ঘটনা ১: গভীর রাত ! আপনার প্রীয় কেউ পূণিমার চাঁদ দেখতে চাইল । খুব করে সম্ভব তাকে চাঁদের আলোয় উদ্ভাসিত করা । কারন অযুত,নিযুত,কোটি বছর ধরেই পূর্ণিমার রাতে চাঁদ গোল থালার মত হয়েই সামনে আসে । সহস্রাব্দ ধরে এর কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি ।
ঘটনা ২: মহাসাগরের বুকে চালিয়েছেন কোনো সাম্পান ?? দেখেছেন কখনো ধ্রুবতারা ? যা নাবিকদের বহুদিন ধরেই পথ চিনিয়ে নিয়ে যেত।আধুনিক যুগেও যার চিহ্ণ আজো মধ্য আকাশে বিদ্যমান। যা চলছে অবিরাম ।
ঘটনা ৩: গ্যালাক্সির নিয়ম জানা আছে ত ? কক্ষ পথের বাইরে কারওই পথ ভ্রষ্ট হওয়ার সুযোগ নেই ।।ব্ল্যাক হোলের গল্প শুনেছেন ত?? গণনার বাইরে থাকা সংখ্যক নক্ষত্র আসা যাওয়া করছে কিন্তু কারো সাথে বিন্দু মাত্র সংর্ঘষ হচ্ছেনা । যেন নির্দিষ্ট নীতিমালায় সাজানো ছকে চলছে অবিরাম ।
ব্যবচ্ছেদ: এ গ্রহের সৃষ্টি থেকেই প্রতি চান্দ্র মাসে পূর্ণিমার আলোয় আমরা উদ্ভাসিত হই । কেননা প্রকৃতির স্রষ্টা এমন নির্দেশনা বা এক্ট তৈরী করে রেখেছেন যার স্বচ্ছতায় ও প্রকৃতির জবাবদিহিতায় একচুলও পেশাদারিত্বের বিচ্যূতি ঘটেনি । বিচ্যুতি ঘটেনি আনিন্দ্য সুন্দর “দিকনির্দেশক” ধ্রুব তারার জ্বলজ্বল হয়ে পথ হারা নাবিককে পথ দেখানোর ক্ষেত্রে।তেমনই ব্যত্যয় ঘটেনি মহাজগতের পারিবারিক রীতিনীতির যার অনুসরনে আজও চলছে কৃষ্ণ গহবরে নক্ষত্ররাজির রহস্যাবৃত আগমন নির্গমণ ।
প্রসঙ্গ FRA: এ গ্রহের বিবেক ও বিবেচনাবোধের কারনে সর্বোত্তম সৃষ্টি হল মানুষ । বিভিন্ন সৃষ্টিশীলতা ও মননশীলতার কারনে মানুষ আজ মানুষের মাঝেই অবিসংবাদিত নেতৃত্ব তৈরী করেছে। সেই নেতৃত্বের জায়গা থেকেই ব্যবসায় বানিজ্যে এবং র্অথনীতিতে বিশেষ পেশায় উপনিষ্ট মানুষের কদর আজ বিশ্বজোড়া ।আর এই পেশাদারিত্বের অবস্থানেই রয়েছে অসংখ্য মানুষ বা সংশ্লিষ্ট পক্ষের স্বার্থ যা রক্ষায় সেই খ্যাতিমান সব পেশাজীবিদের স্বচ্ছতা ও জবাবদীহিতা বজায় রাখতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত । বিশ্বজুড়ে এ সব পেশাজীবিদের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতেই প্রণীত হয় পেশাদারিত্বের নীতিমালা যেন তৃণমুল জনগনের বিশ্বাসের জায়গায় কোনো ফাটল না ধরে ,কেননা অতিক্ষুদ্র কিন্তু গুরুত্বর্পূণ জনগনের স্বপ্ন লালনের মহাদায়ভার এ সমস্ত আর্থিক পেশাজীবিদের উপর ন্যস্ত ।
পৃথিবীতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা এমন দুটি শব্দ যা যথাযথ নিশ্চিত না হলে একটি দেশের র্সবপোরি উন্নয়ন সবচেয়ে বেশি বাধাগ্রস্ত হয়। যেহেতু প্রতিষ্ঠানের আর্থিক প্রতিবেদনের সাথে জড়িত সরকার থেকে শুরু করে অনেক তৃণমুল ক্ষৃদ্র বিনিয়োগকারী তাই এর কারিগর দের জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত না করা গেলে করফাঁকি,টাকার সাদা কালো তত্ত্ব ,র্অথ পাচার ,পুজি বাজারে সাইনর্বোড সর্বস্ব কর্পোরেশনের লুটতরাজ দেশের র্অথনীতিতে এমন ভাবে জেঁকে বসে যার অভিশাপ থেকে দেশকে মুক্ত করা আর স্বাধীন করা একই র্অথ বহন করে। প্রতিষ্ঠানের আর্থিক বিবরনী প্রস্তুত , নিরীক্ষন ও র্অথনীতিতে হিসাবকারিগরদের র্কমপন্থায় সচ্ছতা,জবাবদিহিতা ও সুশাসন নিশ্চিত করতে যে নীতিমালা প্রণয়ন করতে হয় তাই হল ফিন্যান্সিয়া রির্পোটিং এক্ট (FRA) যা উন্নত বিশ্বে চার্টাড একাউন্ট্যান্ট(CA) ও
