মেয়েটির নাম শর্মী , দেখতে বেশ সুন্দরী , বুদ্ধিমতি।
ইডেন থেকে ইকনোমিকস এ মাস্টার্স করা । ৩ মাসের অন্তস্বওা । হন্য হয়ে খুঁজছে খেয়ে বেঁচে থাকার জন্য যে কোন একটি চাকরি। কোথাও তার যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি পাচ্ছে না । কি হবে তার ... ভবিষ্যৎ কাটবে কি করে ? কি খাবে সে নিজে আর বাচ্চাকে ই বা খাওয়াবে কি ? থাকবে কোথায় ? পার্কের বেঞ্চিতে মাটিতে জন্মানো সবুজ ঘাসে পা রেখেও তার মনে হচ্ছে পায়ের নিচ থেকে যেন মাটি সরে যাচ্ছে।
আজ থেকে ৩ বছর আগের কথা । শর্মী তখন অনার্স ফাইনাল ইয়ারে । বেশ ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করে । ৩ বোনের মধ্যে ওই সবার ছোট । ইচ্ছে ছিল স্কলারশিপ নিয়ে ইউরোপের কোন এক দেশে গিয়ে পড়াশোনা শেষ কোরে সেখানেই সেটেল হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত টাকার জন্য আর হলো না । বরাবর ভাল রেজাল্ট করা শর্মী তাই আশা ছাড়েনি । একদিন সে যাবেই স্বপ্নের দেশে।
তাই খুব আদরে আর বেশ স্বাধীনভাবেই বড় হয়েছে। বাবা প্রফেসর ছিলেন একসময় । এখন বেকার । বড় ভাইয়ের চাকরীর টাকায় সংসার চলে।
ফেসবুকে অলস সময় কাতাতে কাটতেই মাসুমের সাথে পরিচয় । বেশ হ্যান্ডসাম ছেলে । শিক্ষিত , ভদ্র ঘরের ছেলে । থাকে ফ্রান্সে। প্রথমে বন্ধুত্ব , আর তা পরে রূপ নেয় ভালবাসায় । মাত্র ২ মাসের পরিচয়ে মাসুমকে এত আপন মনে হচ্ছে জন্ম জন্মান্তরের পরিচয়। মাসুম ও শর্মীকে ছাড়া কিচ্ছু বোঝে না । ওদিকে শর্মীকে ও বিয়ে দেয়ার জন্য বাবা মা অস্থির হয়ে আছে। কোনভাবেই কেউ কাউকে হারাতে চায় না । মাসুমের প্রবল ইচ্ছার কাছে হার মানল সব কিছুই ।
তাই শর্মী ই প্রথম তার বাবার কাছে বলল - বাবা মাসুমের তো ছুটি নেই তাই ও ফোনে ই বিয়ে করতে চায়। তমরা বাবা অমত করো না ।
প্রথম দিকে রাজি না হলে ও মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে বিয়েতে মত দিল সবাই । বিয়ের ৬ মাস পর ই মাসুম ছুটি নিয়ে দেশে আসল । এখন দুই পরিবারের সবাই খুশি । ৪ মাস পর মাসুমের ফিরে যাওয়ার সময় বলে গেল আগামী বছরই শর্মীকে নিয়ে যাবে ।
অনেকদিনের স্বপ্ন যেন পূরণ হতে চলল। দেখতে দেখতে চলে গেল এক বছর । কিন্তু মাসুমের কোথায় যেন একটা পরিবর্তন হয়ে গেল । ওকেও নিল না মাসুম ও আসল না । শর্মীর পড়ালেখা শেষ হয়ে যাওয়ার পর সে চাইল চাকরি করত, কিন্তু মাসুমের প্রবল আপওির মুখে সে আর আগাতে পারল না । বাসায় শুয়ে , বসে দিন কাটে তার । মাসুমের ইচ্ছা শর্মী যেন তার মায়ের সাথে গ্রামে গিয়ে থাকে । শহরে বড় হওয়া মেয়ে গ্রামে গিয়ে কিভাবে থাকবে সেকথা একটিবার ও মাসুম বুঝতে চাইল না । শর্মী ঢাকায় বাসা নিয়ে থাকতে চাইল সাথে ওর মাকে নিয়ে তাতেও আপওি। আগত্যা পাড়া গ্রামে গিয়ে মাসুমের মার কাছে ই থাকতে লাগল । এখন সে পুকুর থেকে কলসি কোরে পানি আনে । মসলা ফুরিয়ে গেলে বেটে খায় । মাটির চুলায় রান্না করে । আজকাল শর্মীকে চেনা বেশ কষ্ট হয়ে পড়ে ।বয়স যেন হুট কোরে বেড়ে গেল ১০ বছর ।
২ বছর পরে আবার এল মাসুম । এবার মাসুম চায় বাবা হতে । কিন্তু শর্মীর ইচ্ছা সে এখনই মা হতে চায় না । আগে নিজের পায়ে দাড়াতে চায় , বাংলাদেশ অথবা ফ্রান্স যেখানেই হোক । কিন্তু শর্মীকে এখনই ফ্রান্সে নিতে চায় না মাসুম অন্তত মা যতদিন বেঁচে আছে ততদিন মার কাছেই তাকে থাকতে হবে । এর ব্যাতিক্রম হলে সে আর মাসুম কে পাবে না । দোটানায় দিন কাটতে লাগল শর্মীর।
মাসুম চলে গেছে ২ মাস হল । শর্মীকে জানিয়ে দিল সে আর তার সাথে সম্পর্ক রাখতে রাখতে রাজি নয় । ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দিল । ইতিমধ্যে বাবা মা দুজনেই মারা গেছেন । সরকারি চাকরির বয়স ও চলে গেছে তার । ভাইয়ের বাড়িতে বোঝা জেনেও মুখ বুজে পড়ে আছে ।
এরমধ্যে চেকাআপ করে জানতে পারল ৩ মাসের অন্তঃস্বওা । বাচ্চার কথা মাসুম কে জানানোর পর বলল এ বাচ্চা আমার নয় , তাই এসবের দ্বায়িত্ব ও আমার নয় । তুমি তোমার পথ দেখ । মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল যেন । একটি স্ববলম্বী মেয়ে হয়ে গিয়েছিল সম্পূর্ণ পরনির্ভরশীল একটু সুখের আশায়, একটু ভাল থাকার আশায়।
করনীয় কি তার ?
কার কাছে বিচার চাইবে সে ?
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:১৮