গ্রন্থ সমালোচনা
রহস্যময় প্রাণীজগৎ
(প্রথম খণ্ড)
তৈয়ব খান
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাঁর পবিত্র গ্রন্থ আল †কারআনের সুরা বাকারার একশ’ বাইশ নম্বর আয়াতে বলেনÑ “ †হ বানী ইসরায়েল! আমি †তামাদের †য সুখ সম্পদ দান করেছি এবং পৃথিবীর উপর †তামাদেরকে †য †শ্রষ্?ত্ব দান করেছি তা স্মরণ কর।” সুরা বাকারার একশত †চŠষট্টি নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেনÑ “নিশ্চয়ই নভোম-ল ও ভূÑম-ল সৃজনে, দিবা ও রজনীর পরিবর্তনে, জাহাজসমূহের চলাচলেÑ যা মানুষের জন্য লাভজনক এবং সম্ভার নিয়ে সমুদ্রে চলাচল করে, মৃত্যুর পর পৃথিবীকে জীবিতকরণে, তাতে সর্বাধিক জীবজন্তু সঞ্চারিত করার জন্য আকাশ হতে আল্লাহ কর্তৃক বৃষ্টি বর্ষণে, বায়ুরাশির গতি পরিবর্তনে এবং আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যস্থ সঞ্চিত †মঘের সঞ্চারণে সত্যি সত্যিই জ্ঞানবান সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শন রয়েছে।” একই সুরায় দু’শ উনসত্তর নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেনÑ “তিনি (আল্লাহ) যাকে ইচ্ছা প্রজ্ঞা দান করেন এবং যাকে প্রজ্ঞা দান করা হয় ফলত: †স নিশ্চয়ই প্রচুর কল্যাণ লাভ করে; বস্তুত জ্ঞানবান ব্যক্তিগণ ব্যতিত †কউ উপলব্দি করতে পারে না।”
মহান আল্লাহর সীমাহীন সৃষ্টিজগতের মধ্যে দুনিয়াতে মানুষ সৃষ্টির †শ্রষ্? হিসেবে পরিগণিত। এ †শ্রষ্?ত্বের প্রধান কারণ হচ্ছে মানুষের জ্ঞান। দুনিয়াতে দু’ধরনের মানুষ আছে; একদল খুবই সাধারণ। যারা শুধু †বঁচে থাকার জন্য †বঁচে থাকে। আল্লাহর সৃষ্টিরহস্য নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করার মতো প্রজ্ঞা তাদের মাঝে †নই। অপর দল অসাধারণ। তারা জ্ঞানার্জনের মাধ্যমে মানুষ হিসেবে †বঁচে থাকাটাকে সার্থক মনে করেন। মহান আল্লাহ তাঁর তাবৎ সৃষ্টি খামাখা করেননি। এর †পছনে গূঢ় রহস্য আছে। বিস্ময়কর ব্যাপার হলো দুনিয়ার সমস্ত সৃষ্টিই মানুষের প্রয়োজনে কাজে লাগছে। মহান আল্লাহর এ বৃহৎ সৃষ্টিজগৎ নিয়ে যারা ভাবছেন, গবেষণা করছেন তাঁরাই সত্যিকারের জ্ঞানী।
এম. শহিদুজ্জামান †চŠধুরী দুনিয়াতে মহান আল্লাহর সৃষ্টি জগতের যৎসামান্য অংশ নিয়ে †ভবেছেন, গবেষণা করেছেন। তাঁর এ গবেষণালব্ধ ফসল হচ্ছেÑ “রহস্যময় প্রাণীজগৎ” শিরোনামে এ বইটি। এটি সম্পর্কে বাংলাদেশের বিশিষ্ট বিজ্ঞানী, সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের †পট্রোলিয়াম ও মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জনাব ডক্টর †মা. রফিকুল ইসলাম রফিক একটি সুন্দর