আল্লাহ পাক কুরআন শরীফে ইরশাদ করেন, “আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার নিয়ামতসমূহ পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্য দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম।” (সূরা মায়িদা ৩)
উল্লেখ্য, এ আয়াত শরীফ ১০ম হিজরীতে বিদায় হজ্জে আরাফার দিনে নাযিল হয়। সেদিন ছিল আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জীবদ্দশায় সর্বপ্রথম ও সর্ববৃহৎ ঐতিহাসিক সমাবেশ। প্রায় সোয়া লক্ষ সাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহুম উপস্থিত। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত সাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহুমগণের সাথে জাবালে রহমতের নীচে স্বীয় উটনী আযবার পিঠে সাওয়ার হয়ে হজ্জের প্রধান রুকন অর্থাৎ আরাফার ময়দানে অবস্থানরত।
সে কি মোহনীয় দৃশ্য! অভাবনীয় চিত্র! যা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না । একসময় অপূর্ব এক সমাবেশে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাজিরান মজলিশকে জিজ্ঞেস করলেন, “এটা কোন মাস?” হযরত সাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহুমগণ বললেন, “আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামই ভাল জানেন।” আখিরী রসূল হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “এটা কি যিলহজ্জ মাস নয়?” হযরত সাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহুমগণ বললেন, “জ্বী, এটা যিলহজ্জ মাস।” এরপর আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “এটা কোন শহর?” হযরত সাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহুমগণ আবারো বললেন, “আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামই ভাল জানেন।” আখিরী রসূল হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “এটা কি মক্কা শহর নয়?” হযরত সাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহুমগণ বললেন, “জ্বী, এটা মক্কা শহর।”
এরপর আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আবার বললেন, “এটা কোন দিন?” আগের মতই হযরত সাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহুমগণ বললেন, “আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামই ভাল জানেন।” আখিরী রসূল হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঐহীক কন্ঠে ইরশাদ করলেন, “আজ কি আরাফার দিন নয়?” হযরত সাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহুমগণ বললেন, “জ্বী,আজ আরাফার দিন, আজ ৯ই যিলহজ্জ।”
মুহাদ্দিস, মুফাস্সিরগণ এ ঘটনার পিছনে অনেক কারণ ব্যক্ত করেছেন। তবে মূল যা তাঁরা খুঁজে পেয়েছেন তা হলো যে, মহান আল্লাহ পাক যেদিন আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন সেদিনই মাসের তরতীব, নাম ও বিশেষ মাসের সাথে সংশ্লিষ্ট হুকুম-আহকাম নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। কিন্তু জাহিলী যুগে কাফিররা তাদের ইচ্ছামত মাস পরিবর্তন করত, নিজেদের সুবিধার জন্য যখন যুদ্ধ জায়িয নেই তখনও যুদ্ধ করার জন্য তারা মাসের হেরফের করত।
