بسم الله الرحمن الرحيم
মুফতী মীযানুর রহমান সাঈদ
হাদীছের আলোকে শবেবরাতের ফজীলত ও আমলসমূহঃ
ইতিপূর্বে শবেবরাতের শরয়ী প্রমাণ সম্পর্কে বারটি হাদীছ এবং এর সূত্র বা সনদ ও তার পর্যালোচনা সবিস্তারে উল্লেখ করা হয়েছে। এ পরিচ্ছেদে আমরা শবেবরাতের মাহাত্ন্য, বৈশিষ্ট্য, ফজীলত ও আমলসমূহ যা পবিত্র হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত সেগুলো সংক্ষেপে পেশ করা হচ্ছে।
এ রাতে হায়াত-মউত ও বার্ষিক বাজেটের ফয়সালা হয়ঃ
হযরত আয়েশা (রঃ) হযরত নবী (সঃ) থেকে বর্ণনা করেনঃ
শবে বরাতে কি ঘটে এ সম্পর্কে হযরত আয়েশা (রঃ) রসূল (সঃ) থেকে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই রাতের কার্যক্রম হলো এই বছর যত (সন্তান) জন্মগ্রহণ করবে তা লিপিবদ্ধ করা হয়। আর এই বছর যত (লোক) ইন্তেকাল করবে তা লিখা হয়। আর এই রাতেই বান্দাদের (সারা বছরের) কার্যাবলী (আসমানে) উঠানো হয় আর এই রাতেই নির্ধারিত রিযিক অবতীর্ণ হয়। তারপর আয়েশা (রঃ) জানতে চাইলেন যে হুজুর ! আল্লাহর রহমত ও করুণা ছাড়া কেউ কি বেহেশতে যেতে পারবে? রসূল (সঃ) তিনবার বলেনঃ কখনো পারবে না। আয়েশা (রঃ) জিজ্ঞেস করলেনঃ হুজুর ! আপনিও না? জবাবে বললেনঃ আমিও একমাত্র তার দয়া ও রহমত ছাড়া জান্নাতে যেতে পারবো না (তিনবার বললেন)।
( মিশকাত শরীফ )
হযরত আতা বিন ইয়াসির (রঃ) হতে বর্ণিতঃ
যখন শাবানের পঞ্চদশ রজনী আগত হয়, তখন আল্লাহর পক্ষ হতে মালাকুল মউতকে একটা তালিকা দেয়া হয় এবং হুকুম করা হয় যে, এই তালিকায় যেসব মানুষের নাম লিপিবদ্ধ আছে তাদের প্রাণ হরণ কর। কোন বান্দা বাগিচায় গাছপালা লাগাচ্ছে, কেউ বিবাহ করছে, কেউ বা নির্মাণ কাজে ব্যস্ত আছে অথচ তার নাম মৃতদের তালিকায় লেখা হয়ে গেছে।
( দেখুনঃ মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাকঃ খ - ৪, পৃ - ৩২৭ )
শবে বরাতে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণাঃ
হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রঃ), মুআয বিন জাবাল (রঃ), আমর বিন আস (রঃ), আবু মূসা আশআরী (রঃ), আবু হুরায়রা (রঃ), আউফ বিন মালেক (রঃ), কাছীর বিন মুররাহ (রহঃ) সহ বহু সাহাবায়ে কেরাম থেকে ইতিপূর্বে যে সব হাদীছ বর্ণিত হয়েছে প্রায় সবগুলোর সারাংশ হলোঃ
নবী করীম (সঃ) ইরশাদ করেছেন যে, আল্লাহ তাআলা শাবানের পনেরতম রাত্রে প্রথম আসমানে অবতরণ করেন এবং এই রজনীতে সকলকে ক্ষমা ও মাগফিরাত করে দেন কেবল মাত্র মুশরিক ও হিংসুক ব্যতীত।
( দেখুন ইতিপূর্বে উল্লেখিত হাদীছ সমূহ )
অগণিত মুসলমানকে ক্ষমা করা হয় এ রাতেঃ
ইতিপূর্বে উল্লেখিত ৪ নং হাদীছে উল্লেখ করা হয়েছে, হযরত আয়েশা (রঃ) বর্ণনা করেছেন যার একাংশ হলোঃ
রসূল (সঃ) বলেনঃ নিঃসন্দেহে মহান আল্লাহ তাআলা শা'বানের পনেরতম রজনীতে প্রথম আসমানে শুভাগমন করেন এবং কালব গোত্রের বকরীগুলোর পশম পরিমাণ মানুষকে ক্ষমা ও মাগফিরাত করে দেন।
( তিরমিযী )
সূর্যাস্ত থেকে সকাল পর্যন্ত পুরস্কার দেয়ার ঘোষণাঃ