অভিমত ব্যক্ত করেছেন। তিনি ঐশি গ্রন্থ আল †কারআন †থকে উদ্ধৃতি দিয়েছেনÑ “আকাশম-লী ও পৃথিবীর সবকিছুি তাঁর (আল্লাহর) পক্ষ †থকে তিনি †তামাদের জন্য নিয়োজিত করে দিয়েছেন, চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য এতে অবশ্যই রয়েছে নিদর্শনাবলী (সুরা আল জাছিয়া, আয়াত নং- ১৩)।” এরপর তিনি বলেছেনÑ “মহান আল্লাহ তা’লা এ আয়াতে মানবজাতির চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্যে একথা বলেছেন †য, আকাশম-লী ও পৃথিবীতে অসংখ্য সৃষ্ট নিদর্শন রয়েছে, †যগুলো নিয়ে মানুষকে গবেষণা করতে হবে...। আল †কারআন ও হাদিসের আলোকে এবং আধুনিক বিজ্ঞানের ভিত্তিকে †কন্দ্র করে মননশীল †লখক ও গবেষক জনাব শহিদুজ্জামান †চŠধুযরীর প্রায় তিন বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমের সুচিন্তি গবেষণা ও সংগ্রহের ফসল “রহস্যময় প্রাণীজগৎ” বইটিতে বিশাল প্রাণী জগতের একাংশ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার বিষয়টি অজানাকে জানার আগ্রহে জ্ঞানপিপাসু পা?ক মহলের প্রতি অবশ্যই একটি বড় উপহার বলে আমি মনে করি।”
ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ’র সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক এবং বিশিষ্ট †লখক, গবেষক জনাব শাহ্ নজরুল ইসলাম এ বইটি সম্পর্কে অভিমত ব্যক্ত করেছেনÑ “গবেষণা ফরমেটে সাজানো এ বইটি পিএইডি থিঞসিস হিসেবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে। বইটিতে মহান আল্লাহর সৃষ্টির বিচিত্র প্রাণীসমূহের বৈচিত্রময় বর্ণনা ও বৈশিষ্ট্য এবং আনুষাঙ্গিক আলোচনা সুন্দরভাবে উপস্থাপিত হয়েছে।... আমাদের †দশে সাধারণ পর্যায়ে প্রাণীসম্পদ নিয়ে খুব একটা আলোচনা হয় না। অথচ পৃথিবীর অস্তিত্ব রক্ষায় প্রাণীসম্পদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পবিত্র †কারআন মাজিদ ও হাদিস শরিফে বিভিন্ন প্রাণীর আলোচনা এসেছে। কুরআন-হাদিসে বর্ণিত অনেক প্রাণীর বর্ণনা এ বইটিতে স্থান †পয়েছে। বাংলাভাষায় এমন একটি তথ্য সমৃদ্ধ বই প্রয়োজন ছিল...।”
বিশিষ্ট কবি ও কাব্য সমালোচক এবং অধ্যাপক বাছিত ইবনে হাবীব “রহস্যময় প্রাণীজগৎ” বইটি সম্পর্কে বলেছেনÑ “শহিদুজ্জামান †চŠধুরী স্বপ্রণোদিত, স্বতঃস্ফুর্ত এক উঁচুমাপের গবেষণাকর্মী। তাঁর তথ্যপিপাসু মনে অনেক প্রশ্ন। †যগুলোর জবাবি সমাবেশ হচ্ছে এ গ্রন্থ। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে গবেষণারত শিক্ষক শিক্ষার্থীদের প্রয়োজন †মটাতেও বইটি বিশেষ সহায়ক ভূমিকা পালন করবে...। ‘রহস্যময় প্রাণীজগৎ’ গ্রন্থটি প্রাণীভূবন অনুসন্ধানী পা?ক ও †লখকের ক্ষুধা নিবারণে অত্যন্ত কার্যকার হবে আশা করি।”
