মুহিউস সুন্নাহ আল্লামা মাহমূদুল হাসান দা. বা.
সাত. যুবকটি খৃষ্টান ছিল
বুযুর্গদের সরল জীবন
আজকাল হজ্জ্বের সফরে যাওয়ার পূর্বে থাকে কত ধরণের প্রস্তুতি, কত কিছুর ব্যবস্থাপনা। কিন্তু বুযুর্গদের জীবন ছিল অত্যন্ত সরল, সাদামাটা। মুরীদ-শাগরিদগণ পর্যন্ত তাদের হজ্বের সফরের খবর জানতে পারত না। তার একটি দৃষ্টান্ত হচ্ছে, ইবরাহীম ইবনে খাওয়াছের ঘটনা। তিনি যুগশ্রেষ্ঠ ওলী ছিলেন। কোথাও সফরের ইচ্ছা করলে কোন আলোচনা ছাড়াই, কোন প্রস্তুতি ছাড়াই রওয়ানা হয়ে যেতেন। এভাবেই একদিন মসজিদ থেকে বের হয়ে একটি লোটা সঙ্গে নিয়ে তিনি হজ্জ্ব করতে রওয়ানা হয়ে যান।
মুরীদের সহচর্য
আজকাল সাধারণ মুসলমানদের কথা তো দূরের কথা, আলেম-ওলামাদের মধ্যেও নফসের ইসলাহ এবং আধ্যাত্মিক পরিশুদ্ধি লাভের প্রয়াস খুব কম দেখা যায়। এ প্রয়াস যাদের আছে, তাদের মধ্যে ইখলাস ও উদ্যম কম পরিলক্ষিত হয়। মুরীদ কামনা করে পীর সাহেব তাকে খুব খাতির-তোয়াজ করুক, আদর-যত্ন করুক। কিন্তু মুরীদের থেকে এরূপ কামনা বাঞ্ছনীয় নয়। কারণ মধু যেখানে যেভাবে থাকে ভ্রমরকে সেখান থেকে সেভাবেই আহরণ করতে হয়। ইবনে খাওয়াছের মুরীদ হামিদ আসওয়াদ ছিলেন সেই মানের মুরীদ। তিনি স্বীয় শায়খের সহচর্যের জন্য ব্যাকুল হয়ে থাকতেন। তাই স্বীয় পীর ইবনে খাওয়াছকে সফরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হতে দেখে তিনি নিজেও বিনা প্রস্তুতিতে, বিনা তৈরীতে পিছে পিছে রওয়ানা হয়ে যান এবং কাদিসিয়া নগরীতে পৌঁছেন।
পীর-মুরীদের কথাবার্তা
কাদিসিয়া পৌঁছে ইবনে খাওয়াছ জিজ্ঞাসা করেন, “হামিদ! কোথায় যাওয়ার ইচ্ছ করেছ?” হমিদ বললেন, “আমি তো আপনার সফর সাথী হওয়ার ইচ্ছা করেছি।” ইবনে খাওয়াছ বললেন, “আমি মক্কাশরীফ যাওয়ার ইচ্ছা করেছি।” হামিদ বললেন, “আমার ইচ্ছাও তাই।” এবার দুজনই মক্কা শরীফের উদ্দেশ্যে পথ অতিক্রম করা শুরু করেন।
অপরিচিত যুবক
তিন দিনের পথ অতিক্রম করার পর একজন অপরিচিত যুবকও তাদের সাথী হয়ে যান। তারা মনে মনে ধারণা করেন যে, হয়ত এই যুবকটিও মক্কা শরীফে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেছে। যুবকটি তাদের সাথে একদিন-এক রাত সফর করে। কিন্তু এ সময়ের মধ্যে তাদের সাথে নামাযে শরীক হয় না এবং একাকী নিজেও নামায আদায় করে না। বিষয়টি হামিদের দৃষ্টিগোচর হয় এবং তিনি আশ্চার্যান্বিত বোধ করেন।
যুবক বে-নামাযী
অনেক পীর সাহেব এমন রয়েছেন যাদের অসংখ্য মুরীদ ও ভক্ত আছে। কিন্তু সেই পীর-মুরীদের কারও মাঝে শরীয়তের অনুশীলন নেই। তারা অন্যদেরকে কি হেদায়েত দিবে? পীর নিজেই বে-নামাযী, সুতরাং মুরীদকে নামাযের কথা সে বলবে কি করে? কিন্তু হামীদের পীর যেমন নিজে ছিলেণ নামাযের পাবন্দ তেমনি হামীদও ছিলেন নামাযের প্রতি অত্যন্ত পাবন্দ। তাই সাথী যুবকের প্রতি তার দৃষ্টি আকর্ষিত হয় এবং পীরের কাছে যুবকটির নামায না পড়ার বিষয়টি তিনি জানান।
যুবকের পরিচয়
