বর্তমান শতাব্দীতে
দুইটি মুসলিম দেশের
রাষ্ট্রনায়ক তাদের
দুইটা মতবাদের জন্য
খুবই প্রসিদ্ধ।একজন
হলেন তুরস্কের
কামাল পাশা
আতাতুর্ক[আতাতুর্ক
মানে তুর্কিস্তানের
পিতা] তার
ধর্মনিরপেক্ষতা
মতবাদের জন্য আর
অন্যজন হলেন
মিসরের জামাল
আব্দুল নাসের তার
আরব জাতীয়তাবাদ
মতবাদের জন্য
প্রসিদ্ধ। কামাল
পাশাও তুর্কি
জাতীয়তাবাদ
মতবাদের জন্য
বিখ্যাত।[উল্লেখ্য যে,
ধর্মনিরপেক্ষতা ও
জাতীয়তাবাদ দুইটাই
কুফরী মতবাদ]। তারা
দুইজন এমন সময়
মুসলিম রাষ্ট্রের
প্রধান ছিলেন যখন
মুসলিম রাষ্ট্র বলতে
মানুষের চোখের সামনে
ভেসে উঠত
অশিক্ষিত, দারিদ্র,
কুসংস্কারচ্ছন্ন,
অর্থনৈতিক,রাজনৈ
তিক সকল দিক
থেকেই পরাজিত একটা
জাতি। সুতরাং
মুসলমানদের এই
দুর্দশা অবশ্যই তাদের
ব্যাথিত করেছিল।
সুতরাং এতটুকু কথা
হয়তো বলা যায়
যে,তাদের নিয়ত সৎ
ছিলো।তারা বাস্তবেই
হয়তো চেয়েছিল
মুসলমানদের এই
অবস্থার উন্নয়ন
হোক।কিন্তু মুসলিম
জাতির দুভার্গ্য
তাদের নিয়ত যদিও
ঠিক থাকে কিন্তু
তাদের কর্মপন্থা
মুসলিম জাতিকে
উন্নয়নের বদলে আরো
অবনতির দিকে ঠেলে
দেয়। বিষয়টা অনেকটা
এরকম,একজন
লোকেএরকম,একজন
লোকের
সাধারন কাশির
সমস্যা ছিল।সে
ডাক্তারের কাছে
ডাক্তার তাকে
যক্ষ্মার ওষুধ দেয়
এবং এর ফলে রোগীকে
কঠিন পরিণিতি ভোগ
করতে
হয়।এখানে ডাক্তারের
উদ্দেশ্য ছিল তাকে
সুস্থ করা কিন্তু তার
কাজ উল্টো রোগীর
মৃত্যূর কারণ হয়ে
দাড়ায়।কামাল পাশা ও
নাসের উভয়েই তাদের
দেশের উন্নয়নই
চেয়েছিলো।একটা
জাতির পতন রোধ
করার জন্য সবার
আগে জানা উচিত
তাদের পতনের কারণ
কী? এখানেই এসে
বিপত্তিটা ঘটল।
কামাল পাশা এবং
নাসের যখন এর কারণ
অনুসন্ধান করে তখন
তাদের মাথায় একটা
ধারনা বদ্ধমূল হয়ে
যায় যে,মুসলমানদের
পতন ও এই দুঃখ
দুর্দশার মূল কারণ
হলো ইসলাম। কামাল
পাশা থেকে এধরনের
একটা খুবই প্রসিদ্ধ
ঘটনা মাওলানা আবু
তাহের মেসবাহ দা. বা.
আল কাউসারে
লিখেছিলেন।ঘটনাট
া হলো, কামাল পাশা
তংকালীন সময়ে
তুরস্কের শায়খুল
ইসলামের দিকে
কুরআন শরীফ ছুড়ে
মারে এবং বলে,এই
কুরআন শরীফের
জন্যই আজকে তুর্কি
সম্রাজ্যের এই পতন।
অন্যদিকে ১৯৬৬
সালের অক্টোবর মাসে
দিল্লীতে
প্রেসিডেন্ট নাসের
এক বিবৃতি দান
প্রসঙ্গে বলেন,
ইসলামী ঐক্যের ধুয়া
যতদিন তোলা হবে
ততদিন আরব ঐক্য
সম্ভবপর হবে না।
অর্থাৎ কামাল পাশা ও
নাসের তাদের কাছে
এটাই প্রতীয়মান হয়
যে,ইসলামের কারণে
মুসলমানদের উন্নয়ন
হচ্ছে না।তাই তারা
ইসলামকে
মুসলমানদের মন থেকে
সরিয়ে দেবার
পরিকল্পনা করে।
কিন্তু প্রশ্ন হলো
তাদের এই ধরনের
চিন্তা চেতনার
চিন্তা চেতনার কারণ
কী? মুফতি তাকী
উসমানী দা.বা.