ইতিপূর্বে উল্লেখিত ১১ নং হাদীছে হযরত আলী (রঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীছে দেখা যায় যে, অন্যান্য রজনীতে রাতের শেষাংশে গুনাহ মাফের আহবান করা হয় কিন্তু শবে বরাতের বৈশিষ্ট্য যে, সূর্যাস্ত থেকে সারারাতব্যাপী এ আহবান বলবৎ থাকেঃ
হযরত রসূল (সঃ) ইরশাদ করেন, যখন শা'বানের পঞ্চদশ রজনী আগত হয় তখন রাতে নামায পড় এবং পরবর্তী দিনে রোযা রাখ। কেননা সূর্যাস্ত হওয়ার সময় হতে সুবহে সাদিক (ফযর) উদিত হওয়া পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা প্রথম আসমানে অবতরণ করেন এবং এ আহবান করতে থাকেনঃ আছে কি কোন ক্ষমাপ্রার্থী আমি তাকে ক্ষমা করে দেব? আছে কি কোন রিযিক যাচনাকারী, আমি তাকে রিযিক দেব? আছে কি কোন বিপদগ্রস্ত, আমি তাকে বিপদ হতে পরিত্রাণ দেব? আছে কি কোন এমন কেউ, এমন কেউ ইত্যাদি।
( ইবনে মাজাহ, বায়হাকী )
শবেবরাতে রাত জাগরণের নির্দেশঃ
হযরত আলী (রঃ) হতে বর্ণিত উক্ত হাদীছ দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, শাবানের পঞ্চদশ রজনীতে জাগ্রত থেকে অধিক হতে অধিক ইবাদত করাও মুস্তাহাব, রাত জেগে নফল নামায আদায় করুন, কুরআন তিলাওয়াত করুন, দুআ ও ইস্তিগফার করুন।
এ কারণে হাদীছ গবেষণা করলে দেখা যায় শবেবরাতে স্বয়ং রসূল (সঃ)ও রাত জাগরণ করেছেন অন্যদেরকেও রাত জাগরণের নির্দেশ দিয়েছেন বরং রাত জাগরণের ফযীলতও বর্ণনা করেছেন।
এ প্রসঙ্গে রসূল (সঃ) ইরশাদ করেনঃ
যে ব্যক্তি পাঁচটি রাত্রে জাগ্রত থাকবে তাঁর জন্য জান্নাত অবধারিত হয়ে যাবে। ১. যিলহজ্জের অষ্টম রাত ২. যিলহজ্জের নবম রাত্র ৩. ঈদুল আজহার রাত ৪. ঈদুল ফিতরের রাত ৫. শাবানের পঞ্চদশ রজনী।
( মুনযিরী রচিত তারগীব ওয়াত তারহীবঃ খ-২, পৃ-১৫২ )
এ কারণেই ফিকহের ইমামগণের অনেকে শাবানের পঞ্চদশ রাতে জাগরণ থাকাকে মুস্তাহাব বলে উল্লেখ করেছেন। (যার বিবরণ পরবর্তীতে দেয়া হবে)
হযরত ইবনে উমর (রঃ) হতে বর্ণিত আছেঃ
হযরত ইবনে ওমর (রঃ) বলেনঃ পাঁচটি রজনীতে দুআ করা হলে তা কখনো ফেরত দেয়া হয় না (অবশ্যই ক্ববুল হয়) জুমআর রাত্র, রজবের প্রথম রাত, শাবানের পঞ্চদশ রাত এবং দুই ঈদের রাত।
( ইমাম বায়হাকী তাঁর শুয়াবুল ঈমানে; আব্দুর রাজ্জাক তাঁর মুসনাদে )
মাহে শা'বান এবং শাবানের পঞ্চদশে রোযা রাখার গুরুত্বঃ
হযরত আব্দুল্লাহ বিন ক্বায়েস (রহঃ) হযরত আয়েশা (রঃ) হতে বর্ণনা করেনঃ
" রসূল (সঃ) এর নিকট নফল রোযার জন্য অন্যান্য মাসের তুলনায় শাবান মাস ছিল অত্যন্ত প্রিয়। অতঃপর তিনি শাবানের রোযাকে রমজানের সাথে মিলিয়ে দেয়াকে আরও বেশী পছন্দ করতেন। "
( আবু দাউদ )
হযরত উসামাহ বিন যাইদ (রঃ) কর্তৃক বর্ণিত, হযরত উসামা (রঃ) বলেন, হে আল্লাহর রসূল (সঃ), আমি আপনাকে রমজান ছাড়া এ পরিমাণ রোজা রাখতে অন্য কোন মাসে দেখিনি। যে পরিমাণ শাবান মাসে রাখেন। (উত্তরে) রসূল (সঃ) ফরমান, এটি রজব ও রমজানের মধ্যবর্তী একটি মাস, যে মাসের ফজীলত থেকে মানুষ বঞ্চিত থাকে। অথচ এ মাসে মানুষের আমল আল্লাহর দরবারে পেশ করা হয়। আমি রোজা অবস্থায় আমার আমল পেশ করাকে পছন্দ করি বিধায় রোজা রাখছি।
