আজকের আলোচনা সার্কিটের নোডাল এনালাইসিস নিয়ে। আগেই বলা হয়েছে “নোড” মানে হল সংযোগ বিন্দু। এই ধরনের এনালাইসিসে মূলত ৩ টি সূত্র লাগবে। ওহমের সুত্র, কার্শফের কারেন্ট ল আর কার্শফের ভোল্টেজ ল।
নোডাল এনালাইসিস এর মূল উদ্দেশ্য হল বিভিন্ন নোড এর ভোল্টেজ বের করা। তাহলেই ওহমের সূত্রের সাহায্যে ব্রাঞ্চ কারেন্ট গুলাও বের করা যাবে।
আর কারেন্ট এর দিক বের করার জন্য মনে রাখতে হবে যে, কারেন্ট সবসময় উচ্চতর (হাইয়ার) ভোল্টেজ থেকে নিম্নতর (লোয়ার) ভোল্টেজের দিকে প্রবাহিত হয়।
ওহমের সুত্র থেকে, কারেন্ট = (উচ্চতর ভোল্টেজ – নিম্নতর ভোল্টেজ) / রেসিস্ট্যান্স এর মান
নোডাল এনালাইসিসঃ বিভিন্ন নোড এর ভোল্টেজ বের করার পদ্ধতি(৩ টি পর্যায়ক্রমিক ধাপ)
১। ধরা যাক, সার্কিটে n সংখ্যক নোড আছে। এখন কোন একটা নোড কে রেফারেন্স ধরতে হবে। সাধারনত গ্রাউন্ড নোড অথবা যেই নোডে সব থেকে বেশি ব্রাঞ্চ যুক্ত হয়েছে এমন নোড কে রেফারেন্স হিসেবে ধরলে হিসাব করতে সুবিধা হবে। তাহলে রেফারেন্স নোডের ভোল্টেজ হল জিরো (শূন্য)। এখন বাকি থাকল (n-1) টি নোড। এখন এদের প্রত্যেকটিতে V1, V2, V3...Vn-1 ভোল্টেজ ধরে নিতে হবে। আর এই সবগুলা ভোল্টেজই হবে রেফারেন্স নোডের সাপেক্ষে।
২। এখন রেফারেন্স বাদে বাকি (n-1) সংখ্যক নোডে কার্শফের কারেন্ট ল প্রয়োগ করতে হবে। এরপর ওহমের সূত্রের সাহায্যে প্রতিটা ব্রাঞ্চ কারেন্টকে নোড ভোল্টেজের মাধ্যমে ইকুয়েশন আকারে প্রকাশ করতে হবে।
৩। এখন এই ইকুয়েশন গুলা সমাধান করলেই উত্তর পাওয়া যাবে।
নিচের সার্কিটটি বিবেচনা করি।
এখানে ২ টা কারেন্ট সোর্স আর ৩ টা রেজিস্টর আছে। নোড আছে ৩ টা। এগুলা লাল রঙ দিয়ে বুঝানো হয়েছে। খেয়াল করুন, নিচের নোডকে রেফারেন্স বা গ্রাউন্ড হিসাবে ধরা হয়েছে।
এবার নিচের ছবি দেখুন।
এখানে ধরে নেয়া হয়েছে যে, V1 > V2 এবং এই অনুযায়ী ইকুয়েশন লিখতে হবে। বিভিন্ন কারেন্টকে এলোমেলো ভাবে বা র্যান্ডমলি ধরে নেয়া হয়েছে। তবে দিকের ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম মানা দরকার।
যেমন, নোড, V1, V2 থেকে কারেন্ট I3, I5 ; ২ ওহম এবং ৬ ওহম এর ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। প্রত্যেক ক্ষেত্রেই অপর নোড হল গ্রাউন্ড।
যেহেতু গ্রাউন্ড এ ভোল্টেজ শূন্য বা সর্বনিম্ন, তাই কারেন্ট এর দিক গ্রাউন্ড এর দিকে ধরা হয়েছে।
আবার V1>V2 ধরা হয়েছে বলে কারেন্ট এর দিক V1 থেকে V2 এর দিকে হয়েছে। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে, I1, I4 কারেন্ট ২ টা হল কারেন্ট সোর্স গুলার ভেতর দিয়ে প্রবাহিত কারেন্ট। তাই এদের দিক কারেন্ট সোর্স গুলার মত একই দিকেই হয়েছে।
১ নং নোডে কার্শফের কারেন্ট ল এবং ওহমের সূত্র প্রয়োগ করে পাই,
I1 = I2 + I3
or, 5 = (V1 - V2) / 4
+ (V1 - 0) / 2
উভয়দিকে ৪(চার) দিয়ে গুন করে পাই,
20 = V1 - V2 + 2V1
or, 3V1 - V2 = 20 ----------------------(১)
এখন ২ নং নোডে কার্শফের কারেন্ট ল এবং ওহমের সূত্র প্রয়োগ করে পাই,
I2 + I4 = I1 + I5
or, (V1 - V2)/4 + 10 = 5 + (V2 - 0)/6