হামীদের কথা শুনে ইবনে খাওয়াছ যুবকটিকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলেন, “হে যুবক! তুমি নামায পড় না কেন?” যুবক বললো, ‘নামাযের দায়িত্ব আমার উপর নেই।’ ইবনে খাওয়াছ বললেন, ‘কেন? তুমি কি মুসলমান নও?’ যুবক বলল, আমি মুসলমান নই, বরং খ্রিষ্টান। খৃষ্টানদের ধর্মে নামায নেই বিধায় যুবকটি নামাযে শরীক হয় নি। তার অন্তরে স্বীয় ধর্মের গুরুত্ব অত্যন্ত বেশী ছিল। তাই সফরের অন্য সাথীরা নামায পড়াকালে লজ্জার খাতিরেও সে নামাযে শরীক হয়ে স্বীয় ধর্মের বিরোধিতা করে নি। কিন্তু মুসলিম বে-নামাযী যুবকদের কাছে কি স্বীয় ধর্মের এতটুকু গুরুত্ব আছে? বিধর্মীদের অনুষ্ঠান তো পরের কথা, ইসলামী অনুষ্ঠানে নামাযের জামাত অনুষ্ঠিত হয় আর সেই জামাতে শরীক হতেও বহু যুবক লজ্জাবোধ করে। বে-নামাযী মুসলিমরা বিধর্মীদের কাছে স্বীয় ধর্ম ও অবস্থানকে এভাবে ক্ষুন্ন করে, কিন্তু সতর্ক হয় না।
যুবকটি খ্রিষ্টান তরীকায় প্রভূতে বিশ্বাসী এবং আধ্যাত্মবোধের প্রভূতে বিশ্বাসী এবং আধ্যাত্মবোধের অধিকারী। সে ইবনে খাওয়াছকে অবহিত করে যে, আমি তাওয়াক্কুলের মধ্য দিয়ে জীবন যাপন করে থাকি আর সেটা করে থাকি আত্মপরিশুদ্ধির কামনায়। পরীক্ষা-নিরীক্ষার ভেতর দিয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে বনে-জঙ্গলে ঘুরাফিরা করি। আমার অবস্থা এই যে, আমি কারও কাছে হাত পাতি না, আমার মাবুদকেই আমার জন্য যথেষ্ট মনে করি।
যুবকের প্রতি অনুকম্পা
নাপাকী ঘৃণার বস্তু, সুতরাং নাপাকীকে ঘৃণা করা স্বভাবগত ব্যাপার। কিন্তু এই নাপাকী কাপড়ে লাগলে কাপড় ফেলে দেয়া যায় না, বরং পরিষ্কার করে নিতে হয়, পরিষ্কার করার ব্যবস্থা নিতে হয়। তদ্রুপ মানুষ আল্লাহর পরম সুন্দর সৃষ্টি। তাই মানুষকে ঘৃণা করা যায় না; হ্যা, মানুষের মধ্যে বিদ্যমান কুফর, শিরক, নেফাক ও পাপাচারিতা অবশ্যই ঘৃণার বস্তু। এর প্রতি ঘৃণা পোষণ করা কেবল স্বভাবগত চাহিদাই নয়, বরং ঈমানের অঙ্গও বটে। তাই মানুষের মধ্যে এসব কিছু পরিদৃষ্ট হলে তার পরিশোধনে সচেষ্ট হওয়া মুমিনের ঈমানী দায়িত্ব। এজন্য প্রয়োজনে দূরদর্শিতা, সুকৌশল এবং দয়া-মায়া, অনুকম্পার। বস্তুতঃ দয়া-মায়া, স্নেহ-মমতা মানুষকে আকৃষ্ট করে। বুযুর্গ-মাশায়েখদের এ স্বভাব বহু গোনাহগারদের জন্য হয়ে থাকে মুক্তির উপায়। বুযুর্গদের সোহবত, কল্যাণ দৃষ্টি এবং তাওয়াজ্জুহের বরকতে অনেকের জীবন সফল হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও হতে পারে। আল্লাহর ইচ্ছা কার জানা আছে? তবে সময়ে সময়ে তা অনুমান করা যায়, যেমন হয়েছিল এই খৃষ্টান যুবকের বেলায়। ইবনে খাওয়াছ যুবকের বক্তব্য শুনে উত্তেজিত হয়ে উঠেননি, তিক্ত কথাও বলেননি, যুবককে ভর্ৎসনাও করেন নি। বরং হামীদকে ডেকে বললেন, “আমি যুবকের বক্তব্য শুনেছি। তাকে তার অবস্থায় আমাদের সাথে থাকতে দাও, তাকে কোন কিছু বলো না, তার সাথে তর্ক-বিতর্কও করো না। দেখ কি হয়?” ইবনে খাওয়াছের এই কোমলতা ও স্নেহ মাখা আচরণ খৃষ্টান যুবকের জন্য যুগশ্রেষ্ঠ ওলীর সান্নিধ্যে আরো কিছু সময় কাটানোর সুযোগ করে দেয়। সুযোগ করে দেয় ইসলাম ও মুসলমানদের সম্পর্কে অভিজ্ঞতা লাভের।
আইনের প্রতি শ্রদ্ধা - কাবা শরীফের বরকত
