শায়খুল ইসলাম সায়্যিদ হুসাইন আহমদ মাদানী (রহঃ)
ড. মুশতাক আহমদ
ألحمد لله ربّ العالمين والعا قبة للمتّقين والصّلواة والسّلام على سيّد الأنبياء والمرسلين وعلى اله وأصحابه وأزواجه وأحبّاء أولاده وعلماء أمّته واتباعه أجمعين أمّا بعد
১ম অধ্যায়
সমকালীন পরিস্থিতি ও সংগ্রাম-সূত্র
ইংরেজ শাসনপূর্ব ভারতবর্ষ
এক
প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সঃ) সমগ্র জাহানের জন্য রহমতরূপে প্রেরিত।
মহান আল্লাহর বাণীঃ
وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا رَحْمَةً لِلْعَالَمِينَ
আমি তো তোমাকে বিশ্ব জগতের প্রতি রহমতরূপেই প্রেরণ করেছি।
( আল কুরআনঃ ২১ : ১০৭ )
বিশ্বের সর্বত্র সত্যের আহবান পৌছানো তার আগমনের উদ্দেশ্য । কুরাইশ ও আরব গোত্রগুলির উৎপাতের দরুন তিনি ৬ষ্ঠ হিজরীর পূর্বে আরবের বাইরের দিকে মনোনিবেশের সুযোগ পাননি। হুদাইবিয়ার সন্ধি (৬২৮ খ্রি.) এর পর অনেকটা স্বস্তি লাভ করেন। তিনি নিজের চিঠিসহ দূত প্রেরণ করে বাইযানটাইন সম্রাট হিরাক্লিয়াস (Heraclius), পারস্য সম্রাট খসরু পারভেজ (Chosroes 11), মিসরের শাসনকর্তা আযীয মিসর, হাবশার রাজা নাজাশী (Negus), ইয়ামামার সর্দারবৃন্দ ও গাস্সানী শাসক হারিস প্রমুখের নিকট ইসলাম কবূলের আহবান জানান।
( মুহাম্মদ তাফাজ্জল হোছাইন ও ড.এ.এইচ.এম.মুজতবা হোছাইন, হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সঃ): সমকালীন পরিবেশ ও জীবন ( ঢাকাঃ ইসলামিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ, ১৯৯৮ ), পৃঃ ৬৮১ )
তখন দূরপ্রাচ্যে অবস্থিত “হিন্দ” তথা ভারত উপমহাদেশ সম্পর্কেও তাঁর দরবারে আলোচনা হয়। তিনি নিজ সাহাবীগণকে ভারতে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছানোর প্রতি উদ্বুদ্ধ করে বলেন,আমার উম্মতের দু’টি সেনাদলকে আল্লাহ তাআলা জাহান্নামের অগ্নি থেকে নিষ্কৃতি দিবেন। তন্মধ্যে একটি হল 'হিন্দ' অভিযানকারী সেনাদল আর অপরটি হল মার্য়াম তনয় হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম - এর সহযোগী সেনাদল।
মূল হাদীসঃ
قال رسول اللّه صلّى اللّه عليه وسلّم: عصابتان من أمّتى حرّر هما اللّه من النّار عصابة تغزو الهند وعصابة تكون مع عيسى بن مريم-عليهما السّلام-
( আস সুনান লিল ইমাম আন্ নাসায়ী, দেওবন্দ, দারুল কিতাব, হিঃ ১৩৫০, ২য় খণ্ড, গায্ওয়াতুল হিন্দ, পৃঃ ৫২ )
