-I am so sorry.
-sorry?
-yeap. I cant do that.
-Why? You are a killer! This is your work.
-Yes. But, I don’t take this kind of job. Sorry.
-But!
-Bye Mr FR87.
চ্যাট অফ করে দিয়ে টেবিলের পাশ থেকে সিগারেটের প্যাকেটটা তুলে নিই আমি। একটা শলা ধরিয়ে দুটো কষে টান মারি। তারপর আবার তাকাই ল্যাপটপের স্ক্রিনের দিকে। সেখানে স্ক্রিমকিউ ব্রাউজারে ‘ডায়েরী অফ কন্ট্রাক্ট’ ওয়েবসাইটে আমার প্রোফাইলটা শো করছে।
‘ডায়েরী অফ কন্ট্রাক্ট’ একটা স্যোশাল নেটওয়ার্কিং ওয়েবসাইট, সংক্ষেপে ডিওসি। অনেকটা ফেসবুকের মতোই। কিন্তু পার্থক্য হচ্ছে, এখানে স্যোশাল কোন কাজ হয় না। হয় সব সমাজবিরোধী কাজকর্ম। পৃথিবী বিখ্যাত খুনী, সন্ত্রাসী, লুটেরা আর তাদের সাথে যোগাযোগ রক্ষাকারীদেরর জন্য স্পেশালভাবে তৈরী ডিপওয়েব ওয়েবসাইট এটা। এখানে প্রতিদিন শুধু ব্যবসা হয়। মানুষের জীবন কেনাবেচার ব্যবসা।
সাধারন মানুষ মনে করে যে, তারা গুগলের কাছ থেকে যা খুশী তা পেতে পারে। কিন্তু এই ধারনা একদম ঠিক নয়। কারন, ইন্টারনেটের জগত অনেকটা আমাদের বাস্তব পৃথিবীর মতোই, যার বেশীরভাগ রুপ সাধারন কেউ দেখতে পারে না। ইন্টারনেটে ডিপওয়েব বলে একটা জগত আছে, যেটা অনেকটা পৃথিবীর আন্ডারওয়ার্ল্ডের মতো। সাধারন ব্রাউজার দিয়ে সেখানে প্রবেশ করা যায় না। বিশেষভাবে তৈরী ব্রাউজার ব্যবহার করে সেখাবে প্রবেশ করতে হয়। আর তার জন্যেও প্রয়োজন প্রচুর টাকা।
পৃথিবীতে ঘটে যাওয়া শতকরা নব্বই ভাগ হাইপ্রোফাইল অবৈধ কাজগুলো আগে এইসব ওয়েবের মাধ্যমে প্ল্যানড হয়। এটা একটা ক্রাইম বাজার। টাকার আদানপ্রদান, কন্ট্রাক্ট দেওয়া-নেওয়া, সব হয় এখানে। এছাড়াও আরো যেসব কাজ হয়, তা সম্পর্কে সাধারন কেউ ভাবতেও পারে না।
এবার আমার পরিচয়টা দেয়া যাক। আমি আরিয়ান, একজন কিলার। ভারতীয় উপমহাদেশের সব থেকে দামী কন্ট্রাক্ট কিলার আমি। যে কেউ যখন তখন আমাকে ভাড়া করতে পারে না। প্রত্যেকটা কাজের জন্য আমার নিজস্ব রেট আছে। যা সবার পক্ষে খরচ করা সম্ভব নয়। তাই আমাকে শুধুমাত্র হাইপ্রোফাইলের কাজের জন্য ডাকা হয়। যেনতেন কাজ আমি হাতে নিই না।
একটু আগে যার সাথে চ্যাট হলো, তাকে আমি চিনি না। শুধু তার প্রোফাইল নাম জানি। FR87, শুধুই একটা ডিওসি একাউন্টের প্রোফাইল নেম। এই নামের পেছনের ব্যক্তিকে কেউ চেনে না। যেমন কেউ চেনে না আমার প্রোফাইলের মালিককে। ডায়েরী অফ কন্ট্রাক্টে কাউকে নিজের নাম ব্যবহার করতে দেয়া হয় না, শুধু নিজ নামের আদ্যক্ষর আর কিছু নাম্বার। সিকিউরিটির জন্যই এটা করা হয়। আমার প্রোফাইল নেম যেমন AS666.
