প্রিয় বাবা ,
নিজেকে নিচ মনে হয় খুব । ক্ষমা করতে পারি না । আমাকে ক্ষমা করে দিয়েন ।
সকাল ৭ টা ৩০ ফোন বেজে উঠল ,ঘুমাচ্ছিলাম অনিচ্ছা স্বত্তেও ফোন টা ধরলাম । বাবার ফোন ছিল তাই ।
হ্যালো
কি ঘুমাইতেছো ?
না , বলেন উঠছি
২০ হাজার টাকা পাঠাইতে পারবা নাকি আজকে ?
কি করবেন ?
বাথরুমের কাজের লাইগা ইট আনতে অইবো , বালু লাগবো ।
কদিন আগে না ১০ হাজার টাকা দিয়া আইছিলাম , শেষ হইয়া গেছে ?
হ , শেষ বাবা যেন একটু অপরাধীর মত ই জবাব দিল
আমি আবার জেরা করে জানতে চাইলাম কি করছেন ?
লজ্জিত ভাবে বাবা হিসাব দিল টিউবয়ল আনছি , বাজার খরচ , দুধ কিনছি আর লোকজনের কামের পয়সা দিছি
আমি বললাম অহ
আজকে টাকা পাঠাইতে পারবো না দু এক দিন পরে দিব ।
বুঝলাম ওপাশ থেকে বাবার মন টা খারাপ হয়ে গেল বলল দুই দিন পরে দিবা
আমি বললাম হ্যাঁ
আচ্ছা ঠিক আছে বলে বাবা ফোনটা রেখে দিল ।
ফোনের লাইন টা কাটতেই মনে হলো আব্বুর কাছে কেউ হয়তো টাকা পায় , এজন্য মনে হয় আমাকে বলছে ।
ভাবতে লাগলাম ৫ বছর হয় চাকরি করি কিন্তু আব্বু তোঁ কোনদিন আমার কাছে টাকা চায় নাই ,আমি ইচ্ছে করে যা দিসি তাই । আর গতবার বাড়ি থেকে আসার সময় আমি নিজেই বলেছিলাম টয়লেট আর বাথরুমের কাজ ধরেন যা টাকা লাগে আমি দিব । নিজেকে এইবার অপরাধী মনে হলো । সাথে সাথে আবার ফোন দিলাম ।
আব্বু আজকে ই টাকা পাঠিয়ে দিচ্ছি একাউন্ট নাম্বারটা দেন ।
বাবা নাম্বার দিল আর আমি স্বস্তি পেলাম ।
দুইদিন পর আবার ফোন দিলাম , সেদিন বুধবার ছিল টাকা পাইছেন ।
হ , পাইছি
আমারে জানাইলেন না যে
অ , এমনি জানাই নাই ,নিজের লোকের একাউন্টে ই তো আসছে । জানামু কি ?
জানাইবেন না , না জানাইলে বুঝমু ক্যামনে টাকা গেছে , আচ্ছা রাখি ।
আচ্ছা
সেই শেষ কথা আব্বুর সাথে ।
একদিন পরের কথা
সেদিন শুক্রবার, আমার টায়ফয়েড জ্বর , দুপুরের খাবার খেতে ভালো লাগছে না , মন যেন কেমন করছে । তাও জোর করে খেলাম । বাইরে প্রচন্ড ঝড় বৃষ্টি এর মধ্যে ই বারান্দায় বসে থাকলাম । ভীষণ মন খারাপ লাগছে । আমার এক ফুপাত বোন ফোন করে বলল
আপনি কই , মামা নাকি মারা গেছে ?
কি কস তুই , কেডা কইছে , কোন সময় ?
আমি পাথর হয়ে গেলাম
রাত ৯ টা , ঝড় বৃষ্টি মাথায় নিয়ে বাড়ি গিয়ে দেখি আমার বাবার সব কাজ শেষ , অপেক্ষা শুধু আমার জন্য ।
শেষবার যখন বাড়ি থেকে আসি তখন আব্বু গাড়িতে তুলে দিয়েছিল । এখন আর কেউ আমাকে বাসে তুলে দিতে আসে না। একাই চলি
যত রাত ই হোত বাড়ি যেতে আব্বু বসে থাকত বাস স্টেশনে । আর ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করতো আর কতক্ষন লাগবে ? কোথায় আছি ?
এখন আর কেউ বসে থাকে না আমার জন্য । বড় খালি খালি লাগে । সেদিন যদি টাকাটা না পাঠাতাম তবে সারাজীবনে এক ভয়ঙ্কর অপরাধবোধ এ ভুগতাম ।
আজও যে কথাটা আমার মনে কাটার মতো বিধে আছে , আমি ওনার কাছে টাকার হিসেব চেয়েছিলাম । ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ ও আমি পাইনি । আব্বু আমাকে এত বছর ধরে বড় করেছেন , সব চাহিদা মিটিয়েছেন একবার ও তোঁ হিসেব চান নি , টাকা কোথায় খরচ করছি জানতে চান নি । আর আমি ছিঃ
আব্বুকে কতটা ভালোবাসি আর তার শূণ্যতা অনুভব করি তা এখন বুঝি । যখন বেঁচে ছিলেন তখন বুঝি নি ওনাকে এত ভালোবাসি ।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ১২:২২