সিলেট বিভাগের সাহিত্যাঙ্গনের এক আলোচিত ব্যক্তিত্ব এম. শহিদুজ্জামান †চŠধুরীর জন্ম ১৯৮৭ সালে হবিগঞ্জ †জলার নবীগঞ্জ থানার দীঘলবাক ইউনিয়নের কসবা গ্রামে। বিশিষ্ট কবি, ছড়াকার, গবেষক, মানবাধিকার কর্মী হিসেবে ইতোমধ্যে তিনি যথেষ্ট সুনাম কুড়িয়েছেন।
লন্ডন প্রবাসী বিশিষ্ট কবি, সাংবাদিক, সংগ?ক, গবেষক, ্এডভোকেট জনাব অধ্যাপক ইয়াওর উদ্দিন বলেনÑ “এম. শহিদুজ্জামান †চŠধুরী একজন স্বভাব কবি। সদা হাস্যোজ্জ্বল, প্রাণবন্ত, সদালাপী এ মানুষটি তার সাহিত্যপ্রতিভার সাক্ষর †রখেছেন। তিনি তার কর্মকা-ের জন্য ইতোমধ্যেই একাধিক সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। সম্প্রতি প্রকাশিত তার ‘রহস্যময় প্রাণীজগৎ’ বইটি জ্ঞানতৃষিত পা?কের জন্য একটি মাইলফলক হিসেবে পরিগণিত হবে।”
যুক্তরাজ্য প্রবাসী বিশিষ্ট সংগ?ক ও †লখক জনাব আবুল কালাম আজাদ †ছাটন “রহস্যময় প্রাণীজগৎ” সম্পর্কে বলেনÑ “এম. শহিদুজ্জামান †চŠধুরী রচিত এ বইটি যথেষ্ট তথ্যবহুল যা পা?কের জ্ঞানতৃষ্ণা †মটাতে সফল ভূমিকা পালন করবে।”
এম. শহিদুজ্জামান †চŠধুরী তার রহস্যময় প্রাণী জগৎ (১ম খ-) গ্রন্থটিকে †মাট আটটি অধ্যায়ে বিভক্ত করেছেন। প্রথম অধ্যায়ে তিনি প্রাণীজগতের রহস্য উন্মোচনে গবেষণা সম্পর্কে সৃষ্টিজগতের কয়েকটি প্রাণীর †মাটামুটি স্বচ্ছ ধারণা দিয়েছেন। এরপর প্রাণের উৎপত্তি সম্পর্কে পানি সম্পর্কে বলেছেন এবং প্রাণীকূল সৃষ্টিতে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন প্রতিটি প্রাণীর †জাড়া নির্ধারণ করেছেনÑ †স সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন। এভাবে প্রাণী জগতের সংখ্যা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। আ?ার হাজার মাখলুখ নাকি তার তারচেয়েও †বশি মাখলুখ মহান আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন এ সম্পর্কে প্রচলিত ধ্যান ধারনা সম্পর্কে কথা বলেছেন। এরপর বিজ্ঞানীদের ধ্যান ধারনা, প্রাণীজগতের †শ্রণিবিন্যাস, মহান আল্লাহর বিচিত্র সৃষ্টি, পবিত্র †কারআনুল কারিমে পাখির উদ্ধৃতি, পাখি হত্যা, বাসা †থকে পাখির ছানা ধরা, খাঁচায় পাখি পালন, পাখির †গাশত খাওয়া সম্পর্কে সুন্দর তথ্য দিয়েছেন। এরপর তিনি কীট-পতঙ্গ এবং এদের প্রজাতি, কীট-পতঙ্গ সম্পর্কে পবিত্র †কারআনের উদ্ধৃতি দিয়েছেন।
