-তৈয়ব খান
বাংলাদেশের ঢাকা জেলার ধামরাই উপজেলা একটি ঐতিহ্যবাহী অঞ্চল। প্রাচীন বহু সভ্যতা ও সংস্কৃতিকে বুকে ধারণ করে আজও ধামরাই সগৌরবে মাথা উঁচু করে আছে। ধামরাই এর বহু জনপদ নদী কেন্দ্রিক হয়ে গড়ে উঠেছিল। এখানকার কৃষি ও শিল্প একসময় নদীনির্ভর ছিলো। কারণ- ধামরাই উপজেলার ভেতর দিয়ে একসময় বেশ কয়েকটি নদী প্রবাহিত ছিলো। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- বংশাই, গাজিখালী, ধলেশ্বরী, কাঁকিলাজানি, কাজীরগাং এবং হিরানদী। এসব নদী ধামরাই’র সাথে ঢাকা, মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, গাজিপুর, সিলেট ইত্যাদি অঞ্চলের সাথে যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম ছিলো।
বংশাই (বংশী)- বংশী বা বংশাই নদীর নামকরণের তেমন উল্লেখযোগ্য কোন ইতিহাস পাওয়া যায় না। তবে এ নদীর উভয় পাড়ে ঘন বাঁশ বাগান ছিলো। আবার উত্তরাঞ্চল থেকে রাশি রাশি বাঁশ এ নদীর উপর দিয়ে দক্ষিণাঞ্চল বিশেষত ধামরাই, সাভার এবং ঢাকায় বিক্রির জন্য নিয়ে যাওয়া হতো। বংশী শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো বাঁশজাত কিংবা বাঁশি, মুরলী। বাঁশ থেকে বংশী এবং বংশী থেকেই হয়তো বংশাই নামটির উৎপত্তি। এ নদী পুরাতন ব্রহ্মপুত্র হতে উৎপন্ন হয়ে জামালপুর দিয়ে মধুপুর পৌঁছে বানার এবং ঝিনাই নদীর শাখার সাথে মিলিত হয়ে ক্রমাগত দক্ষিণ-পূবে এগিয়ে গেছে। এটি বাসাইল ও সখিপুরকে আলাদা করে মির্জাপুর হয়ে কালিয়াকৈরে এসে দুইভাগে ভাগ হয়ে পড়ে। একভাগ অর্থাৎ মূল ধারা তুরাগ নদী নামে আরো দক্ষিণ পূবে গিয়ে ঢাকা-মিরপুর হয়ে বুড়িগঙ্গায় গিয়ে পড়ে। অপরভাগ কালিয়াকৈর থেকে আরো দক্ষিণে সাভার থেকে ধামরাইকে পৃথক করে ধলেশ্বরীতে পড়েছে। বংশাই নদীটি মূলত টাঙ্গাইলের নাগরপুরের ভেতর দিয়ে এলাসিন হয়ে ধামরাই উপজেলার চৌহাট ইউনিয়নের মাধ্যমে ধামরাইতে প্রবেশ করে এবং যাদবপুর ইউনিয়নের ভেতরে দুই ভাগ হয়ে একভাগ বাইশাকান্দা ইউনিয়নের উত্তরাংশ স্পর্শ করে আঁকাবাঁকা হয়ে কালিয়াকৈরের দিকে চলে গেছে। কালিয়াকৈরে দুই ভাগ হয়ে একটি ভাগ বাঁক খেয়ে পূনরায় বাইশাকান্দা ইউনিয়নের ভেতর দিয়ে ঢুকে ভাড়ারিয়া, ধামরাই এবং কুল্লা ইউনিয়নের পূর্ব প্রান্ত দিয়ে সাভার থেকে ধামরাই উপজেলাকে পৃথক করে দক্ষিণে প্রবাহিত হয়ে ধলেশ্বরীর সাথে গিয়ে মিলেছে।
কাঁকিলাজানি- মূল বংশাই ধামরাই উপজেলার যাদবপুর ইউনিয়নের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় একটি শাখা উৎপন্ন করে যাদবপুর এবং পশ্চিমে বালিয়া ইউনিয়নের কিছুটা অংশ পৃথক করে ক্রমান্বয়ে কুশুরা, সানোড়া, সোমভাগ হয়ে ধামরাই ইউনিয়ন থেকে ধামরাই পৌরসভাকে আলাদা করে দিয়ে কাঁকিলাজানি নাম ধারণ করে পূনরায় বংশাই নদীর সাথে মিশেছে যা সাভারকে ধামরাই থেকে পৃথক করে সোজা দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়ে ধলেশ্বরীতে গিয়ে মিশেছে।
