সমীক্ষা ঃ বাংলাদেশে প্রতিদিন গড়ে ২৯ জন আত্মহত্যা করছে। প্রতি বছর গড়ে দশ হাজার আত্মহত্যা করে। আত্মহত্যায় বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান দশম।
মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. আখতারুজ্জামান বলেন_ '১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি , বয়ঃসন্ধিকালে আবেগ বেশি থাকে। ওই সময়ে কোন অপ্রাপ্তিই তারা সহজে মেনে নিতে পারে না। এ থেকে মানসিক যে চাপ সৃষ্টি হয় তা সহ্য করতে না পেরেই আত্মহত্যার দিকে ধাবিত হয়।'
আত্মহত্যার প্রবণতার প্রতিকার সম্পর্কে তিনি বলেন_ ' চাইলেই সব পাওয়া যায় না। অপ্রাপ্তিটাকে সহজে গ্রহণ করার মানসিকতা সৃষ্টি করতে হবে। যেমনঃ খেলাধুলার মাধ্যমে আমরা জয় অনুভব করি আবার পরাজয়টাও গ্রহণ করি। এটি বাস্তব জীবনের একটি রিহার্সাল। এই শিক্ষার জন্য পারিবারিক সচেতনতা প্রয়োজন। বাবা মার সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অনেক সমস্যার সমাধান হিসেবে কাজ করতে পারে।
আত্মহত্যার কারন ঃ
মনোবিজ্ঞানীদের মতে _
১) অপ্রাপ্তি, প্রতারণা, হতাশা .
২) মানসিক অবসাদ, পারিবারিক কলহ ও নির্যাতন .
৩) ইভটিজিং ও অতিরিক্ত আবেগ প্রবণতা.
৪) অভিভাবকদের উদাসীনতা বা জেনারেশন গ্যাপ.
৪) সামাজিক বৈষম্য ও দারিদ্র্য.
৫) জুয়া, মাদক,দীর্ঘমেয়াদি পীড়াদায়ক রোগ।
৬) চিন্তার বিক্ষিপ্তিতা, নিয়ন্ত্রহীন রাগ জিদ ক্ষোভ ভয়, ধৈর্য ও সহ্য শক্তির অভাব।
৭) অতি উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও অতিমাত্রায় আত্মমর্যাদাবোধ।
8) মিডিয়াতে ফলাও করে প্রতিদিন আত্মহত্যার খবর প্রচার করা ইত্যাদি ।।
বিশেষজ্ঞদের মতে_ মাদকসেবীদের মধ্যে আত্মহত্যার হার সাধারণ মানুষের তুলনায় ১৪ গুণ বেশি। বিশেষ করে হিরোইন ও ইয়াবা সেবনে আত্মহত্যার ঝুঁকি বাড়ে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা দিলে দ্রুত কাউন্সেলিং করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা।
আত্মহত্যার প্রবণতা চেনার উপায় ঃ
ডা. আখতারুজ্জামান জানান_
১) কথায় বা লেখায় জীবনের প্রতি অনীহা ও সীমাহীন কষ্টের কথা প্রকাশ
২) হঠাৎ উত্তেজিত হওয়া, অকারণে কাঁদা, নিজেকে গুটিয়ে রাখা / অস্বাভাবিক শান্ত হয়ে যাওয়া।
৩) খাওয়া-দাওয়া ও ঘুমের প্যাটার্নে দৃশ্যমান অস্বাভাবিক পরিবর্তন।
৪) নিজেকে অন্যের বোঝা মনে করা, পরিচিতজনদের নিকট থেকে বিদায় নেয়ার সময়- এটাই হয়তো শেষ দেখা, চিরবিদায় ইত্যাদি শব্দ উচ্চারণ করা।
৫) মৃত্যু বিষয়ে নানা চিন্তা-ভাবনা, হঠাৎ অন্যদের উপদেশ ও দায়িত্ব বণ্টন করে দেয়া।
৬) আত্মহত্যা সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ, আত্মহত্যায় ব্যবহৃত হতে পারে এমন জিনিস সংগ্রহ করা, অতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ সেবন, মাদকাসক্তদের মাদক সেবনের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়া ।
