بسم الله الرحمن الرحيم
মুফতী মীযানুর রহমান সাঈদ
হাদীছের আলোকে শবে বরাত - ৮
গত কয়েক পর্বে আমরা শবে বরাতের ফযীলত সম্পর্কিত মোট নয়টি হাদীস উল্লেখ করে সেগুলোকে সহীহ বা হাসান প্রমাণ করেছিলাম। যদি শবে বরাতের ফযীলতের ব্যাপারে আর কোন হাদীস না থাকত, তবে এই হাদীসগুলোই এ রাতের ফযীলত সাব্যস্ত হওয়ার জন্য এবং এ রাতে মাগফেরাতের উপযোগী নেক আমলের গুরুত্ব প্রমাণিত হওয়ার জন্য যথেষ্ট হত।
এই পর্বে আমরা আরও একটি হাদীস সম্পর্কে আলোচনা করব এবং সাথে সাথে এই হাদীস সম্পর্কে মুহাদ্দিসীনদের মতামত পর্যালোচনা করব।
দশম হাদীছ( اسناده ضعيف )
উছমান ইবনু আবিল আস নবী করীম (সঃ) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেনঃ যখন শা’বান মাসের পনের তারিখ রাত আগমণ করে তখন জনৈক আহবানকারী আল্লাহর পক্ষ থেকে আহবান করতে থাকেন যে, আছো কি কোন ক্ষমার ভিখারী তাকে আমি ক্ষমা করে দিবো? আছো কি কোন যাচনাকারী যাকে আমি দান করবো? অতঃপর যে কেউ চায় আল্লাহ তাআলা তাকে তাই দান করেন। কিন্তু ব্যভিচারিনী এবং মুশরিক ছাড়া।
উক্ত হাদীছটি ইমাম বায়হাকী তাঁর শুয়াবুল ঈমানে সংকলন করেছেন।
উক্ত হাদীছের সনদ সম্পর্কে পর্যালোচনাঃ
১। উক্ত হাদীছটি ইমাম বাইহাকী আলী ইবনু মুহাম্মদ ইবনু আবদিল্লাহ ইবনু বিশর থেকে বর্ণনা করেন।
যার সম্পর্কে খতীব আল বাগদাদী বলেনঃ
“ তিনি সত্যবাদী, নির্ভরযোগ্য, বিশ্বস্ত এবং উত্তম চরিত্রের অধিকারী ছিলেন। ”
( তারীখে বাগদাদঃ খ-১২, পৃ-৯৯ )
২। আবু জাফর মুহাম্মদ ইবনু আমর আর রাযযায (মৃঃ ৩৩৯ হিঃ)
যার সম্পর্কে হাকেম বলেনঃ
“ তিনি নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য ছিলেন। ”
( সিয়ারু আলামিন নুবালাঃ খ-১৫, পৃ-৩৮৬ )
খতীব আল বাগদাদী বলেনঃ
“ তিনি নির্ভরযোগ্য ও আস্থাযোগ্য ছিলেন। ”
( তারীখে বাগদাদঃ খ-৩, পৃ-১৩২ )
৩। মুহাম্মদ ইবনে আহমদ আর রিয়াহী (মৃঃ ২৭৬ হিঃ)
যাঁর সম্পর্কে ইমাম দারা কুতনী বলেনঃ
“ তিনি সত্যবাদী। ”
খতীব আল বাগদাদী বলেনঃ
“ আমি তাঁর সম্পর্কে আব্দুল্লাহ ইবনু আহমদকে জিজ্ঞেস করেছি, তিনি বলেছেনঃ মুহাম্মদ সত্যবাদী। ”
( তারীখে বাগদাদঃ খ-১, পৃ-৩৭২ )
৪। জামি ইবনুস সবীহ আর রমলী
হাফিয ইবনু হাজার আসকালানী বলেনঃ