গাজিখালী- গাজিখালী নদীটি মূলত ধলেশ্বরী নদীটির একটি শাখা নদী হিসেবে মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়ার ভেতর দিয়ে ধামরাই উপজেলার আমতা ও বালিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ প্রান্ত ঘেঁষে গাঙ্গুটিয়া, সূতিপাড়া ছেদ করে নান্নার ইউনিয়নের উত্তরাংশ দিয়ে প্রবেশ করে কুল্লা ইউনিয়নের পশ্চিম ও দক্ষিণ প্রান্ত দিয়ে বংশাই নদীতে গিয়ে মিশেছে এবং একসাথে খানিকটা সোজা পথ পেরিয়ে মূল ধলেশ্বরীর সাথে গিয়ে মিশেছে।
ধলেশ্বরী- মূল ধলেশ্বরী নদীটি মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলা থেকে ধামরাইকে পৃথক করে দিয়ে প্রবাহিত হতে হতে মানিকগঞ্জ থেকে ধামরাইকে আলাদা করে দিয়েছে। এ নদীটি সূতিপাড়া, সূয়াপুর হয়ে রোয়াইল ইউনিয়নে এসে বেশ ক’টি বাঁক খেয়ে মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর উপজেলার পূব-উত্তর দিয়ে ধামরাইকে আলাদা করে বংশাই নদীর সাথে মিতালি করতে সাভারে এসে মিশেছে।
হিরা নদী- এককালে সোমভাগে প্রবাহিত কাকিলাজানি নদী থেকে উৎপন্ন একটি শাখা হিরানদী নাম ধারণ করে কুল্লা ইউনিয়ের পূর্ব দক্ষিণ দিক দিয়ে প্রবাহিত হয়ে গাজিখালীতে গিয়ে মিশেছিলো। বর্তমানে এ নদীর অস্তিত্ব আর নেই। কথিত আছে, ১৭৫৭ নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার পরাজয়ের পর মীর জাফরের পুত্র মীরনের হুকুমে নবাবের খালা ঘসেটি বেগম এবং তাঁর অনুচর ও দাসীবাঁদীদের ঢাকার হীরাঝিল প্রাসাদে পাঠানোর নাম করে কয়েকটি নৌকায় তোলে দেয়। তারা যমুনা পাড়ি দিয়ে বংশাই নদীর উপর দিয়ে হিরা নদীতে এসে পড়ে। নৌকার মাঝিরা মীরনের নিযুক্ত ছিলো। মাঝিরা ধামরাইয়ের কেলিয়া গ্রামের পূর্ব পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় কৌশলে নৌকাগুলো ফুটো করে দেয়। ফলে ঘসেটি বেগমসহ আরোহী দাসীবাঁদীরা নৌকা ডুবিতে করুণভাবে মৃত্যু বরণ করে। যে স্থানে তারা মৃত্যু বরণ করেছিলো তা আজও বান্দিমারা নামে পরিচিত। বান্দি অর্থ- বাঁদি বা দাসি। স্থানীয় কেউ কেউ মনে করেন- নির্দোষ ঐ দাসীবাঁদীদের অভিশাপেই নাকি এককালের খরস্রোতা হিরানদী দিনে দিনে ক্ষীণ হতে হতে একসময় মারা গেছে।
কাজীর গাং- কাজীর গাং একসময় বংশাই এর একটি শাখা নদী ছিলো। যেটি বংশাই নদীর ত্রিমোহনা থেকে একটু পশ্চিমে উৎপন্ন হয়ে পাঠানটোলা, কালিয়াগার মহল্লা দুটিকে পশ্চিমে রেখে কুমড়াইল ও ইসলামপুর মহল্লাকে পূবে পৃথক করে দিয়ে সোজা দক্ষিণে ছয়বাড়িয়ার ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে পূনরায় বংশাই এর সাথে গিয়ে মিলিত হয়েছিলো। কাজীর গাংও হিরা নদীর মতো কালের গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। কথিত আছে- বাদশা আলমগীরের সময়ে ধামরাইতে পাঁচজন আউলিয়ার আগমন ঘটে। সেই পাঁচ দরবেশ যথাক্রমে ১। হযরত