মহান মুক্তিযোদ্ধা ও বাংলাদেশের অন্যতম প্রবীণ আলেমে দীন শায়খ নোমান আহমদ আজ (মঙ্গলবার) সকাল ৭টা ৪৫ মিনিটে চট্টগ্রামের পটিয়ায় ইন্তেকাল করেছেন, ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন৷ এই মহান মুক্তিযোদ্ধার প্রতি সামু জানায় গভীর শ্রদ্ধা ও অকৃত্রিম ভালবাসা।
শায়খ নোমান মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে ব্যাপক ভুমিকা রাখেন। উনার সময়ের মুক্তিযোদ্ধা আলেমরা মহান মুক্তিযোদ্ধকে মহান স্বাধীনতা সংগ্রাম বলে সম্ভোধন করতেন। মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে অনেক আলেম মূল্যবান ভূমিকা রেখেছেন। কেউ কেউ সরাসরি যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। অনেকে পালিয়ে থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য সহযোগিতা করেছেন। কেউ কেউ মুক্তিযুদ্ধে যেতে মানুষকে উৎসাহিত করেছেন। মাওলানা আব্দুর রশিদ তর্কবাগীশ ২৪৩ দিন আত্মগোপনে থেকে নেতৃত্ব দেন। তার পরামর্শে অসংখ্য মানুষ যুদ্ধে অংশ নেয়। পাকিস্তানী হানাদাররা তার বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দেয়। হাতিয়ার মাওলানা মোস্তাফিজ, চট্টগ্রামের মাওলানা ছৈয়দ, ছাগল নাইয়ার মাওলানা মাকসুদ প্রমুখের নাম এ প্রসঙ্গে স্মরণ করা যায়। ২৬ মার্চ পাক হানাদারদের গুলিতে প্রাণ হারান ঢাকার হাতিরপুল মসজিদের ইমাম। বৃহত্তর ময়মনসিংহের ইমাম মাওলানা ইরতাজ আলি কাসিমপুরী পরাধীন দেশে জুমআর নামাজে ইমামতি করতে অস্বীকৃতি জানান। পাকিস্তানী হানাদাররা তাকে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করে। এই ইরতাজ আলি কাসিমপুরীর কথা হুমায়ূন আহমেদ তার বিখ্যাত উপন্যাস জোছনা ও জননীর গল্পে উল্লেখ করেছেন।
স্বাধীনতা যুদ্ধকে ইসলাম সমর্থন দেয়। দাসত্ব গোলামিকে নয়। সে কারণে আলেমদের অনেকেই পাকিস্তানী শাসকদের জুলুম, নির্যাতনের প্রতিবাদ করেছেন। তাদের এই অবস্থান সেটা কোরআন হাদীস সমর্থিত। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, যে মুক্ত করে তাদের, তাদের গুরুভার হতে ও শৃঙ্খলা হতে যা তাদের ওপর ছিল, সুতরাং যারা তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, তাকে সম্মান করে এবং যে নূর তার সঙ্গে অবতীর্ণ হয়েছে তার অনুসরণ করে তারাই সফলকাম। (সুরা আল আরাফ, আয়াত-১৫৭)। তোমরা আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য কর এবং তোমাদের ন্যায়পরায়ণ শাসকের আদেশ মেনে চল। (সূরা নিসা, আয়াত-৫৯)। দেশপ্রেম তথা দেশকে ভালোবাসা ঈমানের অংশ। ঈমানের বহিঃপ্রকাশ। আল্লাহর পথে একদিন ও এক রাত সীমান্ত পাহারা দেয়া এক মাস পর্র্যন্ত সিয়াম পালন ও এক মাসব্যাপী রাতে সালাত আদায়ের চেয়ে বেশি কল্যাণকর। যদি এই অবস্থায় সে মৃত্যুবরণ করে তাহলে যে কাজ সে করে যাচ্ছিল, তার মৃত্যুর পরও তা তার জন্য অব্যাহত থাকবে। কবর হাশরের ফিতনা থেকে সে নিরাপদ থাকবে (মুসলিম শরীফ- ১৯৪৩)।
শায়খ নোমান চট্রগ্রামের পটিয়া উপজেলার আলামদার পাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। উনি জীবনের শুরু থেকেই ছিলেন সৎ ও পরিশ্রমী। কওমি মাদ্রাসায় পড়ালেখা শেষ করে তিনি শিক্ষকতা জীবন শুরু করেন। ঢাকা আশারাফুল উলূম বড় কাটরা, চট্রগ্রাম মোজাহেরুল উলূম, বান্দরবান মাদরাসার সাবেক উস্তাদ ছিলেন। রাজধানীর নূতনভাগ মাদরাসার শাইখুল হাদিস ছিলেন। তিনি শায়খুল ইসলাম সায়্যিদ হোসাইন আহমদ মাদানী রহ. এর অন্যতম খলিফা ছিলেন। রাজনৈতিক ময়দানে তিনি জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা ছিলেন। শতবর্ষি এই বুজুর্গ জীবদ্দশায় মানুষের নানামুখি খেদমতে জড়িয়ে ছিলেন।মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ১০২ বছর। ছয় ছেলে ও তিন মেয়ে সহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে যান। মরহুমের জানাজা নামাজ মঙ্গলবার বাদ মাগরিব চট্টগ্রাম পটিয়া আলমদরপাড়া নিজ গ্রামে অনুষ্ঠিত হয়েছে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা মরহুমকে জান্নাতের উঁচু মাকাম দান করুন। আর আমাদেরকে জান্নাতের উত্তরাধিকারী হওয়ার তাওফিক দান করুন, আমিন।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:১৯