somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

সাইয়িদ রফিকুল হক
আমি মানুষ। আমি ত্বরীকতপন্থী-মুসলমান। আমি মানুষ বলে আমার ভুলত্রুটি হতেই পারে। বইপড়তে আমার ভালো লাগে। সাহিত্য ভালোবাসি। লেখালেখি আমার খুব শখের বিষয়। বাংলাদেশরাষ্ট্র ও গণমানুষের জন্য আমি লেখনিশক্তিধারণ করেছি।

ছোটগল্প(জীবনের গল্প): সারমেয়-উৎপাত

২৫ শে মে, ২০১৬ বিকাল ৫:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ছোটগল্প(জীবনের গল্প): সারমেয়-উৎপাত
সাইয়িদ রফিকুল হক

রায়হানসাহেব হন্তদন্ত হয়ে ঘরে ঢুকে সোফার এককোণে বসে পড়লেন। আর বললেন, “আজকাল রাস্তাঘাটে বের হওয়া যায় না। সবখানে কুকুরের উপদ্রব বড় বেশি। তা-ও যে-সে কুকুর নয়, একেবারে পাগলাকুকুর। এদের জ্বালায় দেশের মানুষ আজ অতিষ্ঠ!”
সাবরিনা ফ্যানের সুইচ অন করে তার বাবার পাশে বসে বললো, “কোথায় কুকুর দেখলে বাবা?”
রায়হানসাহেবের মেজাজ এখন খুব খারাপ। তবুও তিনি কিছুটা শান্ত হয়ে তবে কড়াগলায় বললেন, “আবার কোথায়? রাস্তায়। আমাদের গলির মোড়ে!”
সাবরিনা একটু হেসে বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে বললো, “কিন্তু আমি তো বাবা কোনো কুকুর দেখি না। রোজ-রোজ কলেজে আসা-যাওয়ার সময় আমার চোখে কুকুর তো তেমন একটা চোখে পড়ে না। আর আমার কেবলই মনে হয়: আজকাল বুঝি কুকুর কমে গেছে। তবে এর মধ্যেও মাঝে-মাঝে দুই-একটা কুকুর অবশ্য চোখে পড়ে। আর পাগলাকুকুর তো এখনও পর্যন্ত একটাও দেখিনি! পাগলাকুকুরকে আমার ভয় লাগে, বাবা!”

রায়হানসাহেব এবার ভেংচি-কাটার মতো করে বললেন, “মাঝে-মাঝে মাত্র দুই-একটা কুকুর দেখিস! আর এতো-এতো কুকুর তোর চোখে পড়ে না! তা দেখবি কেমন করে! এই কুকুরগুলো বুঝি তোর খুব ভালো লাগে!”
একটু থেমে তিনি আবার বলতে লাগলেন, “অলিতেগলিতে এখন সারমেয়রা দাপটের সঙ্গে ঘোরাফেরা করছে! আর তুই দেখিস না সারমেয়?”
সাবরিনা তার বাবার কথা শুনে হেসে বললো, “বাবা, তুমি এখন খুবই রেগে আছো। তাই, তুমি ভুলে গেছো যে, আমি কুকুরকে খুব ভয় পাই!”
এতে একটু কাজ হলো। আর রায়হানসাহেবের রাগটা একটুখানি কমে এলো। তারপর তিনি একটু থেমে মেয়ের দিকে চেয়ে মিষ্টিস্বরে বললেন, “কুকুর দেখিসনি, যা না বাসার সামনের ওই গলির মোড়ে দেখে আয় অন্তত হাফ-ডজন কুকুর সেখানে বসে আছে। আর কুকুরগুলো মানুষের চলাচলের রাস্তায় বাধার সৃষ্টি করে, কী আরামে গোল হয়ে বসে, জটলা-পাকিয়ে মনের সুখে গাঁজামিশ্রিত হরেক রকমের সিগারেট ফুঁকছে! আর তারা মনের সুখে এইরকম একটা সাত-সকালে স্কুল-কলেজগামী মেয়েদের দিকে কী কুৎসিতভাবে তাকাচ্ছে! আর মাঝে-মাঝে মেয়ে দেখলেই শুধু ঘেউ-ঘেউ করছে! আর এইসব নির্লজ্জ সারমেয় আমাদের সমাজে কোত্থেকে এলো?”

