somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

সাইয়িদ রফিকুল হক
আমি মানুষ। আমি ত্বরীকতপন্থী-মুসলমান। আমি মানুষ বলে আমার ভুলত্রুটি হতেই পারে। বইপড়তে আমার ভালো লাগে। সাহিত্য ভালোবাসি। লেখালেখি আমার খুব শখের বিষয়। বাংলাদেশরাষ্ট্র ও গণমানুষের জন্য আমি লেখনিশক্তিধারণ করেছি।

আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে এখনও যারা ভয় পায় ও অবমূল্যায়ন করে (প্রথম পর্ব)

২৫ শে মে, ২০১৬ রাত ১১:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে এখনও যারা ভয় পায় ও অবমূল্যায়ন করে (প্রথম পর্ব)
সাইয়িদ রফিকুল হক

এদেশ ছাড়বি কিনা বল?
নইলে কিলের চোটে হাড় করিব জল!

এই হলো বাংলার আজন্ম-আমৃত্যু বিদ্রোহী-কবি নজরুল। ভারতীয় উপমহাদেশের ইংরেজ-অপশক্তির বিরুদ্ধে এমন সাহসী, স্পষ্ট ও বলিষ্ঠ উচ্চারণ আর কেউ করতে পারেননি।
বিশ্বমানবতার কবি নজরুল সাম্রাজ্যবাদী-ব্রিটিশের বিরুদ্ধে এভাবেই একাকি-নিরস্ত্রভাবে গর্জে উঠেছিলেন। নজরুল ছিলেন সিংহপুরুষ। আর ধূর্ত-শঠ ইংরেজঅপশক্তি ছিল শৃগাল।

আমাদের কবি নজরুল ছিলেন সাম্রাজ্যবাদী-ব্রিটিশবিরোধী ও এক মানবতাবাদী কবি। আর তিনি ছিলেন সকল ধর্মের মানুষের কবি। তিনি দেশের মানুষকে ভালোবাসতেন বলেই একজন কবি হয়ে রাজনৈতিক নেতার মতো গর্জে উঠেছেন বারবার। তাঁকে ভয় পেয়ে রীতিমতো ভীতসন্ত্রস্ত ছিল ইংরেজশক্তি। তাই, তারা নজরুলের আগ্নেয়গিরিসম কবিতা সহ্য করতে না পেরে কাপুরুষের মতো তাঁকে দুই-দুইবার জেলে আটকিয়ে রেখেছিলো। এটি তাদের নৈতিক পরাজয়ের দৃষ্টান্ত।

কাজী নজরুল ইসলাম বাংলাদেশের জাতীয় কবি হওয়ার বহু আগে থেকে ছিলেন জননন্দিত। আর তাঁর কালে তিনি ছিলেন নিঃসন্দেহে অত্যাচারিত ও অবহেলিত মানুষের কাছে সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় কবি। তাছাড়া, জাতি-ধর্ম-বর্ণ-গোত্র-নির্বিশেষে সাধারণ মানুষের নিকটও তিনি ছিলেন সমধিক জনপ্রিয়। তাঁর যোগ্যতাই তাকে মানুষের ভালোবাসা-অর্জনে সহায়তা করেছিলো।

কাজী নজরুল ইসলাম আজ আমাদের জাতীয় কবি। তিনি গণমানুষের কবি। তিনি সর্বহারাশ্রেণীর একমাত্র মুখপাত্রস্বরূপ-কবি। তাঁর কলম তরবারির চেয়ে বেশি ধারালো ছিল। আর তিনি নিজে ছিলেন আজন্ম-বিদ্রোহী। কবি নজরুল তাঁর কালে একটি সাম্রাজ্যবাদীগোষ্ঠী ও প্রতিক্রিয়াশীলচক্রের দ্বারা বিরাটভাবে বাধাগ্রস্ত হয়েছিলেন। ঠিক আজও তিনি একইভাবে এই দুটি শ্রেণীর দ্বারা সমানভাবে বাধাপ্রাপ্ত। কবি নজরুল আজ ধরাধামে নাই—তবুও এই দুটি শ্রেণী আজও তাকে সতর্কতার সঙ্গে এড়িয়ে চলে। মদীয় আলোচনা আজ এই প্রসঙ্গেই।

