somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তোমার এই ঋন আমরা কেমন করে শোধ করব শহীদ তালেব উদ্দিন...........

১২ ই ডিসেম্বর, ২০১০ রাত ১০:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


৭ই মার্চ ১৯৫০ ভোরের আলো যখন উঠি উঠি করছে ঠিক সে সময় সুনামগঞ্জের দিরাই থানার হাতিয়া গ্রামে জন্ম হয় শহীদ তালেব নামক এক সূর্য সন্তানের। বাবা আব্দুল ওয়াহিদ পেশায় ছিলেন কৃষক। সাত ভাই চার বোনের মধ্যে শহীদ তালেব ছিলেন পরিবারের বড় সন্তান এবং সবচেয়ে মেধাবী ও দূরন্ত ডানপিটে।

১৯৫৭ সালের গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শিক্ষা জীবন শুরু করে, ১৯৬৭ সালে রাজনগর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এস.এস.সি এবং ১৯৬৯ সালে সুনামগঞ্জ সরকারী কলেজ থেকে এইচ.এস.সি পাশ করেন। তৎকালীন সুনামগঞ্জ সরকারী কলেজের ছাত্রলীগের সম্পাদক ছিলেন শহীদ তালেব। ছাত্রজীবনেই শহীদ তালেব ছিলেন স্বাধীনচেতা।

স্বাধীনতা যুদ্ধ পূর্ববর্তী সময়ে দেশকে স্বাধীন করার আন্দোলন যখন তুঙ্গে তখন শহীদ তালেব ছিলেন সামনের কাতারে। ৭ই মার্চ ১৯৭১ বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান স্বাধীনতার ডাক দিয়ে দিলেন। শুরু হয়ে যায় দেশকে স্বাধীন কারার প্রস্তুতি। দফায় দফায় মিটিং মিছিল চলতে থাকে। এরই মধ্যে এসে যায় সে কাল রাত ২৫শে মার্চ ১৯৭১। শুরু হয় পাক হানাদার বাহিনীর বাঙ্গালী নিধনযজ্ঞ। সুনামগঞ্জ কলেজের প্রথম যে ৬ জন যুদ্ধে যাবার জন্য প্রস্তুত হয় তারা হলেন: শহীদ তালেব, সুজাত চৌধুরী, শহীদ আলী আজগর, শহীদ জগৎজ্যোতিদাস, শহীদ গিয়াস উদ্দিন, গোলাম রাব্বানী। দফায় দফায় তারা মিটিং করছিলেন কিভাবে যুদ্ধে যাওয়া যায়। এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহে তারা মিটিং এ বসেন দেওয়ান ওবায়েদুর রেজার বাসায়। এরই মধ্যে পাক বাহিনী ঘিরে ফিলেছে সুনামগঞ্জ। অবস্থা খারাপ দেখে তালেব বাহিনী সিমান্ত পথে ভারত চলে যান। সেখানে ৪নং সেক্টরের সি.আর.দত্তের অধীনে ভূইঞা কোম্পানীতে ট্রেনিং গ্রহন করেন। ট্রেনিং গ্রহন শেষে সুনামগঞ্জ বালাট মইলাং ক্যাম্প হতে একের পর এক অপারেশন চালিয়ে যান। চলতে থাকে শহীদ তালেবের দেশ স্বাধীন কারার যুদ্ধ।
একাত্তরের ২৭ নভেম্বর তালেব সুনামগঞ্জ শহরতলীর সীমান্ত এলাকা বেরী গ্রামে যুদ্ধ করছিলেন। এখানে তিনি সম্মুখযুদ্ধে অবর্তীর্ণ হন। পাক বাহিনীর এলোপাথাড়ি আক্রমণে তালেবের সহাযোদ্ধারা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়লে তালেব চলতিনদী পাড়ি দিতে গিয়ে বালুচরে আটকে যান। এই সুযোগে পাক আর্মিরা তাকে ধরে নিয়ে শহরে প্রদর্শন করে প্রকাশ্য ভয়ঙ্কর নির্যাতন করে। স্থানীয় রাজাকাররাও তার প্রতি পাক আর্মিদের আরো ক্ষেপিয়ে তোলে নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে তোলে। । তাদের নিয়ে যাওয়া হয় জুবলি হাই স্কুল ক্যাম্পে। চালাতে থাকে অত্যাচার নির্যাতন। সে সময় আল বদর বাহিনীর সাথে মিটিং করে আসেন স্থানীয় হানাদার বাহিনী প্রধান। তখন শহীদ তালেবকে হানাদার প্রধান বলেন যদি জনতার সামনে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে বক্তব্য দিতে পারো তাহলে তোমাদেরকে মুক্তি দেওয়া হবে। জনতার সামনে মঞ্চে উঠানো হলে শহীদ তালেবকে। সামনে আতঙ্কিত জনতা, যার শরীরে দেশকে স্বাধীন করার উত্তাল রক্ত বইছে সেতো আর মৃত্যুকে ভয় পেয়ে হানাদার বাহিনীর শিখানো বুলি বলার আওরাতে পারে না। তিনি বলে উঠলেন, মুক্তিকামী ভাইয়েরা আমার, আমি আজ জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষনে দাড়িয়েছি, আমি দুশমনের হাতে বন্ধি ওরা আমার সব আদর্শকে জলাঞ্জলি দিতে চায়, অত্যাচার করে আমাকে সেই আদর্শ হতে সরাতে পারবেনা। ওদের অত্যাচারের পরিমান যত বাড়ছে আমার বিশ্বাস তত বাড়ছে। শেখ মুজিবের ডাকে স্বাধীনতা যুদ্ধে যোগ দিয়েছি, দেশকে আমরা মুক্ত করবই। আপনারাও দেশ রক্ষার আন্দোলনে শরীক হউন, বিজয় আমাদের হবেই। জয় বাংলা। ঠিক সে সময় ব্যানেট দিয়ে মাথায় আঘাত করা হয় শহীদ তালেবকে। মাটিতে পরে যায় শহীদ তালেবের নিথর দেহ। টেনে হিছড়ে নিয়ে যাওয়া হয় পি.টি.আই টর্চার সেলে। অত্যাচারের উপর অত্যাচার চলতে থাকে তাদের উপর। ২৯ নভেম্বর পাক আর্মিরা শহর ছাড়ার পর আহত অবস্থায় তালেবকে সঙ্গে নিয়ে যায়। যাওয়ার সময় আহসানমারা ব্রীজের সামনে অমানুষিক নির্যাতন শেষে খুন করে ফেলে যায়। নিবে যায় শহীদ তালেব নামক এক সূর্য সন্তানের, এক প্রতিবাদী কন্ঠের, এক মুক্তি সেনার।

