somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাতাল মধ্যরাত্রি

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


রাত প্রায় একটা । চাঁদটাকে অনেক দূর থেকে দেখা যাচ্ছে ।অন্ধকার অদ্ভুতভাবে চাঁদটাকে ঘিরে রেখেছে । চাঁদের আলো আর এক টুকরো মেঘ স্বর্গীয় পরিবেশ তৈরি করেছে ।যদিও এ উপগ্রহটির সৌন্দর্যে কিছু যায় আসে না উসমান আর মাহমুদের। না যাওয়াই ভালো । গরীবের সৌন্দর্যবোধ আনন্দের চেয়ে দুঃখই বেশি দেয় । দুজনে আজ নির্বিচারে মদ গিলেছে । অভাব আর খুদা থেকে বেঁচে থাকার আর কোনো ভালো ঔষুধ সম্ভবত ওদের জানা নেই । হয়তোবা কেও জানতে দেয়নি ।সবাই সবকিছু জানে না ,জানা ঠিকও না । দুইজনই কথা বলতে বলতে হাঁটছিল ।তারপর চুপ ।আবার নীরবতা ভেঙে উসমান মাহমুদের দিকে তাকিয়ে ভাবলেশহীনভাবে বলে উঠলো ,
- আইজকা মদ পেটের ভিতর বেশি ঢাইলা ফেলছি ।
- হ্। খুদা বেশি মদও বেশি ।
-খুদা হেইডা তো শুধু মদের লগেই গিলন যায় ।
-ঐ দেখ ! দেখ! পুলিশ আইতাছে ।
-ঊহ ! ঠিকমতো রাস্তায়ও হাডা যাইত না ।হালা মনে হয় আজকে বেশি ঘুষ পায় নাই ।
রাইতে ঘুষের লাইগা ঘুরে ।
- চল দৌড় দিবি ?
- নাহ ।শরীর আর চলে না । আমারে একলা থুইয়া যাইছ না ।
- নাহ। আমরা তো একি গ্লাসের মাতাল ।তরে থুইয়া যামু কেমনে ?

পুলিশের নাম আলম ।আজকে রাতে ডিউটি পড়েছে । এসেই দুই মাতালকে দেখে ভ্রূ কুঁচকে ফেললো ।
উসমান বলল, মাহমুদ তুই কথা কইছ না । তুই যে মাতাল এইডা চোখ বন্ধ করে কইয়া দেওন যাইব । আমি শামাল দিতাছি ।

আলম এগিয়ে আসছে । এসে চড়া গলায় প্রশ্ন করল ,তবে প্রশ্নটা কাকে করল বুঝা যায়নি ,
- ওই ! এতো রাইতে কি করছ ? বাড়ি-ঘর নাই?
- বাড়ি তো কওন যায় না । তবে ছোট একখান আছে ।কিন্তু বাড়িতে শান্তি নাই ।
- তাহলে রাস্তায় কি? রাস্তায় শান্তি আছে ?
- না ।তবে অশান্তি নাই ।
আলমের এবার মাহমুদের দিকে দৃষ্টি গেলো ।দেখেই বুঝে গেলো সে মাতাল । এবার আর ক্রুদ্ধ হয়ে প্রশ্ন করল ,
- কিরে ? মদ খাইছস ?
এবার মাহমুদ বলে উঠলো ,জ্বী, প্রতিদিনই খাই ।
- কেন খাছ ?
- খুদা ,অভাব । ভালা লাগে ।এজন্যই খাই ।
-মদের টাকা দিয়া তো ভাত কিনা যায় ।
- ভাত খাইলে খুদা কমে কিন্তু কষ্ট কমে না ।
- হালা । তরে আজকে জেলে ভরমু ।
এবার কথা বলে উঠলো উসমান ।মাঝরাতে তার কর্কশ গলা দিয়ে যেন আর্তনাদ বেরুলো ,
-অনেকেই তো মদ খায় । আমগো কি দোষ ? চুরিও করিনাই , ডাকাতিও করিনাই ।
- চুপ !শালা বজ্জাত ! বেশি কথা কইলে মাইরা পিড ফাডাইয়া লামু ।
- বুক তো জন্মের থেইক্যাই ফাডা । এখন পিডটাও ফাডান ।আমগোরে ভালারাও মারে খারাপেরাও মারে ।হগলেই মারে ।

ইতোমধ্যে মধ্যে আলমের কল এসেছে ।সেই কিছুক্ষণ দূরে গিয়ে কথা বলল। এখন তাকে বেশ হাসিখুশি দেখাচ্ছে । সে এবার উসমান আর মাহমুদের দিকে ফিরে আসছে ।