হযরত রসূলুল্লাহ (সঃ) এর উপরোক্ত বক্তব্য সাহাবীগণের মনে গভীর রেখাপাত করে। হযরত আবূ হুরায়রা (রঃ) (মৃঃ ৫৭/৫৮/৫৯ হিঃ) নিজের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, রসূলুল্লাহ (সঃ) আমাদেরকে হিন্দ বিজয়ের নিশ্চিত ওয়াদা দিয়েছেন। তাই সেই সময়ে যদি আমি জীবিত থাকি তাহলে অবশ্যই আমার ধনসম্পদ ও জীবন বিসর্জন দিতে কুন্ঠিত হব না। ঐ যুদ্ধে আমি নিহত হলে আমি শ্রেষ্ঠ শহীদের মর্যাদা পাব আর মঙ্গল মত ফিরে এলে জাহান্নাম থেকে নিষ্কৃতি লাভ করব।
মূল হাদীসঃ
وعدنا رسول اللّه صلّى اللّه عليه وسلّم غزوة الهند فإن أدركتها أنفق فيها نفسى و مالى فإن أقتل كنت من أفضل الشّهداء وإن أرجع فأنا أبو هريرة المحرّر
( প্রাগুক্ত, পৃঃ ৫২ )
রসূলুল্লাহ (সঃ) ঐ সময় 'সরবতক' নামক ভারতীয় জনৈক রাজাকে ইসলামের দাওয়াত জানালে তিনি কবুল করেন এবং নবী (সঃ) - এর জন্য ভারত থেকে যানজাবীল বা আদ্রক উপঢৌকন পাঠান। শায়খ যায়নুদ্দীন 'তুহফাতুল মুজাহিদীন ফী বাযি আহওয়ালিল বুর্তুকালীন' গ্রন্থে বলেন, মালাবার (কেরালা) - এর জনৈক রাজা 'চেরুমল পারুমল' তাওহীদ চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আরব গমন করেন এবং হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা (সঃ) - এর নিকট ইসলাম গ্রহণ করেন।
( ড. কাজী দীন মুহম্মদ, সম্পাদনা পরিষদ কর্তৃক সম্পাদিত, বাংলাদেশের উৎপত্তি ও বিকাশ ( ঢাকাঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, ১৯৯৩ ), পৃঃ ১৭৬; মোহাম্মদ আবদুল মান্নান, বাংলা ও বাংগালী মুক্তি সংগ্রামের মূল ধারা ( ঢাকাঃ সৃজন প্রকাশনী লিমিটেড, ফাল্গুন ১৩৯৭ ), পৃঃ ১০৪ )
এভাবে নবীজীর জীবন কালেই ইসলামের আহবান ভারতবর্ষে এসে পৌঁছে।
আরব্য বণিকরা অতীত কাল থেকেই ভারত উপমহাদেশের উপকূল অঞ্চলে যাতায়াত করত। ইসলাম প্রচারের প্রথম দিকে এই বণিকগণ বিশেষ দায়িত্ব পালন করেন। তাঁদের মাধ্যমে ভারতের পশ্চিম ও দক্ষিণ উপকূলীয় বন্দরসমূহে এবং বঙ্গোপসাগরের উপকূলীয় এলাকায় ইসলামী ভাবধারার আগমন ও প্রসার ঘটে।
( ড. তারা চাঁদ, ভারতীয় সংস্কৃতিতে ইসলামের প্রভাব ( ঢাকাঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, ১৯৯১ ), পৃঃ ২৭; The coin of Khalifa Harun-ur-Rashid, dated 172 H/788 A.D. found at Paharpur in the Rajshahi district, and the coin of one of his successors discovered at Mainamati in the Comilla district show that the Arab Muslim used to come Bengal either as traders or prechers from the eighth century. ( Dr. M. A. Rahim 'The Advent of Islam in Bangladesh', Islam in Bangladesh Through Ages, Dhaka, Islamic Foundation Bangladesh, ১৯৯৫, পৃঃ ১৫ ))
এই সময় ভারত মহাসাগরীয় বিভিন্ন দ্বীপপুঞ্জ, জাভা, সুমাত্রা, বোর্নিও, সেলিবিস, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ এমনকি দক্ষিণ চীনসাগর পাড়ি দিয়ে ইসলামের আহ্বান চীনে গিয়ে পৌঁছে।