এর আগেও একবার কাজ করেছি লোকটার। এক মন্ত্রীকে মারার কন্ট্রাক্ট দিয়েছিলো সে। সেটা বছর দেড়েক আগের কথা। এরপর আরো দুটো মার্ডার করতে হয়েছে আমাকে, তবে সেগুলো অন্য লোকের জন্য।
আমি সাধারনত খুনগুলো করি অনেক দুর থেকে, স্নাইপিং রাইফেলের সাহায্যে। এটাই আমার কাজের বৈশিষ্ট্য। ডিপওয়েবে যারা এধরনের কন্ট্রাক্ট দেয়, তাদের জন্য প্রত্যেকটা প্রোফাইলেই কিছু কথা লেখা থাকে। কোন লোক কিভাবে কাজ করতে পছন্দ করে, সেটা স্পষ্টভাবেই লিখে রাখতে হয়। যে কাজ দেবে, তার মনেরমতো খুনী খুঁজে বের করতে সুবিধা হয় এতে। সবার সুবিধার প্রতি লক্ষ্য রেখেই এধরনের অপশন রাখা হয়েছে সাইটটাতে।
নিজের প্রয়োজন অনুসারে সার্চ করো, এই জগতের সব হাইপ্রোফাইল লোকদের খুঁজে পাবে তুমি। বেছে নাও নিজের মনের মতো। স্নাইপার চাইলে স্নাইপার, সাইকো চাইলে সাইকো, হাইপ্রোফাইল কিডন্যাপার বা বড়সর সেনাবাহিনী এমনকি জঙ্গি বাহিনী পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায় এখানে। অনেকটা ঢাকার রাস্তার পাশের ফুটপাথের হকারদের মতো, ‘দেইখ্যা লন, বাইছ্যা লন’।
FR87 আজ আমাকে একটা অদ্ভুত খুনের প্রস্তাব দিয়েছে। যেখানে আমার প্রোফাইলে স্পষ্টভাবে বলাই আছে, আমি একজন স্নাইপার, সেখানে সে আমাকে সাইকো স্টাইলে খুন করতে বলছে। তাও একটা মেয়েকে। মেয়েটার ছবি এবং ডিটেইলস দিয়েছে সে। প্রথমে FR87এর বলা যায়গায় নিয়ে মেয়েটাকে রেপ করতে হবে, এবং মেরে ফেলতে হবে। তারপর লাশটাকে যথাসম্ভব বিকৃত করতে হবে।
খুন করার ক্ষেত্রে আমার কোন নীতি নেই। মেয়ে-ছেলে, শিশু-বুড়ো, কাউকে মারতে আমার অরুচি নেই। টাকা পেলেই আমি খুশী, কিন্তু তার জন্য আমার নিজস্ব স্টাইল আছে। আমি কারো নির্দেশ পুরোপুরি মানি না। খুন করি আমার মতো, আমার মনমতো সময়ে এবং জায়গায়। এসব কারনে স্পষ্টভাবে না করে দিতে হলো তাকে।
অবশ্য এবারকার এমাউন্টটা বেশ উচু ছিল। বলতে গেলে আমার এপর্যন্ত করা কাজগুলোর মধ্যে হাইয়েষ্ট পেমেন্ট অফার করেছিল সে। কিন্তু কিছুই করার নেই।
নিজের প্রোফাইল থেকে লগআউট করে ল্যাপটপের ডালা নামিয়ে নিই আমি। রেডি হবো আমি। বাইরে যেতে হবে। আমার বন্ধু রায়হানের মেয়ের জন্মদিন আজ।
ভেতরে ভেতরে আমি যাই হই না কেন, ব্যক্তিগত জীবনে আমি নিপাট ভদ্রলোক। পরিচিত সবাই আমাকে ট্রিপল ই’র ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে জানে। ঢাকাতে একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীতে কাজ করছি আমি।
এটাই আমার কাভার।
*******
‘তারপর?’ রায়হানের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করি আমি, ‘তোর কাজকারবার কেমন চলছে?’