“ তাঁর সম্পর্কে আব্দুল গণী ইবনু সাঈদ মুশতাবিহ এর মধ্যে আলোচনা করেছেন এবং বলেছেন তিনি একজন দুর্বল রাবী। এবং ইবনে আবী হাতিম স্বীয় গ্রন্থ আল জরহি ওয়াততাদীলে যাকে উল্লেখ করে কোন আলোচনা ও সমালোচনা করেন নি এবং বলেছেন যে তাঁর থেকে ইমাম আবু যুরআ ও ইবনে মাঈন হাদীছ গ্রহণ করেছেন। ”
( খ-১, পৃ-৫৩০ )
( উল্লেখ্য যে, ইবনু আবী হাতীম কারো ব্যাপারে চুপ থাকলে ঐ রাবী নির্ভরযোগ্য বলে সাব্যস্ত হয়। )
৫। মারহূম ইবনু আবদিল আজীজ
হাফিয ইবনু হাজার তার সম্পর্কে বলেছেনঃ
“ তিনি অষ্টম স্তরের একজন নির্ভরযোগ্য রাবী। ”
( তাক্বরীবুত তাহযীবঃ খ-২, পৃ-১৬৯ )
ইমাম আহমদ, নাসাঈ, ইবনু মাঈন প্রমুখও তাঁকে ছিক্বাহ বলেছেন। হাফিয যাহাবী, ইবনু হিব্বানও তাঁকে ছিকাহ এর মধ্য থেকে বিবেচনা করেছেন।
৬। দাউদ ইবনু আবদির রহমান আল আততার
তাঁর সম্পর্কে আবু হাতিম বলেছেনঃ
“ তিনি গ্রহণযোগ্য। একজন নেককার ছিলেন। ”
( তাহযীবুল কামালঃ খ-৮, পৃ-৪১৫ )
যাহাবী (রহঃ) বলেনঃ
ثقة তিনি নির্ভরযোগ্য।
ইয়াহইয়া ইবনু মাঈন বর্ণনা করেন যে,
তিনি নির্ভরযোগ্য ছিলেন।
হাফিয ইবনু হাজার আসকালানী বলেনঃ
তিনি ছিকাহ রাবী।
৭। হিশাম ইবনু হাসসান আল আযদী
তাঁর সম্পর্কে হাদীছ পর্যালোচকদের মন্তব্য সমষ্টিগতভাবে নিম্নে পেশ করা হলঃ
হাফিজ ইবনু হাজার, উছমান বিন আবী শায়বা, ইবনে হিব্বান, ইমাম আবু হাতিম, ইবনু মঈন, আল আজালী, ইবনু সাআদ, ইবনু আদী প্রমূখ ইমামদের দৃষ্টিতে তিনি নির্ভরযোগ্য সত্যবাদী বহু হাদীছের বর্ণনাকারী ছিলেন।
( তাহযীবুত তাহযীবঃ খ-১১, পৃ-৩৩; জরাহ ওয়াত তাদীলঃ খ-৯, পৃ-৫৪ )
তবে ইমাম আবু দাউদ (রহঃ) তার সম্পর্কে বলেনঃ
“ হিশাম হাসান বসরী এবং আতা থেকে যেসব হাদীছ বর্ণনা করেছেন, সেগুলোর ব্যাপারে মুহাদ্দিছগণ প্রশ্ন তুলেছেন, কারণ হিশাম হাদীছের মধ্যে ইরসাল (রাবী এর নাম উল্লেখ না করা) করতেন। তাই মুহাদ্দিছগণ মনে করেন, হিশাম এসব হাদীছ হাওশাব এর কিতাব থেকে নিয়েছেন। (সরাসরি আতা ও হাসান থেকে নেননি।) ”
( তাহযীবুত তাহযীবঃ খ-১১, পৃ-৩৫ )
ইবনু আদী বলেনঃ
“ আরআরা বলেনঃ আমাকে জারীর বলেছেনঃ আমি সাত বছর যাবৎ হাসান বসরী (রহঃ) এর দরসে বসেছি। কিন্তু হিশামকে কখনো তাঁর সাথে দেখিনি। আমি (আরআরা) বললামঃ হে আবু নাসর (জারীর)! হিশাম তো আমাদেরকে হাসান বসরী (রহঃ) এর সূত্রে বহু হাদীছ বর্ণনা করেছেন। আর আমরা হিশাম থেকে বর্ণনা করেছি। সুতরাং আপনার ধারণা মতে হিশাম এসব হাদীছ কার নিকট থেকে গ্রহণ করেছেন? জারীর প্রতি উত্তরে বললেনঃ আমার ধারণা মতে তিনি হাওশাব থেকে গ্রহণ করেছেন। ”