চতুষ্পদ প্রাণী সম্পর্কে †কারআন মাজিদের আলোচনা, গাছ †রাপনের ফায়দা, মহান আল্লাহর সৃষ্টি জীবের প্রতি দয়া সম্পর্কে লিখেছেন। প্রসঙ্গত তিনি তৃষ্ণার্ত প্রাণীকে পানি খাওয়ানো, গৃহপালিত প্রাণীর প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে বলতে গিয়ে এর পি?ে সাধ্যের অতিরিক্ত †বাঝা চাপানো সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন। এরপর জীবিত প্রাণীর †দহ হতে †গাশত †কটে †নওয়া, জীবজন্তুর মুখে আঘাত করা, তীর †ছাড়া, জন্তু-জানোয়ারের নিন্দা করা এসব বিষয়ে অনেক অজানা তথ্য সন্নিবেশ করেছেন।
?িক এমনিভাবে পশুপাখির লড়াই বাঁধানো, এদের হাশর সম্পর্কে লিখেছেন। পাশাপাশি মহান আল্লাহর এসব সৃষ্ট জীব †য অষ্টপ্রহর মহান আল্লাহর তাসবিহি পা?ে রত আছে এবং †কান প্রাণী †কান ধরনের তাসবিহি (কয়েকটি প্রাণীর পা?রত তাসবিহি) পা? করে, †স সম্পর্কে আলোকপাত করছেন।
তিনি তাঁর রহস্যমহ প্রাণী জগতে পিঁপড়া, মধু, †মŠমাছি, হযরত সুলায়মান (আ.) এর সাথে পিঁপড়ার কথোপকথন, হুদহুদ পাখির বর্ণনা ইত্যাদি খুব সুনিপুণভাবে আলোচনায় তুলে এনেছেন। এমনকি প্রাসঙ্গিকভাবে তিনি রাণি বিলকিস সম্পর্কেও আলোচনা করেছেন।
জ্বিন সম্পর্কে মানুষের †কŠতুহলের অন্ত †নই। রানি বিলকিস জ্বিন নাকি মানুষ ছিলেন, রাণি বিলকিসের বাবা জ্বিন বিয়ে করেছেন কিনা, মানুষ ও জ্বিন একে অপরের সাথে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে কিনা ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করেছেন। এবং সাধারণ মানুষের কমন †জন্ডার অর্থাৎ শিখ-ি বা হিজড়া সম্পর্কে সীমাহীন †কŠতুহল লক্ষ্যণীয়। এম. শাহিদুজ্জামান তার রহস্যময় প্রাণী জগতে হিজড়া জন্মের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরেছেন।
পাখি প্রসঙ্গে তিনি হুদহুদ, সুরাদ, ময়ুর, ইত্যাদি সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। সৃষ্টির †সরা মানুষ মুহাম্মদ (সা.) ময়ুর †বশে ছিলেন, এমন ধারণাকে তিনি বিভিন্ন তথ্য প্রদানের মাধ্যমে ভুল প্রমাণিত করেছেন। এমনকি আধুনিক পাখিবিজ্ঞানীদের নানাবিধ মতবাদও তিনি তার বইয়ে সন্নিবেশ করেছেন।
বইটির দ্বিতীয় অধ্যায়ে তিনি প্রাণী হত্যায় রাসুল (সা.) এর নির্দেশ, আগুনে পুড়িয়ে পাণী হত্যা সম্পর্কে তথ্য দিয়েছেন। এরপর তিনি আলোচনা করেছেন সাপ নিয়ে। ইবলিশ ও সাপ, ময়ুর ও সাপের শাস্তি, সাপের আকৃতিতে শয়তান, সাপের আকারে রূপান্তরিত জ্বিন, সাপ রূপী জ্বিন সাহাবী ইত্যাতি প্রাসঙ্গিক ভাবে তিনি তার বইতে উল্লেখ করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- হযরত মুহাম্মদ (সা.) যখন †কারেশদের অত্যাচারে অতিষ্? হয়ে মদিনায় হিজরত করতে যান, তখন তাঁর সাথে ছিলেন হযরত আবু বকর (রা.)