আল্লাহ পাক ইরশাদ ফরমান, “এই মাস পিছিয়ে দেয়ার কাজ কেবল কুফরী মাত্রা বৃদ্ধি করে। যার ফলে কাফিররা গুমরাহীতে পতিত হয়। এরা হালাল করে নেয় এক এক বছর এবং হারাম করে নেয় অন্য বছর। যাতে তারা গণনা পূর্ণ করে নেয় আল্লাহ পাক-এর নিষিদ্ধ মাসগুলোর। অতঃপর হালাল করে নেয় আল্লাহ পাক-এর হারামকৃত মাসগুলোকে। তাদের মন্দ কাজগুলো তাদের জন্য শোভনীয় করে দেয়া হলো। আর আল্লাহ পাক কাফির সম্প্রদায়কে হিদায়েত দান করেন না।” (সূরা আত্ তওবা ৩৭)
আয়াত শরীফে উল্লিখিত জাহিলী যুগের সে বদ প্রথাকে রহিত করেই বিদায় হজ্জের খুৎবায় আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নতুন করে অনাগতকালের মানবজাতির জন্য মাস, দিন, তারিখ নির্ধারণ করেছিলেন। কারণ হজ্জ একটি ফরয হলেও অনুষঙ্গ হিসেবে তাতে (১) ইহরাম বাঁধা, (২) আরাফাতের ময়দানে অবস্থান, (৩) তাওয়াফে যিয়ারত করা ফরয। এছাড়া (১) মুযদালিফায় অবস্থান করা, (২) সাফা-মারওয়ায় সায়ী করা, (৩) কঙ্কর নিক্ষেপ করা, (৪) মাথা মুন্ডন করা ও কুরবানী করা। এসবই নির্দিষ্ট তারিখের সাথে সম্পর্কযুক্ত। তাহলে নির্দিষ্ট তারিখই যদি ভূল হয় তবে এসব কাজও ভূল হয়। এমনকি ইহরাম খোলাও শুদ্ধ হবে না। এজন্য হাদীস শরীফে বলা হয়েছে যে, “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমরা চাঁদ দেখে রোজা শুরু কর এবং চাঁদ দেখে ঈদ কর। আর যদি ২৯শে শা’বান চাঁদ দেখা না যায় তবে শা’বান মাস ত্রিশ দিনে পূর্ণ কর।” (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ)
অথচ সৌদী ওহাবী সরকার দীর্ঘদিন যাবত হাদীস শরীফ-এর উপরোক্ত নির্দেশের কোন তোয়াক্কা না করে ইহুদী এজেন্ডাই বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। ফলশ্রুতিতে ইসলামের একটি অন্যতম বুনিয়াদ, হজ্জসহ অন্যান্য আমলগুলো নষ্ট করে চলেছে চাঁদ না দেখে তারিখ ঘোষণার মাধ্যমে। তাদের এই অপকর্মের যৎসামান্য নমুনা নিম্নে তুলে ধরা হলো-
১৯৯৬ সালে হজ্জে গিয়েছিলেন ঢাকার গুলশান নিবাসী ইঞ্জিনিয়ার মুহম্মদ হাবিবুল হক্ব ছাহেব। সুবিধা পেয়ে একটু আগেই তিনি হজ্জে গিয়েছিলেন। যিলহজ্জের চাঁদ দেখার সুযোগও তাঁর হয়েছিল। চাঁদ দেখার প্রেক্ষিতে সে বছর শুক্রবার হজ্জ হবে এটা তার সাথে গোটা সৌদী আরবেরও সবাই বুঝেছিল। কিন্তু ২দিন পরেই সরকারী ঘোষণা যে, ‘হজ্জ হবে তার পরের দিন অর্থাৎ শনিবার।’ হাবিবুল হক্ব ছাহেব বিস্ময়ে বিপর্যস্ত হলেন। তাহলে কি তিনিসহ সারাদেশবাসীর প্রকাশ্যে চাঁদ দেখাকে ভূলে যেতে হবে? অস্বীকার করতে হবে? যেদিন হজ্জ নয় বা হজ্জের দিন পার হবার পর লোক দেখানো হজ্জ করতে হবে? মূলতঃ এ প্রশ্ন সেদিন সবার অন্তরেই জমাট বাঁধা বরফে পরিণত হয়েছিল।
এরপর দৃষ্টান্তটি দিয়েছেন কলামিষ্ট মহিউদ্দিন আহমদ। ২২শে নভেম্বর ঈদ উদযাপন নিয়ে বিভ্রান্তি শীর্ষক লেখায় দৈনিক সংবাদে তিনি স্মৃতিচারণ করেন যে, ১৯৮২ সালে হজ্জের তারিখ ১দিন এগিয়ে আনা হয়। এবং সেবার বাংলাদেশের তৎকালীন প্রেসিডেন্টরও হজ্জের প্রোগ্রাম ছিল। কিন্তু হজ্জের ৭দিন আগে এই তারিখ এগিয়ে আনার ফলে তখন প্রেসিডেন্টর প্রটোকল, এম্বেসীর অনেক কর্মকর্তাদের ঝামেলা পোহাতে হয়, গোলমাল বেঁধে যায়।
