বঙ্গবন্ধু যাদের থেকে রাজনৈতিক আদর্শ গ্রহণ করেছেন এবং যাদের সচিব হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছেন তাদের মধ্যে একজন মহান রাজনীতিবিদ হচ্ছেন আব্দুল হামিদ খান ভাসানী। আজ জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ৪২তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১২ ডিসেম্বর ১৮৮০ খৃষ্টাব্দে জন্মগ্রহণকারী এই মহান রাজনীতিবিদ ১৯৭৬ সালের এই দিনে ঢাকার তৎকালীন পিজি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
উনার রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে অনেকের ভিন্নমত রয়েছে। কৃষকের স্বার্থই ছিল উনার এই রাজনৈতিক দৌড়ঝাঁপের মূল উদ্দেশ্য। বলা যায়, যারা কৃষকের স্বার্থ নিয়ে ভাবার সময় পান না, তারাই কেবল এই মহান ব্যক্তির প্রতি ভিন্নমত পোষণ করেন। উনার মতো কোন ব্যক্তিত্ব যেমন আলেমদের মধ্যে সৃষ্টি হয় নি, তেমনই সৃষ্টি হয় নি কোন রাজনৈতিক দলে।
উনার মৃত্যুবার্ষিকীতে উনিসহ সকল জন-দরদী নেতাদের প্রপ্তি সম্মান প্রদান করত উনার একটি ঘটনা বর্নণা করছি। আশাকরি ভালই লাগবে।
মাওলানা ভাসানী যেহেতু সরাসরি কমিউনিস্ট মুভমেন্টের সাথে যুক্ত ছিলেন বা কমিউনিস্টদের আশ্রয় প্রশ্রয় দিতেন; সে জন্য মাওলানা ভাসানীকে আমাদের তৎকালীন মুল্লারা এভয়েড করতো। কিন্তু সমাজ সেবায় তাতে কোন অসুবিধা হয়নি। কারণ মাওলানা ভাসানী এত পপুলার লিডার ছিলেন যে, কোন হুজুর কী বলেছেন না বলেছেন এসব কোন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেনি। মাওলানা ভাসানী ছিলেন খুবই বাস্তববাদী মানুষ। যিনি ফিল করেছিলেন - ইসলামকে বাদ দিয়ে কোন কিছু করা সম্ভব নয়। মানুষও তা মেনে নেবে না, আমাদেরও সেটা ঠিক হবে না।
এই কারণে চীনা কমিউনিস্ট নেতা মাওসেতুং এর সাথে মাওলানা ভাসানীর যখন দেখা হয়, মাওসেতুংকে মাওলানা ভাসানী বলেছিলেন- আপনার এখানে এসে আমার সব ভাল লেগেছে। মাওলানা ভাসানী ভাসানীর একটা বই আছে "মাও সেতুং-এর দেশে"। ভ্রমণ কাহিনী। সেই বইতে তিনি লিখেছিলেন- "চীনে আসিয়া দেখিলাম। দেখিলাম, মানুষ হাসিতে পারে। সেই হাসি ক্ষুধাতুর কোন অসহায় মানুষের দাঁত ভেঙচির মতো নয়। আমাদের কৃষকের যেমন কষ্ট করে হাসতে হয় সেরকম নয়, আবলীলায় তারা হাসতে পারে। এই হাসিটা আমি আমার পূর্বপাকিস্তানে নিয়ে যাবো। মানুষকে হাসতে দিতে হবে, তাকে প্রাণবন্ত করতে হবে।"
মাওসেতুংকে তিনি বলেছিলেন- আপনার দেশের ভেদাভেদহীন জীবন আমার পছন্দ হয়েছে। এই জীবন ব্যবস্থা আমি পাকিস্তানে নিয়ে যাব। কিন্তু আপনি শুধু আমার একটা জিনিষ কবুল করেন। কিছু একটা তো লেনদেন করতে হবে।
মাও জিজ্ঞেস করলেন- কী?
মাওলানা বললেন, আপনি আমার আল্লাহ আর রাসুলকে কবুল করেন। আর কিচ্ছু করতে হবে না। আপনি আমার আল্লাহ আর রাসুলকে কবুল করবেন আমি আপনার সমাজব্যবস্থা নিয়ে যাবো পাকিস্তানে।
মাও বললেন, এটা তো হবে না।
মাওলানা বললেন- তাহলে আমিও আপনার মতবাদ পুরোপুরি নিতে পারবো না। তারপরেও চীনের সাথে মাওলানা ভাসানীর আমৃত্যু গভীর বন্ধুত্ব ছিল।
চিরন্তন শ্রদ্ধা এই মহান মানুষটির প্রতি।
#রিপোস্ট
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৩:৫৭