আইনের প্রতি শ্রদ্ধা
ইবনে খাওয়াছ মরু নগরীতে পৌঁছে সাধারণ পোষাক খুলে নিজ হাতে ধুয়ে পরিষ্কার করত হজ্বের উদ্দেশ্যে এহরামের কাপড় পরেন এবং এহরামের নিয়ত করেন। এ সময় খৃষ্টান যুবকটিকে কাছে ডেকে এনে স্নেহের সুরে বেলনঃ হে যুবক! তোমার নাম কি? যুবক বলেঃ আমার নাম ‘আব্দুল মসীহ।’ ইবনে খাওয়াছ তখন যুবককে কোমল স্বরে বলেনঃ হে আব্দুল মসীহ! ঐ দেখ সামনে হরম শরীফের সীমানা। আল্লাহ পাক মুশরিকদেরকে এই সীমানা অতিক্রম করতে নিষেধ করেছেনঃ
انما المشركون نجس فلا يقربوا المسجد الحرام
অর্থঃ ‘মুশরিকরা অপবিত্র। সুতরাং তারা মসজিদে হারামের ধারে কাছেও যাবে না।’
তুমি নফসের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছ এবং স্বীয় অবস্থা সম্পর্কে অবগত আছ। তোমার জন্য হরম শরীফ অতিক্রম করার অনুমতি নেই। তাই আমি আর তোমাকে সাথে থাকার অনুমতি দিতে পারছি না। তুমি আল্লাহ পাকের বিধান লংঘন করো না। যদি তুমি সীমা অতিক্রম কর তাহলে তোমাকে দায়ী হতে হবে।
আরাফার ময়দানে যুবক
ইবনে খাওয়াছের নছীহত শ্রবণ করে যুবকটি আল্লাহর বিধানের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে হরমের সীমা অতিক্রম করা থেকে বিরত থাকে। কিন্তু তার অন্তর আর বিরত থাকে নি। অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জন ও উৎকর্ষ সাধনের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সে স্থির সিদ্ধান্তে উপনীত হয়। আল্লাহর মারিফাত লাভে ও তার নৈকট্য লাভে ধন্য হওয়ার প্রেরণায় সে ব্যাকুল হয়ে পড়ে। তার মনে জাগে আমাকে যিনি সৃষ্টি করেছেন আমি তার গোলামীর স্বীকৃতি না দিয়ে জীবনে যা ক্ষতি করেছি তা অপূরণীয় ক্ষতি। বুদ্ধিমান সেই যে অনুতপ্ত হয় ও জীবনে সংশোধনী আনে। তাই আমার ভুলের অবসান করতেই হবে। হামীদ বলেন, “আমরা খৃষ্টান যুবকটিকে পথে রেখে চলে যাই। এরপর আমরা যখন যিলহজ্জের ৯ তারিখে আরাফার ময়দানে মুনাজাত রত, তখন আমাদের খুঁজতে খুঁজতে যুবকটি তাড়াহুড়া করে আমাদের কাছে এসে পৌঁছে যায়।
আকৃতি-প্রকৃতি পরিবর্তনের কারণ
রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, “তোমরা কেঁদে কেঁদে আল্লাহর নিকট মুনাজাত করবে, যদি কান্না না আসে তাহলে ক্রন্দনকারীদের আকৃতি ধারণ করে ক্রন্দন করবে।” তাতে লাভ হবে কি? সে লাভের প্রতি ইঙ্গিত করে ইরশাদ হয়েছে
هم الجلساء لايشقي جليسهم
‘আল্লাহপাক তাঁর প্রিয় বান্দাদের সান্নিধ্য লাভকারীদেরকে বঞ্চিত করেন না।’
আতরের দোকানে বসলে অবশ্যই সুগন্ধে মোহিত হওয়া যায়। বুযুর্গদের পোষাক পরিধান করলে মানুষ তাকে বুযুর্গ মনে করে এবং তাকে বুযুর্গের সম্মান প্রদর্শন করে থাকে। আল্লাহ পাক তার বিধানের বাহ্যিক আকৃতি ধারণকারীদেরকেও বঞ্চিত করেন না। বরং বাহ্যিক এই আকৃতির সুবাদে বাতেনী প্রকৃতির পরিবর্তনও করে দেন। এজন্যই ইসলামে বাহ্যিক আকৃতির গুরুত্ব অপরিসীম। বাহ্যিক আকৃতির কারণে বাতেনী প্রকৃতির পরিবর্তনের যথেষ্ট উদাহরণ ইতিহাসের পাতায় বিদ্যমান।
এহরামের বরকত