মহিউদ্দিন ছাহেব লিখেছেন, “মাত্র সাত/আট দিন পরে হজ্জ। আর তখনই তারিখ বদলানো হলো। ব্যর্থতাটা যে আমাদের নয়, গোলমাল ঘটিয়েছে সৌদিরাই। এ বিষয়টি এরশাদের মার্শাল সরকারের অনেকেই তখন বুঝতে চায়নি। এছাড়া পূর্বঘোষিত (পূর্ব নির্ধারিত?) হজ্জের তারিখটা সৌদিরা আনেইবা কি করে? তার এমনসব যর্থাথ প্রশ্নের জবাব দিতে সৌদিরা কোন কালেই বাধ্য ছিল না, এখনও বাধ্য নয়।” (দৈনিক সংবাদ ২২ নভেম্বর ২০০৪)
মূলতঃ এসব প্রশ্ন সচেতন মহলে অনেকদিন যাবতই ঘুরপাক খাচ্ছে। তা সত্ত্বেও কোন কোন তথাকথিত ইসলামী চিন্তাবিদ উদয় হয়েছে, তারা প্রচার করছে যে, বর্তমানে অনেক আধুনিক যন্ত্রপাতি বের হয়েছে যার দ্বারা নির্ভূলভাবে বের করা যাবে যে, চাঁদ কোথায়, কখন উঠবে। বলাবাহুল্য, সৌদীয়ানরাও এ হিসেবেই চাঁদের হিসাব-নিকাশ করে হজ্জের তারিখ ঘোষণা করে। কিন্তু সব মুহাক্কিক-মুদাক্কিক ইমাম ও ফুক্বাহায়ে কিরাম এই মর্মে একমত যে, চাঁদ উঠার সাথে শুধু নয়, শরীয়তের উছূল হলো চাঁদ দেখা। যেমন অঙ্কের হিসাবে ২৯ তারিখে চাঁদ উঠলেও মেঘলা আবহাওয়ার কারণে যদি চাঁদ দেখা না যায় তাহলে ৩০ তারিখেই চাঁদ উঠবে বলে ধরতে হবে। এজন্য হাদীস শরীফে আরো সাবধান বাণী করা হয়েছে যে, “২৯ তারিখ চাঁদ না দেখলে ৩০ তারিখে চাঁদ দেখলে সেটা একটু মোটা মনে হলেও তাকে যেন কেউ দ্বিতীয়ার চাঁদ না বলে।”
ইসলামে গরু, ছাগল হালাল প্রাণী, কিন্তু যেটা মরে যায় বা যাকে গুলি করে মারা হয় অথবা যবেহ না করা হয় তাহলে তা যেমন খাওয়া জায়িয নয় তেমনি চাঁদ আকাশে উঠলেও যদি তা না দেখা যায় তাহলেও তা গ্রহণ করা যাবে না।
চাঁদের তারিখ নিয়ে খেল-তামাসার এই ধারাবাহিকতায় তারা ২০০৬ সালে (১৪২৭ হিজরী) হঠাৎ করেই ঘোষণা দিল তারা ২০শে ডিসেম্বর চাঁদ দেখতে পেয়েছে, অর্থাৎ ২১শে ডিসেম্বর, বৃহস্পতিবার থেকে ১ম যিলহজ্জ শুরু করে ৩০শে ডিসেম্বর ২০০৬ সাল, শনিবার ঈদুল আদ্বহা পালন করবে। অথচ অবাক ব্যাপার হচ্ছে-
১) সৌদী আরবের উম্মুল কুরার ক্যালেন্ডারে পূর্ব থেকেই ঘোষণা ছিল ১ম যিলহজ্জ শুরু হতে পারে শুক্রবার, ডিসেম্বরের ২২ তারিখ থেকে এবং ঈদুল আদ্বহা হবে ৩১ ডিসেম্বর, রবিবার ২০০৬ সাল।
২) অমাবস্যা সংঘটিত হয়েছে ২০শে ডিসেম্বর, দুপুর ২টায় (আন্তর্জাতিক সময় অনুযায়ী)। সেদিন পলিনেশিয়ান দ্বীপপুঞ্জ ছাড়া পৃথিবীর কোথাও চাঁদ দেখা যায়নি। সৌদী আরব কি করে ২০শে ডিসেম্বর চাঁদ দেখতে পেল?
অনেকেরই ধারণা সৌদী আরব হয়তো চন্দ্রমাসের তারিখ গণনার ক্ষেত্রে কোন ভূল পদ্ধতি ব্যবহার করছে। যদি তাদের পদ্ধতিগুলোর ভূলগুলো ধরিয়ে দেয়া যায় তবে হয়তো সৌদী আরবের মুসলমানদের এবং সৌদী আরবকে যারা অন্ধের মত অনুসরণ করে তাদের আমলগুলো নষ্ট হওয়া থেকে রক্ষা করা যেতে পারে। বাস্তবে কিন্তু তা নয়। যে জেগে থেকে ঘুমের ভান করে থাকে তাকে যেমন জাগানো যায়না তেমনি সৌদী আরবের শাসক ও উলামায়ে ‘ছূ’দেরও সংশোধন সম্ভব নয়। এই শ্রেণীদ্বয় সজ্ঞানেই সব করছে যার প্রমাণ হলো উম্মুল কুরার ক্যালেন্ডারে ১ম যিলহজ্জ ডিসেম্বরের ২২ তারিখ শুক্রবার, দেখানো হয়েছিল, তাহলে হঠাৎ করেই সৌদী জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট বৃহস্পতিবার কেন তারিখ গণনা শুরু করলো?