‘ভাল না রে,’ হতাশস্বরে বলে উঠে রায়হান, ‘বাংলাদেশের ফিল্ম ইন্ড্রাষ্টির খবর তো তোর জানার কথা। এখানে ট্যালেন্টের কোন মুল্যায়ন নেই। গাঁজাখুরি পারিবারিক সিনেমা তৈরী কর, যেখানে আদিখ্যেতা থাকবে, লুতুপুতু প্রেম থাকবে, অযথা মারামারি থাকবে- সেইসব ছবিই হিট হবে। একটু ডিফরেন্ট প্লট তৈরী করে মুভি তৈরী কর, ফ্লপ! আর ভাল লাগে না রে।’
ওর কথায় সমর্থন দেয়ার জন মাথাটা মৃদু নাড়ি আমি।
রায়হান আর আমি একই ভার্সিটিতে পড়াশোনা করেছি, একই সাবজেক্টে। কিন্তু কখনোই ওকে ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে ভাবতে দেখিনি। প্রথম থেকেই ও আগাগোড়া সৃজনশীল একজন মানুষ। স্বপ্ন ছিল মুভি পরিচালনা করার, তাই এসব নিয়েই পড়াশোনা করতে চেয়েছিল ও। কিন্তু ওর বাবার ইচ্ছের সামনে ও অবাধ্য হতে পারেনি, তাই ওর ঠাই হয়েছিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে। ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করার পর বছরখানেক চাকরীও করেছে ও। তারপর হঠাত করেই সব ছেড়ে দিয়ে ফিল্ম মেকিংয়ের দিকে ঝুঁকে পরে। এখনো পর্যন্ত ওর পরিবারের কাছ থেকে কথা শুনতে হয় ওকে এজন্য।
ও যে খারাপ মুভি বানায়, তা নয়। ওর প্লটগুলো হয় ডিফরেন্ট, অনেক গবেষনা করে এসব কাজে হাত দেয় ও। প্লট নির্বাচন থেকে অভিনয়শিল্পী নির্বাচন, সব নিজেই করে। মুভির মহরত থেকে শুরু করে রিলিজ পাওয়া পর্যন্ত অক্লান্ত পরিশ্রম করে ও। ওর মুভিগুলো বিভিন্ন আন্তর্জাতিক এওয়ার্ডও পেয়েছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে যে, প্রত্যেকটা ছবি ব্যবসার ক্ষেত্রে ফ্লপ। হাতে গোনা কয়েকটা মুভি মূলধন তুলতে পেরেছে, বাকিগুলো তেমন ব্যবসা করতে পারেনি।
‘চিন্তা করিস না,’ ওকে সান্ত্বনা দিই আমি, ‘দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে। তোর নেক্সট মুভিটা দেখবি সুপারডুপার হিট হবে।’
‘কচু হবে,’ আক্ষেপ বেরোয় ওর ভেতর থেকে, ‘বুঝে গেছি আমি, মুভি বানানো আমার কাজ নয়। অন্তত বাংলাদেশের দর্শকদের জন্য। শালারা অন্য দেশের গাঁজাখুরি কাহিনীর মুভি দেখে আনন্দে লাফালাফি করে, আর নিজের দেশে মানসম্মত মুভি তৈরী হলেও ফিরে তাকায় না। বর্তমান জেনারেশনকে দেখ। হিন্দি মুভির নাম থেকে গান, সব মুখস্ত। কোন মুভি কবে মুক্তি পাবে, ট্রেইলার কবে রিলিজ হবে, তার পরিচালক কে, প্রযোজক কে সব মুখস্ত করে বসে আছে। অথচ এদেরকেই দেশী কোন ভাল পরিচালকের নাম জিজ্ঞেস করলে বলতে পারবে না। ওদেরকে কে বোঝাবে, বাংলাদেশেও এখন মানসম্মত মুভি রিলিজ হয়। হয়তো সেগুলোর সংখ্যা খুব বেশী নয়, কিন্তু তবুও তো হয়। সেগুলোকে বিদেশীরা ঠিকই মুল্যায়ন করে, এওয়ার্ড দেয়, অথচ নিজের দেশের মানুষ অবহেলা করে।’