( নাসায়ী শরীফ )
তিনি বলেন, রসূল (সঃ) শাবান মাসের তুলনায় অন্য কোন মাসে এত বেশী (নফল) রোযা রাখতেন না। তিনি পূর্ণ শাবান বর্ণনান্তরে কিছু দিন ব্যতীত পুরো শাবানে রোযা রাখতেন।
( বুখারী ও মুসলিম )
উল্লেখিত হাদীছ দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, রসূল (সঃ) শাবান মাসে বেশী বেশী রোযা রাখতেন তাই হুজুরের উম্মত হয়ে আমাদেরও এই মাসে বেশী বেশী রোযা রাখা দরকার তবে শাবান ২৭, ২৮, ২৯ এ তিন দিন রোযা সঙ্গত কারণে রাখতে নিষেধ করা হয়েছে।
অন্য হাদীছে বর্ণিত আছে যে, প্রত্যেক মাসে ১৩, ১৪, ১৫ এ তিন দিন রোযা রাখার প্রতি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। যেমনঃ
আব্দুল্লাহ বিন আমর ইবনুল আস (রঃ) বলেনঃ রসূল (সঃ) ইরশাদ করেনঃ প্রত্যেক মাসে তিনটি রোযা রাখা পুরো বছর রোযা রাখার সমতুল্য।
( বুখারী ও মুসলিম )
আবু দাউদ শরীফে হযরত কাতাদাহ (রঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ
রসূল (সঃ) আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন, আইয়ামে বীজের রোযা রাখতে (আর তা হল প্রত্যেক মাসের) তের, চৌদ্দ এবং পনের তারিখের রোযা।
( আবু দাউদ, নাসাঈ, সূত্র সহীহ )
এ হাদীছদ্বয়ের দ্বারা প্রতীয়মান হয়, প্রত্যেক মাসের ১৫ তারিখ রোযা রাখার নির্দেশ সহীহ হাদীছে পরিস্কারভাবে উল্লেখ রয়েছে। শাবানের পঞ্চদশ দিনে রোযা রাখা অত্যন্ত ছাওয়াবের কারণ।
তদুপরি আমরা ইবনে মাজা শরীফের উদ্ধৃতি দিয়ে হযরত আলী (রঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীছটি পূর্বে উল্লেখ করে এসেছি যে, শাবানের পনের তারিখ রাতে জাগ্রত থেকে ইবাদত কর এবং দিনের বেলা রোযা রাখ। এ হাদীছটি সুস্পষ্ট নির্দিষ্ট শাবানের পঞ্চদশ দিনের রোযা রাখার ব্যাপারে বর্ণিত।
উল্লেখ্য যে, পূর্বে এ হাদীছের পর্যালোচনায় বলা হয়েছিল যে, হাদীছটি জাল কিংবা অত্যাধিক দুর্বল নয়। শুধু রাবীর স্মৃতিশক্তির দুর্বলতার কারণে হাদীছটিকে কিছুটা দুর্বল বলা হয়েছে। আর কোন আমলের ফযীলত প্রমাণে এ ধরণের হাদীছ সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহণযোগ্য। এর কারণে ফকীহগণ শাবানের পঞ্চদশ দিবসে রোযা রাখাকে মুস্তাহাব বলে সাব্যস্ত করেছেন, যার বিস্তারিত বিবরণ সামনে আসবে ইনশাআল্লাহ।
শবে বরাতে রসূলের দীর্ঘ সিজদায় নফল নামায আদায়ঃ
ইমাম বাইহাকী (রহঃ) স্বীয় গ্রন্থ শুআআবুল ঈমানে আলা ইবনে হারেস (রহঃ) সূত্রে বর্ণনা করেনঃ
