আমাদের বসার ঘরটা হবে অনেক বড় , চারিদিকে থাকবে গ্রিল ছাড়া খোলা জানালা যেন হাত বাড়ালেই মেঘ ছোঁয়া যায় । আমি কিন্তু মাটির ঘর চাই না , পুরো বাড়ি হবে বাঁশের আর মাটি থেকে আট দশ ফিট ওপরে । বাঁশের বুননের ঘরে বসে চা খাবো বাঁশের গ্লাসে , যতদূর চোখ যাবে দেখবো শুধু সবুজ অরন্য । রান্নাঘরের পাশেই থাকবে খোলা বারান্দা আর নিচে নামার জন্য থাকবে কাঠের সিঁড়ি । আর হ্যাঁ বসার ঘরের পাশেও কিন্তু অনেক বড় খোলা বারান্দা রাখব একটা ।
অলস বিকেলে বারান্দায় পা ঝুলিয়ে বসবো , ঝুম বৃষ্টিতে এত ভিজবো যেন ঠাণ্ডা লেগে যায় , বেশি গরম যখন হাফসাফ করবে তখন বাঁশের পাটিতে শুয়ে একসাথে আকাশের তারা গুনবো , মনে রেখ হাত পাখা দিয়ে কিন্তু তোমাকেই বাতাস করতে হবে ।
বাড়ির সামনের জায়গায়টাতে কিছু সবজি ফলাতে হবে , যেন বাজার থেকে সবজি কিনতে না হয় । মাছ কিন্তু খুব বেশি খেতে পারবো না হয়তো মাসে এক দু'বার । আমাদের তো ফ্রিজ থাকবে না বেশি করে এনে তো রাখা ও যাবে না । মুরগি রাখলে কেমন হয় ক'টা ? কিছু লাউ ডগা উঠিয়ে দিব ছনের চালে । সকালের নাস্তা থাকবে রঙ্গিন ভুট্টা ভাজা , সিজনাল কোন ফল, ডিম সেদ্ধ । চাইলে আদা দিয়ে রং চা খেতে পারো । কিছু কলা গাছ থাকবে চারপাশে , শুনেছি কলার ফলন বেশ ভালো হয় সেখানে । কি বল তুমি ? আচ্ছা তুমি কি জাম্বুরা খাও , আনারস কি পছন্দ ? ওখানে তো জোঁক আছে অনেক তুমি যেন আবার ভয় পেও না ।
আমি কিন্তু একটা কামিনী গাছ লাগাতে চাই । ভরা পূর্ণিমাতে যখন তোমার হাত ধরে হাঁটবো তখন যেন কামিনীর সুবাস আমাদেরকে আচ্ছন্ন করে রাখে । কামিনীর গন্ধে কি সাপ আসে ? তুমি কি সাপ ভয় পাও ? ওমন ভাবে তাকাচ্ছো কেন !!! ঠিক আছে সাপ যেন না আসে সে ব্যাবস্থা ও করবো ।
সকাল বিকেল আমি খালি পায়ে মাটি ছুঁয়ে হাটবো । দুপুরের পরে স্কুলে পরানো শেষ করে আসার সময় পাহাড়ি ছড়া থেকে নিয়ে আসবো সুমিষ্ট , শীতল খাবার পানি । সারাটা বিকেল বই পড়ে কাটিয়ে দিনের শেষ ভাগে এসে সবজির বাগানে কিছুটা সময় দিতে চাই । তখন যদি ক্লান্ত না থাকো তবে আমার সাথে তুমিও কাজে হাত লাগিও । সপ্তাহে একদিন কিন্তু ডাকঘরে যেতে হবে যদি কেউ চিঠি দেয় আমাদের । তখন তো আর মোবাইল ফোন থাকবে না ।
সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে নিস্তব্ধ , শুনশান নীরবতা নেমে আসে চারিদিকে । আমাদের আর কি কাজ ? হারিকেনের মিটিমিটি আলোতে ভাত খেতে খেতে তুমি শুনবে আমার সারাদিনের ব্যাস্ততার কথা আর আমি তোমার । তারপর দুজনে বের হয়ে যাবো নৈশ ভ্রমনে । চুপি চুপি এবাড়ি ও বাড়ি গিয়ে কান পেতে শুনবো আমার স্কুলের বাচ্চারা কে রাত জেগে পড়ছে আর কে ঘুমাচ্ছে ? সারাদিন ছুটোছুটির পর যখন ঘুমের দেবী আমাদের বাড়ি চলে আসবে তখন আমি তোমার বুকে মাথা রেখে টুপ করে ঘুমিয়ে যাবো ।
অতঃপর আমার মাথার সমস্ত চুল রং পাল্টাবে , চামড়ায় আসবে শিথিলতা , যখন দুহাত সামনে দাড়িয়ে থাকা কারো চেহারা লাগবে অস্পষ্ট শুধু তাকে চিনে নিবো গলার স্বরে , আমার হাতে গড়া ও পাড়ার মং তংচঙ্গা , অথবা দাথই মারমা হয়ে উঠবে শিক্ষিত, সচেতন, তখন বুঝবো আর বেশি দেরি নেই এবার হয়তো বিদায় নিতে হবে চিরচেনা চারপাশের মানুষদের কাছ হতে । প্রিয় পাড়া হতে ,প্রিয় পৃথিবী হতে ।
কোন এক বসন্তের পাতা ঝরা দিনে খুব ভোরে যখন কোকিল ডাকবে , কামিনীর সুবাস শেষ হয়ে আসবে , দেখবে আমার মুখে লেগে আছে প্রশান্তির হাসি । তুমি আমাকে ডাকতে গিয়ে দেখবে নিথর আমি তবু ও বেশ উষ্ণ আমার গা । দেরি করো না যেন , যত তাড়াতাড়ি পারো আমাকে শুইয়ে দিও মাটির ঘরে । জানো তো আমি আবার গরম সহ্য করতে পারি না । বেশি দূরে ও রেখ না আমাকে , আমি একা থাকতে ভয় পাই । ঘরের কোণে যে কামিনী গাছ টা ছিল সেখানেই সমাধি করো , যেন সকাল বিকেল রাত ইচ্ছে হলেই তুমি আমাকে দেখতে পারো আর আমি ও তোমাকে দেখতে পারি । মন খারাপ করো না আমি কামিনী হয়ে সুবাস ছড়াবো মায়াবী জ্যোৎস্নায় ।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জুলাই, ২০১৬ বিকাল ৪:০৪