( প্রচলিত প্রবাদ (اطلبوا العلم ولو كان بالصّين) জ্ঞান অর্জন কর চীন দেশে গিয়ে হলেও। এ প্রবাদটি রসূলুল্লাহ (সঃ) - এর জন্মের আগে থেকেই আরবদের মধ্যে প্রচলিত ছিল। এটি হাদীস বলে অনেকের ধারণা রয়েছে। বস্তুত এটি হাদীস নয়, পূর্ব থেকে প্রচলিত একটি প্রবাদ বাক্য। তবে মহানবী (সঃ) এ বাক্যের কোন প্রতিবাদ করেছেন বলে জানা যায়নি। তাই অনেকে এটিকে হাদীস মনে করেছেন। প্রবাদটির মাধ্যমে জানা যায় যে, ইসলামের বহু আগে থেকেই চীনদেশের সাথে আরবদের যোগাযোগ ছিল। চীনদেশের সাথে তাদের বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিল আর ঐ বাণিজ্য উপলক্ষে বঙ্গদেশসহ উপমহাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে আরবদের বাণিজ্য জাহাজের যাতায়াত ছিল। )
চীনের ক্যান্টনে দু'জন মহান সাহাবীর কবরের অস্তিত্ব এ সব তথ্যের প্রমাণ বহন করে।
( হযরত আবু ওয়াক্কাস (রঃ) - এর নেতৃত্বে ৩ জন বিশিষ্ট সাহাবী ও কিছু সংখ্যক হাবশী মুসলমানের একটি প্রচারক দল চীনে গমন করেন। দলনেতা হযরত আবূ ওয়াক্কাস ক্যান্টন বন্দরে অবস্থান করেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত কোয়াংটাং মসজিদটি এখনো সমুদ্র তীরে সুউচ্চ মিনার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মসজিদের অদূরেই তাঁর কবর গত প্রায় চৌদ্দশ বছর ধরে চীনা মুসলমানদের সর্বাপেক্ষা পবিত্র ও প্রিয় যিয়ারত্গাহ্ রূপে পরিচিত। অন্য দু'জন সাহাবী উপকূলীয় ফু-কীন প্রদেশের চুয়াংচু বন্দরের নিকটবর্তী লিং পাহাড়ের উপর সমাহিত রয়েছেন। চতুর্থ জন দেশের অভ্যন্তর ভাগে চলে গিয়েছিলেন। ( মাওলানা মুহিউদ্দীন খান, "বাংলাদেশে ইসলামঃ কয়েকটি সূত্র" ইসলামিক ফাউন্ডেশন পত্রিকা, ঢাকাঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, এপ্রিল-জুন সংখ্যা, ১৯৮৮, পৃঃ ২০ ) )
জলপথের ন্যায় স্থলপথেও ভারত উপমহাদেশে মুসলিম প্রচারকগণের আগমন ঘটেছিল। স্থলপথে উত্তর পশ্চিম সীমান্তে অবস্থিত গিরিপথ দিয়ে মুসলমানগণ প্রবেশ করেন। ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা আমীরুল মুমিনীন হযরত উমর ফারূক (রঃ) - এর শাসনামলে (খৃঃ ৬৩৩-৬৪৩) সিন্ধুর সাথে আরবদের যোগাযোগ বৃদ্ধি পায়।
( মোহাম্মদ আবদুল মান্নান, প্রাগুক্ত, পৃঃ ১১০ )