‘আসলে,’ নিজের নাক চুলকে বলি আমি, ‘অনেক খারাপের ভেতর দুয়েকটা ভাল থাকলে যা হয় আর কি। ভালটা খারাপের স্রোতে ভেসে যায়। বর্তমানের বেশীরভাগ মুভি তৈরিই করা হয় লোয়ার ক্লাশদের ভেবে। রিক্সাওয়ালা, শ্রমিক, মজুর, এদের কথা ভেবে কাহিনী লেখা হয়। তারাই যায় এগুলো দেখতে। একই কাহিনীকে ভেঙ্গেচুরে দশটা মুভি তৈরী করা হয়। মানুষ মজা পাবে কি করে? আর তাছাড়া, বর্তমানের অভিনয়শিল্পীদের কথাই ধর। সিনিয়র অভিনেতা-অভিনেত্রীদের অভিনয় ঠিক আছে। কিন্তু নতুন যে কয়টা এসেছে, আমার কাছে মনে হয় এগুলো মুভিতে না, বরং যাত্রাপালায় অভিনয় করার জন্য এসেছে। বাংলাদেশে আসলে ট্যালেন্টের অভাব নেই, আমরা খুঁজে বের করতে পারি না সেগুলোকে। মুভির কাহিনীগুলো যদি সবার কথা ভেবে তৈরী করা হতো, অভিনয়গুলো যদি আরো ভালো করা যেতো, ক্যামেরা, কস্টিউম, মেকাপ আর লোকেশন- এগুলো নিয়ে যদি আরো কাজ করা যেতো, তাহলেই সবাই দেখতে যেতো। ধীরে ধীরে তোর মুভির দর্শকও হতো। এখন যেখানে বাংলা মুভির নাম শুনলেই সবার চোখের পর্দা কুঁচকে যায়, সেখানে দুএকজন ভাল লোক থাকলে কিছু হবে না। তুই চেষ্টা করছিস, চেষ্টা করে যা। একসময় সব পাল্টাবে।’
‘হুম,’ একটা দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে আসে ওর বুক থেকে, ‘চেষ্টা তো করছিই। দেখি কি হয়।’
এমনসময় পেছন থেকে কে একজন যে রায়হানের নাম ধরে ডেকে উঠলো। পেছনে তাকাতে একটু স্বাস্থবান মানুষকে দেখতে পেলাম আমি।
‘এ হচ্ছে,’ উঠে দাঁড়িয়ে লোকটার সাথে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিলো রায়হান, ‘ফারদিন রহিম। আমার মতোই আরেকজন চিত্র পরিচালক।’
‘আরিয়ান শুভ,’ ফারদিন রহিমের দিকে হাত বাড়িয়ে দিলাম আমি, ‘নাইস টু মিট ইউ।’
বেশ আন্তরিক ভঙ্গিতেই আমার হাত ধরে মৃদু দুটো ঝাঁকি দিলেন ফারদিন। আবার আমরা চেয়ারে বসে পড়লাম।
কথা বলতে বলতে বেশ রাত হয়ে গেলো। অনেককিছুই জানা গেলো বর্তমান ফিল্ম সম্পর্কে। ফিল্ম নিয়ে দুজনের অনেক পরিকল্পনার কথা জানতে পারলাম, কিভাবে আজকের এই ফিল্মকে আরো অনেকদুর এগিয়ে নেওয়া যায়, এসম্পর্কে ওদের কথা শুনলাম, আমার স্বল্পজ্ঞানে যেটুকু কুলায়, সেটুকু সম্পর্কে বললাম। তারপর রায়হানের স্ত্রী জয়িতা ডাকতে আসায় খাবার খেতে ডাইনিংয়ে গিয়ে বসতে হলো।
*******
-‘So, deal?’
