somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জীবন্ত বিস্ময় রাতারগুল !!!

১৭ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সোয়াম্প ফরেস্ট’ বা জলাবন মানে হচ্ছে এমন বন যেখানে সবসময় বা বছরের কোনো একটা সময় পানি থাকে৷ বাংলাদেশের এমনই একমাত্র বন সিলেটর সোয়াম্প ফরেস্ট বা জলাবন রাতারগুল যা সিলেটের সুন্দরবন’ নামে খ্যাত। সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলায় অবস্থিত এ বনের আয়তন প্রায় ৩৩২৬ একর। ১৯৭৩ সালে বনের ৫০৪ একর বন্য প্রাণী সংরক্ষণ এলাকা ঘোষণা করা শীতে এ বনের পানি শুকিয়ে গেলেও বছরের বাকী সময়গুলো জলমগ্ন থাকে পুরো বনটি৷রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট মূলত একটি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য৷ এ বনের বাসিন্দাদের বড় একটি অংশ সরীসৃপ৷ এখানে বিভিন্ন প্রজাতির সাপ দেখা যায়৷রাতারগুল মাছেরও অভয়ারণ্য৷এ বনকে কেন্দ্র করে এর আশপাশে বেশ কিছু জেলে পরিবার বসবাস শুরু করেছে৷রাতারগুল জলাবনে বসবাস করে বেশ কিছু রেসাস বানর৷ জলে ডোবা এ বনের ডালে ডালে বিচরণ তাদের৷ তবে এক শ্রেণির পর্যটকদের উৎপাতের কারণে এ প্রাণীটি দিন দিন কমে যাচ্ছে ।


রাতারগুল বনে জলসহিষ্ণু চার প্রজাতির গাছ বেশি দেখা যায়৷ এগুলো হলো হিজল, বরুণ, করচ আর মুর্তা৷ তিন ধরনের গাছ জলের উপরে থাকলেও বর্ষা মৌসুমে মুর্তা গাছ জলে ডুবে থাকে৷ এই মুর্তা দিয়েই তৈরি হয় সিলেটের বিখ্যাত শীতল পাটি৷রাতারগুল জলাবনের গড় গভীরতা প্রায় ১৫ ফুট৷ তবে এ বনের কোথাও কোথাও গভীরতা ৩৫ ফুটেরও বেশি৷রাতারগুল, বাংলাদেশের একমাত্র মিঠা পানির বন বা বনাঞ্চল । অর্থাৎ জলের বন বা সোয়াম্প ফরেস্ট ।যে বনের গাছ পালা পানিতে ডুবে থাকে । সারা পৃথিবীতে এরকম বন দেখা যায়, যেমন : আমাজান, মিসিসিপি, বাংলাদেশের সুন্দরবন। তবে সুন্দরবন হল লোনা পানির বন বা ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট।বনের সমস্ত গাছ পানিতে ডুবে থাকে, দেখতে খুবই ভাল লাগে। এ যেন বনের মধ্যে বন্যা ।


বন বিভাগ থেকে প্রাকৃতিক বনের পাশাপাশি হিজল, কদম, বেত, করচ, মুর্তাসহ আর জলপোযোগী গাছ লাগানো হয় ।সিলেট শহর থেকে প্রায় ২০ কিমি দূরে অবস্থিত এই বনাঞ্চল মারাত্মক ধরনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার। সোয়াম্প ফরেস্টের মূল আকর্ষণ পানিতে ডুবে থাকা গাছ-গাছালির বাহার। জীব-জন্তুর মাঝে বেশ কিছু পাখি, সরীসৃপ ও বানর বিদ্যমান। ভাগ্য ভালো হলে দেখাও পেতে পারেন বানরের সাথে।বাংলাদেশের সব বনের থেকে রাতারগুল একেবারেই আলাদা। ঘন গাছের সারি। কিন্তু গাছগুলোর নিচের অনেকটাই ডুবে আছে পানিতে। গাছের মধ্যে করচই বেশি। হিজলে ফল ধরে আছে শয়ে শয়ে। বটও চোখে পড়বে মাঝেমধ্যে, মুর্তা গাছ কম। তবে রাতারগুলের বেশ বড় একটা অংশে বাণিজ্যিকভাবে মুর্তা লাগিয়েছে বন বিভাগ। মুর্তা দিয়ে শীতল পাটি হয়। মুর্তা বেশি আছে নদীর উল্টো পাশে। ওদিকে শিমুল বিল হাওর আর নেওয়া বিল হাওর নামে দুটো বড় হাওর আছে।বড়ই অদ্ভুত এই জলের রাজ্য। কোন গাছের হাঁটু পর্যন্ত দুবে আছে পানিতে।



একটু ছোট যেগুলো, সেগুলো আবার শরীরের অর্ধেকই ডুবিয়ে আছে জলে।কোথাও চোখে পড়বে মাছ ধরার জাল পেতেছে জেলেরা। ঘন হয়ে জন্মানো গাছপালার কারণে কেমন অন্ধকার লাগবে পুরো বনটা। মাঝেমধ্যেই গাছের ডালপালা আটকে দিবে পথ। হাত দিয়ে ওগুলো সরিয়ে তৈরি করতে হবে পথ। চলতে হবে খুব সাবধানে। কারণ রাতারগুল হচ্ছে সাপের আখড়া।বর্ষায় পানি বাড়ায় সাপেরা ঠাঁই নেয় গাছের ওপর।