তখন যে কয়েকজন সম্মানিত সাহাবী উপমহাদেশে পদার্পন করেন তাঁদের নাম হযরত আবদুল্লাহ ইব্ন আবদুল্লাহ ইতবান, হযরত আসিম ইব্ন আম্র আত্ তামীমী, হযরত সুহার ইবনুল আদাবী, হযরত সুহায়ল ইব্ন আদী এবং হযরত হাকাম ইব্ন আবুল আস আস্ সাকাফী (রঃ)। খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত উসমান (রঃ) - এর আমলে (৬৪৪-৬৫৬ খৃঃ) আগমনকারী আরো দু'জন সাহাবী ছিলেন হযরত উবায়দুল্লাহ ইব্ন মা'মার আত্ তামীমী ও হযরত আবদুর রহমান ইবন সামুরা আল বস্রী (রঃ)। এভাবে উমাইয়া ও আব্বাসীয় শাসনামলেও বহু সুফী-সাধক, আলিম ধর্মপ্রচারের উদ্দেশ্যে আরব থেকে সুদূর ভারত উপমহাদেশে আগমন করেন।
টীকাঃ
১। হযরত আবদুল্লাহ ইব্ন আবদুল্লাহ ইতবান (রঃ)
হযরত আবদুল্লাহ ইব্ন আবদুল্লাহ ইতবান (রঃ) মদীনার আনসারদের একটি গোত্র 'বনুল হুবলা' - এর সাথে সংযুক্ত ছিলেন। তিনি উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন সাহাবী এবং আনসারগণের মধ্যে নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি ছিলেন। ২১ হিঃ/৬৪১ খ্রিস্টাব্দে তিনি হযরত সাদ ইব্ন আবি ওয়াক্কাসের স্থলে কূফার গভর্ণর নিযুক্ত হন এবং সেই বছরের শেষ দিকে একই পদে বসরায় বদলী হন। এরপর তিনি পূর্ব ইরান ও উপমহাদেশের সীমান্ত অঞ্চলে একের পর এক যুদ্ধ জয়ের সূচনা করেন। তাঁর ইন্তিকালের তারিখ জানা যায়নি।
( ইব্ন হাজার আল আস্কালানী, আল ইসাবা ফী তাময়ীযিস্ সাহাবা, মিস্র, মাতবাউস সাআদাহ, হিঃ ১৩২৮, ২য় খণ্ড, পৃঃ ৩৩৭ )
২। হযরত আসিম ইব্ন আম্র আত্ তামীমী (রঃ)
হযরত আসিম ইব্ন আম্র আত্ তামীমী (রঃ) ছিলেন রসূলুল্লাহ (সঃ) - এর বিশিষ্ট সাহাবী ও প্রাথমিক যুগের একজন খ্যাতিমান সৈনিক। ইরাক বিজয়ে তিনি বিশ্ববিশ্রুত জেনারেল হযরত খালিদ ইব্ন ওয়ালিদ (রঃ) এর বিশিষ্ট সহযোগী হিসেব উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন এবং সিন্ধু উপত্যকা বিজয়ে অংশগ্রহণ করেন।
( ইব্ন হাজার আল আস্কালানী, প্রাগুক্ত, পৃঃ ২৪৭; ইব্ন আবদিল বার, আল ইস্তিআব ফী-মারিফাতিল আস্হাব, মিসর, মাকতাবাহ নাহ্দাহ, তা. বি., ২য় খণ্ড, পৃঃ ৭৮৪ )
৩। হযরত সুহার ইবনুল আদাবী (রঃ)
হযরত সুহার ইবনুল আদাবী (রঃ) ছিলেন আবদুল কায়স গোত্রের লোক। ৮/৬৩১ সালে একটি প্রতিনিধি দলের সাথে তিনি হুজ্র থেকে মদীনা শরীফ আগমন করে ইসলাম গ্রহণ করেন। হযরত উমরের খেলাফত কালে তিনি বসরা গমন করে সেখানেই বসবাস করতে থাকেন। তিনি পূর্বাঞ্চলের যুদ্ধসমূহে অংশগ্রহণ করেন। সিন্ধুনদের পূর্বাঞ্চলের যে বিবরণ তিনি প্রদান করেছেন, তা থেকে বোঝা যায় যে, এখানকার ভৌগোলিক অবস্থা সম্পর্কে তিনি খুবই ওয়াকিফ্হাল ছিলেন এবং অধিবাসীদের সাথেও গভীর যোগাযোগ রাখতেন।
( ইব্ন হাজার আল আস্কালানী, প্রাগুক্ত, পৃঃ ১৮৮; ইব্ন সাদ, আত্ তাবাকাত, রাগিব রহমানী অনূদিত, করাচী, নফীস একাডেমী, ১৯৭২, ৭ম-৮ম খণ্ড, পৃঃ ১০২ )
৪। হযরত সুহায়ল ইব্ন আদী (রঃ)