। এ সময় তাঁরা উভয়ে একটি পাহাড়ি গুহায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। ওই সময় একটি সাপ রাসুল (সা.) এর দর্শন প্রার্থি হলে হযরত আবু বকর (রা.) এর মাধ্যমে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে তাকে কামড়েছিল। রাসুল (সা.) জানতে †পরে সাপের কামড়ের ক্ষতস্থলে থুতু লাগিয়ে দিয়ে ভাল করে †দওয়ার ঘটনাটিকেও তিনি তথ্যের মাধ্যমে নাকচ করছেন।
জ্বিনের সাপ আকৃতি ধারণ, জ্বিন ও সাপের পরিচয়, সাপ মারা, গুইসাপ, সনাতন ধর্মে সাপ, সংস্কৃতিতে সাপ, বাংলা চলচিত্রে সাপ, আধুনিক প্রাণীবিজ্ঞানে সাপ, সাপের বিষ, সাপের কামড়ে ঝাড়-ফুঁক, †বদে সম্পদ্রায়, বিষাক্ত সাপের কামড়ে করণীয় ইত্যাদি বহু বিষয় তিনি তার বইতে তুলে ধরেছেন। যা সাপ সম্পর্কে জানতে সাহায্য করবে।
তৃতীয় অধ্যায়ে তিনি কুকুরের প্রসঙ্গ নিয়ে এসেছেন। পবিত্র †কারআনুল কারিমে কুকুর সম্পর্কে আলোচনা, কুকুরের জন্ম রহস্য, কুকুর পালন ইত্যাদি বিষয়ের সাথে তিনি প্রাসঙ্গিকভাবে হযরত নূহ (আ.) এর সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন। ওই সময় ধর্ম প্রচার করতে গিয়ে হযরত নূহ (আ.) কীভাবে নাজেহাল হয়েছেন; তার বর্ণনাসহ মহাপ্লাবন সম্পর্কে তিনি আলোচনা করেছেন। এরপর কুকুর পালন, কুকুর হত্যা, শিকারী কুকুর, কালো কুকুর, কুকুরের উচ্ছিষ্ট এসব আলোচনার সাথে আসহাবে কাহাফের কুকুর বিষয়েও তিনি আলোকপাত করেছেন। এরসাথে কুকুর সম্পর্কে কুসংস্কার, কুকুরের কামড়, জলাতঙ্ক †রাগ, সাহিত্যে কুকুর ইত্যাদি বিষয় তার †লখায় উ?ে এসেছে।
এরপর চতুর্থ অধ্যায়ে তিনি সৃষ্টির সবচেয়ে ঘৃণিত প্রাণী শূকর সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। শূকরের জন্মরহস্য, বিভিন্ন ধর্মে শূকর নিষিদ্ধকরণ, শূকর বিকিকিনি ইত্যাদি আলোচনার পরপরই পাসঙ্গিকভাবে হযরত ইসা (আ.) এর সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য, বাইবেল গ্রন্থে উল্লিখিত আদম সৃষ্টি প্রসঙ্গসহ বহু অজানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন।
ইঁদুর মারা সওয়াবের কাজ। †কননা ইঁদুর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রাণী। অনিষ্টকারী ইঁদুর সম্পর্কে তিনি পঞ্চয় অধ্যায়ে বহু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সন্নিবেশ করে তিনি জ্ঞানপিপাষুদের সাহায্য করেছেন। এ অধ্যায়েই তিনি প্রাসঙ্গিকভাবে †প্লগ †রাগ, জ্বিন, পাগল ও মৃগীরোগী সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন।
