দারুল উলূম হাটহাজারীর ইতিবৃত্ত
মাওলানা হাফেয মুহিউদ্দীন মুহাম্মাদ আনিছ
মহানরাব্বুল আলামীন আল্লাহ তায়ালা সমগ্র জগত সৃষ্টি করে মানবজাতিকে সম্মানিত করেছেনআশরাফুল মাখলুকাত তথা সৃষ্টির সেরারূপে। এই মানবজাতির হিদায়াত ও কল্যাণের তরেসৃষ্টির শুরু থেকেই নবী-রাসূলগণকে পাঠিয়েছেন চিরশান্তি, নিরাপত্তা ও সফলতার বার্তানিয়ে। তাঁরা ছিলেন আল্লাহ তায়ালার নিষ্পাপ বান্দা। আল্লাহর প্রিয়পাত্র এইনবী-রাসূলগণ যাবতীয় ভ্রষ্টতা, গোমরাহী, পাপাচার ও নাফরমানীর অতলান্তে নিমজ্জিতমানবজাতিকে উদ্ধার করে পরিচালিত করেছেন চিরকল্যাণ ও হিদায়াতের আলোকিত রাজপথে।চিরমুক্তির দিশা প্রদানের পাশাপাশি এই সবুজ গ্রহে খোদার রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছেনতাঁরা। নবুওয়াতের মহান দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সবচেয়ে বেশি কষ্ট ও ত্যাগ স্বীকারকরেছেন সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ মুস্তাফা সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম।সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ পয়গাম্বর রাহমাতুল লিল আলামীন হযরত মুহাম্মাদ মুস্তাফা (সঃ)এর পর যেহেতু নবী-রাসূল আগমনের ধারা চিরতরে বন্ধ হয়ে গেছে, তাই আল্লাহর পথে দাওয়াতদেওয়ার এই মহান পয়গাম্বরী মিশনের গুরুদায়িত্ব বর্তায় তাঁর উম্মতের উপর। আর এইউম্মতের মধ্যে সর্বোত্তম হচ্ছেন সত্য ও ন্যায়ের ধারক ও বাহক হক্কানীউলামা-মাশায়েখ। তাঁরা নবী-রাসূলগণের উত্তরসুরী। পাপাচারে নিমজ্জিত জনগণকে আল্লাহরপথে ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব মূলতঃ তাঁদেরই। উলামা-মাশায়েখ এ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনকরে আসছেন যুগ যুগ ধরে। তাঁরা মানুষকে রাসূল (সঃ) এর আদর্শে পরিচালিত করার জন্যসর্বস্ব বিলিয়ে দিতেও কুণ্ঠাবোধ করেন না। তাঁরা ইসলাহী মিশন নিয়ে অক্লান্তভাবে কাজকরে যান। এই সুকঠিন দায়িত্ব পালনে তাঁদের বিপুল ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। সহ্য করতেহয় অন্যায়-অত্যাচার, নির্যাতন-নিপীড়ন ও নানাবিধ দুঃখ-কষ্ট। বুকের তাজা খুন ঢেলেদিয়ে অমূল্য জীবনও উৎসর্গ করতে হয় প্রয়োজনে।
নবীকরীম (সঃ) ইরশাদ করেছেন - " এ দুনিয়ার ভেতর সর্বাধিক পরীক্ষা নবী-রাসূলগণেরউপর এসেছে। অতঃপর যিনি যতটুকু নবী-রাসূলগণের নিকটবর্তী ছিলেন তাঁর উপরও তেমনিভাবেপরীক্ষা-বিপদাপদ আপতিত হয়েছে। "