তারই একটি উদাহরণ খৃষ্টান এই যুবক। এই যুবক আরাফার ময়দানে ইবনে খাওয়াছের দরবারে লুটিয়ে পড়ে। ইবনে খাওয়াছ তাকে জিজ্ঞাসা করেন, “হে আব্দুল মসীহ! কী ব্যাপার? তোমার কী হয়েছে? তুমি যে এহরাম পরিধান করে আছো?” যুবকটি উত্তর দিল, “আমাকে আর আব্দুল মসীহ বলবেন না, আমি আব্দুল মসীহ (মসীহের গোলাম) নই, বরং মসীহ যার গোলাম আমি তারই গোলাম।” ইবনে খাওয়াছ অত্যন্ত আনন্দিত হয়ে তার বৃত্তান্ত জানতে চাইলে যুবকটি বলল, “আপনারা চলে আসার পর আমি সেখানে বসে থাকি। ইতোমধ্যে হাজীদের একটি কাফেলা সেখানে আসে। আমি এহরাম পরে মুসলমানী আকৃতি ধারণ করে তাদের সাথে মক্কা নগরীতে প্রবেশ করি।
কাবা শরীফের বরকত
পৃথিবীর প্রথম ঘর আল্লাহর ঘর কাবা শরীফ। এই ঘরের সাথে জড়িত আছে বহু ঘটনা, বহু ইতিহাস। এর বরকতে ধন্য হয়েছে বিশ্ববাসী। মানুষের প্রাণকেন্দ্র, আল্লাহর তাজাল্লীর কেন্দ্র বিন্দু এই কাবা শরীফ হচ্ছে সবচেয়ে নিরাপদ স্থান। যারা তাতে প্রবেশ করে, কাবা শরীফ তাদের জন্য নিরাপত্তার পথ সুগম করে। কেবল দেহের নিরাপত্তাই নয়, আত্মার নিরাপত্তার পথও সুগম করে। কেবল ইহকাল নয়, পরকালের নিরাপত্তার জন্যও বিহিত ব্যবস্থা করে। হাজীগণ কাবা শরীফের প্রতি নিজেদের দৃষ্টি নিবন্ধ করেন, আর কাবা শরীফের অধিপতি মহান রাব্বুল আলামীন হাজীদের অন্তরে স্বীয় রহমতের দৃষ্টি আরোপ করেন। হাজীগণ এহরামের কাপড় দ্বারা তাদের দেহকে সুসজ্জিত করেন আর আল্লাহ পাক স্বীয় মারিফাতের দ্বারা তাদের অন্তরকে শক্তিশালী ও সজীব করেন। এই বরকত থেকে কেউ বঞ্চিত হয় নি। তার কি লাভ হয়েছিল, তা সে নিজেই ইবনে খাওয়াছের কাছে বর্ণনা করে বলে, “আমি মুসলমানদের আকৃতি ধরে কাবা শরীফের সামনে দাঁড়াই। কাবা শরীফের উপর আমার দৃষ্টি পড়ার সাথে সাথে ইসলাম ব্যতীত সমস্ত মত, পথ ও ধর্ম-কর্মের অসারতা আমার অন্তরে সুস্পষ্ট হয়ে ধরা পড়ে। তাই বিলম্ব না করে আমি গোসল করতঃ আল্লাহর প্রতি ঈমান আনি এবং হজ্জ্বের নিয়তে পুণরায় এহরাম পরিধান করি। আজ সকাল থেকে আপনাদের তালাশ করে করে এখন আপনাদের সাক্ষাত লাভে ধন্য হলাম।” হামীদ বলেন, “তার অবশিষ্ট জীবন বুযুর্গদের সান্নিধ্যে কাটে এবং আল্লাহর মারিফাতের সাধনা-মুজাহাদার মধ্যে দিয়ে সে মৃত্যুবরণ করে।
যুবকদের প্রতি আবেদন
আমার প্রাণপ্রিয় যুবক ভাইগণ! তোমরা মুসলিম। ইসলাম তোমাদের ধর্ম। তোমাদের সমৃদ্ধ ঐতিহ্য রয়েছে, রয়েছে মুসলিম যুবকদের স্বর্ণালী ইতিহাস। সুতরাং তোমাদেরকে ধর্মের কঠোর অনুশীলন করতে হবে। রক্ষা করতে হবে সে ঐতিহ্য, সমুন্নত রাখতে হবে পূর্বসূরী মুসলিম যুবকদের স্বর্ণোজ্জ্বল ইতিহাস।
গভীরভাবে তোমাদের অনুধাবন করতে হবে যে, ইসলামের শত্রুদল তোমাদের দ্বারা ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহকে নিশ্চিহ্ন করার ষড়যন্ত্র বাস্তুবায়নে সাংঘাতিক তৎপর। অতি সতর্কতার সাথে অত্যন্ত গোপনে ও সুকৌশলে এরা তোমাদেরকে এবং মুসলমান জাতিকে গ্রাস করতে উঠে পড়ে লেগেছে। সেবার নামে, অর্থ-সম্পদের লোভ দেখিয়ে, প্রগতির প্রলোভনে, শিক্ষা-সংস্কৃতির উন্নয়নের শ্লোগানে বিভিন্ন উপায় অবলম্বনের আড়ালে তাদের কু-মতলব তারা কার্যকর করছে।