গিরগিটি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা দিয়ে তিনি ষষ্? অধ্যায় পূর্ণ করেছেন। এ অধ্যয়ে তিনি গিরগিটির সাথে টিকটিকি সম্পর্কে তথ্য দিয়েছেন এবং প্রাসঙ্গিকভাবে হযরত ইব্রাহিম (আ.)কে পাপিষ্? নমরুদ কর্তৃক আগুনে নিক্ষেপের ইতিহাস নিয়েও আলোচনা করেছেন।
সপ্তম অধ্যায়ের শুরুতে এম. শহিদুজ্জামান †চŠধুরী পবিত্র হাদিস শরিফে কাকের নিন্দা বিষয়ক আলোচনা করেছেন। এরপর তিনি কাকের অভিশপ্ত হওয়ার কারণ, আধুনিক বিজ্ঞানের দৃষ্টিকে কাক প্রসঙ্গ, কাকের প্রকারভেদ ইত্যাদি আলোচনার সাথে বিশ্বের প্রথম মানব হত্যার পর কাকের ভূমিকা, হযরত আদম-হাওয়া (আ.) এর সন্তান সংখ্যা, কাকের মাংশ খাওয়া প্রসঙ্গ, স্বপ্নে কাক †দখা, হযরত নূহ আ. এর †নŠকা ও এর আরোহী প্রসঙ্গ ইত্যাদি খুব সুন্দর করে বর্ণনা করেছেন।
ক্ষতিকারক ও বিষাক্ত বিচ্ছু নিয়ে আলোচনা উ?ে এসেছে অষ্টম ও †শষ অধ্যায়ে। এখানে তিনি কাঁকড়া বিচ্ছুর স্বভাব, আক্রমণ, মানব †শ্রষ্? রাসুল (সা.) কর্র্তৃক বিচ্ছুকে অভিশম্পাত, বিচ্ছুর দংশন, রাশিচক্রে বিচ্ছুর বিষয়ে আলোচনাসহ চিল সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন। চিল বিষয়ে তিনি প্রাসঙ্গিকভাবে হযরত সুলায়মান (আ.) সম্পর্কেও আলোচনা করেছেন।
আটটি অধ্যায়ে বিভক্ত দু’শ †ষাল পৃষ্?ার এ বইটি সম্পূর্ণ অফসেট কাগজে মুদ্রণ করেছেন সিলেটের পা-ুলিপি প্রকাশনের স্বত্বাধিকারী জনাব বায়েজীদ মাহমুদ ফয়সল। এ বইটির স্বত্ব স্বয়ং †লখক সংরক্ষণ করেন। বইটি প্রকাশিত হয়েছে অমর একুশে বইমেলা ২০১৭ উপলক্ষে এবং গত ২২ †ফব্রুয়ারি ২০১৭ তারিখে বাংলা একাডেমী, ঢাকায় এ বইটির †মাড়ক উন্মোচনী করা হয়। এ বইটির প্রচ্ছদ অঙ্কন করেছেন †মাহাম্মদ আসাদুজ্জামান। বাংলাদেশের পা?ক তিনশ’ টাকার বিনিময়ে এটি সংগ্রহ করতে পারবেন আল-মাদানী লাইব্রেরি, কুদরত উল্লাহ মার্কেট (২য় তলা) সিলেট এবং অরুণালোক প্রকাশনী, পা?ানটোলা, ধামরাই †থকে।
জনাব এম. শহিদুজ্জামান †চŠধুরীর “রহস্যময় প্রাণীজগৎ” শিরোনামে এ বইটি অনেক আগেই প্রকাশ পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এ ধরনের তথ্যবহুল বই নির্ভুলভাবে প্রকাশ করতে সময়ের প্রয়োজন; †যজন্যই †লখকের এ সময়ক্ষেপণ। †কননা, শহিদুজ্জামান †চŠধুরী তার রহস্যময় প্রাণীজগৎ বইটির জন্য পবিত্র মহাগ্রন্থ আল †কারআন ও এর ব্যাখ্যা বিশ্লেষণমূলক ৩৮টি বই, হাদিস ও এর ব্যাখ্যা সংক্রান্ত ৪৫টি বই, জাল ও মিথ্যা হাদিস সংক্রান্ত ৭টি বই, ফাতওয়া ও মাসায়েল বিষয়ক ৩৩টি বই, ইতিহাস বিষয়ক ৪৫টি বই, †ফরেশতা, জ্বিন ও শয়তান বিষয়ক ১০টি বই, চিকিৎসা ও তাবিজ বিষয়ক ১১টি বই, আধুনিক প্রাণী বিজ্ঞান বিষয়ক ১০টি বই, বিশ্বকোষ বিষয়ক ৭টি