সৌদী আরবের King Abdul Aziz City for science and technology-এ Astronomy department–এর প্রধান জাকিউল মুস্তফা জানান ২০শে ডিসেম্বর বুধবার সূর্য অস্ত যাবার পূর্বেই চাঁদ অস্ত গেছে। সুতরাং সৌদী আরবের পক্ষে চাঁদ দেখা সম্ভব হয়নি এবং বৃহস্পতিবার ২১শে ডিসেম্বর থেকে যিলহজ্জের তারিখ ঘোষণা সঠিক নয়।
এছাড়াও ডঃ সালমান জাফর শাইখ একজন এস্ট্রোনমার ১৪২৭ হিজরী (২০০৬ সাল) যিলহজ্জের তারিখ ঘোষণার দিন সৌদী আরবের রিয়াদে উপস্থিত ছিলেন। তিনি রিয়াদের চাঁদ দেখা কমিটির সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সৌদী আরবের মক্কা, রিয়াদ, কাসিম, হাইল, তাবুক এবং আসির এই ৬টি চাঁদ দেখা কমিটির রিপোর্টেই জানানো হয় ২০শে ডিসেম্বর চাঁদ দেখা যায়নি। অথচ কোন অদৃশ্য অঙ্গুলি হেলনে দুঃখজনকভাবে সৌদী জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট মনগড়াভাবে বৃহস্পতিবার থেকেই যিলহজ্জ মাসের ১ম তারিখ গণনার ঘোষণা দেয়?
এছাড়াও আরেকটি প্রমাণ উপস্থাপন করলে সহজেই বোঝা যাবে সৌদী ওহাবী সরকার ইচ্ছাকৃতভাবেই এ যাবৎকাল ধরে চন্দ্রমাসের ভূল তারিখ ঘোষণা করছে।
সৌদী আরবের উম্মুল কুরার ক্যালেন্ডারে ১৪২৫ হিজরী (২০০৫ সাল) পহেলা যিলহজ্জের তারিখ ছিল বুধবার ১২ই জানুয়ারী ২০০৫ এবং ঈদুল আদ্বহার তারিখ ছিল শুক্রবার ২১শে জানুয়ারী ২০০৫। কিন্তু হঠাৎ করেই সৌদী জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট মঙ্গলবার ১১ই জানুয়ারী ২০০৫ সালে ১ম যিলহজ্জের তারিখ ঘোষণা করে এবং ঈদুল আদ্বহার তারিখ হয় বৃহস্পতিবার ২০শে জানুয়ারী ২০০৫।
সে বছর সোমবার ১০ই জানুয়ারী সন্ধ্যায় আকাশ ছিল মেঘাচ্ছন্ন, চাঁদ দেখা যায়নি। কিন্তু হঠাৎ করেই রাতে দু’জন সাক্ষী এসে উপস্থিত হয় এবং তারা দাবী করে যে, রাতে তারা চাঁদ দেখেছে। তাদের স্বাক্ষ্য অনুযায়ী জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট মঙ্গলবার ১১ই জানুয়ারী ২০০৫ থেকে পহেলা যিলহজ্জ ঘোষণা করে। সৌদী আরবের একজন লেখক হামজা আল মুজানী সৌদী আরবের “আল ওয়াতান” পত্রিকায় “Testimonies of the Impossible” শিরোনামে একটি লেখা প্রকাশ করে। এই লেখা প্রকাশের পর লেখক হামজা আল মুজানীকে মিথ্যা অভিযোগে অভিযুক্ত করে ৪মাসের কারাদন্ড এবং ২০০ বেত্রাঘাত শাস্তি প্রদান করা হয়। যদিও পরবর্তীতে সৌদী বাদশা আব্দুল্লাহ তাকে আর জেলে প্রেরণ করেনি।
সৌদী আরবের “আল হায়াত” পত্রিকা থেকে সেই দু’জন সাক্ষীর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা চালায় কিন্তু কোনভাবেই সাক্ষীদ্বয়কে দেখা করতে রাজী করানো যায়নি। কিন্তু পরবর্তীতে King Abdul Aziz City for science and technology-এর কয়েকজন এস্ট্রোনমার সাক্ষীদ্বয়ের এলাকা আল রেয়ান গিয়ে তাদের সাথে দেখা করেন। তারা দেখতে পান একজন তথাকথিত সাক্ষীর বয়স ৮০ বছর। আসলেই কি তিনি সেদিন চাঁদ দেখেছিলেন নাকি অন্য কিছু?