সাবরিনা তার বাবার কথা শুনে কিছুক্ষণ ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকে। আর ভাবে: কুকুরগুলো মেয়েদের দেখে, আর গাঁজামিশ্রিত হরেক রকমের সিগারেট ফোঁকে! শেষে সে হেসে উঠে বললো, “বুঝতে পেরেছি বাবা, তুমি ওই ছেলেগুলোর কথা বলছো বাবা? ওরা তো প্রায়ই এভাবে ওখানে বসে থাকে। আর সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বসে-বসে বখাটেপনা করে। এটা তো ওদের ডিউটি।” কথাটা বলেই সে তার বাবার দিকে চেয়ে হেসে ফেললো।
রায়হানসাহেব এবার যেন গর্জে উঠলেন। আর বললেন, “এটা ওদের ডিউটি তাই না? পড়ালেখা ছেড়ে সারাক্ষণ সকাল নেই, বিকাল নেই, ভদ্রলোকের মহল্লায় গলির মোড়ে বসে সিগারেট ফুঁকবে, আর এটা ওদের ডিউটি! ওরা ওখানে বসে-বসে মেয়েদের দেখে আর নানারকম আজেবাজে মন্তব্য করে। এই তো পাশের বিল্ডিংয়ের হাবিবসাহেব সেদিন আমাকে তা-ই বললেন। তার কলেজগামী মেয়ের উদ্দেশ্যে এই কুকুরগুলো আজেবাজে মন্তব্য ছুঁড়ে দিয়েছে। মেয়েটি কলেজে যাচ্ছিলো, এমন সময় একটা কুকুর নাকি তার হাত টেনে ধরতে চেয়েছিলো। শেষে মেয়েটি দৌড়ে বাসার কাছে চলে এসেছে। তারপর ভয়ে সেদিন সে আর কলেজেও যায়নি। আরও শুনলাম: এই কুকুরগুলোর জন্য হাবিবসাহেব নাকি এই এলাকা ছেড়ে চলে যাবেন। তিনি এখনই অন্যত্র বাসা খুঁজছেন। তুই একবার চিন্তা করে দেখ মা, এরা কতটা ভয়ানক কুকুর!”
সাবরিনা তার বাবাকে একটু খুশি করার জন্য বললো, “ওদের আর সরাসরি কুকুর বোলো না বাবা, তার চেয়ে ওদের আরেকটি নাম শুধু সারমেয় বলো। আর ওদের একটা মানসম্মান আছে না—যদিও ওরা কুকুরেরও অধম!”
ওদের বিরুদ্ধে সাবরিনার ছুঁড়ে দেওয়া শ্লেষটুকু উপভোগ করে রায়হানসাহেব কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে রইলেন।

একটু পরে রায়হানসাহেব আবার বলতে লাগলেন, “মাঝে-মাঝে আমার মনে চায় ওদের সবক’টাকে জুতাপেটা করে এই গলি থেকে বের করে দেই। কিন্তু পারি নারে মা, ওদের কাছে অস্ত্র আছে। আর তা আগ্নেয়াস্ত্র! তার উপর তুই আবার বড় হয়েছিস, মা!”
সাবরিনা এবার একটু গম্ভীর হয়ে বললো, “বাবা, আমাকে নিয়ে তুমি চিন্তা কোরো না। আমি তো তোমারই মেয়ে। আমি কুকুর চিনি। আর এও চিনি কোনটা কোন জাতের!”
রায়হানসাহেব বললেন, “আমি আবু রায়হান কাউকে ভয় পাই না। কিন্তু এই ভিন্ন-জাতের কুকুরগুলোকে দেখলে আমার কেমন যেন ভয় হয়। এরা শুধু বখাটে-রংবাজই নয়। এরা তার চেয়ে আরও ভয়ংকর। আর এদের চোখে-মুখে সারাক্ষণ একটা নাশকতার ছাপ! ওদের মনের ভিতরেও হয়তো সবসময় পাপের চিন্তাভাবনা।”
সাবরিনা বললো, “বাবা, তোমার মেয়ে কখনও ভুল করবে না। আর সে এই কুকুরদের কখনও আশ্রয়প্রশ্রয় দেবে না। তুমি নিশ্চিন্ত থাকো, বাবা।”
রায়হানসাহেব তবুও নিশ্চিন্ত হতে পারেন না। তিনি ওদের ভয়ংকর চেহারা দেখে মনে মনে আঁতকে ওঠেন। আর ভাবেন: এদের বিরুদ্ধে তার কী করার আছে?
বাবাকে গম্ভীর দেখে সাবরিনা বললো, “বাবা, তুমি আর মন খারাপ করবে না। এইসব অন্য জাতের কুকুর আমার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। আবারও বলছি: আমি তোমার মেয়ে। কুকুর আমি চিনি। আর আমি কোনো ভুলও করবো না। আরও একটা কথা আমি জানি: কুকুরকে একটু আশ্রয়প্রশ্রয় দিলেই বিপদ!”