হযরত সুহায়ল ইব্ন আদী (রঃ) ছিলেন আয্দ গোত্রের শাখা বনুল আশহালের লোক। তিনি যে সাহাবী ছিলেন এ বিষয়ে কোন সরাসরি প্রমাণ পাওয়া যায় না। তবে ১৭/৬৩৭ সালে তিনি আল জাযীরার বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের নেতৃত্ব দেন। এ থেকে অনুমিত হয় যে, রসূলুল্লাহ (সঃ) - এর জীবদ্দশায় তাঁর সাহাবীগণের তালিকাভূক্ত হওয়ার মত বয়স হযরত সুহায়লের ছিল। তাঁর অন্যান্য ভ্রাতাদের সকলে সাহাবী ছিলেন এবং তাঁরা ওহুদ যুদ্ধে শরীক হন। তাঁদের নাম হযরত হারিস ইব্ন আদী, হযরত আবদুর রহমান ইব্ন আদী ও হযরত সাবিত ইব্ন আদী (রঃ)।
( ইব্ন হাজার আল আস্কালানী, প্রাগুক্ত, পৃঃ ৯৩ )
৫। হযরত হাকাম ইব্ন আবুল আস আস্ সাকাফী (রঃ)
হযরত হাকাম ইব্ন আবুল আস আস্ সাকাফী (রঃ) ছিলেন বসরায় হিজরতকারীগণের অন্যতম। তিনি নিজে রসূলুল্লাহ (সঃ) - এর প্রমুখাৎ হাদীস বর্ণনা করেছেন এবং মুআবিয়া ইব্ন কুররা আল মুযানী (মৃঃ ১১৩) - তাঁর থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন। এই সাকীফ গোত্রের সকল প্রাপ্তবয়স্ক লোক ১১ হিজরীর পূর্বেই ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন এবং রসূলুল্লাহ (সঃ) - এর সাথে বিদায় হজ্জে উপস্থিত ছিলেন। সে মতে হযরত হাকাম যে সাহাবী এবং তাঁর বর্ণিত হাদীসসমূহ যে মারফূ - এ ব্যাপারে সন্দেহের অবকাশ নেই। আল্লামা শামসুদ্দীন যাহাবী তাঁর সাহাবী হওয়ার সাক্ষ্য দিয়েছেন।
( ইব্ন আবদিল বার, প্রাগুক্ত, ১ম খণ্ড, পৃঃ ৩৫৮ )
৬। হযরত উবায়দুল্লাহ ইব্ন মা'মার আত্ তামীমী (রঃ)
হযরত উবায়দুল্লাহ ইব্ন মা'মার আত্ তামীমী (রঃ) ছিলেন মদীনা শরীফের বাসিন্দা এবং ধনাঢ্য ব্যক্তি। তিনি একজন হাদীস বর্ণনাকারীও ছিলেন। আমীরুল মুমিনীন হযরত উসমান (রঃ) তাঁকে মাকরান ও সিন্ধু এলাকার বিদ্রোহী উপজাতিদের দমনের জন্য পাঠান। তবে তাঁর এই নিয়োগের সঠিক সন তারিখ অজ্ঞাত। আল্লামা তাবারীর বর্ণিত ঘটনাবলী থেকে জানা যায় যে, হযরত উসমান (রঃ) ২৩ হিজরীতে খলীফা নিযুক্ত হওয়ার পরই তাঁকে মাকরান অভিযানে প্রেরণ করেছিলেন। মাকরানে পৌঁছে তিনি বিস্তীর্ণ এলাকা নিজের করবতলগত করে নেন।
( ইব্ন হাজার আল আস্কালানী, প্রাগুক্ত, পৃঃ ৪৪০ )
৭। হযরত আবদুর রহমান ইব্ন সামুরা (রঃ)
হযরত আবদুর রহমান ইব্ন সামুরা (রঃ) কুরাইশ গোত্রের লোক ছিলেন। ৮ হিজরীতে মক্কা বিজয়ের সময় তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন এবং রসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁর নাম রাখেন আবদুর রহমান। ইতোপূর্বে তাঁর নাম ছিল আব্দ কিলাল অথবা আবদুল কাবা। ৯/৬৩০ সালে তিনি রসূলুল্লাহ (সঃ) এর সাথে তাবূক যুদ্ধে শরীক হন