হযরত আলা ইবনে হারেস (রহঃ) সূত্রে বর্ণিত আছে, হযরত আয়েশা (রঃ) বলেছেন, রসূলুল্লাহ (সঃ) রাতে উঠে নামায পড়তে আরম্ভ করলেন এবং এত দীর্ঘ সিজদা করলেন, আমার এ ধারণা হলো যে, তাঁর ওফাত হয়ে গিয়েছে। আমি এ অবস্থা দেখে উঠে গেলাম এবং তার পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুল নাড়া দিলাম। সেটা নড়ে উঠল। (তখন) আমি ফিরে আসলাম যখন তিনি সেজদা হতে মাথা উঠালেন এবং নামায হতে অবসর হলেন, তখন বললেনঃ হে আয়েশা! অথবা হে হুমায়রা! তুমি কি এ ধারণা পোষণ কর যে, (আল্লাহর) নবী তোমাদের অধিকার ক্ষুণ্ন করেছেন? আমি (বিনীত কন্ঠে) বললামঃ হে আল্লাহর রসূল! আল্লাহর কসম বিষয়টি এমন নয়। প্রকৃত বিষয় হলো আমার ধারণা হলো আপনার মৃত্যু হয়ে গিয়েছে। কারণ আপনি সিজদা অনেক দীর্ঘায়িত করেছেন। তিনি বললেন, জান, এটি কোন রাত? আমি বললামঃ আল্লাহ ও তাঁর রসূল (সঃ) ভাল জানেন। তিনি বললেনঃ এটি শাবানের পঞ্চদশ রজনী। আল্লাহ তাআলা এ রাতে স্বীয় বান্দাদের প্রতি রহমতের দৃষ্টিতে তাকান, ক্ষমা প্রার্থীদের ক্ষমা করেন, অনুগ্রহপ্রার্থীদের প্রতি অনুগ্রহ করেন। আর হিংসুকদেরকে তাদের অবস্থার উপরই ছেড়ে দেন। তাদের বিষয়টি মূলতবী রাখেন।
( বায়হাকী শুআবুল ঈমানে এ হাদীছটি বর্ণনা করতঃ বলেছেন এটি মুরসাল ও জায়্যিদ খঃ ৩, পৃঃ ৩৮২ )
প্রায় একই রকমের হাদীছ বাইহাকী শরীফেই বর্ণিত হয়েছে। হযরত আয়েশা (রঃ) হতে বর্ণিত সে হাদীছে রসূল (সঃ) এ রজনীতে যে নামায পড়েছেন এবং দীর্ঘ সেজদায় পড়ে ছিলেন এবং সেজদা রত অবস্থায় বেশ গুরুত্বপূর্ণ দোয়া করেছেন সেই কথাও উল্লেখ রয়েছে।
( দেখুনঃ শুআবুল ঈমানঃ খ-৩, পৃ-৩৮৪ )
উপরোক্ত হাদীছদ্ব্য় থেকে রসূলের কয়েকটি আমল প্রমাণিত হয়ঃ
১। এ রাতে রসূল (সঃ) বেশী বেশী নফল নামায আদায় করেছেন।
২। দীর্ঘ সেজদার মাধ্যমে স্বীয় প্রভূকে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করেছেন।
৩। শবে বরাতের যথাযথ মর্যাদা ও গুরুত্ব প্রদান করেছেন।
৪। আল্লাহর নিকট দয়া, দোআ-প্রার্থনা করেছেন।
৫। গুনাহগারদের ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং অনুগ্রহ প্রার্থনাকারীকে অনুগ্রহ ও দয়া প্রার্থনা করার প্রতি উৎসাহিত করেছেন।
তাই এ রজনীতে প্রত্যেক রসূল প্রেমিকের জন্য উপরোক্ত কাজ ও আমলগুলো আঞ্জাম দেয়া সঙ্গত কর্তব্য।
শবে বরাতে দু'আ ও তওবার মাধ্যমে গুনাহের মার্জনাঃ
হযরত আয়েশা (রঃ) কর্তৃক রসূল (সঃ) এর শবে বরাতে কবরস্থান গমণ এবং সেখানে রাত্রি জাগরণ প্রসঙ্গে একটি লম্বা হাদীছের একাংশে বর্ণিত আছেঃ
" অতঃপর প্রিয় নবী (সঃ) বললেনঃ হে আয়শা ! তুমি কি আমাকে আজকের রাতে নামাযে দণ্ডায়মান অবস্থায় অতিবাহিত করার অনুমতি দিবে? আমি (আয়শা) বললামঃ নিশ্চয়ই; আপনার উপর আমার পিতা-মাতা কোরবান হউক। অতঃপর তিনি দীর্ঘ সময় (নামাযে) দণ্ডায়মান থাকার পর দীর্ঘ একটা সিজদা করলেন। এমনকি আমার ধারণা হলো, তিনি ওফাত পেয়ে গেছেন। আমি তাকে স্পর্শ করার ইচ্ছা করলাম এবং তার পায়ের তলায় হাত রাখলাম তখন সামান্য স্পন্দন অনুভব হল। আমি আনন্দিত হলাম আমি তাকে সেজদা অবস্থায় এই দোআ পড়তে শুনলাম।
اعوذ بعفوك من عقا بك وأعوذ برضاك من سخطك، وأعوذ بك منك جل وجهك لا أحصى ثناء عليك أنت كما اثنيت على نفسك
'হে আল্লাহ ! তোমার ক্ষমার মাধ্যমে তোমার শাস্তি হতে আশ্রয় চাই। তোমার সন্তুষ্টির দ্বারা তোমার অসন্তুষ্টি হতে আশ্রয় চাই। তোমার করুণা দ্বারা আশ্রয় চাই তোমার ক্রোধ হতে। তোমার দিকেই ধাবিত হই। তুমি এমন, যেমন তুমি তোমার প্রশংসা করেছ।'
