অঙ্ক স্যারের পকেটে থাকত এক বক্স দেয়াশলাই, কাঠি অনেকগুলো। অনুমানিক একশটির মত হবে। দাম পঞ্চাশ পয়সা। ধূমপানের অভ্যাস স্যারের নেই। তবুও দেয়াশলাই রাখতেন ছাত্রদের অঙ্ক শেখানোর জন্য। যোগ, বিয়োগ, গুন, আর ভাগ সব কিছু দেয়াশলাইয়ের কাঠি দিয়েই বুঝিয়ে দিতেন। ছাত্রদের বলতেন তারা যেন আইস্ক্রিমের শলাকা যোগাড় করে আনে। তখনকার দিনে এক টাকায় চারটা আইসক্রিম পাওয়া যেত। আইস্ক্রিমের শলাকা জমানোই ছিল ছাত্রদের প্রধান কাজ। আইস্ক্রিমওয়ালা দশটি শলাকার বিনিময়ে পচিশ পয়সা দামের একটা আইসক্রিম ফ্রি দিত। অঙ্ক স্যারের কারনে আইসক্রিমওয়ালার শলাকার ব্যবসাটা তেমন জমতে পারে নি।
ক্লাস টু আর থ্রির অঙ্ক ক্লাস নিতেন জনাব মর্তুজ আলী। কোকড়া চুল মাথায়, ইয়া বড় গোফ উনার। নিয়মিত কলপ দিতেন তাই অন্যরকম একটা তেজ তেজ ভাব থাকত। চামড়া বয়সের ভারে সামান্য কুচকে গেছে। তবে চুলে গোফে কঠিন কটমটে তেজী ভাবটা লেপ্টে থাকত। চোখ দুটি নেশাখোর মানুষদের মত সারাক্ষন রক্ত লাল হয়ে থাকত। সেদিকে তাকালে অন্তরাত্মা কেপে উঠত। এক হাতে চক, ডাস্টার আর নাম ডাকার খাতা। অন্য হাতে তেল মাখানো জালি বেত। নির্দিষ্ট সময়ের আগেই ক্লাস নেয়ার জন্য হাজির হয়ে যেতেন। এসেই ক্লাস ক্যাপ্টেনের ডাক পড়ত। ক্লাস ক্যাপ্টেনের প্রথম কাজ ছিল ছাত্র-ছাত্রীর মোট উপস্তিতি গুনে ব্ল্যাকবোর্ডের এক কোণায় লিখে রাখা। সেই সাথে দিন তারিখ আর সন লিখে রাখতে হত। তারপর নাম ডাকা। পিনপতন নিরবতার মধ্যে নাম ডাকা শেষ হলে শুরু হত বিগত দিনের বাড়ির কাজ উশুল করা। যারা কোন কারনে বাড়ির কাজ জমা দিতে পারত না তাদের ব্ল্যাকবোর্ডের সামনে লাইন বেঁধে দাড় করানো হত। অন্যদের খাতা দেখা শেষ করে অপরাধীদের শাস্তির পালা। তাদের পিঠ আর স্যারের জালি বেত, অসাধারন কম্বিনেশন। বেতের এক মাথায় ধরে ধনুকের মত টেনে এনে ঠিক মেরুদন্ড বরাবর ছেড়ে দিতেন। ছাড়ার আগ মুহুর্তে সুর করে সেসময়কার বিখ্যাত টিভি বিজ্ঞাপনের জিঙ্গেল গাইতেন, দেখ দেখ দেখরে রুমানার বাহার। হাহাহা...