'আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম' গানটার মতো এখন মনে হয় আসলেই আগের দিনগুলো ছিল অসাধারণ। সেই সব দিনে কি সুন্দর ঘুরাঘুরির একটা চল ছিল। একটা আলাদা রকমের মজা ছিল। কিন্তু এখন যেন আর কিছুই পাই না।
আসল কথায় আসি ভাই। আমি সেই সময়ে পড়তাম ক্লাস সিক্সে। আমার আরেক বন্ধুকে রাজি করালাম আমরা চন্দ্রনাথ পাহাড়ে যাবই। যেই কথা সেই কাজ। কিন্তু বাসা থেকে কোন মতেই পারমিসন নাই। পড়ে গেলাম চিন্তায়। পাশে দাড়াল আমার বড় ভাই। ঠিক হল সবাই মিলে পরদিন সকালেই রওনা হব।
এখন পড়ি দ্বাদশ শ্রেণিতে। অনেক ক্লাস উপরে। তাই বুদ্ধি লোপ পেয়েছে। বয়স হয়েছে। সবকিছু মনে থাকে না। তবে হ্যাঁ ভাই সেই দিনটা তো স্পেশাল। সেটার কথা খুব ভালো করেই মনে আছে।
আমাদের বাসা ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজের পাশে। বাসা থেকে সীতাকুণ্ড মোটামোটি দূরই। সেখান থেকে সীতাকুন্ড যাওয়াটাও কষ্টের। তবে একটা বাস পেয়ে গেলাম। নাম উত্তরা। এটা লোকাল বাস। ভাড়া সম্ভবত বিশ টাকা নিয়েছিল। যাওয়ার সময় এক লোকের সাথে দেখা হয়েছিল। তিনি আমাকে বলছেন 'কোথায় যাও?' আমি বললাম 'সীতাকুন্ড যাব। চন্দ্রনাথ পাহাড়ে'। লোকটার সোজা সাপ্টা উত্তর। পারবে না। এটা অনেক উঁচু। আমি দমলাম না। অবশেষে গেলাম সীতাকুন্ডে সকাল সাড়ে নয়টায়। বড় ভাই বলল কিছু খাওয়া দরকার। যেই কথা সেই কাজ। চা পরটা খেয়ে চন্দ্রনাথের রাস্তা ধরলাম। যাওয়ার পথে কিনে নিলাম কিছু পাওরুটি কলা। অসাধারণ কিছু মন্দির চোখে পড়ল। আর চোখে পড়ল অনেক হিন্দু বাড়ি। দেখেই বোঝা যায় বাড়িগুলো অনেক আগের। আস্তে আস্তে পাহাড়ের দিকে যাওয়া শুরু করলাম। পাহাড়ের নিচেই শ্মশান। দেখেই ভৌতিক ভৌতিক লাগে। অবশেষে চোখের সামনে চন্দ্রনাথ। অফ কি অনুভূতি!
তবে উঠলে গেলে মনে হল খালি উঠছি তো উঠছি। থামাথামি নাই। কিছুদূর যাওয়ার পর একটা মন্দির চোখে পড়ল। আর দেখলাম কিছু বানর। বিদেশি কিছু লোক দেখলাম নেমে আসছে। বুকটা গর্বে ভরে উঠল। কিছুদূর যাওয়ার পর একটা চায়ের দোকান দেখলাম। এতো উপরে দোকান থেকে তো আমি থ! তাতে আবার চা খাচ্ছে কিছু পুলিশ। এর পরে আবার এক নাগাড়ে উঠা। যখন প্রায় পাহাড়ের ৩ ভাগের দুইভাগ উঠেছি তখন আর পা চলে না। কিছু কলা পাওরুটি খেলাম। আর সাথে পেলাম আরেক তিন জনের একটি গ্রুপকে। তাদেরকেও ভাগ দিলাম। এক ঘন্টা ওখানে কাটিয়ে এবার বাকি রাস্তা। একেবারে চলে এসেছি প্রায় সেই মুহূর্তে দেখলাম আরেকটা চায়ের দোকান। আকারে ছোট। যেখানে আমাদের উঠতেই খবর হয়ে যায় সেখানে কিভাবে তিনি এতো উপড়ে উঠে চা বিক্রি করেন ভাবলে অবাক হয়ে যাই। যাই হোক উপড়ে উঠলাম। মজাও করলাম। কাটালাম তিন চার ঘন্টা। আর দূরের সাগর, জাহাজের সৌন্দর্য মনে যেন রঙ লাগিয়ে দিচ্ছিল। পাহাড় থেকে নামার পথে তিনজনেই মিলে ধরলাম গান। ছোট ঝরনায় ছবি তুললাম কিছু।
এই ছিল সেই দিনের কিছু কথা। আজ আর পারছি না। এখানেই না হয় থাক।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৫:৩৮