নাটক, সিনেমায় যে চারটি জিনিস আমাকে আকর্ষণ করে সেটা হল:
১।গল্প
২।অভিনয়
৩।ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক
৪।ডেকোরেশন
এই চারটির কোনটাতেই খামতি নেই সুলতান সুলেমান সিরিয়াল এ।অনবদ্য নির্মাণ নিঃসন্দেহে।
গল্পঃ সুলতান সুলেয়মানের সময়কার রাজকাহিনী উঠে এসেছে এই সিরিয়ালে।লেখক/পরিচালক সুলেয়মানের যুদ্ধ জয়ের ইতিহাস সামনে আনলেও ফোকাস করেছেন অন্দরমহলের ঘটনা প্রবাহকে।রাজা বাদশাহদের অন্দরমহল নিয়েই সাধারণ মানুষের কৌতূহল বেশী থাকে।রাজা বাদশাহদের অন্দর মহলের কাহিনীর প্রতি আমি খুবই আগ্রহী।তারা কোথায় ঘুমাতো,গোসল করত,কিভাবে খাওয়া দাওয়া করত,কি খেত ইত্যাদি।সুলতান সুলেয়মান সিরিয়াল এ সবই আছে।তবে খাওয়ার আইটেম গুলো সেভাবে জানা যায়নি।হুমায়ূন আহমেদের বাদশাহ নামদার(সম্রাট হুমায়ূনের কাহিনী) এ খাওয়ার আইটেম গুলোর বিস্তারিত বর্ননা আছে।উপন্যাস এ সেটা সহজ হলেও নাটকে তুলে আনা কঠিন ব্যাপার।তবে পরিচালক গল্পটিকে খুবই ভাল ভাবে উপস্থাপন করেছেন।
অভিনয়ঃযেহেতু বাংলায় ডাবিং করা অভিনয় দেখছি সেহেতু অভিনয় সম্পর্কে পূর্নবিচার করা সম্ভব নয়।খালিদ এরগেঞ্চ এর(সুলেমান) অভিনয় সম্পর্কে কিচ্ছু বলার নেই।অসাধারণ।তবে ইব্রাহীম পাশার(ওকান ইয়ালাবিক)বিশেষ মুহূর্তের এক্সপ্রেশন গুলো আমার কাছে অতিরিক্ত লেগেছে।রাগের দৃশ্যে হুররেমের(মারিয়াম উজারলি) এক্সপ্রেশন একটুবেশী মনে হয়েছে।বেগম সুলাতানার( নেবাহাত চেহরে) অভিনয় বেশী ভাল লেগেছে।দায়া হাতুন(সেমা কেচিক)ও অনবদ্য।সুম্বুল আগার(সেলিম বায়রাক্তার) অভিনয়ও ভাল হয়েছে তবে গুল আগা(এনগিন গুনায়দিন)কে ঐ চরিত্রে একদম মানায় নি।হেরেমের খোজারা মূলত মেয়েলি ধরনের হয় গুল আগা তেমন ছিলেন না।সর্বোপরি অভিনয় ভালোই হয়েছে।
ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকঃ ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকে আমি ২০০%পয়েন্ট দিবো সুলতান সুলেয়মান সিরিয়াল কে।অসাধারণ, অনবদ্য।গল্পকে নাটকের প্রান বলা হলে অভিনয় আর মিউজিক হল দুটো কিডনি। বাংলাদেশী নাটক সিনেমায় এই মিউজিক সিস্টেমের ব্যাপক অভাব পরিলক্ষিত হয়।ইন্ডিয়ান মুভি এমনকি আমি খেয়াল করেছি ইন্ডিয়ান সিরিয়াল গুলোতেও আলাদা আলাদা মিউজিকের ব্যবহার হয়।কিন্তু আমার জন্ম থেকে যতগুলো বাংলা সিনেমা দেখেছি তার সব গুলোর করুন দৃশ্যের মিউজিক এক,রোমান্সের মিউজিক এক,একশান দৃশ্যের মিউজিক এক,হাসির দৃশ্যের মিউজিকও এক।শাহরুখ,মাধুরী অভিনীত কয়লা সিনেমার ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক প্রায় সব সিনেমাতে পেয়েছি।এই দিকে নজর দেওয়া আবশ্যক।
ডেকোরেশন: বলিউড মুভির যে জিনিসটা আমার খুব ভাল লাগে সেটা হল তাদের সেট ডিজাইনিং,অভিনয় শিল্পীদের পোশাক এবং আরো আনুষঙ্গিক ডেকোরেশন।যেটা দেশীয় সিনেমায় পাওয়া প্রায় অসম্ভব। সল্প বাজেট এর অন্যতম কারন।
সুলতান সুলেয়মান সিরিয়ালের ডেকোরেশনও ছিল অসাধারণ।তাদের পোশাক পরিচ্ছেদ দেখে আমি অবাক!ডিরেক্টর কি সে সময়ের পোশাক পরিচ্ছেদ সামনে এনেছেন নাকি এখনকার গুলো ব্যবহার করেছেন!!!
৫০০বছর পূর্বে এতো সুন্দর পোশাকের ডিজাইন ছিল?বর্তমানে এ ফ্যাশন গ্রহন করতে কোন রুচিশীল মানুষ অনীহা করবে বলে আমার মনে হয় না।সিরিয়ালটির সেট ডিজাইনিং ও ছিল দেখার মতো।
অন্যান্য:পরিচালক প্রযুক্তির খুব ভাল ভাবে ব্যবহার করেছেন।ভিডিও ইফেক্ট,কাহিনীর বর্ননা সব কিছুতেই মুনশিয়ানা দেখিয়েছেন।
সিরিয়ালটি ৪২টির ও বেশী ভাষায়,ভিন্ন নামে প্রচারিত হয়েছে হচ্ছে।বাংলাদেশ,আমেরিকা,ফ্রান্স,তুরস্ক,স্পেন,পাকিস্তান, রাশিয়া সহ ৪২টির ও বেশী দেশে এই সিরিয়াল টি প্রচারিত হচ্ছে।
বাংলাদেশে ২০১৫সালের নভেম্বর থেকে দীপ্ত টিভি সপ্তাহে ছয়দিন(শনি-বৃহ সন্ধ্যা ৭.৩০মিনিটে সিরিয়ালটি প্রচার করছে 'সুলতান সুলেমান' নামে।চ্যানেলটি একদম নতুন।তা সত্ত্বেও সুলতান সুলেমানের কল্যানে শুরুতেই টি আর পি তে ১নম্বর স্থান দখল করে।বাংলাদেশে তুমুল জনপ্রিয়তা পায় সিরিয়ালটি।
তুমুল জনপ্রিয়তায় দীপ্ত টিভির ‘সুলতান সুলেমান’
সুলতান সুলেমানের পরবর্তী সংস্করণ 'মুহতেশেম ইউযিয়েল: কোসেম সুলতান' ও প্রচারিত হবে দীপ্ত টিভিতে 'সুলতান সুলেমান:কোশেম সুলতান' নামে।
টিভিতে এই একটি প্রোগ্রাম আমি নিয়মিত দেখি।সিরিয়ালটি দুবার পুন:প্রচার করা হয়(রাত ১০টা,সকাল১০টা)।তাই মিস হওয়ার সম্ভাবনা নেই।