সকালে (যখন) আমি তাঁর সাথে আলোচনা করলাম তখন তিনি বললেনঃ হে আয়েশা ! তুমি এই দোয়া মুখস্থ করবে? আমি বললামঃ অবশ্যই। তিনি বললেনঃ শিখে নাও। আমাকে এই কলিমাগুলো জিবরাইল (আঃ) শিখিয়েছেন এবং সেজদা অবস্থায় এটি বার বার পড়তে বলেছেন। "
( বাইহাকী শুআবুল ঈমানঃ ৩/৩৮৪, হাদীছটি দুর্বল তবে অন্যসূত্রেও হাদীছটি বর্ণিত আছে। )
শবে বরাতে প্রভূর দরবারে দুআ ও প্রার্থনা করার ব্যাপারে আরো একটি হাদীছ উদ্ধৃত করা হলো।
হাদীছটি ইমাম বায়হাকী (রহঃ) শুআবুল ঈমান গ্রন্থে হযরত আয়শা কর্তৃক বর্ণনা করেছেন যার আংশিক বর্ণনা এখানে তুলে ধরা হলোঃ
" এক রাতে রসূল (সঃ) নামায পড়তে দাঁড়ালেন, তিনি সেজদা এত দীর্ঘ করলেন যে, আমি ধারণা করলাম তিনি ইন্তেকাল করে গেছেন...অতপর আমি কান পেতে শুনতে পেলাম যে, তিনি সিজদারত অবস্থায় এই দুআ করছেন
اعوذ بعفوك من عقا بك وبرضاك من سخطك اعوذ بك منك اليك لاأحصى ثناء عليك انت كما اثنيت على نفسك
যখন তিনি সেজদা হতে মাথা উঠালেন এবং নামায হতে অবসর হলেন তখন তিনি বললেনঃ হে আয়শা ! তুমি কি ধারণা করেছ যে, আল্লাহর রসূল (সঃ) তোমার অধিকার হরণ করেছেন? অতঃপর রসূল (সঃ) বললেন, হে আয়শা ! তুমি কি জান এটা কোন রজনী? হযরত আয়শা (রঃ) বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রসূল ভাল জানেন। রসূল (সঃ) বললেনঃ এটি শাবানের ১৫ তারিখের রাত। এ রাতে ক্ষমা প্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করা হয়। দয়া প্রার্থীদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করা হয়। তবে বিদ্বেষ পোষণকারীদেরকে আপন অবস্থায় ছেড়ে দেওয়া হয়। "
( দেখুনঃ বায়হাকী শুআবুল ঈমানঃ খ-৩, পৃ-৩৮৪ )
উপরোক্ত হাদীসদ্বয়ের দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, রসূল (সঃ) শবে বরাতে দীর্ঘ সময় ধরে দুআ ও প্রার্থনারত থাকতেন। তাই রসূল প্রেমিকদের কর্তব্য এ পবিত্র রজনীতে দুআ ও প্রার্থনার মধ্যে আত্ননিয়োগ করা।
শবে বরাতেও যাদের ক্ষমা করা হয় নাঃ
সর্বস্তরের মুসলমান ও ঈমানদার ধনী-দরিদ্র, যুবক-বৃদ্ধ, নারী-পুরুষ, কৃষক-শ্রমিক, ছাত্র-শিক্ষক, রাজা-প্রজা, আলেম ও নন আলেম নির্বিশেষে সকল মুসলমানকেই আল্লাহ তাআলা শবে বরাতে ক্ষমা করে থাকেন। কিন্তু কতিপয় দুর্ভাগ্য, কপাল পোড়া, মারাত্নক অপরাধী এমনও আছে যাদেরকে আল্লাহ তাআলা এ রজনীতে ক্ষমা করবেন না, যতক্ষণ না তারা স্বীয় কৃতকর্ম থেকে খালেস নিয়তে তওবা করে অপরাধ থেকে মুক্ত হয়ে না আসবে। এদেরকে ক্ষমা না করার দু'টি কারণ হতে পারেঃ
১। তাদের ভাগ্য খারাপ হওয়ার কারণে
২। তাদের কৃতকর্মের ফলে আল্লাহ তাআলার অসন্তুষ্টির কারণে
এমন লোকের তালিকা বিভিন্ন হাদীছের বর্ণনায় প্রায় ডজন খানিক পাওয়া যায়। নিম্নে হাদীছের আলোকে তাদের কিছু তালিকা উদ্ধৃত করা হলোঃ