( সিয়ারু আলামিন নুবালাঃ খ-৬, পৃ-৩৫৫; মীযানুল ইতিদালঃ খ-৪, পৃ-২৯৫ )
পর্যালোচনাঃ
অতএব, ইমাম আবু দাউদ (রহঃ) এবং আরআরা (রহঃ) কর্তৃক উল্লেখিত বিবরণ দ্বারা বুঝা যায় যে, হিশাম ইবনু হাসসান সরাসরি হাসান বসরী (রহঃ) থেকে হাদীছ বর্ণনা করেননি। বরং মাঝখানে আরো একজন রাবী আছেন, হিশাম যাঁর নাম তাঁর সনদে উল্লেখ করেন নি। হাদীছ শাস্ত্রের পরিভাষায় এটাকে তাদলীস বলা হয়। আর মুহাদ্দিছীনে কেরামের কাছে সিকাহ (ثقة) রাবী এর তাদলীছ গ্রহণযোগ্য।
যথা তাদরীবুর রাবী ও কাওয়ায়িদ ফী উলূমিল হাদীছ গ্রন্থে এ নীতিমালা উদ্ধৃত হয়েছে যে,
“ বাযযার এর ভাষ্যমতে ছিকাহ রাবীগণের মধ্য থেকে কেউ তাদলীস করলে তাঁর তাদলীস উলামাদের নিকট গ্রহণযোগ্য। ”
( তাদরীবুর রাবীঃ খ-১, পৃ-২২৯; ক্বাওয়ায়িদ ফী উলূমিল হাদীছঃ পৃ-১৫৯ )
৮। হাসান ইবনু আবিল হাসান আল বাসরী
তিনি একজন প্রসিদ্ধ তাবেঈ।
হাফিয ইবনু হাজার বলেনঃ
তিনি হযরত আলী (রঃ), হযরত তালহা (রঃ) এবং হযরত আয়শা (রঃ) এর সাক্ষাত লাভ করেছেন। সওবান (রঃ), আম্মার ইবনে ইয়াসির (রঃ), উসমান ইবনু আবিল আস (রঃ) এবং মা’কাল ইবনু সিনান (রঃ) প্রমূখ থেকে হাদীছ বর্ণনা করেছেন। কিন্তু তাঁদের থেকে শ্রবণের মর্যাদা লাভ করেন নি।
আজলী তাঁর সম্পর্কে বলেনঃ হাদীছ বিশারদগণের মন্তব্য এরকমঃ
“ আল আদাভী বলেন, সকলেই এই শায়খ অর্থাৎ হাসানের নিকট যাও, হাদীছ গ্রহণ কর, তিনি সবচেয়ে বড় আলেম। তিনি বসরাবাসীদের শায়খ (ইমাম), তিনি তাবেঈ, নির্ভরযোগ্য বুজুর্গ, হাদীছের বাহক। ”
( জরাহ ওয়াত তাদীলঃ খ- ৩, পৃ-৪০; তাবকাত; তাহযীবুত তাহযীব )
এসব দ্বারা প্রমাণ হয় তিনি কত বড় আলেম ও ছিক্বাহ নির্ভরযোগ্য মুহাদ্দিছ।
তবে তাঁর ব্যাপারে দুটি মন্তব্য ব্যতিক্রম যা নিম্নে পেশ করা হলোঃ
১। বাযযার তাঁর মুসনাদে এ বলেনঃ
“ হাসান বসরী তিনি ইবনু আব্বাস, আসওয়াদ, উবাদা এবং উছমান থেকে শ্রবণমর্যাদা লাভ করেন নি। ”
( তাহযীবুত তাহযীবঃ খ-২, পৃ-২৩৫ )
২। হাফিয ইবনু হাজার বলেনঃ
“ হাসান বসরী একজন ছিক্বাহ রাবী, প্রসিদ্ধ ফক্বীহ। তিনি ইরসাল ও তাদলীস করতেন। ”
( তাহযীবুত তাহযীবঃ খ-১, পৃ-২০২ )
পর্যালোচনাঃ