র্সাটিফাইড ম্যানেজমেন্ট একাউনট্যান্ট (CMA) দের মাঝে র্চচা হয়ে আসছে । যেখানে নির্দেশিত থাকে হিসাবকারিগর দের আথিক ও ব্যয় রিপোর্টিং নিতিমালা ।
যদি শক্তিশালী ও কার্যকর ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল হয় যার প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণে FRA বাস্তবায়িত হবে তবে বাজারে শেয়ারের দামে স্থিতিশীলতা সহ তালিকাভুক্ত আর্থিক প্রতিবেদনের স্বচ্ছতা বাড়বে; বাজার গতিশীল হবে ও নিশ্চিতভাবেই পুঁজিবাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে এবং এতে করে বাজার, কোনো দেশের বিনিয়োগকারী ও দেশের সরকার সহ সব মহল লাভবান হবে এমনকি বিদেশি বিনিয়োগকারীরা উক্ত দেশে যৌথ বিনিয়োগে উৎসাহী হবে এবং আস্থা ফিরে পাবে ।। ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং অ্যাক্ট কার্যকর করা ও মনিটরিংয়ের জন্য ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল যেটি গঠিত হবে সেই প্রতিষ্ঠানটিকে হতে হবে অত্যন্ত শক্তিশালী ও কার্যকর । নাম মাত্র স্বাধীন ও স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান না করে প্রকৃত অর্থেই স্বতন্ত্র স্বাধীন প্রতিষ্ঠান গঠন করতে হবে । যদি তা করতে সে দেশ ব্যর্থ হয় তাহলে এই আইন পাশের কোন মানে থাকবে না এবং সবকিছু পণ্ডশ্রম বলে বিবেচিত হবে আর তার জন্য সাধারণ বিনিয়োগকারীরা তাদের ন্যায্য মুনাফা থেকে বঞ্চিত হবে
FRA এবং বাংলাদেশঃ স্বাধীনতা পরবর্তী থেকে দেশের প্রতিষ্ঠান (সরকারী ও বেসরকারী) গুলোতে আর্থিক বিবরণীতে আর্থিক রির্পোট তৈরী ও নিরীক্ষন নিয়ন্ত্রণে স্বাধীন কোনো কমিশন বা রিপোটিং এক্ট ছিল না । বাংলাদেশের একমাত্র আইসিএবি কতৃক সদস্যভুক্ত র্ফামগুলোই রির্পোট তৈরী করত এবং সার্টিফািই করত যার কারনে প্রায়সই কতিপয় দুষ্টু লোকের তৈরী করা রিপোর্টের উপর ভিত্তি করা স্বচ্ছল(?) প্রতিষ্ঠানের ব্যপক আর্বিভাব ঘটে এবং তার ভিত্তিতে শেয়ার বাজারে সেই সব ভুইফোড় কোম্পানির প্রবেশ সহ মোটা লিমিটের ঋণগ্রহন কারী প্রতিষ্ঠানের আগমন ঘটতে থাকে যার ঢেউ আজও আছড়ে পড়ছে বাংলাদেশের র্অথনীতিতে ।এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৯৭ সালের শেয়ার কেলেঙ্কারীতে সেই সব কাগজে কলমে রির্পোটে স্বচ্ছল কোম্পানিগুলোর র্অথ লোপাটে দেশের র্অথনীতিতে ষাড়ের পিছনে ভাল্লুকের আর্বিভাব ঘটে । এরই প্রেক্ষিতে যথারীতি প্রচারের বাইরে থাকা পেশাজীবি হিসাব কারিগরদের আতুরঘর ICMAB
এ ধরনের লুটতরাজ বন্ধে ১৯৯৮ সালে তৎকালীন সরকারের কাছে ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং এক্ট -এফআরএ এবং মনিটরিংএর জন্য এফআরসি বিষয়ে প্রস্তাবনা পেশ করেন যা সেই সময়ে আলোর মুখ দেখেনি এরপরে ২০০৮ সালে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ হিসেবে ফিন্যান্সিয়াল রিপোটিং অধ্যাদেশ জারি হয়। কিন্তু বেশ কয়েকবার উদ্যোগ নেওয়ার পরও সংসদে এটি আইন আকারে পাস করতে ব্যর্থ হয় সরকার। এজন্য পেশাদার নিরীক্ষকদের প্রতিষ্ঠান আইসিএবির বিরোধিতাকেই দায়ী করা হয়। । এর পর থেকেই সুর্দীঘ সময় ধরেই