দুর্গমগিরি, কান্তার মরু কিংবা অথৈ জলধি কোনো কিছুই প্রতিবন্ধক হতে পারেনি তাঁদের মহানলক্ষ্য অর্জনের পথে। জীবন-মৃত্যু তুচ্ছ জ্ঞান করে শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত সাধনাচালিয়ে যান বিরামহীনভাবে। যখনই ইসলাম ও মুসলিমগণের বিরুদ্ধে কোনো তাগুতী অপশক্তিমাথা চাড়া দিয়ে উঠে, তখনই তার বিরুদ্ধে দুর্বার প্রতিরোধ গড়ে তোলেন কালজয়ীসত্যপন্থী উলামা-মাশায়েখ। কাল কালান্তরে এর অসংখ্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেনতাঁরা। নবী-রাসূলগণ কোনো ধন-সম্পদ রেখে যাননি, রেখে গেছেন ঐশী ইল্ম। আরউলামা-মাশায়েখ এই ইল্মের সংরক্ষণ ও প্রচার-প্রসারে নিজেদের উৎসর্গ করেন নিষ্ঠারসাথে।
তাইতো প্রিয়নবী (সঃ) এর পবিত্র মুখনিঃসৃত বাণী - " আলেমগণ নবীগণের উত্তরসুরী।"
ভারতীয় উপমহাদেশে হক্কানী উলামা-মাশায়েখের আবির্ভাব ও অস্তিত্ব ছিল দিগভ্রান্ত মানবলোকেআলোর মশালস্বরূপ। তাঁদের প্রতিটি উচ্চারণে ছিল আল্লাহ ও রাসূল (সঃ) এর শাশ্বত বাণীএবং প্রতিটি আচরণ ও চাল-চলনে ছিল নবী কারীম (সঃ) এর আদর্শের অনুপম অনুসরণ। তাঁদেরজীবনের মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল-মানব জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ধর্মীয় আবরণে প্রচলিতনানাবিধ কুসংস্কার ও বিদ্আতের মূলোৎপাটন এবং প্রিয়নবী (সঃ) এর মৃতপ্রায় পবিত্রসুন্নাতসমূহের পুনরুজ্জীবন প্রদান ও বাস্তবায়ন।
তদানীন্তন বৃটিশ শাসিত এই উপমহাদেশের বঙ্গে শিক্ষা-দীক্ষা, সামাজিকতা, তাহ্যীব-তামাদ্দুনেরঅবস্থা ছিল মুসলিম মিল্লাতের প্রতিকূলে। তাওহীদ-রিসালাত-আখিরাত তথা দ্বীন সম্পর্কে অধিকাংশ মানুষেরঅজ্ঞতা ছিল সর্বজনবিদিত। মুসলিম উম্মাহর বৃহদাংশ শির্ক-বিদ্আত ও ঈমান-আক্বীদা পরিপন্থীকার্যকলাপে মগ্ন ছিলো। দ্বীনে ইসলামের আসল সৌন্দর্য অপরিচিত হয়ে পড়েছিল। আর সরলমনাজনসাধারণ এ কাজগুলোকেই ধর্মের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসাবে গুরুত্ব সহকারে পালন করছিল।উম্মাতে মুহাম্মাদিয়ার এই চরম যুগসন্ধিক্ষণে বাংলার বাণিজ্যিক রাজধানী ইসলামেরপ্রবেশদ্বার চট্টগ্রাম (ভূতপূর্ব ইসলামাবাদ) এর চারজন নিঃস্বার্থ উলামা-মাশায়েখ(আকাবিরে আরবায়া) এদেশের মুসলিমদেরকে কুরআন-হাদীস অনুযায়ী দ্বীন-শরীয়তের সহীহ্ইল্ম ও আমল শিক্ষাদানের নিমিত্তে বিশ্ববিখ্যাত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় দারুল উলূমদেওবন্দের অনুকরণে একটি কেন্দ্রীয় জ্ঞানকেন্দ্র প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