যুবকরাই জাতির উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ। জাতীয় ঐতিহ্য সংরক্ষণ, প্রচার-প্রসার ও জাতীয় নেতৃত্বে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব তোমাদেরকে অবশ্যই পালন করতে হবে। আর করতে হবে সতর্কতা ও দূরদর্শীতার সাথে। এর জন্যে প্রয়োজন দ্বীনি শিক্ষা অর্জন এবং সে মুতাবেক আমলের, সাহসিকতার, মধুর চরিত্রের, ইবাদত-মুজাহাদার। প্রয়োজন আল্লাহর প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস ও বিশ্ব রাসূলের প্রতি আন্তরিক আনুগত্যের। তাই তোমরা সাহাবীদের জীবনাদর্শ পড়াশোনা কর। মুসলিম মনীষীদের ইতিহাস অধ্যায়ন কর। এ পাঠ তোমাদের চলার পথে হবে উত্তম পাথেয়।
তোমাদেরকে স্মরণ রাখতে হবে যে, বস্তু জগত অত্যান্ত প্রলুব্ধকর। মরীচিকাময় এ জীবন অস্থায়ী। চিরস্থায়ী জীবন পরকালের জীবন। সে জীবনের শেষ নেই, সে জীবনের অশান্তি চির অশান্তি। সে জীবনের শান্তি চির শান্তি। সুতরাং চির শান্তির পথ বেছে নিতে হবে আসুক শত বাধা, শত প্রতিবন্ধকতা। সবকিছু এড়িয়ে কবর-হাশর এবং পুলছিরাতের ঘাটি নিরাপদে পাড়ি দেয়ার সুব্যবস্থা করতে হবে। আল্লাহ ওয়ালাদের সহচর্য গ্রহন করে তাদের প্রতি বৈরিতার ভাব পরিহার করো। তাদের প্রতি শ্রদ্ধা, ভক্তি তাদের সান্নিধ্য ও তাওয়াজ্জুহ আল্লাহর মারিফাতের পথ সুগম করবে। খৃষ্টান যুবকের ঈমান লাভ এবং তার মন-মানসিকতার ফলাফল থেকে শিক্ষা গ্রহণ করো। আল্লাহপাক তোমাদেরকে তাওফীক দান করুন। যুবকদের জন্য আমার মুনাজাতঃ হে রাব্বুল আলামীন! আপনি দয়ার সাগর, ক্ষমার মালিক। আমার প্রাণপ্রিয় যুবকদেরকে হেদায়েত ও নাজাতের গৌরবে উদ্ভাসিত করুন।
আট. যুবক রশীদ ইবনে সুলাইমান
রাতের কান্না
জেহাকে ইবনে মুযাহিম বলেন, “আমি জুমার রাত্রে কুফার জামে মসজিদে গিয়ে এক যুবককে মসজিদের বারান্দায় সিজদায় ক্রন্দনরত অবস্থায় দেখি। আমার মনে হলো, যুবকটি সাধারণ যুবক নয়, বড় ধরণের আল্লাহর ওলী হবে। তাই আমি তার দিকে অগ্রসর হই। তাকে মুনাজাতে বলতে শুনি হে মহান আল্লাহ পাক! আমার ভরসা আপনার উপর, আর কারো উপর নয়। প্রকৃতপক্ষে প্রশান্ত সেই, যে কেবল আপনাকে স্বীয় জীবনের আসল লক্ষ্য বানিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছে। সর্বোত্তম সে, যে সমস্ত রাত্রি আপনার ভয়-ভীতির মধ্যে অতিক্রম করতে সক্ষম হয়েছে এবং নিজের দুঃখ-কষ্ট ও বালা-মুসিবতের কথা আপনার কাছে পেশ করতে সক্ষম হয়েছে। যার মধ্যে আপনার মুহাব্বত ও প্রেমের আগুন দাউ দাউ করে জ্বলছে তার মত সফলকাম আর কেউ নেই। তার জীবন সফলকাম যে তার প্রেমাস্পদকে রাতের আঁধারে ডাকে এবং তার উত্তর পায়। যুবকের এরূপ মুনাজাত এবং ক্রন্দনে আমার মাঝে এমন প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হলো যে, আমিও তার সাথে সাথে কাঁদতে শুরু করি। তার মুনাজাতের বাণীসমূহ থেকে এক প্রকার নূর ও মারিফাতের স্বাদ অনুভূত হচ্ছিল। এরপর যুবক এই কবিতাটি আবৃত্তি করতে থাকে
হে আমার বান্দা! আমি আছি এবং তোমাকে হেফাযত করছি।
তুমি আমার তত্ত্বাবধানে আছো
তুমি যা বলছ, আমি তা শুনছি।