এবার যেন একটু স্বস্তি পেলেন রায়হানসাহেব। আর তিনি বললেন, “কিন্তু মা, আমি ভাবছি: এইসব অন্য জাতের কুকুরগুলো আমাদের সমাজ থেকে কবে দূর হবে?”

সাবরিনা তার বাবার এই ছোট্টপ্রশ্নের কোনো উত্তর দিতে পারে না। সে শুধু তার বাবার মুখের দিকে চেয়ে থাকে নিষ্পলক! আর সেও হয়তো ভাবছে: সমাজ-রাষ্ট্র থেকে কে দূর করবে এই হাড়জ্বালাতনকারী-সারমেয়দের।

সাইয়িদ রফিকুল হক
মিরপুর, ঢাকা, বাংলাদেশ।
২৩/০৫/২০১৬

সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মে, ২০১৬ বিকাল ৫:৩৬
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একটি ছবি হাজার কথা বলে

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৩:৫৩

আগস্টের ৩ তারিখ আমি বাসা থেকে বের হয়ে প্রগতি স্মরণী গিয়ে আন্দোলনে শরিক হই। সন্ধ্যের নাগাদ পরিবারকে নিয়ে আমার শ্বশুর বাড়ি রেখে এসে পরদিনই দুপুরের মধ্যেই রওনা হয়ে যাই। আগস্টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

অদ্ভুতত্ব.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪৩

অদ্ভুতত্ব.....

আমরা অনিয়ম করতে করতে এমন অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি যে, অনিয়মকেই নিয়ম আর নিয়মকে অনিয়ম মনে হয়। নিয়মকে কারো কাছে ভালো লাগে না, অনিয়মকেই ভালো লাগে। তাই কেউ নিয়ম মাফিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের কালো রাজনীতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত অধ্যাপক ইউসুফ আলী !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৫৮




অধ্যাপক ইউসুফ আলী মুজিবনগর সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করেন।

উনি ছিলেন বাংলার অধ্যাপক। ৬২ সালে পূর্ব পাকিস্তান আইনসভার সদস্য হন। ৬৫ সালে পাকিস্তান গণপরিষদের সদস্য,... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। নিজের বানানো টেলিস্কোপ দিয়ে কালপুরুষ নীহারিকার ছবি

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯






ঢাকায় নিজের বাসার ছাদ থেকে কালপুরুষ নীহারিকার ছবি তুলেছেন বাংলাদেশি অ্যাস্ট্রোফটোগ্রাফার জুবায়ের কাওলিন। যে টেলিস্কোপ দিয়ে তিনি এই ছবি তুলেছেন, সেটিও স্থানীয় উপকরণ ব্যবহার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার দশটা ইচ্ছে

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:৩১



প্রত্যেক রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে মনে হয়-
যদি সকালটাকে দেখতে না পাই। কেউ যদি জিজ্ঞেস করেন, পৃথিবীর সবচেয়ে বিস্ময়কর জিনিস কি? তাহলে বলব মানুষের বেচে থাকা। মরে গেলেই তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×