নিখিলভারতের সর্বজনগ্রাহ্য আলেমে হক্কানী, যুগশ্রেষ্ঠ বুযুর্গ শায়খ ফযলুর রহমান গঞ্জেমুরাদাবাদী(গঞ্জেমুরাদাবাদ - ভারতের লক্ষ্মৌ প্রদেশের আন্নো জেলার একটি প্রসিদ্ধ শহর) (রহঃ)এর সুযোগ্য খলীফা, দারুল উলূম দেওবন্দের কৃতি ছাত্র ও চট্টগ্রামের বোয়ালখালী থানারঅন্তর্গত বৈলতলী গ্রাম নিবাসী আশেকে কুরআন শায়খ আবদুল ওয়াহেদ বাঙ্গালী (রহঃ) (জন্মঃ১২৬৮ হিঃ/১৮৫০ ঈঃ, মৃঃ ১৩২৩ হিঃ/১৯০৫ ঈঃ) ধর্মের নামে পরিচালিত কুসংস্কার ও বিদ্আতসমূহেরপ্রতিরোধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলেন। অবর্ণনীয় ত্যাগ-তিতিক্ষা, ঠাট্টা-বিদ্রুপউপেক্ষা করে প্রিয়নবী (সঃ) এর মৃতপ্রায় পবিত্র সুন্নাতসমূহের পুনরুজ্জীবন প্রদান ওইসলাম ধর্মের নির্দেশিত সত্য-সরল-সুন্দর পথ প্রদর্শনের জন্য জিহাদ শুরু করেন। আলেমসমাজ, শিক্ষিত গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও জনসাধারণের অধিকাংশই তাঁর ডাকে সাড়া দিয়েদ্বীনের সঠিক শিক্ষা অনুযায়ী চলতে লাগলেন। তিনি হালাল জীবিকার জন্য সুন্নাতে রাসূল(সঃ) এর অনুসরণ-অনুকরণে চট্টগ্রাম শহরস্থ আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদের অনতিদূরে চন্দনপুরায়দোকান খুলে তাতে ভারতের লক্ষ্মৌ প্রদেশ থেকে টুপি, আতর, মুসল্লা এবং রুমাল আমদানীকরে সততা ও নিষ্ঠা সহযোগে ব্যবসা আরম্ভ করেন। এর মাধ্যমেও অনেক বন্ধু-বান্ধবকে হকপথের অনুসারী বানাতে সক্ষম হন। তন্মধ্যে চট্টগ্রামস্থ " সরকারী মুহ্সিনিয়ামাদ্রাসা " (বর্তমানে হাজী মুহাম্মাদ মুহসিন কলেজ) এর তৎকালীন কৃতি ছাত্র ওহাটহাজারী থানাধীন মাদার্শা নিবাসী মুজাদ্দেদে ওয়াক্ত শায়খ আবদুল হামীদ (রহঃ) (জন্মঃ১২৮৭ হিঃ/ ১৮৬৯ ঈঃ, মৃঃ ১৩৩৮ হিঃ/ ১৯২০ ঈঃ) এবং ফটিকছড়ি থানার বাবুনগর নিবাসী সূফীআজীজুর রহমান (রহঃ) (জন্মঃ ১২৮০ হিঃ/১৮৬২ ঈঃ, মৃঃ ১৩৪০ হিঃ/১৯২২ ঈঃ) কে দেশে প্রচলিতকুসংস্কার ও শির্ক-বিদ্আতের ভয়াবহতা সম্পর্কে অবহিত করার পাশাপাশি ইসলাম ধর্মেরপবিত্র সরল-সুন্দর পথ ও সুন্নাত সম্পর্কে কুরআন-হাদীস-ফিক্হশাস্ত্রের প্রমাণ্যকিতাবাদি থেকে অকাট্য দলিলাদি সহকারে আলোকপাত করার পর উভয়ে তাঁর হস্ত মুবারকেবাইয়াত গ্রহণ করে ঘনিষ্ঠ সহচররূপে এগিয়ে আসেন। অতঃপর তিনি নিজ ব্যবসা ত্যাগ করেতাঁদের উভয়কে নিয়ে তাঁর সংস্কার আন্দোলন পুরোদমে শুরু করেন। প্রথমে এই মহান ব্যক্তিত্রয়হাটহাজারী থানার খন্দকিয়া ও মাদার্শা এবং বোয়ালখালী থানার খরনদ্বীপ ইত্যাদি গ্রামসমূহেসহীহ্-শুদ্ধভাবে কুরআন-হাদীস ও বুনিয়াদী মাসায়েল শিক্ষাদানের জন্যে কয়েকটিফুরকানিয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। এমতাবস্থায় তাঁরা ভারতের কানপুর জামেউল উলূমমাদ্রাসা থেকে শিক্ষাপ্রাপ্ত, হাকীমুল উম্মত মাওলানা শাহ্ আশরাফ আলী থানভী (রহঃ)হতে