বাযযার এবং হাফিয ইবনু হাজার আসকালানী (রহঃ) এর উক্ত মন্তব্য দ্বারা বুঝা যায় যে, ইমাম হাসান বসরী (রহঃ) উছমান উবনু আবিল আস থেকে হাদীছটি সরাসরি বর্ণনা করেন নি। বরং তিনি তাদলীস করেছেন। তবে হাসান বসরী (রহঃ) যেহেতু একজন নির্ভরযোগ্য হাদীছ বর্ণনাকারী, ফিক্বহ-হাদীছের ইমাম এবং একজন সুপ্রসিদ্ধ তাবিঈ, তাই তাঁর কৃত তাদলীস গ্রহণযোগ্য হবে। হাদীছটির প্রমাণে কোন অন্তরায় হবে না তা তাদরীব ও কাওয়ায়েদ ফী উলূমিল হাদীছ-এ সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে।
৯। উছমান আবিল আস আস সাক্বাফী
তিনি একজন প্রসিদ্ধ সাহাবী। হযরত মুআবিয়া (রঃ) এর খেলাফতকালে তিনি ইন্তেকাল করেন।
হাদীছটির অবস্থানঃ
উল্লেখিত বিবরণ দ্বারা একথা স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, উক্ত হাদীছটির সনদে জামী ইবনুস সাবীহ আর রামালী ব্যতীত সকল রাবীই নির্ভরযোগ্য ও আস্থাযোগ্য। হাদীছটির সনদের মাত্র একজন রাবী আছেন, যিনি বিতর্কিত হেতু কেউ কেউ যঈফ বলেছেন। ইবনু আবি হাতিম চুপ থেকে তার নির্ভরযোগ্যতা প্রকাশ করেছেন। কিন্তু এই হাদীছের সমর্থনেও যেহেতু আরো হাদীছ বিদ্যমান, বিধায় হাদীছটি উন্নীত হয়ে হাসান স্তরে পৌছে যায়। একারণেই শুয়াবুল ঈমানের মুহাক্কিক আদনান আব্দুর রহমান اسناده حسن বলে সূত্রের দিক থেকে হাদীছটিকে হাসান বলে রায় প্রদান করেছেন।
( দেখুন শুয়াবুল ঈমানঃ খঃ ৩, পৃ – ৩৮৩ )
তবে শুআবুল ঈমানে মুহাক্কিক শাইখ যাগলুল এর মন্তব্য হলোঃ
“ হাদীছটির সনদ দুর্বল। হাসান বসরী তাবেঈ এর সাক্ষাত উসমান বিন আবিল আস (রঃ) সাহাবীর সাথে হয়নি, (মাঝখানে রাবীর উল্লেখ নেই।) ”
( হাশিয়াহ শুয়াবুল ঈমান )
এ ব্যাপারে تدريب الراوى এবং قواعد فى علوم الحديث এর উপরোক্ত বর্ণনার দ্বারা প্রমাণ হয় যে, হাসান বসরীর মত বিখ্যাত তাবেঈ ও মুহাদ্দিছ এর এধরণের তাদলীস সূত্র বিশুদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে অন্তরায় নয় বরং তা সকল উলামার নিকট গ্রহণযোগ্য বিধায় এ হাদীছকে হাসান বা সহীহ বলে যে মন্তব্য আদনান আব্দুর রহমান করেছেন তা যথাযথ এবং সঠিক বলে সাব্যস্ত।
আহলে হাদীস/সালাফী ভাইদের কাছে প্রশ্ন ও দাওয়াতঃ