আমার ফেরেশতাগণ তোমার মধুর বাক্য শুনতে আগ্রহী।
আমি তোমার সমস্ত গোনাহ ক্ষমা করে দিয়েছি।”
যুবকের পরিচয় - জ্বিনের সমাবেশ
যুবকের পরিচয়
যুবকটি মুনাজাত থেকে ফারেগ হওয়ার পর ইবনে মুযাহিম তাকে সালাম দেন। যুবক সালামের উত্তর দেয়। ইবনে মুজাহিম তাকে বলেন, “আল্লাহ পাক তোমার প্রতি স্বীয় রহমত অব্যাহত রাখুন এবং তার নূরে তোমার জীবন নূরান্বিত করুন তুমি কে? তোমার পরিচয় কি?” যুবকটি বলল, ‘আমি রশীদ ইবনে সুলাইমান।’ ইবনে মুযাহিম তার নাম এবং তার বুযুর্গী ও আল্লাহভীরুাতার কথা এর আগে বহুবার শুনেছিলেন। তার সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য ব্যাকুল ছিলেন। কিন্তু ইতিপূর্বে কোনদিন সাক্ষাতের সুযোগ হয়নি। যুবকের মুখে তার নাম শোনার সাথে সাথে ইবনে মুযাহিমের মন খুশীতে বাগ বাগ হয়ে যায় এবং তার সহচর্যে থাকার জন্য তিনি আবেদন জানান।
যুবক অদৃশ্য
ইবনে মুযাহিমের আবেদনের উত্তরে যুবক বলে “আপনাকে আমার সাথে রাখা খুবই কঠিন। কেননা যে ব্যক্তি আল্লাহ পাকের কাছে মুনাজাত করে স্বাদ এবং তৃপ্তি লাভে ধন্য সে কি করে সৃষ্টির সাথে সম্পর্ক রাখতে পারে? যদি পূর্বের ওলীগণ আমাদের অবস্থা অবলোকন করেন তাহলে তারা বলবেন যে, আখেরাতের উপর আমার কোন ঈমান নেই’ এই বলে যুবকটি গায়েব হয়ে যায়। ইবনে মুযাহিম অনেক খুঁজাখুঁজি করেও যুবকের আর সন্ধান না পেয়ে অত্যন্ত মর্মাহত হন।
যুবকের সাক্ষাৎ
ইবনে মুযাহিম নিজেও বড় ধরণের ওলী ছিলেন। কিন্তু আল্লাহর ওলী এই যুবকের সাক্ষাৎ পেয়েও তার সান্নিধ্য থেকে বঞ্চিত হয়ে যাওয়ার দুঃখে কাতর হয়ে পুণরায় তার সঙ্গে সাক্ষাৎ লাভের জন্য আল্লাহ পাকের দরবারে কাকুতি-মিনতির সাথে মুনাজাত করতে থাকেন। এরপর একবার হজ্জ্বের উদ্দেশ্যে তিনি মক্কা শরীফ গমন করেন এবং বায়তুল্লাহ শরীফে বিরাট এক মজলিসে ঐ যুবককে বয়ান করতে দেখতে পান। যুবকটি বয়ানের মূহুর্তে সূরায়ে ‘আনআম’ থেকে তেলাওয়াত করে করে উপস্থিত শ্রোতাবৃন্দকে শোনাচ্ছিল। ইবনে মুযাহিমকে দেখে যুবক মুচকি হাসে। অতঃপর সালাম মুসাহাফা এবং মুআনাকা করতঃ ইবনে মুযাহিমকে উদ্দেশ্য করে বলে, ‘পুনরায় আমার সাথে মুলাকাতের জন্য আল্লাহর দরবারে মুনাজাত করেছিলেন?” ইবনে মুযাহিম বললেন, ‘হ্যাঁ, আমি এরূপ মুনাজাত করেছিলাম।’ যুবকটি বলল, আলহামদুলিল্লাহ।
জ্বিনের সমাবেশ
ইবনে মুযাহিম সুযোগ বুঝে এদিক সেদিকের কথা না বলে বিনয়ের সাথে যুবকের কাছে আবেদন করে বলেন, “ঐ রাত্রে আপনি আল্লাহ পাকের নিকট থেকে যা পেয়েছেন এবং যা দেখেছেন ও শুনেছেন, সে বিষয়ে আমাকে অবহিত করুন।” এই আবেদনের সাথে সাথে যুবকটি হঠাৎ চিৎকার করে সংজ্ঞাহীন হয়ে যায় এবং উপস্থিত সমস্ত শ্রোতাবৃন্দ মুহূর্তের মধ্যে অদৃশ্য হয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর যুবকটির জ্ঞান ফিরে আসলে সে ইবনে মুযাহিমকে বলে, “হে আমার ভাই! যারা আল্লাহর সন্ধানী, আল্লাহর ভেদ প্রকাশে তাদের অন্তর কত অধিক ভীত-সন্ত্রস্ত হয়, তা কি আপনি জানেন না?” ইবনে মুযাহিম জিজ্ঞেস করলেন, “এই লোকগুলো কারা ছিল? কিভাবে অদৃশ্য হয়ে গেল?” যুবক বললঃ এরা মুসলমান জ্বিন। আমার সাথে সম্পর্ক রাখে। আমি তাদেরকে সম্মান করে থাকি। এরা প্রতি বছর হজ্জ্ব করে এবং আমাকে কুরআন শরীফ তেলাওয়াত করে শোনায়।