তিরমিযী আল হোসাইনী, ২। হাজী মেফতা উদ্দিন তায়েফী, ৩। শের মোহাম্মদ গাজী মিশরী, ৪। মীর মকদুম এবং ৫। জং বাহাদুর। এঁরা সিলেটের হযরত শাহ জালালের নিদের্শে ধামরাই মোকামটোলায় এসে আস্তানা গাড়েন। এটি সিলেটের অত্যাচারী রাজা গৌড় গোবিন্দের পতনের পরের কাহিনী। মূলত এই পাঁচজন আউলিয়া ইসলাম প্রচারের উদ্দেশেই ধামরাইতে আগমন করেন। তাদের আগমনের পর বিভিন্ন লোকজন কাজীর গাঙ্গের মাধ্যমে ধামরাইতে এই আউলিয়াদের কাছে ইসলামের বাইয়াত গ্রহণ করতে থাকেন। দিনে দিনে ইসলামের প্রচার ও প্রসার বাড়তে থাকে। কিন্তু ঐ সময়ে কাজীর গাঙ্গ ছিলো খুবই খরস্রোতা এবং শুষ্ক মৌসমেও কাজীর গাঙ্গে চল্লিশ-পঁয়তাল্লিশ হাত পানি থাকতো। মানুষজন এর গভীরতা ও স্রোতকে খুব ভয় পেত। বিষয়টি পীর সৈয়দ আলী তিরমিযী সাহেব অবগত হওয়ার পর তিনি পাঠানটোলার কাজীর গাঙ্গে পাড়ে গিয়ে এর স্রোত ও গহীনতা কমানোর জন্য মহান আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করেন। ফলে দিনে দিনে এর গহীনতা ও স্রোত কমতে থাকে। পরবর্তীতে হযরত সৈয়দ আলী তিরমিযীর ইন্তেকালের পর এই কাজীর গাঙ্গের পাড়েই তাঁকে সমাহিত করা হয়। বর্তমানে এককালের খরস্রোতা কাজীর গাং আর নেই। দীর্ঘ এ নদীটিতে এখন মানুষের বাড়িঘর, ঘাস-ফসলের জমি, মাছের খামার ইত্যাদিতে দখল হয়ে গেছে।
নদীর সাথে ধামরাইবাসীর সখ্যতা অনেক পুরোনো। অতীতে এসব নদীগুলোকে কেন্দ্র করেই জীবিকা নির্বাহ করতো বেশিরভাগ মানুষ। কৃষিজীবী, মৎসজীবী এবং ব্যবসায়ীরা নির্ভর করতো নদীর উপর এবং যার আবেদন আজও হারায়নি। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের ব্যবসায়ীরা ঝড়-ঝঞ্ঝার হাত থেকে বাঁচতে বড় নদীগুলোকে যতোটা সম্ভব এড়িয়ে ধলেশ্বরী কিংবা বংশাই নদী ব্যবহার করে ঢাকাসহ আশেপাশের অঞ্চলে মালামাল আনা নেওয়া করতো। সিলেট, ময়মনসিংহ, জামালপুর অঞ্চলের ধানের নৌকা বংশাই কিংবা ধলেশ্বরী উদার বুকে বয়ে নিয়ে পৌঁছুতে ধামরাই, মানিকগঞ্জে। এসব নদীর সুস্বাদু মাছ রসনার পুরো তৃপ্তি দিতো এলাকার মানুষসহ ধানের নৌকার ভিনদেশি মাঝিদের। ধামরাইয়ের ত্রিমোহনা থেকে খানিকটা পশ্চিমে সৈয়দপুর। সৈয়দপুরের ধান হাটা একসময় খুব বিখ্যাত ছিলো ধান নামানোর জন্য। আর এখানেই সারা বছর বাঁধা থাকতো সারি সারি বেঁদে নৌকা। এখানটায় বেঁদে সম্প্রদায়ের লোকজনের দীর্ঘ বসবাসের ফলে আজও ধামরাইয়ে ‘বাইদা পাড়া’ নামেই সবাই এ স্থানটিকে চেনে। ধামরাইয়ের মাধববাড়ি ঘাট ছিলো একসময়ের ছোটখাট নদীবন্দর। এখানে ধান এবং কাঁসা-পিতলের পাইকারী ব্যবসায়ী এবং মনোহরী দোকানদারদের মালামাল নিয়ে গয়নার নৌকার ভীড় লেগে থাকতো। সাভারের উত্তর-পশ্চিমের নয়ারহাট একসময়ে ফেরিঘাট ছিলো। জল ও স্থল যোগাযোগ রক্ষার ক্ষেত্রে যা ছিলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। স্বাধীনতার পর এখানে বড় সেঁতু নির্মিত হওয়ায় ফেরি চিরকালের জন্য বিদায় নিয়েছে। কালের বিবর্তনে সড়ক পথের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এসব ঘাটগুলোর এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। অথচ জলপথের যোগাযোগ আজও সমান গুরুত্বপূর্ণ। জলপথ সবসময় পরিবেশ বান্ধব এবং সময় ও অর্থ সাশ্রয়ী।
বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া নদীগুলো ছাড়া আশির দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত মূলনদী বংশাই, গাজিখালী এবং ধলেশ্বরীর অবস্থা বেশ ভালোই ছিলো। ইঞ্জিন চালিত নৌকাগুলো ঐ সময়ের আগে তেমনটা নজরে পড়তো না। তাই এসব নদীর বুক চিরে বয়ে চলতো পাল তোলা বিভিন্ন রকমের নৌকা। নদীগুলোর দুই পাড়ে চোখে পড়তো জেলেরা তাদের জাল শুকাতে দিয়েছে। প্রতি বছর বর্ষায় নৌকা বাইচ হতো। নদীর দুই পাড় জুড়ে দৃষ্টিনন্দন ফসলের জমি মন কেড়ে নিতো। এসবের মাঝে মাঝে জনবসতি ছিলো যেন কচি সবুজ সাগরে ছোট ছোট শ্যামল দ্বীপ। আর নদীর পানির অবস্থা! পানি যেন ফটিক জল। স্বচ্ছ, সুন্দর সে পানি ছিলো খুবই সুপেয়। তখনকার প্রায় জলযানেই মাটির পাত্রে এ পানিতে খানিকটা ফিটকিরির গুড়ো মিশিয়ে সংরক্ষণ করা থাকতো পানের জন্য। বর্ষার আগ পর্যন্ত সবসময় মৃদু ¯্রােত বয়ে যেতো থির থির করে। ভরা বর্ষায় দুই কুল ছাপিয়ে বয়ে চলতো এসব নদী। প্রায় সারা বছরই লম্বা-সরু মুখের শুশুক লহমার জন্য কালচে-নীলাভ পিঠ উঁচিয়ে ফের মিলিয়ে যেতো গহীন জলে মাছ তাড়া করতে করতে।
আশির দশকের শেষের দিকে ধামরাই, সাভার, গাজিপুর, মানিকগঞ্জ এসব অঞ্চলে শিল্প বিপ্লব ঘটে। তার আগে হাতে গোণা যে কয়টি শিল্প-কারখানা ছিলো; সেগুলোর বর্জ্য নদীতে মিশলেও পানির গুণাগুণের তেমন কোন ক্ষতি হতো না। কিন্তু শিল্প বিপ্লব শুরু হবার পর ব্যাপক হারে এসব অঞ্চলে শিল্প-কারখানা গড়ে উঠে। আর এসব কারখানার রাসায়নিক বর্জ্য এসে পড়তে শুরু করে নদীতে। ফলে দিনে দিনে নদীগুলোর পানি মারাত্মক দূষিত হয়ে পড়ে। মাছসহ অন্যান্য জলজ প্রাণী কমতে কমতে বর্তমানে তা শূন্যের কোঠায় এসে দাঁড়িয়েছে। পানির দুর্গন্ধ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, নদী তীরবর্তী মানুষজনের জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। বিশেষত বংশাই নদীর অবস্থা খুবই করুণ। এ নদীর পানি এখন ভীষণ কালচে আর দুর্গন্ধযুক্ত। মাছ তো নেই-ই এমনকি একটা ব্যাঙাচিও খুঁজে পাওয়া যাবে না এ নদীর পানিতে। তবে হ্যাঁ- রাশি রাশি মশার ডিম আর লার্ভা কিলবিল করে এ জলে।
আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত কর্তৃক নির্মিত বিভিন্ন বাঁধ এমনিতেই বাংলাদেশের মূল নদীগুলোকে মেরে ফেলতে বসেছে; শাখা নদী তো কোন ছাড়! পরন্তু দীর্ঘ বছর নদীগুলো ড্রেজিং না হওয়ার ফলে প্রতি বছরে বর্ষার পলি এসে নদীতে চর ফেলে স্থানে স্থানে ভরাট করে ফেলেছে। আর ভরাট হয়ে যাওয়া নদীর জমি এক শ্রেণির লোভী মানুষেরা দখল করে বিক্রিসহ বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে তুলেছে। যতটুকু বাকি আছে; তারও দুই পাড় লোভী মানুষের চক্করে পড়ে চাপতে চাপতে চিড়ে হতে বসেছে। নদীর পাড়ে গড়ে উঠা বিভিন্ন কল-কারখানা; বিশেষত চালের মিল এবং বালু ব্যবসায়ীরা নদীর স্বাভাবিক বহতাকে গলা চিপে ধরেছে। এভাবে চলতে থাকলে আগামী দুই দশকে ধামরাইয়ের এসব নদীগুলোর আর কোন অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে না।
নদী প্রকৃতির একটি অংশ। প্রকৃতিকে সুকৌশলে নিয়ন্ত্রণ করে তার সঠিক ব্যবহার বুদ্ধিমত্ত্বার পরিচয় দান করে; যা ভারত করেছে। ওদের নির্মিত বাঁধগুলো আমাদের ক্ষতি করলেও ওরা এ বাঁধগুলোর যথার্থ ব্যবহার করে জাতীয়স্বার্থে লাভবান হয়েছে। আর আমরা নদীগুলোকে ধ্বংস (পানি দূষণ ও নদীর জমি দখল) করে দিয়ে ক্ষুদ্র ব্যক্তিস্বার্থে আপাত দৃষ্টিতে লাভবান হলেও জাতীয়স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে ভীষণভাবে মূর্খতার পরিচয় দিচ্ছি। এরকম ক্ষুদ্র ব্যক্তি স্বার্থের কারণে একসময় পুরো বাংলাদেশটাই মরুভূমিতে পরিণত হবে। তাতে প্রকৃতি রুষ্ট হবে এবং রুদ্র রূপ নিয়ে আঘাত করবে আমাদের উপর। যা থেকে কারুক রক্ষা নেই; কারুরই না।
তাই অবিলম্বে নদী রক্ষার জন্য সরকারসহ সর্বস্তরের মানুষের এগিয়ে আসা দরকার। যে কোন উপায়ে নদী দূষণ বন্ধ করতে হবে। নদীর জমি ভূমিখেকোদের হাত থেকে উদ্ধার করা জরুরী এবং ভবিষ্যতে নদীর জমি যাতে কেউ অবৈধভাবে দখল নিতে না পারে তার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। নদীর পাড়ে গড়ে উঠা অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে ফেলার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বর্ষা মৌসুমে নদী ড্রেজিং এবং বছরের অন্যান্য সময়ে কোদালের সাহায্যে খনন করে নাব্যতা ধরে রাখতে হবে। রাজধানী ঢাকা শহরের সাথে স্থলপথে যোগাযোগের চাপ কমাতে নদীপথের যোগাযোগ সুগম করলে একদিকে যেমন দুর্ঘটনা এড়ানো যাবে অন্যদিকে প্রাকৃতিক সম্পদ নদীও সচল থাকবে। কৃষি কাজে নদীর পানি ব্যবহারের পরিমাণ বাড়ালে ভূ-গর্ভস্থ পানির উপর চাপ কমবে। এতে পানির স্তর নিচে নামবে না এবং ভূ-পৃষ্ঠও ফসল উৎপাদনের জন্য উপযোগী থাকবে; জমি শুষ্ক হবে না। নদীর উপযোগী নাব্যতা এবং দূষণমুক্ত পানি হলে বাড়বে মৎস সম্পদের পরিমাণ এবং তা প্রাণিজ আমিষের চাহিদা মেটাতে সক্ষম হবে।
নদীর কোন বিকল্প হতে পারে না; নদী নদীই। তাই দল-মত নির্বিশেষে নদী রক্ষার জন্য সব শ্রেণি-পেশার নাগরিকদের এগিয়ে আসতে হবে। মনে রাখতে হবে- এদেশ নদী-মাতৃক দেশ। এ কারণেই এদেশ সুজলা সুফলা।
তারিখঃ ১৭ই জুন, ২০১৬।
পরিচিতিঃ কবি, লেখক এবং প্রকাশক
অরুণালোক প্রকাশনী
ধামরাই, ঢাকা।
মোবাইলঃ ০১৯৪২-৮৪৭২০৭, ই-মেইল- [email protected]
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ১:৫৩