সালাফী বা আহলের হাদীসের ঐসব বন্ধুদের প্রতি দাওয়াত রইল, আপনারা আল্লামা ইবনে তাইমিয়্যা (রহঃ), শায়খ আলবানী (রহঃ) এর গবেষণা ও সিদ্ধান্ত থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারেন। আমি ওই সব ভাইদের কাছে বিনীতভাবে আরজ করতে চাই যে, আপনারা যদি শায়খ ইবনে বাযের (রহঃ) অনুসরণে বা নিজেদের তাহ্কীক মতো এই রাতের ফযীলতকে অস্বীকার করতে পারেন তাহলে যারা উপরোক্ত মুহাদ্দিস ও ফকীহগণের অনুসরণে উল্লেখিত হাদীসটির ভিত্তিতে এই রাতের ফযীলতের বিশ্বাস পোষণ করেন এবং সব ধরণের বেদআত রসম-রেওয়াজ পরিহার করে নেক আমলে মগ্ন থাকার চেষ্টা করেন তারাই এমন কি অপরাধ করে বসলেন যে, আপনাদেরকে তাদের পেছনে লেগে থাকতে হবে? এবং এখানকার উলামায়ে কেরামের দলীলভিত্তিক সিদ্ধান্তের বিপরীতে অন্য একটি মত যা ভুলের সম্ভাবনার উর্ধ্বে নয়, তা সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রচার করে তাদেরকে আলেম-উলামার সিদ্ধান্তের ব্যাপারে আস্থাহীন করা এবং বাতিলপন্থিদের মিশন সফল করতে সহায়তা দেওয়া কি সত্যিকার অর্থেই খুব বেশি প্রয়োজন? এতে তো কোন সন্দেহ নেই যে, আপনারা আপনাদের মতটিকে খুব বেশি হলে একটি ইজতেহাদী ভুল-ভ্রান্তির সম্ভাবনাযুক্তই মনে করেন এবং নিশ্চয়ই আপনারা আপনাদের মতটিকে একেবারে ওহীর মতো মনে করেন না। একটু ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করুন, এরপর আপনাদের এই অবস্থানের যৌক্তিক কোন ব্যাখ্যা আর থাকে কি না?
আপনাদের প্রতি আমার সর্বশেষ অনুরোধ এই যে, দয়া করে এ রাতের ফযীলত ও আমল সম্পর্কে শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) [মৃ. ৭২৮ হিঃ] এর ইক্তিযাউস সিরাতিল মুস্তাকিম/৬৩১-৬৪১ এবং ইমাম যায়নুদ্দীন ইবনে রজব (রহঃ) [মৃ. ৭৯৫] এর লাতায়েফুল মাআরেফ ১৫১-১৫৭ পড়ুন এবং ভেবে দেখুন যে, তাদের এই দলীলনির্ভর তাহকীক অনুসরণযোগ্য, না শায়খ ইবনে বায (রহঃ) এর একটি আবেগপ্রসূত মতামত? যা হয়ত তিনি শবে বরাত নিয়ে জাহেল লোকদের বাড়াবাড়ির প্রতিকার হিসেবেই ব্যক্ত করেছেন। কিন্তু এ কথা স্পষ্ট যে, বাড়াবাড়ির প্রতিকার কোন বাস্তব সত্য অস্বীকার করে নয়; বরং সত্য বিষয়টির যথাযথ উপস্থাপনের মাধ্যমেই হয়ে থাকে।
শেষ কথাঃ
যদি অন্যান্য রাতের উপর এ রাতের কোন শ্রেষ্ঠত্ব নাই থাকবে, তবে বিশেষভাবে এই রাতের কথা উল্লেখ করারই বা কি প্রয়োজন ? শুধু এই রাতকে বিশেষভাবে উল্লেখ করার মাধ্যমেই অন্যান্য রাতের উপর এর বিশেষত্ব প্রমাণিত হয়।
