়া হচ্ছিল না আমাদের। গেটের বাইরে থেকে দেখলাম বিল্ডিয়ের সামনেটা তখনো পুরোপুরি শেষ হয়ে ওঠেনি। সামনে পিছনে আরো কিছু কাজ বাকি আছে, ভিতরেও একই অবস্থা হয়ত। তবে আমার হৃদয় তখনি প্রেয়সীর প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে :P বাইরে থেকে দেখেই আমার অবস্থা "স্পিকটি নট"। পৌনে আটটার দিকে আমরা ঢোকা শুরু করলাম। বিল্ডিংয়ের পাশ দিয়ে হেঁটে গিয়ে কাঁচের দরজা পেরিয়ে ঢুকে পড়লাম স্বপ্নপুরী।

মূল ক্যাম্পাসে ঢুকে আমার যে অনুভূতি হল তা আর বলার মত না। ভাবতেই বিস্ময় আর আনন্দ হচ্ছিল, এটা আমাদের ক্যাম্পাস! এর আগে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়, দিনাজপুরের হাজ্বী দানেশ বিশ্ববিদ্যালয় আর মাওলানা ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যম্পাস দেখেছি, এনএসইউ র ক্যাম্পাস তো কখনো দেখিনি! আমার এই স্বপ্নরাজ্যটির বর্ণণা আমি ঠিক দিতে পারব না, আসলে নিজেই পুরোটা দেখে উঠতে পারিনি এখনো। ক্যাম্পাসের ভিতরটা আসলে পাকা করা একটা খোলা জায়গা, তার উত্তর আর দক্ষিণ পাশে মূল দুইটি বিল্ডিং। নাম নর্থ আর সাউথ একাডেমিক ভবন। একপাশের ভবনকে একটা বিশাল আয়নায় ধরলে যে প্রতিবিম্ব হবে ঠিক তেমনি অপর পাশের ভবনটি। পূর্ব দিকে অডিটরিয়াম। পশ্চিমটাও খুব সুন্দর, তবে ওদিকের কাজটা এখনো শেষ হয় নি। ভবনের ডিজাইনগুলো এমনভাবে করা হয়েছে যে পুরোটাকেই খুব খোলামেলা মনে হয়। একাডেমিক ভবনগুলোর মাঝখানে যে করিডোর সেগুলো একদম খোলা। আর দুই ভবনকে জোড়া দিয়েছে এক ঝুলন্ত ব্রিজ, মনোমুগন্ধকর!

ক্লাসরুমগুলো সব মোটামুটি তৈরি হয়ে গিয়েছে। হলিউডের সিনেমাগুলোতে স্কুল-কলেজে আমরা যেমন লকার দেখি সেগুলোও অাছে অনেকগুলি :) আমার প্রথম ক্লাসটা ছিল সকাল আটটায়। কিন্তু আমাদের ক্লাসরুম তখনো তৈরি হয় নি। তাড়াহুড়ো করে "মামা"রা এসে সব ঝেড়েমুছে ঠিক করে গেল। শুরু হয়ে আমাদের নতুন ক্যাম্পাসের প্রথম ক্লাস!

সব চেয়ে যে ব্যাপারটা আমার ভাল লেগেছে তা হল পুরো ক্যাম্পাসজুড়ে সহপাঠীদের স্বত:স্ফূর্ত আনাগোনা। এমনকি ক্লাস করার সময়ও কাঁচের বড় বড় জানালাগুলো দিয়ে বাইরে তাকালেই দেখা যায় বন্ধুদের প্রিয় মুখগুলো। কেউ হয়ত হেঁটে হেঁটে ক্লাস করতে যাচ্ছে, কেউ হয়ত খোলা বারান্দাগুলিতে হেলান দিয়ে অলস সময় কাটাচ্ছে। ক্লাস শেষ করে ঘুরে ফিরে লিফটে করে যখন নিচে নামলাম তখন দরজা খোলা মাত্র মনে হল যেন কোন ফুটবল স্টেডিয়ামে এসে পড়েছি। এত হৈচৈ দেখে নিজেরও লাফাতে ইচ্ছা হচ্ছিল আর কি ;) আমি নিশ্চিত আজকে যারা ক্লাস করতে এসেছিল, কিংবা কেবল একদফা ঘুরতে তাদের সবার মনের অবস্থাও আমার মতই ছিল। কিন্তু সবার চলাফেরার সাবলীলতা দেখে মনে হচ্ছিল সবাই একদিনেই ক্যাম্পাসটিকে কত আপন করে নিয়েছে। আমার গণিত শিক্ষক মজা করে বলছিলেন, নর্থ সাউথ কর্তৃপক্ষ নতুন ক্যাম্পাসে আসার পর যদি বেতন বাড়াত, তাহলে বোধহয় আর কেউই আন্দোলন করত না!

যখন বাসায় ফিরছিলাম তখন পাড়ার এক ছোট ভাই বলে উঠল, নতুন ক্যাম্পাস হলে কি হবে, নর্থ সাউথ তো ভুয়া ইউনিভার্সটি। অবশ্য এ জাতীয় কথা আমার খুব গা সওয়াই বলা চলে, তবে আজকে একটু বেশিই খারাপ লাগল। মুচকি হেসে মনে মনে বললাম, ফার্মের মুরগীগুলোর বড় বড় ডিম পাড়ার সময় এসেছে এবার।
৯টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×