জান্নাতে সাক্ষাৎ হবে - শিক্ষণীয় বিষয়
জান্নাতে সাক্ষাৎ হবে
ইবনে মুযাহিমের সাথে এই বক্তব্যের পর তাকে বিদায় জানিয়ে যুবক বলেঃ আল্লাহপাক আপনাকে আমার সাথে যেন জান্নাতে সাক্ষাত করান এই মুনাজাত করি। সেখানে সাক্ষাতের পর আর বিচ্ছেদ হবে না। সেখানে কোন কষ্ট নেই, কোন চিন্তাও নেই। এই বলে যুবকটি পুণরায় অদৃশ্য হয়ে যায়।
শিক্ষণীয় বিষয়
(ক) জুমার রাত্রির বরকতঃ
জুমআর রাত্রি অত্যন্ত বরকতময় রাত্রি। ইবাদত-রিয়াজত ও আল্লাহর দরবারে মুনাজাত করার রাত্রি। ইবনে মুযাহিম এই রাত্রিতে মুনাজাতের আশায় মসজিদে পৌঁছেন এবং যুগশ্রেষ্ঠ ওলী ঐ যুবকের সাক্ষাত লাভে ধন্য হন। যুবকের মুনাজাত ও ক্রন্দনে আকৃষ্ট হয়ে তিনি নিজেও আল্লাহ পাকের দরবারে ক্রন্দন করেন। বস্তুতঃ এজন্যই আল্লাহ ওয়ালাদের সহচর্য লাভের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। পবিত্র কুরআন ও হাদীসে এর বিশেষ গুরুত্ব বর্ণনা করা হয়েছে। কিন্তু আজ মুসলমানদের মধ্যে নামাযের গুরুত্বই নেই, জুমার রাত্রির গুরুত্ব আসবে কোথা থেকে? যারা দ্বীনদার তাদের মধ্যেই বুযুর্গদের সহচর্য অবলম্বনের মন-মানসিকতা নেই, সুতরাং অন্যদের মধ্যে এবং যুবকদের মধ্যে এর গুরুত্ব আসবে কোথা থেকে? হে যুবক ভাইগণ! যাই করেছ, জীবনকে ধ্বংস করো না। হাতে সময় বেশী নেই। বৃদ্ধকালে দেহ দূর্বল হয়ে যাবে, শক্তি থাকবে না। সুতরাং যুবক বয়সে মসজিদমুখী হও এবং ইবনে সুলাইমানের মত মসজিদে হাজির হয়ে নতশীর হও। স্বীয় কৃতকর্মের জন্য আল্লাহর দরবারে ক্ষমাপ্রার্থী হও। আল্লাহর মারিফাত কামনা করে মুনাজাত কর। তিনি বড় দয়ালু, অত্যন্ত ক্ষমাশীল। প্রার্থনাকারীদেরকে বঞ্চিত করেন না, তোমাদেরকেও বঞ্চিত করবেন না।
(খ) আল্লাহর উপর ভরসাঃ
এই যুবকের আধ্যাত্মিক সফলতার পিছনে যেমন ছিল তার সাধনা, প্রার্থনা, উদ্যম ও প্রেরণা; তেমনি ছিল আল্লাহর সত্ত্বার প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস ও অগাধ ভরসা। কুফার জামে মসজিদে জুমার রাত্রে আল্লাহ পাকের কাছে মুনাজাতে তার বক্তব্যই এর বাস্তব প্রমাণ। তার বক্তব্যে ফুটে উঠেছে যে, যে ব্যক্তি আল্লাহর ভালোবাসা ও মুহাব্বতে স্বীয় অন্তরকে নূরান্বিত করেছে তার জন্য ভিন্ন কিছুর প্রয়োজন হয় না। সৃষ্টির প্রতি তার আকর্ষণ থাকে না। তার দৃষ্টি কেবল আল্লাহর সত্ত্বার উপর আরোপিত থাকে, তার প্রতিই সে ভরসাশীল হয়। বস্তুতঃ আত্মিক এই ভরসাই যুবকের জন্য সাফল্যের কারণ হয়েছে। কিন্তু আজ যুব সমাজ বস্তুমুখী, প্রগতিবাদী। সফলতা অর্জনে তারা যে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হতে চলেছে তা আর অস্পষ্ট নয়। তাই আমি আহ্বান জানাচ্ছি হে যুবক ভাইগণ! তোমরা ইবনে সুলাইমানের জীবনকে পাথেয় বানাও, ধ্বংসের পথ থেকে নিজেদেরকে বিরত রাখ।
(গ) মুনাজাতের গুরুত্বঃ