বিশ্বের সর্বাপেক্ষা বড় মানবতাবাদী কবি হলেন আমাদের কাজী নজরুল ইসলাম। ইংরেজগণ লর্ড বায়রনকে বিদ্রোহী-কবি বলে থাকেন। সেটা তাদের ব্যক্তিগত বিষয়। কিন্তু আমাদের কবি নজরুলের দ্রোহী-চেতনার কাছে সকল বিদ্রোহী হার মানতে বাধ্য। নজরুল ছিলেন মানুষ আর মানবতার কবি। তিনি আমৃত্যু মানুষকে ভালোবেসে মানুষের পক্ষে লেখনিশক্তিধারণ করেছিলেন। নজরুলের জীবদ্দশায় বহু ইংরেজ-দালাল ও ইংরেজগামী প্রতিক্রিয়াশীলচক্র নজরুলকে ভয় পেতো। তারা নজরুলকে এড়িয়ে চলতো, এবং সাম্রাজ্যবাদী ইংরেজ-রাজশক্তি যখন অন্যায়ভাবে তাঁকে গ্রেফতার করে তাঁর বিরুদ্ধে রাজদ্রোহিতার মিথ্যাঅভিযোগ আনয়ন করেছে, তখনও তারা নজরুলের বিরুদ্ধাচরণ করে ইংরেজশক্তির পক্ষেই বাহবা যুগিয়েছে, আর ইংরেজঅপশক্তির গোলামি করেছে। আজও ভারতীয় উপমহাদেশে একটি-দুটি-শ্রেণী সুযোগ পেলেই নজরুলকে আঘাত করে বসে। আর তাঁকে ঘায়েল করতে চায়। কিন্তু এরা খুবই ধূর্ত-শিয়াল! তাই, তারা নজরুলের প্রকাশ্যে সমালোচনার চেয়ে ভিতরে-ভিতরে তাঁর বিরোধিতা করতে ভালোবাসে। এরা এই জাতিরাষ্ট্রের আবর্জনাশ্রেণী।

নজরুলকে এখনও ভয় পায় সাম্রাজ্যবাদী-অপশক্তির দালালগোষ্ঠী ও প্রতিক্রিয়াশীলচক্র:

এই দুটি শ্রেণীর মধ্যে সাম্রাজ্যবাদীঅপশক্তির দালালগোষ্ঠী নজরুলসাহিত্য একেবারেই পাঠ করে না, অধ্যয়ন করে না, নজরুল-চর্চা করে না, আর তাঁকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করে না। তারা অনেকটা কৌশলে নজরুলকে এড়িয়ে চলে। এরা সবসময় ধূর্ত-ধুরন্ধর। কিন্তু কখনও ধীমান নয়। আর এদের কখনও ধীমান হওয়ার কোনো যোগ্যতা নাই। এই অযোগ্য-শ্রেণীটিই আজও নজরুলসাহিত্যকে উচ্চতর অধ্যয়নের যোগ্য মনে করে না। নজরুলরচনাবলী পড়লে এদের আঁতে ঘা লাগে। এরা ভণ্ড! এরা খুব স্বার্থপর-স্বার্থলোভী! তাই, এদের সবকিছু যেন একনিমিষে নজরুল-ঝড়ে পণ্ড হয়ে যাবে। আজ নজরুল বেঁচে থাকলে এরা কখনও নজরুলের মুখোমুখি দাঁড়াবার সাহস পেতো না। আজও তাঁকে ভয় পেয়ে এরা তাঁর সাহিত্যপাঠে মনোযোগী হওয়ার সাহস পায় না।

আরেকটি ধূর্তশ্রেণী হচ্ছে আমাদের পরিচিত ধর্মব্যবসায়ীগোষ্ঠী তথা প্রতিক্রিয়াশীলচক্র। এদেরই পূর্বপুরুষ নজরুলকে ব্যক্তিগত আক্রোশে ‘কাফের’ ফতোয়া দিয়েছিলো। কারণ, কবি নজরুল এই ভণ্ডশ্রেণীটিকে সুস্পষ্টভাবে শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে কবিতারচনা করেছিলেন। এইরকম ভণ্ডবিরোধী অনেক কবিতাই লিখেছিলেন আমাদের কবি নজরুল। তাঁর বিখ্যাত ‘মানুষ’ কবিতা থেকে এখানে একটুখানি উদ্ধৃতি তুলে ধরা হলো:

‘আশীটা বছর কেটে গেল, আমি ডাকিনি তোমায় কভু,
আমার ক্ষুধার অন্ন তা ব’লে বন্ধ করনি প্রভু।
তব মসজিদ মন্দিরে প্রভু নাই মানুষের দাবী।
মোল্লা পুরুত লাগায়েছে তার সকল দুয়ারে চাবি!’
কোথা চেঙ্গিস, গজনী মামুদ, কোথায় কালাপাহাড়?
ভেঙে ফেল ঐ ভজনালয়ের যত তালা দেওয়া দ্বার!
খোদার ঘরে কে কবাট লাগায়, কে দেয় সেখানে তালা?
সব দ্বার এর খোলা রবে, চালা হাতুড়ি শাবল চালা!
হায়রে ভজনালয়,
তোমার মিনারে চড়িয়া ভণ্ড গাহে স্বার্থের জয়!
মানুষেরি ঘৃণা করি’
ও’ কারা কোরান, বেদ, বাইবেল চুম্বিছে মরি মরি!
ও’ মুখ হইতে কেতাব-গ্রন্থ নাও জোর করে কেড়ে,
যাহারা আনিল গ্রন্থ-কেতাব সেই মানুষেরে মেরে।
পূজিছে গ্রন্থ ভণ্ডের দল!—মূর্খরা সব শোনো,
মানুষ এনেছে গ্রন্থ;—গ্রন্থ আনেনি মানুষ কোনো।

এই শ্রেণীর ভণ্ডদের উদ্দেশ্যে কবি নজরুল তার ‘আমার কৈফিয়ত’ নামক সুবিখ্যাত কবিতায় সুস্পষ্টভাবে উচ্চারণ করেছেন:

মৌ-লোভী যত মৌলভী আর‘মোল্-লারা’ ক’ন হাত নেড়ে,
‘দেব-দেবী নাম মুখে আনে, সবে দাও পাজিটার জাত মেরে!
ফতোয়া দিলাম—কাফের কাজী ও,
যদিও শহীদ হইতে রাজী ও!
‘আম পারা’-পড়া হাম-বড়া মোরা এখনো বেড়াই ভাত মেরে!’
হিন্দুরা ভাবে, ‘পার্শী-শব্দে কবিতা লেখে, ও পাত-নেড়ে!’

ওরা নজরুলকে এখনও সহ্য করতে পারে না। আর এই ভণ্ডের দল আজও নজরুলের ধর্মবিশ্বাস, বিবাহ, জীবনপ্রণালী ইত্যাদি নিয়ে আজেবাজে প্রশ্নের অবতারণা করে থাকে। এরা আঘাতপ্রাপ্ত সেই কাটমোল্লাদের উত্তরপুরুষ। তাই, নজরুলসাহিত্য এদের সহ্য হয় না—ভালো লাগে না।


সাইয়িদ রফিকুল হক
মিরপুর, ঢাকা, বাংলাদেশ।
২৫/০৫/২০১৬
নজরুলজন্মজয়ন্তী-উপলক্ষে রচিত।



সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মে, ২০১৬ রাত ১১:১৩
৫টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একটি ছবি হাজার কথা বলে

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৩:৫৩

আগস্টের ৩ তারিখ আমি বাসা থেকে বের হয়ে প্রগতি স্মরণী গিয়ে আন্দোলনে শরিক হই। সন্ধ্যের নাগাদ পরিবারকে নিয়ে আমার শ্বশুর বাড়ি রেখে এসে পরদিনই দুপুরের মধ্যেই রওনা হয়ে যাই। আগস্টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

অদ্ভুতত্ব.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪৩

অদ্ভুতত্ব.....

আমরা অনিয়ম করতে করতে এমন অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি যে, অনিয়মকেই নিয়ম আর নিয়মকে অনিয়ম মনে হয়। নিয়মকে কারো কাছে ভালো লাগে না, অনিয়মকেই ভালো লাগে। তাই কেউ নিয়ম মাফিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের কালো রাজনীতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত অধ্যাপক ইউসুফ আলী !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৫৮




অধ্যাপক ইউসুফ আলী মুজিবনগর সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করেন।

উনি ছিলেন বাংলার অধ্যাপক। ৬২ সালে পূর্ব পাকিস্তান আইনসভার সদস্য হন। ৬৫ সালে পাকিস্তান গণপরিষদের সদস্য,... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। নিজের বানানো টেলিস্কোপ দিয়ে কালপুরুষ নীহারিকার ছবি

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯






ঢাকায় নিজের বাসার ছাদ থেকে কালপুরুষ নীহারিকার ছবি তুলেছেন বাংলাদেশি অ্যাস্ট্রোফটোগ্রাফার জুবায়ের কাওলিন। যে টেলিস্কোপ দিয়ে তিনি এই ছবি তুলেছেন, সেটিও স্থানীয় উপকরণ ব্যবহার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার দশটা ইচ্ছে

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:৩১



প্রত্যেক রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে মনে হয়-
যদি সকালটাকে দেখতে না পাই। কেউ যদি জিজ্ঞেস করেন, পৃথিবীর সবচেয়ে বিস্ময়কর জিনিস কি? তাহলে বলব মানুষের বেচে থাকা। মরে গেলেই তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×