এবং নবী (সঃ) থেকে সরাসরি হাদীস বর্ণনা করেন। তিনি হযরত ইব্ন আব্বাস, সাঈদ ইব্ন আল মুসায়্যিব, মুহাম্মদ ইব্ন সীরীন, আবদুর রহমান ইব্ন আলী লায়লা এবং হাসান আল বস্রীর উস্তাদ হওয়ারও গৌরব অর্জন করেন। তাঁর থেকে বর্ণিত হাদীসসমূহ সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে। ৩১/৬৫০ সালে তিনি 'সীস্তানের' গভর্ণর নিযুক্ত হন। তিনি অত্যন্ত সাহসী ও কর্মঠ জেনারেল ছিলেন। কার্যভার গ্রহণের পরই বরঞ্জ থেকে পূর্বদিকে অগ্রসর হন এবং ভারতীয় উপমহাদেশের সীমান্ত পর্যন্ত সমগ্র এলাকা অধিকার করেন। তিনি হেলমন্দ নদীর নিম্নাঞ্চল দিয়ে অগ্রসর হয়ে 'রূদবার' পর্যন্ত জয় করেন। এ স্থানটি বর্তমানে আফগানিস্তান ও বেলুচিস্তানের সীমান্তে অবস্থিত। ৫০/৬৭০ সালে বসরায় ইন্তিকাল করেন।
( ইব্ন সাদ, প্রাগুক্ত, পৃঃ ৩৭৮; ইব্ন আবদিল বার, প্রাগুক্ত, ২য় খণ্ড, পৃঃ ৮৩৫; ইব্ন হাজার আল আস্কালানী, প্রাগুক্ত, পৃঃ ৪০১ )
এক নজরে এই পর্বে যে সব কিতাবের সাহায্য নেওয়া হয়েছেঃ
০১। আল কুরআন
০২। মুহাম্মদ তাফাজ্জল হোছাইন ও ড.এ.এইচ.এম.মুজতবা হোছাইন, হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সঃ): সমকালীন পরিবেশ ও জীবন, ( ঢাকাঃ ইসলামিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ, ১৯৯৮ )
০৩। আস সুনান লিল ইমাম আন্ নাসায়ী, দেওবন্দ, দারুল কিতাব, হিঃ ১৩৫০, ২য় খণ্ড, গায্ওয়াতুল হিন্দ
০৪। ড. কাজী দীন মুহম্মদ, সম্পাদনা পরিষদ কর্তৃক সম্পাদিত, বাংলাদেশের উৎপত্তি ও বিকাশ ( ঢাকাঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, ১৯৯৩ )
০৫। মোহাম্মদ আবদুল মান্নান, বাংলা ও বাংগালী মুক্তি সংগ্রামের মূল ধারা ( ঢাকাঃ সৃজন প্রকাশনী লিমিটেড, ফাল্গুন ১৩৯৭ )
০৬। ড. তারা চাঁদ, ভারতীয় সংস্কৃতিতে ইসলামের প্রভাব ( ঢাকাঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, ১৯৯১ )
০৭। Dr. M. A. Rahim 'The Advent of Islam in Bangladesh', Islam in Bangladesh Through Ages, Dhaka, Islamic Foundation Bangladesh, ১৯৯৫
০৮। মাওলানা মুহিউদ্দীন খান, "বাংলাদেশে ইসলামঃ কয়েকটি সূত্র" ইসলামিক ফাউন্ডেশন পত্রিকা, ঢাকাঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, এপ্রিল-জুন সংখ্যা, ১৯৮৮
০৯। ইব্ন হাজার আল আস্কালানী, আল ইসাবা ফী তাময়ীযিস্ সাহাবা, মিস্র, মাতবাউস সাআদাহ, হিঃ ১৩২৮, ২য় খণ্ড
১০। ইব্ন আবদিল বার, আল ইস্তিআব ফী-মারিফাতিল আস্হাব, মিসর, মাকতাবাহ নাহ্দাহ, তা. বি., ২য় খণ্ড
১১। ইব্ন সাদ, আত্ তাবাকাত, রাগিব রহমানী অনূদিত, করাচী, নফীস একাডেমী, ১৯৭২, ৭ম-৮ম খণ্ড
( চলবে ইনশাআল্লাহ)