হযরত আয়েশা (রঃ) কর্তৃক বর্ণিত রসূল (সঃ) গোরস্থানে গমন করা প্রসঙ্গে একটি লম্বা হাদীছের আংশিক বিবরণ এরকমঃ
রসূল (সঃ) বললেনঃ হে আয়শা ! তোমার কি এই ধারণা ছিল যে, আল্লাহ এবং তাঁর রসূল তোমার অধিকার ক্ষুন্ন করবেন? আসল কথা হলো জিব্রাঈল (আঃ) আমার নিকট শুভাগমন করতঃ বললেন এটি শাবানের পঞ্চদশ রজনী এবং আল্লাহ তাআলা এই রাতে অনেক লোককে (মুসলমান) জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণ দেন, যার সংখ্যা কালব গোত্রের বকরীসমূহের পশম অপেক্ষা অধিক হয়ে থাকে। কিন্তু এই রজনীতে আল্লাহ তাআলা (১) মুশরিক, (২) হিংসুক (৩) আত্নীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী। (৪) টাখনুর নীচে পায়জামা বা লুঙ্গি পরিধানকারী। (৫) মাতা-পিতার অবাধ্য সন্তান-সন্তুতি। (৬) মদ্যপ (শরাব পানকারী ব্যক্তিদের প্রতি) রহমতের দৃষ্টি দেননা (ক্ষমা করেন না)।
( দেখুনঃ বায়হাকীঃ খ-৩, পৃ-৩৮৪; সনদটি দুর্বল তবে অন্য সূত্রেও হাদীছটি বর্ণিত আছে। )
উপরোক্ত হাদীছে ছয়টি সম্প্রদায়ের অপরাধ অমার্জনীয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে। পেছনে আমাদের দশ নং হাদীছে আরো একটি সম্প্রদায়ের কথা তালিকার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। হাদীছটির বিবরণ এরকমঃ
উছমান ইবনু আবিল আছ (রঃ) নবী করীম (সঃ) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেনঃ যখন শা’বান মাসের ১৫ তারিখ রাত আগমন করে তখন জনৈক আহবানকারী আল্লাহর পক্ষ থেকে আহবান করতে থাকেন যে, আছ কি কোন ক্ষমার ভিখারী, তাকে আমি ক্ষমা করে দিবো। আছ কি কোন যাচনাকারী, তাকে আমি দান করব ? এরপর যে কেউ যা চায় আল্লাহ তাআলা তাকে তাই দান করেন কিন্তু ব্যভিচারিনী এবং মুশরিক ছাড়া।
( দেখুনঃ বাইহাকী শুআবুল ঈমানঃ খ-৩, পৃ-৩৮৩ )
এই হাদীছে উপরোক্ত তালিকার সাথে যেনাকারী ও যেনাকারিনীকে যুক্ত করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে আরেকটি বর্ণনা পিছনে আমরা ৩ নং হাদীছে উদ্ধৃত করেছি। যার বর্ণনা এরূপঃ
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রঃ) থেকে বর্ণিত, রসূল (সঃ) ইরশাদ করেন শাবানের পঞ্চদশ রজনীতে মহান আল্লাহ স্বীয় সৃষ্টিজীবের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দেন এবং নিজ বান্দাদিগকে ক্ষমা করে দেন, তবে দু’সম্প্রদায় ব্যতীত। ১. হিংসুক ২. অন্যায়ভাবে হত্যাকারী।
( দেখুনঃ আততারগীব ওয়াততারহীবঃ খ-৪, পৃ-২৩৯; মুসনাদে আহমদঃ খ-৬, পৃ-১৯৮ )
হাদিছটির সনদ সহীহ।
এই হাদীছ দ্বারা অমার্জনীয় সম্প্রদায়ের তালিকার সাথে অন্যায় ভাবে হত্যাকারীও যুক্ত হলো।
উপরোক্ত হাদীছসমূহের দ্বারা প্রতীয়মান হলো যে, নিম্নোক্ত অপরাধী সম্প্রদায়ের অপরাধ শবে বরাতের রাতে ক্ষমা করা হবে না।
(১) মুশরিক। (২) হিংসুক। (৩) আত্নীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী। (৪) টাখনুর নীচে পায়জামা-লুঙ্গি পরিধানকারী। (৫) মাতা-পিতার অবাধ্য। (৬) মদ্যপ। (৭) ব্যাভিচারী-ব্যাভিচারীনী। (৮) অন্যায়ভাবে হত্যাকারী।
