তুলি দৌড়াতে দৌড়াতে এসে বাবাকে বলল,
-বাবা, আমাদের গরু কিনতে কখন যাবে?
তুলির বাবা চিন্তিত মুখে বললেন,
-এই শুক্রবারে যাব। শুক্রবার থেকে ছুটি, সোমবার ঈদ। অনেক সময়।
তুলি উৎকণ্ঠার সাথে বলল,
-কেন বাবা কেন? এত দেরি কেন?
তুলির বাবা এবার একটু অবাক হলেন মেয়ের উৎকণ্ঠায়। তুলির বয়স সাত, কোরবানীর গরু নিয়ে এত আগ্রহের কোন কারণ থাকতে পারে না। তিনি বললেন,
-চিন্তায় আছি মা। বোনাসের টাকা তো পেলাম না তাই গরু না কিনে দুটো খাসি কিনে নিব ভাবছি।
তুলি এবার কান্না বিজড়িত কণ্ঠে বলে উঠে,
-না বাবা না, গরুই কিন।
তুলির বাবা এবার হাসলেন। ভাবলেন মেয়ের নিশ্চয় গরু অনেক পছন্দ।
-আচ্ছা মা, গরুই আনব।
-হুম। আর এ্যাশ ক্যালারের গরু আনবে।
-আচ্ছা ঠিক আছে।
বাবা হাসলেন। তুলি তার ফোগলা দাঁত বাবাকে দেখিয়ে বাইরের দিকে আবারো দৌড় দিল।
দুইদিন পর এল শুক্রবার। এরমধ্যে তুলি অসংখ্যবার বাবাকে জিজ্ঞেস করেছে, কখন যাবে, গরু কিনবে না খাসি? শুক্রবার পুরো গরুর হাট ঘুরেও এ্যাশ কালারের গরু পেলেন না। তুলির বাবা তাই গরু না কিনেই বাড়ি ফিরলেন। মেয়ের একটা কথা রাখতে পারবেন না তা কি হয়। তুলির মন অনেক খারাপ হল তাই বাবা কথা দিলেন কাল অবশ্যই গরু কিনে আনবেন। অবশেষে পরের দিন বাবা গরু কিনে আনলেন। এ্যাশ কালারের গরু খুঁজতে গিয়ে আজও তিনি পুরোপুরি কাহিল। কিন্তু হঠাত একটা সাদা কালারের গরু পেয়ে গেলেন। সেটাকে হালকা কাল রঙ করিয়ে বাসায় নিয়ে আসলেন। হাজার হলেও মেয়ের আবদার। তুলির বাবা মনে মনে ঠিক করছেন তার সাথে একটু মজা করবেন। এতবার আগ্রহ দেখিয়েছে মেয়েটা গরুর জন্য। তাই গেটের কাছে এসেই ডাক দিলেন,
-মা তুলি কই তুমি? গরু কিনে এনেছি? তাড়াতাড়ি আস, দেখ যাও।
গলায় একটা ক্যামেরা ঝুলিয়ে তুলি তুলতুলে পায়ে দৌড়ে বাবার সামনে আসতেই বাবা বলেন,
-দেখ তোমার জন্য একটা কথা বলা গরু কিনে এনেছি।
-কথা বলা গরু?
-হ্যাঁ, এই গরু কথা বলতে পারে।
-ধুর বাবা, তুমি বোকা নাকি!
তুলির বাবা মেয়ের কথায় ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলেন। এরকম ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া অবস্থাতেই তুলি বলে উঠল,
-বাবা ক্যামেরাটা ধর, আমার একটা কাউফি তুলে দাও।
তুলির বাবা এবার এতটাই অবাক হলেন যে মুখ হা করেই বললেন,
-কি ফি?
-কাউফি বাবা কাউফি। বন্ধুদের দেখাতে হবে না। ওরা সেই কবে থেকে আমাকে দেখাচ্ছে। নাও ক্যামেরা ধর আর তাড়াতাড়ি কাউফি তোল।
তুলির বাবা এতক্ষণে বুঝলেন, মেয়ের কেন গরুর জন্য এত আগ্রহ! সবকিছু বুঝে মুচকি হেসে ছবি তুলতে লাগলেন।
**গল্পটি এর আগে নক্ষত্র ব্লগে প্রকাশিত।