বলদ কখনও মানুষ হবে না (রম্যগল্প)
সাইয়িদ রফিকুল হক
সেদিন বিকালে কিছুটা অন্যমনস্ক হয়ে রাস্তার পাশ দিয়ে হাঁটছি। এমন সময় দেখি: এক বলদকে তার ঘনিষ্ঠ কয়েকজন টেনেহিঁচড়ে একটা দোকানে নিয়ে আসছে। কিন্তু বলদটা কিছুতেই দোকানে ঢুকতে চাইছিলো না। কারণ, এই বলদটা নাকি কিছুতেই বায়োমেট্রিক-পদ্ধতিতে নিজের মোবাইল-সিম রেজিস্ট্রেশন করবে না। এদিকে তার আত্মীয়স্বজনও তাকে ছাড়বে না। এই নিয়ে দোকানের মধ্যে একটা ভয়ানক হুলুস্থল ব্যাপার ঘটে গেল।
লোকজন বললো: “আচ্ছা, তোমরা বলদটাকে ছেড়ে দাও। দেখি না বলদটা কী বলে?”
সঙ্গের লোকজন জনতার কথা অগ্রাহ্য করার কোনো সাহস না পেয়ে সভয়ে বলদটাকে আপাততঃ ছেড়ে দিলো। আর এই সুযোগে বলদটা চিৎকার ও চেঁচামেচি-সহ এলাকাজুড়ে একরকমের ভয়াবহ বিশৃঙ্খলাসৃষ্টি করে বলতে লাগলো: “আমার আঙ্গুলের ছাপ বিদেশে রপ্তানি হয়ে যাবে! আমি মেশিনে টিপসই দেবো না। আমার ঘরবাড়ি সবকিছু লিখে নিবে বিদেশীরা! আর আমার নিরাপত্তা বলে কিছু থাকবে না। আর পৃথিবীর কোনো দেশে এই সিস্টেম নাই।”
লোকজন এবার জিজ্ঞাসা করলো, “আচ্ছা বলদ, তোর কয়টা মোবাইল-সিম আছে?”
শুনে বলদটা একগাল হেসে ফেললো। আর বলদটা এবার খুব অহংকারীভাব নিয়ে মুখে রুপালিহাসি মেখে সানন্দে বললো: “তা চল্লিশ-পঞ্চাশটা তো হবেই!”
শুনে সবার চক্ষুচড়কগাছ। বলদা বলে কী! একটা মানুষের ছোট্টজীবনে কয়টা মোবাইল-সিম লাগে! এতো দেখি ভয়ানক-দুষ্কৃতকারী! তাইতো সিম-নিবন্ধন করতে চাইছে না।
লোকজন এবার ক্ষেপে গেল। আর বললো: “এবার বুঝতে পেরেছি। এই বলদটার গোপন-সিমগুলো গোপন-কাজে সদাতৎপর। তাই, বলদটা নিজের অপরাধ ঢেকে রাখার জন্য সিম-নিবন্ধন করতে চাইছে না।”
সবাই বললো: ঠিক! ঠিক! ঠিক!
আর একটু পরে সবাই মিলে বলদটাকে মোটা রশি দিয়ে শক্ত করে বেঁধে বললো: “আর মানুষজনকে গুঁতাবি? আর আইন অমান্য করবি, বলদ?”
ভাবগতিক মন্দ দেখে বলদটা ভ্যাবাচাকা খেয়ে শেষে কেঁদে বললো, “আসলে, আমিও তো আমার সিম নিবন্ধন করতে চাই। কিন্তু আমার মনে যে কত স্বপ্ন আছে। আর তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে: বারেক চাচার মেয়েকে ধর্ষণ করার ইচ্ছে। আর আমি ব্যবসার নাম করে বন্ধুর কাছ থেকে দশলক্ষ টাকা ধার নিয়ে আত্মগোপনে চলে যেতে চাই। আর এ পর্যন্ত আমি চারজনের কাছ থেকে মোটাঅঙ্কের টাকা নিয়ে ভেজাল-সিমের সুযোগে পলাতক অবস্থায় রয়েছি। আর এখনও পর্যন্ত খুব ভালো আছি। আর এখনও আমার এইসব ব্যবসা চালিয়ে যেতে চাই। আর সেইজন্যেইতো সিমগুলো গুপ্ত অবস্থায় রাখতে চেয়েছি।”
লোকজন বললো, “সিমগুলো রেজিস্ট্রেশনবিহীন হলে তোমার দেখছি অনেক লাভ। কিন্তু মানুষের ভয়ানক ক্ষতি। আমরা তোমাকে আর কোনো মানুষের ক্ষতি করতে দেবো না। এবার তোমাকে থানায় জমা দেবো, বলদ।”
শেষমেশ বলদটা জনতার তাড়া খেয়ে সুড়সুড় করে নিজের সিমগুলো বায়োমেট্রিক-পদ্ধতিতে নিবন্ধন করে ফেললো।
কিন্তু এই বলদটা তো ধরা পড়ে দায়ে ঠেকে সিম-নিবন্ধন করেছে। আর যে-সব বলদ এখনও ধান্দাবাজির আশায় হাত-পা-গুটিয়ে বসে আছে, আর নিরীহ-মানুষজনকে অহেতুক গুঁতাচ্ছে, তাদের এবার কী হবে? এখনও যে কত বলদ কতভাবে ভেজাল-সিমের দৌরাত্ম্যে মানুষকে ঠকাচ্ছে, আর প্রতিনিয়ত প্রতারণা করছে। এগুলো কবে বন্ধ হবে? আর আমার গুরুজীর একটি কথা মনে পড়লো: বলদ কখনও মানুষ হবে না।
আর সবকিছু দেখেশুনে আমার কেবলই মনে হলো: রাষ্ট্র কি তার যেকোনো প্রয়োজনে আরও শক্ত হতে পারবে? আর রাষ্ট্রকে আরও শক্তিশালী হতেই হবে।
সাইয়িদ রফিকুল হক
মিরপুর, ঢাকা, বাংলাদেশ।
৩০/০৪/২০১৬
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মে, ২০১৬ দুপুর ২:৫৭