or, -3V1 + 5V2 = 60 -------------------(২)
এখন (১) ও (২) নং সমাধান করলে পাওয়া যাবে,
V1 = 13.33V এবং V2 = 20V
ইকুয়েশন সলভ করার নিয়ম কেউ না জানলে ক্লাশ এইট এর গনিত বই (সম্ভবত ৮ নং অধ্যায়) দেখতে পারেন। বড় বড় ইকুয়েশন সলভ করার জন্য ক্রেমার এর নিয়ম খুব কাজে দিবে। এখান থেকে দেখে নিতে পারেনঃ
Cramer's rule
একটা দরকারি কথাঃ সার্কিট সলভ করে যদি কেউ দেখতে পান কোন ভোল্টেজের মান নেগেটিভ বা মাইনাস এসেছে তার মানে হল, আসলে এর মান রেফারেন্স নোডের মান এর থেকেও কম। তেমনিভাবে কোন কারেন্টের মান নেগেটিভ বা মাইনাস আসলে তার মানে হল,এর মান ঠিকই আছে তবে দিক হল আমরা যেটা মনে করেছিলাম তার উল্টা দিকে।
এখন নতুন একটা ধারনা নিয়ে কথা বলব। এটা হল সুপারনোড।
যারা নাম শুনেই মনে করছেন যে এটা সুপারম্যান টাইপ কিছু তাদের বলছি ভয়ের কোন কারন নাই। খুবই সোজা জিনিস। তাহলে আগে জেনে নেই এটা কি।
সুপারনোডঃ রেফারেন্স নোড বাদে যদি অন্য যেকোন ২টি নোডের ভেতর কোন ইন্ডিপেন্ডেন্ট বা ডিপেন্ডেন্ট ভোল্টেজ সোর্স (সাথে প্যরালাল ভাবে কোন রেজিস্টর যুক্ত থাকতেও পারে আবার নাও থাকতে পারে) থাকে, তবে তাকে সুপারনোড বলে।
নিচের ছবিতে লাল চিহ্ন দিয়ে সুপারনোড দেখানো হয়েছে।
এক্ষেত্রে সার্কিটকে একটু অন্য ভাবে সলভ করতে হবে। খেয়াল করুন, ওহমের সূত্রের সাহায্যে চার ওহম রেজিস্টর এর ভিতর দিয়ে কারেন্ট এর মান আমরা এখনি বলে দিতে পারি।
এটা হল,
2V/4ohm = 0.5 AMPS
সুপারনোডের কারনে একটা কাজ বেশি করতে হবে তা হল, সুপারনোডের ভোল্টেজ সোর্সকে হিসাবে আনার জন্য একে কার্শফের ভোল্টেজ ল দিয়ে প্রকাশ করতে হবে। নিচের ছবিতে কোন লুপে কার্শফের ভোল্টেজ ল প্রয়োগ করতে হবে তা দেখান হয়েছে।
দেখুন, এতে আপনি V1, V2 কে সুপারনোডের ভোল্টেজ সোর্স এর সাথে সম্পর্কিত করতে পারছেন।
এখন এই লুপে কার্শফের ভোল্টেজ ল প্রয়োগ করলে পাওয়া যায়,
-2 + V1 - V2 = 0
OR, V1 - V2 = 2
এবার আগের মত সলভ করে ফেলুন। আমি নিচে উত্তর ও বলে দিচ্ছি। আপনার কাজ হল শুধুমাত্র মিলিয়ে দেখা।
V1 = -7.333V ,
V2 = -5.333V
সামনের দিন ইনশা আল্লাহ মেশ এনালাইসিস নিয়ে আলোচনা হবে। সবাই ভাল থাকুন। আল্লাহ হাফিয।
-----------------------------------------------------------
ইলেকট্রনিক্স এর খুঁটিনাটি - পর্ব ১(সূচনা সাথে ভোল্টেজ ও কারেন্ট এর ধারনা। )
Click This Link
ইলেকট্রনিক্স এর খুঁটিনাটি পর্ব ২( ভোল্টেজ -কারেন্ট শেষ পর্ব + রেজিস্টর নিয়ে আলোচনা )
Click This Link
ইলেকট্রনিক্স এর খুঁটিনাটি পর্ব ৩( রেজিস্টর কালার কোড + আপেক্ষিক রোধ)
Click This Link
ইলেক্ট্রনিকসের খুঁটিনাটি - পর্ব ৪ (সিরিজ - প্যারালাল আলোচনা)
Click This Link
ইলেক্ট্রনিক্সের খুঁটিনাটি -পর্ব ৫(ভোল্টেজ ডিভাইডার + কারেন্ট ডিভাইডার)
Click This Link
ইলেক্ট্রনিক্সের খুঁটিনাটি –পর্ব ৬ ( কার্শফ’স কারেন্ট ল )
Click This Link
ইলেক্ট্রনিক্সের খুঁটিনাটি –পর্ব ৭ ( কার্শফ’স ভোল্টেজ ল )
Click This Link
ইলেক্ট্রনিকসের খুঁটিনাটি - পর্ব ৮ (ওয়াই-ডেল্টা কানেকশন)
Click This Link