দীক্ষাপ্রাপ্ত ও হাটহাজারী থানার চারিয়া মৌজার কাজী পাড়া নিবাসী মাওলানাহাবীবুল্লাহ্ কুরাইশী (রহঃ) (জন্মঃ ১২৮৩ হিঃ/১৮৬৫ ঈঃ, মৃঃ ১৩৬১ হিঃ/ ১৯৪২ ঈঃ) এর সন্ধানলাভ করেন। তারপর শায়খুল কুল আবদুল ওয়াহেদ বাঙ্গালী (রহঃ) এর ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ওসুদূরপ্রসারী মেহনতের বদৌলতে, শায়খ আবদুল হামীদ (রহঃ) ও সূফী আজীজুর রহমান (রহঃ)এর সক্রিয় সহযোগিতায় এবং হাকীমুল উম্মত মাওলানা শাহ্ আশরাফ আলী থানভী (রহঃ) এরপরামর্শে শায়খুল ইসলাম হযরত হাবীবুল্লাহ্ কুরাইশী (রহঃ) ১৩১৫ হিজরী মুতাবিক ১৩০৩বাঃ/ ১৮৯৬ঈঃ সনেবাংলাদেশে চট্টলার বুকে বেসরকারীরূপে সহীহ দ্বীনী ইল্মের সর্বপ্রথম জ্ঞানকেন্দ্র" মাদ্রাসা মুঈনুল ইসলাম " স্থাপন করেন। শায়খ হাবীবুল্লাহ্ কুরাইশী (রহঃ)শুরুর দিকে হাটহাজারী সদর থেকে তিন কিলোমিটার উত্তরে নিজ গ্রাম চারিয়ায় কোমলমতিশিশুদের তালীম দান করতে থাকেন।
প্রায়দুই বছর পর শায়খুল কুল (রহঃ), সুফী আজীজুর রহমান (রহঃ) এবং শায়খ আবদুল হামীদ (রহঃ)এর পরামর্শে ১৩১৭ হিঃ/১৮৯৮ ঈঃ সালে চারিয়া গ্রাম থেকে মাদ্রাসা স্থানান্তর করেহাটহাজারী বাজারের দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত প্রাচীনতম ফকীর মসজিদ (স্থাপিত ১৪৭৩ ঈঃ)এর উত্তর-পূর্ব পাশে যেখানে বর্তমান কবরস্থান-মিঠা হাটায় নিয়ে আসেন। বাজারেরশব্দদূষণ ও কুকুরের শোরগোলের কারণে উক্ত জায়গা থেকে মাদ্রাসার পুনঃস্থানান্তরঅত্যাবশ্যক হয়ে পড়ে। এই সময় কিছুদিনের জন্য হাটহাজারী বাসস্ট্যান্ডের দক্ষিণপার্শ্বস্থ ঝাড়-য়া দীঘির পাড় মসজিদ (হযরত জালাল শাহ্ মসজিদ) এর পাশে মাদ্রাসারশিক্ষা-দীক্ষার কাজ আনজাম দেওয়া হয়। এহেন নাযুক পরিস্থিতিতে স্থায়ীভাবে মাদ্রাসাচালুকরণ ও মুসলিমগণের দ্বীনী অবস্থার সংশোধন সম্পর্কে মাওলানা হাবীবুল্লাহ্কুরাইশী (রহঃ) প্রতি চন্দ্র মাসের ১৩ তারিখ হিসাবে পুরো এক বছর পর্যন্ত শায়খুল কুল(রহঃ), মাওলানা আবদুল হামীদ (রহঃ) এবং মাওলানা সূফী আজীজুর রহমান (রহঃ) -বুযুর্গত্রয়ের সাথে পরামর্শ করতে থাকেন। অতঃপর আল্লাহ্ পাকের অশেষ মেহেরবাণীতেবুযুর্গচতুষ্টয়ের ইখলাসময় প্রচেষ্টায় সুদীর্ঘ এক বৎসর যাবৎ পরামর্শের বরকতেস্থানীয় দ্বীনদার দানশীল ব্যক্তিত্ব জনাব গোলবদন জমাদারের স্ত্রী-পুত্রগণের বদান্যতায়বন্দর নগরী চট্ট্রগ্রাম হতে ১৯ কি.মি. উত্তরে হাটহাজারী থানার প্রাণকেন্দ্রে মাদ্রাসার বর্তমান জায়গাটিরকেন্দ্রীয় অংশ স্থায়ী গৃহ নির্মাণের জন্য পাওয়া যায়। আর ঐ স্থানেই মাওলানাহাবীবুল্লাহ্ কুরাইশী (রহঃ) ১৩১৯ হিঃ/১৯০১ ঈঃ সনে মাদ্রাসা স্থাপনের সর্বসম্মতসিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