উপরের হাদীস থেকে স্পষ্টতই এটা প্রমাণিত হয় যে, এ রাত্রে আল্লাহ পাক তাঁর বিপুল সংখ্যক বান্দাকে ক্ষমা করেন। যে রাত্রে আল্লাহ বিশেষভাবে ক্ষমার ওয়াদা করেছেন, সেই রাতে কাকুতি মিনতি করে তাঁর নিকট ক্ষমা চাইতে হবে এটাই স্বাভাবিক। আর আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাওয়া, তওবা করা বা যে কোন দোয়া করার মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হল কোন ভাল আমলের মাধ্যমে দোয়াটিকে শক্ত করা যাতে দ্রুত কবুল হয়। বুখারী শরীফের তিন জন যুবকের কাহিনী হতে বিষয়টি স্পষ্ট হয় যারা পাহাড়ের গুহাতে আটকা পড়ে গিয়েছিল। পরে একজনের পরামর্শে প্রত্যেকের ভাল আমল উল্লেখ করে দোয়া করলে আল্লাহ তাদের মুক্ত করেন। তাছাড়া অনেক হাদীসেই নফল নামায পড়ে দোয়া করা, কোরআন তিলাওয়াত করে দোয়া করা, জিকির আযকার করে দোয়া করা ইত্যাদির প্রতি বিশেষভাবে উৎসাহিত করা হয়েছে। সুতরাং মধ্য শাবানের এই রাতে আল্লাহর পক্ষ হতে বিশেষভাবে ক্ষমা প্রদর্শনের বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ার মাধ্যমে সালাত, যিকির, কোরআন তিলাওয়াত করাও প্রমাণিত হয়। এরপরও যদি কেউ বলে থাকেন যে, এই রাতে কোন ইবাদত করা যাবে না, তাহলে তা তার নিজের মনগড়া কথা বা প্রলাপ ছাড়া কিছুই নয়।
এজন্যই বহু ইমামগণই এ রাতের নফল ইবাদত করাকে মুস্তাহাব বলেছেন এবং নিজেরাও বেশি বেশি ইবাদতে লিপ্ত ছিলেন। যেমনঃ ইমাম শাফিঈ, ইমাম নববী, ইমাম বাযযার, ইমাম উকায়লী, ইমাম তিরমিযী (রহঃ) সহ আরও অনেকে যার বিবরণ সামনে আরও আসবে ইনশাল্লাহ।
অতএব, যারা এ কথা বলে থাকেন যে, শবে বরাতের কোন ভিত্তি নেই, এর ফযীলত নিয়ে কোন সহীহ হাদীস বর্ণিত নেই, তারা রসূলের (সঃ) হাদীসের নামে মিথ্যাচার করেন এবং উম্মতকে রসূল (সঃ) এর সুন্নত ও নেক আমল থেকে দূরে সরে রাখানোই তাদের মূল উদ্দেশ্য। তাদের এই হীন চক্রান্তকে আমরা ধিক্কার জানাই।
এরকম একটি ফযীলতপূর্ণ রাত পেয়েও যে ইবাদতে কাটাতে পারল না, সে চরম দুর্ভাগা ছাড়া আর কিছুই নয়। কারণ আল্লাহ পাক পবিত্র কোরআনে কারীমে ইরশাদ করেছেনঃ
আমি জ্বীন ও ইনসানকে শুধুমাত্র আমার ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছি।
এই আয়াত থেকেই বুঝা যায়, আমাদের বেশি বেশি ইবাদত করা প্রয়োজন। উপরন্তু যদি ফযীলতপূর্ণ রাত পাওয়া যায়, তাহলে বেশি বেশি ফযীলত পাওয়ার জন্য ঐ রাতে বেশি বেশি ইবাদত করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
( চলবে ইনশাল্লাহ )
( পররর্তী পর্বঃ হাদীছের আলোকে শবে বরাত - ৯ )
১৫ তম পর্ব