-‘Yeap. Deal. I’ll do it.’
-‘Thanks. I’m transferring the amount.’
-‘ok.’
ব্রাউজারে নতুন আরেকটা উইন্ডো ওপেন করলাম আমি। আমার সুইস ব্যাংকের একাউন্টটাতে লগইন করলাম দ্রুত। টাকাটা পাঠাতে বেশী সময় লাগানোর কথা না তার।
এতোক্ষন চ্যাট হচ্ছিল FR87 এর সাথে। গত আটমাসে আর কোন খবর পাইনি আমি তার। অবশেষে আজ নতুন একটা কন্ট্রাক্ট নিয়ে হাজির হয়েছে লোকটা আবার।
শেষ কাজটা করার পর প্রায় বছরখানেকের উপর নতুন কোন মনেরমতো কাজ পাইনি আমি। তাই একপ্রকার অস্বস্তি কাজ করছিল ভেতরে। জগতের মানুষগুলো এতো ভাল হয়ে গেলো কি করে, বসে বসে এটাই ভাবছিলাম। আজ হঠাত FR87এর মেসেজ পেয়ে তাই আর কাজটা করতে না করতে পারিনি আমি।
কাজের প্রনালী সেই আগেরবারের মতোই। ভিক্টিমকে FR87এর নির্ধারিত জায়গায় নিয়ে গিয়ে খুন করতে হবে। তারপর লাশটাকে বিকৃত করতে হবে, যেন দেখে মনে হয় যে কোন সাইকোর কাজ এটা। তবে পার্থক্য হচ্ছে, এবারের ভিক্টিম একজন ছেলে। তাই রাজি হয়েছি আমি।
ডিওসি একাউন্টে একটা মেসেজ এসেছে। মেসেজটা ওপেন করতেই লেখা দেখতে পেলাম, ‘Sending. Please wait.’
ছোট্ট করে উত্তর টাইপ করলাম আমি, ‘Ok.’
ত্রিশ সেকেন্ডের মধ্যেই আরেকটা মেসেজ আসলো তার কাছ থেকে, ‘Done. Full 3 millions.’
সুইস ব্যাংকের একাউন্টে চোখ বুলাতেই দেখতে পেলাম, নতুন ৩০ লাখ ডলার এড হয়েছে আগের টাকার সাথে। খুশী হয়ে উঠলাম আমি। দ্রুত ডিওসির মেসেজে টাইপ করলাম, ‘Ok. Got it.’
-‘Best of luck.’
-‘Umm.’
চ্যাট অফ করে টার্গেটের ছবি এবং ডিটেইলসের দিকে মনোযোগ দিলাম আমি। বয়েস খুব একটা বেশী নয়, আটাশ বছরের যুবক। বর্তমানে বাংলা মুভিতে অভিনয় করছে সে। নাম অঙ্কুর খান। বাংলা মুভির এই নায়ককে মারার প্রয়োজন পড়লো কেন হঠাত? তাও এতো টাকার বিনিময়ে?
কে জানে! আমার কাজ আমি করবো। টাকাটাই মুখ্য এখন আমার কাছে। মাত্র তিনদিন সময় দিয়েছে লোকটা। এর মধ্যে একে শেষ করতে হবে। এবং সেটা করার আগে একে কিডন্যাপ করে নিয়ে যেতে হবে গাজীপুরের এক বাড়িতে। তারপর তাকে যতটা সম্ভব কষ্ট দিয়ে মারতে হবে।
একেবারে সাইকো স্টাইলে!