একটি স্বাধীন দেশ জন্ম দেওয়ার জন্য বাংলার দামাল ছেলেরা যখন অকাতরে প্রান দিচ্ছিল। তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন শহীদ তালেব। স্বাধীনতার স্বাদ না পেয়ে এবং স্বাধীন দেশের রুপ রং না দেখে বিদায় নিতে হলো তালেব নামক এক মুক্তি পাগলের।

দেশ স্বাধীনের পর সুনামগঞ্জ কলেজ হোষ্টেল কে শহীদ তালেবের নামে নামকরন করা হয়। দিরাইকে তালেব নগর নামে নামকরন করা হয়। পরবর্তীকালে রাজনৈতিক গনদের ইশারায় সেই নামকরন মুছে ফেলা হয়। এইভাবে রাজনৈতিক গনদের ইশারায় উপেক্ষিত হয় শহীদ মুক্তিযোদ্ধারা। একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসাবে পরিচয় দিতে আমরা গর্ববোধ করি কিন্তু যারা আমাদের এই গৌরব এনে দিল তাদের সম্মান দিতে পারি না। তাই আসুন আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান জানাতে শিখি। তাহলেই স্বার্থক হবে আমাদের সেই গান "আমরা তোমাদের ভুলবোনা............"

তথ্য:পারিবারিক সূত্র এবং ২০০৫ সনে প্রকাশিতব্য সুনামগঞ্জ কলেজ স্মরণিকায়
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মে, ২০১১ দুপুর ১২:১৮
৫টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩২



"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমিত্ব বিসর্জন

লিখেছেন আজব লিংকন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৪৮



আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।

"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×