'হেই দুনিয়ার বোকাচোদারা, এক হও। ঘোষণা আছে, আসো আসো।' আমি কোন ব্লগারদের এখানে ডাকছি না। কোন মুভির রিভিউও লিখতে বসি নাই। কারণ, সেই যোগ্যতা আমার নাই। হৈচৈ'র কারাগার নিয়া উৎসুক জনতার উদ্দেশ্যে কিছু বলার চেষ্টা করছি, এই আর কি ।
১৪৫ সিরিয়ালের সাথে মিল রেখে কী ঘটতে যাচ্ছে সেই উৎসুক নিয়ে আজ কারাগার দেখতে বসছিলাম। কিন্তু না। কোন কিন্তু না। শেষ পর্যন্ত আইসা আবার মনে হইলো সবে শুরু হইতে যাইতাছে। ছোটকালে বিষুদবার ও শুক্কুরবারে আমরা সময়ের প্রতি অতিরিক্ত প্রেমিক হইয়্যা উঠতাম। এটা 'সময়ের মূল্য' ভাব সম্প্রসারণের কোন প্রভাব না। এটা ছায়াছবি দেখার টানে তৈরি হওয়া সময়ের প্রতি এক প্রকার সাময়িক প্রেম। দিনশেষে যখন আমাদের কাঙ্ক্ষিত ছবি শুরু হওয়ার সময় হত, তখনই হঠাৎ ডাক পড়তো বাবার রুমে অথবা কাকার রুমে। আমি যেই সময়টার কথা বলছি, সেই সময়ে তখনো পর্যন্ত আমার কইলজায় তাদের ডাকে সাড়া না দেওয়ার সাহস তৈরি হয় নাই। তাছাড়া কৌশলী না হওয়ায় বোকার মত দেখাতো আমায় কৈশোর বয়স পর্যন্ত। তা যাই হোক, পাঁচ মিনিট পর পারিবারিক হলে প্রবেশের পর আরো পাঁচ মিনিট যাইতো, চলে যাওয়া পাঁচ মিনিটের জন্য আফসোস করতে করতে। হ্যাঁ, আপনি হৈচৈ'র কারাগার দেখা থেকে সম্পূর্ণভাবে বিরত থাকলেও আপনার মধ্যে সেই আফসোস আসবে না, সেটা আমি বলে দিতে পারি। সুতরাং দেখা না দেখা আপনার ব্যাপার। আমার কাছে এর শেষ এপজিডে আসার পূর্ব পর্যন্ত অনেকবার মনে হয়েছে এটা একটা ফালতু মুভি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেখে ভাবলাম, একেবারেই খারাপ না। অখাদ্যের চেয়ে উৎকৃষ্ট।
হঠাৎ করে কারাগারের একটি সেলে একজন কয়েদির আবির্ভাব কখনোই আলৌকিক কিছু না। সুদীর্ঘ বছরের অব্যবহৃত সেলে হঠাৎ একজন কয়েদির উপস্থিতি অবশ্যই বাস্তববাদীদের কাছে ষড়যন্ত্র ছাড়া কিছুই মনে হওয়ার কথা না। কিন্তু এখানে দেখা গেলো, পুরো ফিল্মটাতে আসা সব ক'টি চরিত্রই আলৌকিকতার বিশ্বাসে বিশ্বাসী হিসেবে ফুটে উঠেছে। অদ্ভুত এসব কুসংস্কারের লালন যে বাংলাদেশের সর্ব মহলে হয়ে থাকে, তারই একটা প্রমাণ হিসেবে যদি আপনি এই ফিল্ম দেখতে বসেন, তবে প্রথম দিকে আপনার জন্য যথেষ্ট শান্তনা ও উৎসাহ উদ্দীপনা আছে। তবে শেষ পর্যন্ত তা টিকিয়ে রাখতে না পারার কষ্টটাও আপনাকে পেতে হবে। সুতরাং ধৈর্য্য নিয়েই যা করার কইরেন।
চঞ্চল চৌধুরীর অভিনয়ের সাথে আফজাল, ইন্তেখাব দিনার, বিজরী বরকতউল্লাহ, তাসনিয়া ফারিণ, এফ এস নাঈম, শতাব্দী ওয়াদুদ, জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, এ কে আজাদ সেতুসহ আরো অনেকের অভিনয় যথেষ্ট ভালো হয়েছে। তবে এক জায়গায় চঞ্চল চৌধুরীর মুচকি হাসির কারণে দর্শকের মনে সন্দেহ সৃষ্টি হওয়া স্বাভাবিক। অবশ্যই এটা পরিচালকের নির্দেশে নয়। এটা অভিনয়ের একটা স্পষ্ট ভুল। তাছাড়া জনৈকা বোরকা পরিহিতা ভদ্র মহিলা সম্পর্কে কোন তথ্য না দিয়ে আজাইরা তারে দিয়া পেছন পেছন দৌঁড়ানোটা, আমার কাছে পরিচালকের দর্শক ধরে রাখার একটা বোকামিই বলে মনে হয়েছে! এছাড়াও চঞ্চল চৌধুরীর সাথে কতেক কয়েদীর অঙ্গভঙ্গিতে যে সন্দেহপূর্ণ ব্যবহার দেখা গেছে, যদি পরিচালক পাঠকের মনে সন্দেহ সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে তা করে থাকেন, তবে অবশ্যই আমাকে ধৈর্যের সাথে দ্বিতীয় পর্বটিও হজম করতে হবে। এবং যারা দেখবেন ও দেখেছেন তাদেরকেও।
"আমি বাইরইয়্যা ঐ সাদ্দামরে কুছাকুছা কইরা ফেলুম" এটা কারাগারেরই একজন কয়েদীর কথা। পোস্টের শুরুতে তুলে ধরা কথার মত শুনালেও উভয় কথায় বিস্তর ফরাক রয়েছে। পোস্টের শুরুতে তুলে ধরা বাক্যের মূলে রয়েছে কুসংস্কার চর্চার ডাক। আর এখানে রয়েছে আমাদের ব্যর্থতার। আমাদের জেল হাজতের উদ্দেশ্য, মানুষকে তার অসৎ কার্যকলাপ থেকে দূরে রাখার মাধ্যমে তাকে যতটুকু সম্ভব ভালো একটা মানুষ রূপে সমাজে ফেরত দেওয়া। সেখানে আমরা দেখতে পাই, পিচকে চুর জেল থেকে ডাকাত হয়ে বের হয়। পাতি নেতা জেল থেকে বেরুয় জাতীয় নেতা হিসেবে। নিরপরাধ মানুষটিকেও পর্যন্ত দুর্দান্ত সন্ত্রাসী মানসিকতা নিয়ে বের হতে দেখি আমরা। এই দিকটার অপরিবর্তিত রূপ আপনি এই মুভিতে দেখতে পাবেন। যদি আপনি দেখেন। গতানুগতিক ছবির বিপরীত মুখী ছবির যে আশা নিয়ে দেখতে বসেছিলাম, আসা করি আগামী পার্টে তার বাস্তবতা দেখতে পাবো। সবশেষে নির্মাতা সৈয়দ আহমেদ শাওকী ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। এবং আপনারাও, যারা ধৈর্যের সাথে এই কুখাদ্য মার্কা লেখাটি এতক্ষণে পড়ে ফেলেছেন। শুভকামনা সবার জন্য।
ছবিঃ ইন্টারনেট
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে আগস্ট, ২০২২ ভোর ৪:০১