বই, জ্ঞানকোষ বিষয়ক ১২টি বই, স্বপ্নের ব্যাখ্যা বিষয়ক ২টি বই, আকাইদ বিষয়ক ৯টি বই, সুন্নাত ও তাসাউফ বিষয়ক ১৬টি বই, সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক ৯টি বই, বিভিন্ন ধরনের পত্রিকা ও ম্যাগাজিন ২২টি বই, †লাকসাহিত্য বিষয়ক ৭টি বইসহ †মাট ২৮৭টি বই †থকে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে পা?কের কাছে একটি সর্বজন গ্রহণযোগ্য বই উপহার দিতে †পরেছেন। উল্লিখিত সংখ্যক বই ছাড়াও তাকে আরও অনেক বই পড়তে হয়েছে। যা নিতান্তই শ্রমসাধ্য ও সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। এসব কাজের জন্য †মধা, মনন, †কŠতুহল ইত্যাদি সবকিছুই দরকার। বলতে †গলে এম. শহিদুজ্জামান †চŠধুরীকে অনেক কষ্ট সইতে হয়েছে, বহু জায়গায় †যতে হয়েছে, বহু †লাকের সাথে কথা বলতে হয়েছে, তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করতে হয়েছে। এবং †সসব তথ্যগুলোকে সুবিন্যস্ত করতে হয়েছে। তারপরই ‘রহস্যময় প্রাণীজগৎ’র কা?ামো দাঁড়িয়েছে। আল্লাহর সৃষ্টি জগতের মাত্র কয়েকটি প্রাণী নিয়ে গবেষণা করতে যদি এত বই পড়ার প্রয়োজন হয়, এত †মধা ঘাটাতে হয় এবং এত বছর সময় লাগে; তবে বাকি সৃষ্টি সম্পর্কে চিন্তা গবেষণা করতে †য কত সময়ের দরকার; তা আর ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন হয় না।
তবে বিষয়বস্তু অল্প হলেও ব্যাপক তথ্যসমৃদ্ধ হওয়াতে †দরিতে হলেও বইটি অবশেষে সংগ্রহে আসায় অপেক্ষার যন্ত্রণা মধুময় বলেই মনে হচ্ছে। সুন্দর বাঁধাই, ঝকঝকে ছাপা এ বইটি খুবই দৃষ্টিনন্দন হয়েছে। তবে প্রচ্ছদ পরিকল্পনাটি আরও গভীরভাবে বিবেচনার বিষয় ছিল। বইয়ের বিষয়বস্তুর সাথে প্রচ্ছদ একেবারেই †মলে না। প্রাণীজগৎ সম্পর্কিত †লখায় প্রচ্ছদে গাছপালার ছবি ?িক মানানসই নয়। এছাড়া †লখার মধ্যে বাংলাভাষার সাধু ও চলতি রূপের মিশেল লক্ষ্যণীয়। †কাথাও †কাথাও বানানে ভুল রয়ে †গছে। এটি সাধারণত: প্রকাশনার তাড়াহুড়োর কারণে হয় এবং †যজন্য †লখক স্বয়ং তার ‘†লখকের কথা’য় অগ্রীম মার্জনা †চয়ে †রখেছেন। আমরাও আশা করি পরবর্তী সংস্করণে এ ধরনের ক্ষুদ্র ত্রুটি †থকে বইটি মুক্ত থাকবে। তারপরেও বলবো- এ ধরনের গবেষণাধর্মী বই পা?কের বই সংগ্রহের ভা-ারকে নিঃসন্দেহে সমৃদ্ধ করবে। মহান আল্লাহ এ †লখকের পরিশ্রমকে কবুল করুন। আমিন।
পরিচিতি
Ñতৈয়ব খান
কবি, †লখক ও প্রকাশক
অরুণালোক প্রকাশনী
পা?ানটোলা, ধামরাই, ঢাকা।
†মাবাইল ঃ ০১৯৪২-৮৪৭২০৭, ই- †মইল ঃ ধঁৎড়হধষড়শ৭০@ুধযড়ড়.পড়স
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জুন, ২০১৭ বিকাল ৫:০০