*******
হাতুরী দিয়ে পেরেকটা ভালমতো ঠুকে আমার শিকারের ডানহাতটা টেবিলের সাথে গেথে দিলাম আমি। তারপর তাকালাম তার চেহারার দিকে।
যন্ত্রনায় বিকৃত হয়ে গেছে সুন্দর চেহারাটা। চিৎকার করছে অনবরত। চোখদুটো দিয়ে পানি বেড়িয়ে এসেছে অঙ্কুর খানের।
ঘন্টা তিনেক আগে একে কিডন্যাপ করেছি আমি। তারপর নিয়ে এসেছি এখানে। গাজীপুরেই শুটিংয়ে এসেছিল সে। ওর নতুন মুভি ‘চুরমার’র শ্যুটিং চলছিল। তারই একফাঁকে সিগারেট টানার জন্য স্পটের একটু বাইরে এসেছিল সে। সেই সুযোগেই কিডন্যাপিংটা করেছি আমি।
বাড়িটা অনেক পুরনো, এর আশেপাশে অনেকটা দুর পর্যন্ত আর কোন বাড়ি নেই। এটা একটা ভাল খবর। আমার কন্টাক্টের এসব দিকে মনোযোগ দেখে খুশী হয়েছি আমি। পারফেক্ট জায়গা এটা। অঙ্কুর খানের মুখটা পর্যন্ত আটকাতে হয়নি আমার।
টেবিল থেকে পানির বোতলটা তুলে নিলাম আমি। ক্যাপটা খুলে ঢকঢক করে অর্ধেকটা শেষ করে বোতলটা আবার টেবিলের উপর রাখলাম। এমনসময় কথা বলে উঠলো অঙ্কুর খান।
‘কে তুমি? কি চাও আমার কাছে? যা চাও বলো, আমি দিয়ে দেবো। তাও আমাকে আর কষ্ট দিও না।’
‘সরি মিষ্টার অঙ্কুর খান,’ টেবিলের নিচ থেকে একটা ব্যাগ বের করি আমি, ‘আমি আপনার কাছে কিছুই চাই না।’
‘কিছু চাও না?’ কিছুটা যেন অবাক হলো ও, ‘তাহলে, তাহলে আমাকে এভাবে ধরে এনেছো কেন? এভাবে আমার হাত পেরেক দিয়ে গাঁথার মানে কি?’
‘ডোন্ট টেক ইট পারসোনালী,’ ব্যাগের চেইন খুলতে খুলতে বললাম আমি, ‘আমার ব্যক্তিগত কোন আক্রোশ নেই আপনার উপর। আই’ম জাষ্ট ডুয়িং মাই জব।’
‘জব!’ একইভঙ্গিতে বলে উঠলো সে, ‘এটা কেমন জব? জানা নেই শোনা নেই, যে কাউকে এভাবে অত্যাচার করেন আপনি?’
‘হ্যাঁ,’ শান্তভঙ্গিতে জবাব দিলাম আমি, ‘শুরুটা আপনাকে দিয়ে। কে জানে ভবিষ্যতেও হয়তো আরো করতে হতে পারে। এখানে টাকাটাই মুখ্য অঙ্কুর খান। আই ক্যান ডু এভরিথিং ফর মানি।’
‘হোয়াট!’ উত্তেজিত হতে গিয়ে গুঙ্গিয়ে উঠলো সে। পেরেক গাঁথা হাতে চাপ পড়েছে, ‘ওহ! বাবারে! আহ... আচ্ছা, আচ্ছা ঠিক আছে। আমাকে বলো, কতো টাকা পেয়েছো তুমি এই কাজের জন্য। আমি তার ডাবল দেবো তোমাকে। প্লিজ, আমাকে ছেড়ে দাও।’
‘আপনি পারবেন না,’ ব্যাগ থেকে একটা ফিঙ্গার কাটার বের করে আমার চোখের সামনে ধরলাম আমি, ‘আর পারলেই বা কি? আপনাকে মারার কন্ট্রাক্ট পেয়েছি আমি। সেটা যথাযথভাবে সম্পন্ন করবো আমি।’
‘হোয়াট দ্যা...’ তার চোখের দিকে তাকাতেই কুঁকড়ে উঠলো সে, ‘এটা কি? এটা দিয়ে আবার কি করবে?’