আল্লাহ পাকের নিকট মুনাজাত ও প্রার্থনা মুমিনদের বড় হাতিয়ার। বিশেষ করে শেষ রাত্রের মুনাজাত। এ সময় অসংখ্য আল্লাহর ওলীগণ আল্লাহর দরবারে হাত তুলে কান্নাকাটি করে, মুনাজাতরত হয়। আল্লাহ পাক এই সময়ে জামাল দয়ার্দ্রতার হালতে থাকেন, বান্দার প্রতি ক্ষমা ও করুণা বর্ষণ করে থাকেন। এ সময়ে ঘুমিয়ে থাকা, গান-বাদ্য-তামাশা দেখা এবং আমোদ-প্রমোদে লিপ্ত থাকা বঞ্চিত হওয়ার কারণ হয়ে থাকে। এ সময়ে স্বামী-স্ত্রী মিলন থেকে বিরত থেকে উভয়ে মিলে আল্লাহর দরবারে ইহকাল-পরকালের কল্যাণ কামনা করা খুবই প্রয়োজন। এই যুবকের সাফল্যময় জীবনের অন্যতম উপায় ছিল মুনাজাত। যুব সমাজকে তার জীবনের এই বৈশিষ্ট্যটিকে পাথেয় করা বাঞ্ছনীয়।
(ঘ) ভেদ প্রকাশ করতে নেইঃ
সুলুক অর্থাৎ আধ্যাত্মিক সাধনার পথ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এই পথ গভীর সমুদ্রের পথ। এটা পানির সমুদ্র নয়, যার তলা বা সীমা আছে। বরং এই পথ হচ্ছে আল্লাহর মারিফাত ও ভেদের আসীম সমুদ্র পথ। এ সমুদ্র পাড়ি দেয়া অত্যন্ত কঠিন। এই সমুদ্রে অনেকেই নৌকা ও ষ্টীমার নিয়ে যাত্রা শুরু করে, কিন্তু ওপারে যেতে সক্ষম হয় মাত্র হাতে গোনা কিছু লোক। এই পথে চলার সময় অনেক পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়। বাঁধার সম্মুখীন হতে হয়। সার্বাধিক বাধা হচ্ছে মারিফাতের ভেদ। আধ্যাত্মিক সাধনায় অর্জিত ভেদের জ্ঞান লাভ করে যারা আত্মহারা হয়ে পড়ে, নিজের মধ্যে আমিত্ব ভাব অনুভব করে, তারা মারিফাতের সমুদ্রে ডুবে মরে, কিনারায় যেতে সক্ষম হয় না। আর যারা ভেদের বিষয়বস্তুকে গোপন করতে পারে কেবল তারাই তীরে ভিড়তে পারে। এজন্য আল্লাহর ওলীগণ মারিফাতের ভেদ এরূপভাবে গোপন করে রাখেন যেমন কুমারী মেয়েরা তাদের ঋতুস্রাবকে গোপন করে রাখে। বস্তুতঃ আল্লাহর ওলীগণ নিজেদেরকে এমন গোপন করে রাখেন যে, লোকেরা তাদেরকে পাগল-বেওকুফ এবং বুরবক মনে করে থাকে। এই যুবকের আধ্যাত্মিক সাফল্যের পেছনেও এই সত্যটি কাজ করেছে। তাই ইবনে মুযাহিমের বারবার আবেদনের পরও ভেদ প্রকাশে তিনি অসম্মতি প্রকাশ করেন।
(ঙ) বুযুর্গদের সহচর্যঃ
আতরের দোকানে বসলে আতরের সুগন্ধি পাওয়া যায়। আর নাপাকীর কাছে বসলে নাপাকীর গন্ধ পাওয়া যায়। অনুরূপ আল্লাহর ওলীদের সহচর্যে উঠা-বসা করলে আল্লাহর মারিফাতের সুগন্ধি পাওয়া যায় আর ভণ্ডদের সহচর্যে বসলে শয়তানের গন্ধ পাওয়া যায়। এজন্য আল্লাহর রাসূল সতর্ক করে দিয়ে ইরশাদ করেছেন, “তোমরা একাকী থাকবে, কিন্ত অসৎ লোকের সংশ্রবে যেও না। আর যদি সৎ লোকের সন্ধান পাও, তার সহচর্য অবলম্বন কর, একা থেকো না।” এই স্বভাব ইবনে মুযাহিমকে আধ্যাত্মিক সাধনায় উর্ধ্বে উঠতে সহায়তা করেছিল। সেজন্য বয়সে যুবক হলেও ইবনে সুলাইমানের সান্নিধ্য লাভের কামনায় তিনি আল্লাহর নিকট মুনাজাত করেছিলেন। আল্লাহ পাক তার মুনাজাত কবুল করেছিলেন। তাই বায়তুল্লাহর সামনে যুবকের সাক্ষাত লাভ করলে যুবক তাকে শেষ কথা বলে যায় যে, “তোমার সাথে জান্নাতে মিলন হবে, সেই মিলনের পর আর বিচ্ছেদ হবে না।’ আল্লাহ পাক আমাদেরকে বুযুর্গানের দ্বীনের সহচর্য দান করুন।
(চলবে ইনশাল্লাহ)
৫ম পর্বঃ