এবার তিনজনই নীরব ।কোন কথা বলছে না ।মাহমুদই প্রথম নীরবতা ভঙ্গ করল ।
- স্যার আমনে মদ খাননা ? মাহমুদ প্রশ্নটা করেই ভয় পেয়ে গেলো ।আসলে এমন প্রশ্ন মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে । কিন্তু আলমও ভয় পাওয়ার মতো কোনো উত্তর দিল না ,
- হ্যাঁ ।খাই, তয় মাঝে মইধ্যে ।
- ক্যান ? আমনের ও কি দুঃখ আছে?
- হ্যাঁ ।দুঃখও তো সবারই আছে । আর এ বেতনে কি সংসার চলে ?
- হুনছি পুলিশেরা নাকি ঘুষ খাইয়া ম্যালা টাকা কামায় ?
- চুপ! হালার পুত ! এ কথা কবি না ।ঘুষ,চুরি এগুলার ওস্তাদ হইলো গিয়া বড়লোক মানুষ । ছোডলোকেরা চুরিও ঠিকমতো করতে পারে না ।
-ছোডলোকেরা সব করলেই দোষ । তা হইলে ভালা কাম কোনডা ?
অনেকক্ষণ নীরব ছিল উসমান । এবার সে নীরবতা ভেঙে বলল , বাইচা থাকাই গরীবের ভালা কাম ।
মাহমুদ আর আলমও সে কথায় সায় দিল । অনেকক্ষণ সিগারেট খায়নি মাহমুদ । পকেট থেকে সিগারেট বের করে একটা নিলো । উসমানকেও একটা দিল । আলমকে সাধলে প্রথমে নিতে না চাইলেও পড়ে রাজি হোলো ।

তিনজনই একই সাথে সিগারেট ধরাল । জীবনটাও এমনই ।তিনজন একই আগুনে জ্বলছে । শুধু তিনজন না আরো অনেকে অনেকে । সিগারেটের এক একটি টান এক একটি দীর্ঘশ্বাস । তিনজনের সিগারেটের ধোঁয়াই একসাথে মিলে ঊড়ে যাচ্ছে আকাশের দিকে । তা উসমান ,মাহমুদ অথবা আলম কেও দেখেনি । আকাশ দেখেছে ।
আকাশ অনেক কিছুর সাক্ষী ।।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সেকালের গ্রামের বিয়ের বর দেখা

লিখেছেন প্রামানিক, ১৩ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:১৩


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

একদিন পরেই শুক্রবার। সকালেই বাবাকে ঐ বাড়ির ঘরবর (অর্থাৎ বর দেখা অনুষ্ঠানকে আঞ্চলিক ভাষায় ঘরবর বলে) উপলক্ষে ডাকা হয়েছে। বাবা সকালে গিয়ে বর দেখা উপলক্ষ্যে কি কি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ওবায়েদুল কাদের কি মির্জা ফখরুলের বাসায় আছেন?

লিখেছেন রাজীব, ১৩ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৮

"পালাবো না, পালিয়ে কোথায় যাবো? দরকার হলে মির্জা ফখরুলের বাসায় আশ্রয় নেবো। কি ফখরুল সাহেব, আশ্রয় দেবেন না?" ওবায়েদুল কাদের একটি জনসভায় এই কথাগুলো বলেছিলেন। ৫ই আগষ্টের পরে উনি মির্জা... ...বাকিটুকু পড়ুন

যোগ্য কে???

লিখেছেন জটিল ভাই, ১৩ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:৪১

♦أَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشِّيْطَانِ الرَّجِيْمِ (বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহ্'র নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি)
♦بِسْمِ ٱللَّٰهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ (পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহ্'র নামে)
♦ٱلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ (আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক)




(সকল... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণতান্ত্রিকভাবে লীগকে ক্ষমতার বাহিরে রাখা যাবে আজীবন।

লিখেছেন শাহিন-৯৯, ১৩ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:১৩



লীগ সদ্য বিতাড়িত কিন্তু তাদের সাংগঠিক কাঠামো এখনো পূর্বের মতই শক্তিশালী শুধু ছোবল দিতে পারছে না, স্থানীয় নেতারা বিএনপির নেতাদের বড় অংকের টাকার বিনিময়ে ইতিমধ্যে এলাকায় প্রবেশ করছে তবে মুখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিয়ে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সরিয়ে ফেললেন মোস্তফা সরোয়ার ফারুকী !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৪১


মোস্তফা সরোয়ার ফারুকী লম্বা রেইসের ঘোড়া মনে হচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়া হতে বেডরুমে যার নিয়োগ নিয়ে অস্বস্তি আছে তিনি খুব দ্রুত শিখে গেলেন কিভাবে মানুষের মাথা ঠান্ডা করতে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×