কোন কোন হাদীছে এ তালিকার সাথে
(৯) অন্যায়ভাবে কর আদায়কারী (১০) যাদু-টোনার পেশা গ্রহণকারী (১১) গণক তথা গায়েবী খবর বর্ণনাকারী (১২) এবং বাদ্য-বাজনায় অভ্যস্ত ব্যক্তিদেরকেও উপরোক্ত তালিকার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
ইমাম গজালীর مكاشفات القلوب কিতাবে উদ্ধৃত হযরত আয়েশা কর্তৃক বর্ণিত এক হাদীছে উপরোক্ত তালিকার সাথে
(১৩) ফিতনাবাজ (১৪) ফটো অংকণকারী এবং (১৫) চুগলখোরকেও সংযোজন করা হয়েছে।
( দেখুনঃ মুকাশাফাতুর কুলুব, বাংলা অনুবাদ মুফতী উবায়দুল্লাহ )
অর্থাৎ শবেবরাতে সাধারণ ক্ষমার আওতা বহির্ভুত করা হয়েছে।
( দেখুন মাযাহেবে হক্বঃ পৃ-২০২, খ-২ )
সুতরাং শবে বরাতের পূর্বেই সকল মুসলমান নবীপ্রেমিক ব্যক্তিদের জন্য অত্যাবশ্যকীয় কাজ হবে উপরোক্ত অপরাধসমূহের সাথে কেউ জড়িত থাকলে খালেছ মনে একাগ্রতার সাথে আল্লাহর দরবারে তওবা করে অপরাধ ক্ষমা করানো, অন্যথায় পবিত্র শবে বরাতেও এসব সম্প্রদায়ের অপরাধ ক্ষমা করানোর কোন পথ উন্মুক্ত থাকবে না। আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করুন, আমীন।
শবে বরাতে নবীজীর (সঃ) কবরস্থান গমনঃ
শাবানের পঞ্চদশ রজনীতে রসূল (সঃ) জান্নাতুল বাক্বী কবরস্থানে গমন করা এবং সেখানে সকল কবরবাসীর উদ্দেশ্যে দোয়া করার প্রমাণও হাদীছে পাওয়া যায় বিধায় এ আমলকে ফক্বীহগণ শর্ত সাপেক্ষে সুন্নাত বা মুস্তাহাব বলে সাব্যস্ত করেছেন।
এ্ মর্মে হযরত আয়শা (রঃ) হতে একাধিক হাদীছ বর্ণিত আছে সূত্রের দিক দিয়ে হাদীছগুলো দুর্বল হলেও বিভিন্ন সূত্রে বর্ণিত হওয়ায় তা কমপক্ষে ফজীলত অর্জনের ব্যাপারে গ্রহণযোগ্য।
নিম্নে একটি লম্বা হাদীছের আংশিক তুলে ধরা হলোঃ
হযরত আয়শা (রঃ) বর্ণনা করেন রসূল (সঃ) আমার নিকট আগমন করলেন এবং স্বীয় (অতিরিক্ত) পোশাক খুলে ফেললেন। কিছু সময় অতিবাহিত হতে না হতেই পুনরায় তিনি পোশাকটি পরিধান করে নিলেন। আমার ধারণা হলো তিনি স্বীয় পূতপবিত্র পত্নীগণের মধ্য হতে অন্য কারো নিকট চলে যাচ্ছেন। এ কারণে আমার খুবই আত্নমর্যাদাবোধ হলো আমি তার পিছনে পিছনে চললাম। যেয়ে দেখি তিনি জান্নাতুল বাকীতে মুসলমান নরনারীদের জন্য দোয়া ক্ষমা প্রার্থনা করছেন। আমি মনে মনে বললামঃ তাঁর উপর আমার মাতা পিতা উৎসর্গ হোন। তিনি আল্লাহ তাআলার কাজে লিপ্ত আর আমি (আয়েশা) পার্থিব কাজে মগ্ন। আমি সেখান হতে স্বীয় কক্ষে প্রত্যাবর্তন করলাম, (এই আসা যাওয়ার মাধ্যমে) আমার শ্বাস স্ফীত হয়ে গেল। ইতিমধ্যে নবী করীম (সঃ) (আমার কক্ষে) আগমন করলেন এবং (আমার) শ্বাস স্ফীত হওয়ার কারণ জিজ্ঞাসা করলেন। আমি (বিনীত স্বরে) বললাম আমার মাতা পিতা আপনার উপর কোরবান হোন। আপনি আমার নিকট আগমন করলেন এবং অল্পক্ষণের মধ্যেই দ্বিতীয়বার পোশাক পরিধান করে নিলেন। আমার এই ধারণার ফলে কঠিন ঈর্ষা হলো যে, আপনি অন্য কোন পবিত্র পত্নীর নিকত চলে যাচ্ছেন কি না। ঘটনা এ পর্যায়ে পৌছল আমি নিজেই বাকীয়ে গরকদে গিয়ে যা দেখলাম আপনি কি করছেন। তিনি বললেনঃ হে আয়েশা তোমার কি এ ধারণা ছিল যে আল্লাহ এবং তাঁর রসূল তোমার অধিকার ক্ষুন্ন করবেন ? আসল কথা হলো জিবরাইল (আঃ) আমার নিকট এসে বললেনঃ এটি শাবানের পঞ্চদশ রজনী এবং মহান প্রভূ এই রাতে অনেক লোককে জাহান্নাম হতে পরিত্রাণ দেন যার সংখ্যা কালব গোত্রের বকরীসমূহের পশম অপেক্ষা অধিক হয়ে থাকে। (অবশিষ্ট হাদীছ অনুবাদসহ পেছনে উল্লেখ করা হয়েছে)
