ভালবাসা পৌঁছেছে কি?
ভালবাসা পৌঁছেছে কি সেইসব কুঁড়েঘরে?
-যেখানে ছালার চটের বেড়া, শন বা পুরনো ভাঙ্গা টিনের চাল- ঝড় সামলাতে অপারগ,
যেখানে ছাদহীন ফুটপাতে কালি মাখা অগণিত মানুষ জাগে, কিংবা ঘুমায়-
যাদেরকে বলি চোর বা পাগল।
ভালোবাসা পৌঁছেছে কি?
-অল্প টাকায় শ্রম বিক্রি করা শ্রমিকদের মনে-যাদের নুন আনতে পানতা ফুরোয়,
অথবা, ঘাম ঝরানো মূল্যহীন রিক্সাচালকদের কাছে,
অথবা রোদে পুড়ে কয়লা জেলেদের কাছে,
অথবা অগণিত বস্তিতে-
যেখানে নিষ্পাপ অগণিত শিশু আর তাদের মায়েরা কোনোরকম একটু খেয়ে বাঁচে,
অথবা, অল্প টাকার জন্য স্কুল ছাড়া কালিঝুলি মাখা হাতুড়ী চালানো শিশুদের কাছে,
অথবা, কারও বাড়িতে কাজের লোক হয়ে-হয় যারা অত্যাচারিত।
ভালবাসা সেখানে আছে কি?
-যেখানে তরুনী, যুবতী সামান্য টাকার জন্য বিকোয় অনেক পুরুষের কাছে,
আর সবার ঘৃণা নিয়ে পশুদের মত থাকে বেঁচে।
ভালোবাসা পেয়েছে কি?
-সেই বেকারশ্রেণি- মেধায়, প্রতিভায় যারা অনেকদূর,
যাদের বাবা, মা নিঃস্ব হয়েছে তাদের শিক্ষার আলো দিতে,
যাদের উপর পরিবারের অনেক দায়িত্ব,
যাদের হতাশ চোখ জীবনের দিক খুঁজে মরে।
ভালবাসার ছায়ায় আছে কি তারা?
-যারা ধর্ষিত, এসিডদগ্ধ।
ভালোবাসা তাদের থেকে দূরে যেন-
যে শিশুরা কুসংস্কারের অন্ধকারে বন্দী,
যারা ধর্ষিত হয় শিশুকামীদের দ্বারা,
অথবা, সেইসব নারী - যারা মানুষ বলে নিজেকে কখনও ভাবতে শেখেনি,
যারা প্রতিদিন পুরুষের নিয়ম, শাসনে নত,
যারা একদিনও স্বাধীনভাবে বাঁচার স্বপ্ন দেখেনি,
যারা ভয়ে ভয়ে মাথার ঘোমটা একটু সরিয়ে একটু জগত দেখে কৃপণের মত।
ভালোবাসা যেন বন্দী শুধু গুটিকতক মানুষের ঘরে,
যেন বড় অট্টালিকার পরে,
যেন ক্ষমতা, টাকার কাছে,
যেন নির্দিষ্ট দল, মতের পায়ের তলায়,
যেন প্রত্যেকের বিচ্ছিন্ন, ক্ষুদ্র স্বার্থের কাছে।
ভালবাসা হয়নি সর্বজনীন -
তাই অমানবিকতার প্লাবন নামে কখনও সমাজে, কখনও ব্যক্তিতে,
অনেক মূল্যবান জীবন হয় মূল্যহীন নিমেষে,
আমরা হাহাকার করে বলি- কেন??