পরিশেষেস্থানীয় দ্বীনদরদী জনসাধারণের শারীরিক-মানসিক-আর্থিক তথা সার্বিক সক্রিয়সাহায্য-সহযোগিতায় মাদ্রাসার জন্য প্রাপ্ত ভূমিতে ৬০ (ষাট) হাত লম্বা ও ২০ (বিশ)হাত চওড়া ছনের ছাউনি, বাঁশের বেড়াযুক্ত একটি গৃহ নির্মাণ করা হয়। মাদার্শা গ্রামেরলোহারপুল এলাকা হতে বাঁশ এবং চারিয়া গ্রামের শিকদার বাড়ি হতে ছন এবং অন্যান্যআনুষঙ্গিক বস্তু মাদ্রাসার সর্বপ্রথম গৃহের জন্য কবূল হয়। পাঠশালাটির মাঝখানেবাহিরে যাতায়াতের জন্য একটি শাহী দরজা রাখা হয়। এই অবস্থায় পাঠদান চলতে থাকে।পূর্ণাঙ্গরূপে মাদ্রাসা চালু করার যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহন সম্পন্ন হলে ১৭ মুহাররাম১৩২১ হিঃ অনুযায়ী পহেলা বৈশাখ ১৩১০ বাঃ/১৪ এপ্রিল ১৯০৩ ঈঃ সালের বুধবার প্রভাত হতেনিয়মতান্ত্রিকভাবে মাদ্রাসার শিক্ষা কার্যক্রম ও অন্যান্য প্রশাসনিক কাজকর্মেরযুগান্তকারী সুচনা হয়। ঐ দিনই শায়খুল ইসলাম মাওলানা হাবীবুল্লাহ্ কুরাইশী (রহঃ)জামাতে দোয়াযদাহুম হতে জামাতে পাঞ্জুম পর্যন্ত ২৩ (তেইশ) জন ছাত্রকে নিজ হাতেভর্তি রেজিস্টার খাতায় নাম লিপিবদ্ধ করে লেখাপড়ার ব্যবস্থা করেন। প্রথম দিনইহাটহাজারী থানার বিভিন্ন এলাকার ছাত্র ছাড়াও রাঙ্গুনিয়া থানার একজন ও বার্মা (বর্তমানমায়ানমার) এর একজন ছাত্র ভর্তি করা হয়। পর্যায়ক্রমে প্রথম সাত দিনে ৫০ (পঞ্চাশ) জনছাত্র ভর্তি করা হয়। ছাত্র সংগ্রহের সুকঠিন তাশকীলী গাশ্তের পুরোধা ছিলেন শায়খআবদুল হামীদ (রহঃ)। বিশ্ববরেণ্য বুযুর্গানে দ্বীনের হাতে গড়া সেদিনের জামাতেপাঞ্জুম পর্যন্ত মাদ্রাসা আজ " আল-জামিয়াতুল আহ্লিয়া দারুল উলূম মুঈনুলইসলাম " তথা " হাটহাজারী কও্মী বিশ্ববিদ্যালয় " বা " জাতীয়ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় " নামে স্বগৌরবে প্রতিষ্ঠিত। আর হিজরী বর্ষ অনুসারে১৩১৫ থেকে ১৪৩৪ সাল পর্যন্ত ১১৯ বর্ষে উপনীত হয়ে বিশ্বের অন্যতম, উপমহাদেশেরবৃহত্তর (ছাত্র সংখ্যায়) এবং বাংলাদেশের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ, সর্বপ্রাচীন ওসর্বশ্রেষ্ঠ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় হিসাবে পরিগণিত। উল্লেখ্য, এই মাকবূলজ্ঞানতীর্থের প্রথম শিক্ষক ছিলেন শায়খুল ইসলাম হযরত হাবীবুল্লাহ্ কুরাইশী (রহঃ)এবং প্রথম ছাত্র ছিলেন " বটতলীর পীর " লক্বে খ্যাত মাওলানা আবদুল আজীজ(রহঃ)। আধ্যাত্নিক জগতে মাওলানা আবদুল আজীজ (রহঃ) ছিলেন হাকীমুল উম্মত হযরত থানভী(রহঃ) এর খলীফা।
( চলবে ইনশাআল্লাহ )