যদি ধরেও নেয়া হয় সৌদী আরব অমাবস্যার দিন থেকে নতুন তারিখ ঘোষণা করে তাহলে প্রশ্ন আসে-
(১) উম্মুল কুরা কি করে পূর্ব থেকেই সঠিক তারিখ ঘোষণা করেছিল পরবর্তীতে যা পরিবর্তন হয়ে যায়?
(২) যদি অমাবস্যা দেখেই তারিখ শুরু করবে তবে রাতের বেলা চাঁদ দেখতে পাবার মিথ্যা সাক্ষী জোগাড় করার কি প্রয়োজন?
(৩) অমাবস্যা দেখে তারিখ ঘোষণা করা সহজ। তাহলে তাদের ৬টি চাঁদ দেখা কমিটি গঠন করার কি প্রয়োজন এবং সেখানে কর্মরত চাঁদ দেখা বিষয়ে অভিজ্ঞ লোকজনের মতামত উপেক্ষা করারই কি দরকার?
(৪) King Abdul Aziz City for science and technology-তে Astronomy department আছে। তাদের সাথে আলোচনা না করে, চরম সত্য বিষয়গুলো পাশ কাটিয়ে, মিথ্যা সাক্ষীর স্বাক্ষ্যের কি প্রয়োজন?
(৫) বিশ্বের সকল দেশ থেকে অনেক অর্থ ব্যয় করে অনেক পরিশ্রম করে আসা মুসলমানদের হজ্জ অনুষ্ঠান বাতিল করে দেয়ার পিছনে তাদের কি সার্থকতা?
(৬) ৯ই যিলহজ্জ আরাফার ময়দানে যথাসময়ে উপস্থিত হতে না পারলে যার ফরয হজ্জ বাতিল হয়ে যায়, তাকে পরবর্তীতে তা পুনরায় আদায় করতে হয়। তাহলে হজ্জ করতে আসা সকল বিশ্বের মুসলমানদের আরাফার ময়দানে সঠিক সময়ে যেতে না দেয়ার পিছনে তাদের কি এমন উল্লাস?
(৭) সৌদী আরবের অন্ধ অনুসরণ করতে গিয়ে বিভিন্ন দেশে কিছু ধর্মীয় জনগোষ্ঠী ভিন্ন দিনে ঈদ পালন করছে, রোযা শুরু করছে, নিজেদের দেশে ভেদাভেদ সৃষ্টি করছে। এতে সৌদী আরবের কি আনন্দ রয়েছে?
(৮) সৌদী আরবের এহেন মিথ্যা কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে বলতে গিয়ে সত্যবাদী লেখকের বেত্রাঘাত করা হচ্ছে। এরা আসলে ইসলামের কোন অনুশাসনের পায়রবী করছে?
এ রকম হাজারো প্রশ্ন বিশ্বের বিবেকবান সকল মুসলমানদের মনে প্রতি মুহুর্তে জেগে উঠছে। প্রতিটির আলাদা উত্তর না দিলেও একটি উত্তর দেয়া যেতে পারে তাহলো এই শাসকগোষ্ঠী হচ্ছে ইসলামের মুখোশধারী শয়তান তথা বেদ্বীন গোমরাহ এবং ওহাবী সম্প্রদায়। এরা ইসলামকে যমীন থেকে নিশ্চিহ্ন করতে চায়। যদিও তা তারা পারবে না। বরং এরা ইহুদীদের চর এবং খৃষ্টানদের দালাল। অচিরেই এই ওহাবী শাসকগোষ্ঠীর ধ্বংস অনিবার্য। আমরা জানি হারাম থেকে হারামই সৃষ্টি হয়। সুতরাং এই সৌদী ওহাবী শাসকগোষ্ঠীর আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতায় যে সকল ব্যক্তি বা দল বিভিন্ন দেশে ইসলাম কায়েমের নামে অপচেষ্টা চালাচ্ছে তারা মূলত কোন দিন ইসলাম কায়েম করতে পারবেনা। এসকল উলামায়ে ‘ছূ’দেরও ধ্বংস অনিবার্য। আমরা তাদের হিদায়েত চাই আর হিদায়েত না থাকলে ধ্বংস হয়ে যাওয়া দেখার প্রতিক্ষায় রইলাম।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে অক্টোবর, ২০০৯ সকাল ১১:৩৬