( দেখুনঃ শুআবুল ঈমানঃ ৩/৩৮৪ )
এ ধরণের আরো কতক হাদীছ দ্বারা শবেবরাতে রসূল (সঃ) কবরস্থানে গমন ও সেখানে মৃতদের জন্য দোয়া করার প্রমাণ পাওয়া যায়। তাই রসূলপ্রেমিক ভাইদের জন্য শবে বরাতে কবর যিয়ারত করা এবং নিকটাত্নীয়দের জন্য বা যে কোন মুসলমানের জন্য কবরস্থানে গিয়ে সূরা ইখলাছ, তাকাছুর ইত্যাদি সূরা পড়ে কবরবাসীর মাগফেরাতের জন্য দোয়া করা অন্যান্য আমলসমূহের মধ্যে এটিও একটি অন্যতম আমল।
কবরস্থানে গমণ প্রসঙ্গে আয়শা (রঃ) এর হাদীছের একটি ব্যাখ্যাঃ
হযরত শাইখুল হিন্দ আল্লামা মাহমুদুল হাসান দেওবন্দী (রহঃ) কর্তৃক একটি অতি মূল্যবান ফিকহী উসূল বর্ণিত আছে যা নিম্নরূপঃ
" মূলকথা হলো রসূল (সঃ) এর কৃতকর্ম দুই ধরণের হয়ে থাকে
১। যা রসূল (সঃ) রীতিমত করতেন বা অধিকপরিমাণে করতেন অথবা তা পালনকরার নির্দেশ দিয়েছেন
২। কিছু কাজ আছে যা রসূল (সঃ) হঠাৎ কখনো কখনো করেছেন বলে প্রমাণিত, কিন্তু নিয়মিত বিরামহীন করেন নি বা অন্যদেরকে তা পালন করার প্রতি উৎসাহিত করার প্রমাণ নেই। কাজেই এ দুই প্রকারের প্রত্যেকটিকে তার যথাযথ স্থানেই রাখা বাঞ্চনীয়।
প্রথম প্রকারের উপর গুরুত্ব সহকারে নিয়মিত পালন করা সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু দ্বিতীয় প্রকারের আমলকে যথাস্থানে রাখার উপায় হলো মাঝে-মধ্যে তা করে নেয়া যেমন রসূল (সঃ) করেছিলেন। এটাকে নিয়মিত রুটিন বানিয়ে নেয়া উচিত নয়। "
উক্ত নীতিমালার আলোকে হযরতুল আল্লাম মুফতী তাকী উছমানী (দাঃ বাঃ) বলেন যে,
শাইখুল হিন্দের উপরোক্ত নীতিমালাকে আমার সম্মানিত পিতা হযরত মুফতী শফী (রহঃ) বহু মাসআলার মধ্যে বাস্তবায়ন করেছেন। তার মধ্যে একটি হলো, শবেবরাতে কবর যিয়ারত। এ প্রসঙ্গে হযরত আয়শা (রঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীছ রয়েছে যে, হুজুর (সঃ) বাকীতে গিয়ে মৃত ব্যক্তিদের জন্য দোয়া করেছেন, তাই সাধারণতঃ ধারণা করা হয় প্রত্যেক শবে বরাতে কবরস্থান যিয়ারত সুন্নাত। কিন্তু আমার পিতার বক্তব্য ছিল যে, প্রতি শবে বরাতে নিয়মিত কবরস্থানে ছুটে যাওয়া সুন্নাত নয়। যদিও জায়েয। তবে মাঝে মধ্যে কোন কোন শবে বরাতে কবর যিয়ারতে চলে যাওয়া এটা সুন্নাতের পর্যায়ভুক্ত। কেননা রসূল (সঃ) তাঁর জীবনে একবারই কবর যিয়ারতে গিয়েছিলেন শবে বরাতে, (নিয়মিত) যাওয়া রসূল (সঃ) ও কোন সাহাবী থেকে প্রমাণিত নয়। এটাই উল্লেখিত হাদীছে আয়শার সঠিক ব্যাখ্যা বলে মনে হয়।
( চলবে ইনশাল্লাহ )
( পরবর্তী পর্বঃ ওলী-বুজুর্গদের দৃষ্টিতে শবেবরাত পালন )
১৮ তম পর্ব