পেশাজীবিদের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে ICMAB চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল যার ফলশ্রুতিতে দেশের হিসাব ও নিরীক্ষা চর্চা উন্নয়নের লক্ষ্যে ২০১৫ সালের ৬ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং অ্যাক্ট (এফআরএ) পাসের পর একই বছরের ৯ সেপ্টেম্বর তা গেজেট আকারে প্রকাশ ও কার্যকর করা হয়। এর পর ২০১৬ সালের ২৪ এপ্রিল এক গেজেটের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে এফআরসি গঠন করা হয়। এর প্রায় ১৪ মাস পর চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। এফআরএ অনুসারে, দেশে হিসাব ও নিরীক্ষা চর্চা উন্নয়নে এফআরসির চারটি মূল বিভাগ থাকবে, যাদের কাজ হবে
১) স্ট্যান্ডার্ড প্রণয়ন,
২) ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং মনিটরিং,
৩) নিরীক্ষা চর্চা
৪) এনফোর্সমেন্ট।হিসাব ও নিরীক্ষা পেশার মানোন্নয়নের পাশাপাশি এফআরসি তাদের কাজ মনিটর করা ।
এছাড়াও, কোনো হিসাববিদ তার পেশাদারিত্ব থেকে বিচ্যুত হলে বা কোড অব ইথিকসের ব্যত্যয় ঘটলে তাদের শাস্তিরও বিধান করবে সংস্থাটি।চেয়ারম্যানসহ এফআরসিতে মোট ১২ জন সদস্য থাকবেন, যাদের প্রায় সবাই সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিত্ব করবেন।
এবং সামগ্রিক কার্যক্রম তদারকিতে নিম্মোক্ত প্রতিনিধি গণ সচেষ্ট থাকবেন,
১)অর্থ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় একজন করে অতিরিক্ত সচিব
২)সিএজি অফিসের প্রতিনিধিত্ব করবেন এফআরসির একজন সদস্য। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন ডেপুটি গভর্নর,
৩)জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)
৪) বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) একজন সদস্য
৫)হিসাব সংগঠন দি ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি)
৬) ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশের (আইসিএমএবি)
৭)ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতিও পদাধিকার বলে এফআরসির সদস্য হিসেবে থাকবেন।
৮)কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞানের একজন অধ্যাপককে নিয়োগ দেয়া হবে।
৯)এফআরসির নির্বাহী পরিচালকদের মধ্য থেকে একজন সংস্থাটির সদস্য ও সদস্য সচিব হিসেবেও দায়িত্ব পালন করবেন।
উক্ত রিপোটিং এক্ট নিয়ে একটি পক্ষের যথেষ্ট আপত্তি থাকলেও আইসিএমএবি মোটামুটি সন্তুষ্ট ছিল বলে জানা যায়।
হিসাব কারিগরদের(CMA) ভুমিকা এবং FRA: দেশের জনগণ এবং র্অথনীতিতে স্বচ্ছতা ,জবাবদিহিতা,কর্পোরেট সুশাসন নিশ্চিত করতে এ দেশের ICMAB নিরলস চেষ্টা চালিয়ে গেছে বা যাচ্ছে তাই দেশ ও দেশের র্অথনীতিতে এক নূতন দিগন্তে নব ভূমিকা রাখার ক্ষেত্র উম্মোচিত হয়েছে এবং শুধু তা্ই নয় এ ক্ষেত্রে নতুন এক যুদ্ধের আগমনি র্বাতা শুরু হয়েছে ।
সারকথা: মনে রাখা ভালো এদেশে CMA হল বিশ্বে উসাইন বোল্ট কিন্তু জন্মভূমিতে ট্র্যাকের অভাবে দাড়িয়ে থাকা এথলেট ।তবে তৈরী হচ্ছে ট্র্যাক এবার দৌড়ানোর পালা । এগিয়ে যাচ্ছে CMA পেশা এগিয়ে যাচ্ছে দেশ ।
কপিরাইট: লেখক এবং পিএন্ডজি স্কুল
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৩:০৯