‘আপনি হলিউডের মুভি দেখেন না, তাই না?’ ফিঙ্গার কাটারটা টেবিলের উপর রেখে বললাম আমি, ‘বিশেষ করে সাইকো টাইপ মুভি। দেখলে এটাকে চিনতে পারতেন। এটাকে বলে, ফিঙ্গারকাটার। আপনার বা হাতটাকে এখন খুলে দেবো আমি। তারপর একটা একটা করে আংগুল কেটে আলাদা করে ফেলবো। ডানহাতটা তো টেবিলের সাথে পেরেক দিয়ে গেথে দিয়েছি আগেই। আর আপনার সারা শরীরও বাঁধা আছে। যার ফলে আপনি কোন বাঁধা দিতে পারবেন না আমাকে।’
‘এটা, এটা,’ প্রচন্ড ভয়ে কুকড়ে গেছে অঙ্কুর খান, তুমি বাদ দিয়ে আপনি বলে উঠলো হয়তো এজন্যই ‘এটা দিয়ে আপনি আমার আঙ্গুল! ওহ গড! আপনি এটা করবেন না প্লিজ। প্লিজ। এটা ঠিক নয়। ওহ... অহ বাবারে। ডানহাতটা গেছে একেবারে। ... প্লিজ ভাই, প্লিজ বলছি। ছেড়ে দিন আমাকে।’
‘সরি,’ সংক্ষেপে উত্তর দিয়ে তার বাহাতটা খুলে টেবিলের উপর রাখলাম আমি। একহাতে হাতটা চেপে ধরে অন্যহাতে ফিঙ্গার কাটারটা তুলে নিলাম।
বুড়ো আঙ্গুলটা কেটে ফেলতেই অমানষিক চিৎকার করে উঠলো অঙ্কুর খান। ভয়ানক কষ্ট পাচ্ছে সে, বুঝতে পারছি। কিন্তু কিছুই করার নেই আমার। কাজটাকে সম্পন্ন করতে হবে আমার। আরো ঘন্টাখানেক টরচার করতে হবে। অমানষিক টরচার।
‘এবার দ্বিতীয় আঙ্গুলটা কাটবো,’ শীতল কন্ঠে বলে উঠলাম আমি।
আবার চিৎকার করে উঠলো অঙ্কুর খান।
*******
‘তোর এবারকার মুভি তো হিট রে,’ ওপাশে ফোন রিসিভ হতেই বলে উঠলাম আমি। ওপাশে আছে রায়হান।
‘হ্যাঁ দোস্ত,’ ওর গলায় খুশী, ‘অবশেষে এই মুভিটা হিট হলো।
‘কংগ্রাচুলেশন,’ খুশী খুশী গলায় বলে উঠলাম আমি, ‘একটা পার্টি দে দোস্ত।’
-‘হ্যাঁ, দেবো পার্টি। তোর ভাবী খুব খুশী আজকে।’
-‘খুশী তো হবেই। স্বামীর সাফল্যে কোন স্ত্রী খুশী হয়না বল?’