আত্মহত্যা প্রতিরোধের উপায় ঃ
সাইকোথেরাপিস্ট মনোবিজ্ঞানী উম্মে কুলসুম কলি বলেন _ 'নিরাপত্তাবোধই ব্যক্তির মনে শক্তি, সাহস ও আনন্দ জোগায়। আত্মবিশ্বাসের অভাবই মানুষের মনে ভয় সৃষ্টি করে।'
১) পারিবারিক সম্পর্ক /বন্ধন দৃঢ় করা। কোনোভাবেই বাচ্চাকে এমন কিছু অনুভব করানো উচিত নয় যে সে কোনও দিক থেকে ছোট বা অপূর্ণ। অপূর্ণতা সবার মধ্যেই থাকে কিন্তু জাজমেন্ট বাইরের মানুষ করবে ; পরিবার নয়। পরিবার তো এমন জায়গা যেখানে সবাই নিরাপদ ও সন্মানিত অনুভব করবে।
২) খেলাধুলা ও শৈশবকালীন শিক্ষা তথা বাবা মার মধ্যে মনমালিন্য হওয়াই স্বাভাবিক কিন্তু তা বাচ্চাদের সামনে নয়। এতে বাচ্চা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে।
৩) নিজেকে চেনার চর্চা করা ও সমস্যার সঠিক ব্যাখ্যা বুঝতে পারা ।
৪) ক্ষমা করার চেষ্টা ও নিজেকে পরিবর্তনের চেষ্টা।
৫) পজেটিভ চিন্তা ও স্রষ্টার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে।
৬) কাউন্সিলিং প্রদান।
সূত্র : মানবজমিন ১৮ অক্টোবর, ২০১৪ ও আমার দেশ ১৬ নভেম্বর, ২০১৪ ।।
আমার কিছু কথা _ আজকাল প্রায়শই আত্মহত্যা বা আত্মহত্যার চেষ্টার খবর শুনতে পাই; যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক !!
প্রথমত, ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী আত্মহত্যা মহাপাপ। জীবনের কোনও সমস্যাই জীবনের চে বড় নয়। একদিন তা শেষ হবেই।
আল্লহতায়ালা কাউকেই পরিপূর্ণ বা অপূর্ণ করে পাঠাননি। সবাইকে কিছু না কিছু দিয়ে পাঠিয়েছেন।
দ্বিতীয়ত, জীবন একটাই এবং পৃথিবী অনেক সুন্দর যা অনুভব করার ক্ষমতা শুধু মানব প্রজাতিকেই দেয়া হয়েছে।
তৃতীয়ত, যে জীবনটা তুমি শেষ করে দিতে চাইছ সেটা পৃথিবীতে আনতে তোমার মা এর কত কষ্ট হয়েছে তা কি তুমি জানো? অনুভব করতে চাইলে ৯ মাস নয় মাত্র ১ মাস পেটে একটি বালিশ বেধে রাখো; বুঝতে পারবে।
চতুর্থত, মহান আল্লহতায়ালা সবার জন্য তার প্রাপ্য নির্ধারণ করে রেখেছেন। তুমি যতই চাও যা তোমার ভাগ্যে লেখা নেই তা তুমি শত চেষ্টাতেও পাবেনা আর যা তোমার ভাগ্যে লেখা আছে তা তুমি না চাইতেই পেয়ে যাবে। সে সুখ হোক বা দুঃখ হোক।
পঞ্চমত, যার কারনেই / যে কারনেই তুমি আত্মহত্যা করতে চাইছ ; বেঁচে থাকলে একদিন দেখবে সে /সেটা আসলে তোমার যোগ্যই / ভাগ্যেই ছিলনা এবং জীবনে চলার পথে সুখি হবার জন্য তাকে/ সেটা তোমার কোনোদিনই প্রয়োজন হবেনা।
মাথায় আত্মহত্যার চিন্তা আসবার সাথে সাথে তোমার চে বড় ও বুঝদার বন্ধুত্বপূর্ণ যে কাউকে বিষয়টি খুলে বল এবং জীবন থেকে না পালিয়ে সমস্যাটি ফেস কর। যা তোমাকে বিরক্ত করছে তা থেকে দূরে সরে যাও এবং জীবন পদ্ধতি পরিবর্তন করে দেখ। তারপরও - প্রয়োজনে কাউন্সিলিং গ্রহন কর।
_ জাকরিন কাদির ।।