সাপের মধ্যে রয়েছে অজগর, গুইসাপ, গোখরা, জলধুড়াসহ বিষাক্ত অনেক প্রজাতি। বর্ষায় বনের ভেতর পানি ঢুকলে এসব সাপ উঠে পড়ে গাছের ওপর। বনের ভেতর দাঁপিয়ে বেড়ায় মেছোবাঘ, কাঠবিড়ালি, বানর, ভোদড়, বনবিড়াল, বেজি, শিয়ালসহ নানা প্রজাতির বণ্যপ্রাণী। টেংরা, খলিশা, রিঠা, পাবদা, মায়া, আইড়, কালবাউস, রুইসহ আরো অনেক জাতের মাছ পাবেন এখানে। শুকনো মৌসুমে পানি কম থাকে বলে অনেক সময় ছোট ছোট মাছগুলো লাফ দিয়ে ডিঙ্গিতে উঠে যায়। তাছাড়া ও বনে সাদা বক,কানা বক,মাছরাঙ্গা,টিয়া, বুলবুলি,ঢুপি,পানকৌড়ি, ঢুপি, ঘুঘু, চিলসহ নানা জাতের পাখিও আছে ।


হাওরের স্বচ্ছ পানির নিচে বনগুলো দৃশ্যমান থাকায় বর্ষাকালে অনেক পর্যটকের সমাগম ঘটে এখানে। আবার শীত মৌসুমে ভিন্নরূপ ধারণ করে এ বন। পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে জেগে ওঠে মূর্তা ও জালি বেতের বাগান। সে সৌন্দর্য আবার আবার অন্য রকম! বন এভাবে জলে ডুবে থাকে বছরে চার থেকে সাত মাস। বর্ষা কাটলেই দেখা যাবে অন্য চেহারা। তখন বনের ভেতরের ছোট নালাগুলো পরিণত হবে পায়ে চলা পথে। সেই পথ দিয়ে হেঁটে অনায়াসে ঘুরে বেড়ানো যায়।নদীর চারপাশের দৃশ্যের সঙ্গে উপরি হিসেবে দেখবেন দূরে ভারতের উঁচু উঁচু সব পাহাড়।সিলেট এয়ারপোর্টের পেছনে সালুটিকর এলাকা থেকে উত্তরে প্রবাহমান 'সিংয়ের /চ্যাংয়ের খাল' নামে খাল হলে ও আদতে বেশ বড় নদী। এই নদী যেখানে গিয়ে 'গোয়াইন' নাম নিয়েছে সেখানে পূর্ব দিক থেকে এসে মিশেছে নদী 'কাফনা' ।



অরণ্য, নদী, ওপাড়ের বিস্তীর্ণ মাঠ আর মেঘালয় পাহাড়ের হাতছানি- সব মিলিয়ে রাতারগুল।বনে ঘোরার একমাত্র মাধ্যম ডিঙ্গি নৌকা। তবে বর্ষা এবং ‘কোমর পানির’ মৌসুমে ঘোরার মধ্যে পার্থক্যটা এই দুই সময়ে এখানে না আসলে বোঝা মুশকিল। ডিঙিতে চড়ে বনের ভিতর ঘুরতে ঘুরতে দেখা যাবে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।

সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:৪৯
১১টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ট্রাম্পকে শুভেচ্ছা জানালেন ড. ইউনূস

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:১০





যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় ডোনাল্ড ট্রাম্পকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।শুভেচ্ছা বার্তায় ড. ইউনূস বলেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ের জন্য আপনাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাছে থেকে আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৪৬

আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

২০০১ সালের কথা। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটা আন্তর্জাতিক দরপত্রে অংশ গ্রহণ করে আমার কোম্পানি টেকনিক্যাল অফারে উত্তীর্ণ হয়ে কমার্শিয়াল অফারেও লোয়েস্ট হয়েছে। সেকেন্ড লোয়েস্টের সাথে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নারী বুকের খাতায় লিখে রাখে তার জয়ী হওয়ার গল্প (জীবন গদ্য)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৩২



বুকে উচ্ছাস নিয়ে বাঁচতে গিয়ে দেখি! চারদিকে কাঁটায় ঘেরা পথ, হাঁটতে গেলেই বাঁধা, চলতে গেলেই হোঁচট, নারীদের ইচ্ছেগুলো ডিমের ভিতর কুসুম যেমন! কেউ ভেঙ্গে দিয়ে স্বপ্ন, মন ঢেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্রী ও কুশ্রী পদাবলির ব্লগারদের টার্গেট আমি

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫



আমাকে জেনারেল করা হয়েছে ১টি কমেন্টের জন্য; আমার ষ্টেটাস অনুযায়ী, আমি কমেন্ট করতে পারার কথা; সেটাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে; এখন বসে বসে ব্লগের গার্বেজ পড়ছি।

সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×