বলেন,এর পিছনে মূলত
একটা মনস্তাত্বিক
ধারনা কাজ করছে।
সেই মনস্তাত্বিক
ধারনাটা কী। তারা
ইসলাম ধর্মকইসলাম
ধর্মকে
খ্রিষ্টান ধর্মের সাথে
এবং মুসলিম বিশ্বকে
পাশ্চাত্য বিশ্বের
সাথে তুলনা করেছেন।
তারা দেখেছেন
যে,ইউরোপের
পুনর্জাগনের সময়
সবচেয় বড় বাধা ছিলো
খৃষ্টান ধর্ম।যতদিন
খৃষ্টান ধর্মের প্রভাব
ইউরোপের উপর ছিল
ততদিন তারা ছিলো
মুর্খতার অন্ধকারে
আচ্ছন্ন।কিন্তু যখন
ইউরোপ খ্রিষ্টান
ধর্মের বাধন থেকে
মুক্ত হয় তখনই তারা
একটা নতুন শক্তিরূপে
পৃথিবীত আবির্ভুত
হয়।তাই কামাল পাশা ও
নাসের উভয়ের কাছেই
মনে হয় যদি মুসলিম
দেশগুলো থেকে
ইসলামকে কোনোমতে
নির্বাসিত করা যায়
তাহলেই বোধহয় তারা
আবার শক্তিশালী
হতে পারবে।কিন্তু
দুর্ভাগ্য তারা
ইসলামের ইতিহাসটা
একটু গভীর ভাবে
অধ্যয়ন করল না।যদি
করত তাহলে কামাল
পাশা লক্ষ করত যে
যেই তুর্কি জাতির
পতনের জন্য সে
ইসলামকে দায়ী করছে
সেই তুরস্কের উথ্থান
টা কীসের প্রভাবে
হয়েছিলো। ইতিহাস
সাক্ষী প্রাক ইসলামী
যুগে তুর্কিরা ছিলো
অশিক্ষিত,গোড়া
একটা পশ্চাৎবদ
জাতি। এমনকি যখন
তারা ইসলাম গ্রহণ
করে তখনও তারা চরম
গোড়া ছিল।এই
কারণেই তারা
জেরুজালেমের কিছু
গীর্জাও ধ্বংস করে
দিয়েছিলো।এমন একটা
জাতি কীভাব এমন
একটা সম্রাজ্য গড়ে
তুললো যেটা একই
সাথে উত্তর
আফ্রিকা,মধ্য এশিয়া
ও দক্ষিণ ইউরোপ
পর্যন্ত বিস্তৃত।
ইতিহাস সম্পর্কে
অবহিত প্রতিটা
ব্যক্তিই একথা বলবে
যে,ইসলামই সেই
জিনিস যেটা একটা
বর্বর তুর্কি জাতিকে
বিশাল সম্রাবিশাল
সম্রাজ্যের
মালিক বানিয়মালিক
বানিয়ে দেয়।
কিন্তু যখন তুর্কি
জাতি ইসলাম থেকে
দুরে সরে গেলো তখন
তাদের পতন শুরু হলো।
সুতরাং ইসলাম
তুর্কিদের পতনের মূল
কারণ ছিল না বরং
ইসলাম থেকে দূরে সরে
যাওয়ায় তুর্কিদের
পতনের কারণ ছিল।
আরব ঐক্য ইসলামী
ঐক্যের কারণে সম্ভব
হচ্ছিল না।এটা ছিলো
জামাল আব্দুল
নাসেরের দর্শন।
কিন্তু তিনি কি
একবার লক্ষ্য
করলেন না তিনি যেই
আরব ঐক্যের কথা
বলছেন সেটা কীসের
মাধ্যমে হয়েছিলো।
যেই আরবরা সামান্য
বিষয় নিয়ে বছরের পর
বছর যুদ্ধ করত তারা
কীভাবে ঐক্যবদ্ধ
হয়েছিলো। ইসলামই
কি সেই আদর্শ না
যেটা শতধা বিভক্ত
আরবকে ঐক্যবদ্ধ
করেছিলো?সুতরাং
মুসলমানদের পতনের
মূল কারণ হলো ইসলাম
থেকে দূরে সরে যাওয়া,
ইসলাম নয়।যতদিন
পর্যন্ত আমরা এটা
উপলব্দ্ধি করব না
ততদিন পর্যন্ত
আমাদের অবস্থার
পরিবর্তন হবে না।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মে, ২০১৬ বিকাল ৩:১২