-‘হ্যাঁ, তাই।’
-‘ওকে দোস্ত। ভাল থাক। আর পার্টিতে দাওয়াত দিতে ভুলিস না।’
-‘ওকে। ভাল থাকিস।’
কলটা কেটে দিয়ে সেলফোন বিছানার দিকে ছুঁড়ে দিলাম আমি। এইমাত্র অফিস থেকে ফিরেছি। রুমে ঢুকতে ঢুকতেই আরেক বন্ধুর কল পেয়ে জানতে পারলাম যে রায়হানের এবারের মুভি হিট হয়েছে। ভালই ব্যবসা করেছে এবারেরটা। যাক, ওর কপাল খুললো মনে হয়। গত একবছর প্রচুর পরিশ্রম করেছে বেচারা এই মুভির জন্য। এটাই হয়তো ওর টারনিং পয়েন্ট। এতোদিন এওয়ার্ড পেয়ে এসেছে, এখন থেকে হয়তো আগের চেয়ে বেশী টাকার মুখও দেখবে।
কাপড়চোপড় ছেড়ে বাথরুমে ঢুকলাম আমি। ফ্রেশ হয়ে এসে ফ্রিজ খুলে কিছু খাবার বের করে নিয়ে বিছানার পাশে ছোটটেবিলটাকে বসে পড়লাম। ল্যাপটপের ডালা উঠিয়ে অন বাটন টিপে প্লেটে রাখা খাবারের দিকে মনোযোগ দিলাম।
ল্যাপটপ অন হতেই মজিলা ব্রাউজার ওপেন করে ইউটিউবে ঢুকলাম আমি। এতোদিন খুবই ব্যস্ত ছিলাম। রায়হানের মুভির ট্রেইলার পর্যন্ত দেখতে পাইনি। এখন দেখবো সেটা।
সাড়ে তিন মিনিটের ট্রেইলার দেখে আমি অভিভুত। দুর্দান্ত ট্রেইলার! ট্রেইলার দেখেই কাহিনী কিছুটা আঁচ করতে পারলাম। বাংলাদেশেও এরকম মানের কাহিনী নিয়ে মুভি হয় দেখে কিছুটা অবাকই হলাম। অবশ্য যেহেতু রায়হানের পরিচালনায়, সেহেতু এমনটাই হবে, জানার কথা।
প্লেটের খাবার পেটের ভেতরে আশ্রয় নিয়েছে ইতোমধ্যেই। একহাতে প্লেটটাকে নিয়ে চেয়ার উঠে দাড়াতে গেলাম আমি, কিন্তু একটা জিনিস দেখে আবার বসে পড়তে হলো। স্ক্রিনের ডানদিকে ইউটিউবের কিছু সাজেশন দেয়া আছে, সেখানেই এটা। কিন্তু এটা কি? প্লেটটা আবার টেবিলের এককোনায় রেখে কন্টেন্টটাতে ক্লিক করলাম আমি। দ্রুত এই ভিডিওটা চলে এলো স্ক্রিনে।
আরে, এই মেয়েকে তো আমি চিনি! FR87এর দেয়া সেই কন্ট্রাক্ট, যেটা আমি বাতিল করে দিয়েছিলাম! কিন্তু এসব কি?
ল্যাপটপের স্ক্রিনে চোখ লাগিয়ে বসে আছি আমি। সেখানে ভিডিওটা চলছে। মেয়েটাকে পাশবিকভাবে খুন করার ভিডিও!
দ্রুত ভিডিওয়ের শিরোনামের দিকে তাকালাম আমি। সেখানে লেখা ‘NOWRIN HAYDAR BRUTAL MURDER EXCLUSIVE VIDEO’. একঘন্টার ভিডিও এটা। এবার একটু নিচে তাকালাম আমি। এটা আপলোড করা হয়েছে একবছর আগে। স্পষ্ট মনে আছে আমার, এই মেয়েকে ঠিক এভাবেই খুন করার কন্ট্রাক্ট দেয়া হয়েছিল আমাকে দেড় বছর আগে। তাহলে কি?
হ্যাঁ, আপলোডারের নাম দেখে স্পষ্টভাবে বুঝতে পারলা, এটা কার কাজ। FR87 নামেই আপলোড করা হয়েছে এটা।
দ্রুত আপলোডারের প্রোফাইল অন্য আরেকটা ইউন্ডোজে আনার চেষ্টা করলাম আমি। কিন্তু হচ্ছে না। আবার চেষ্টা করলাম আমি। একই কাহিনী।
দ্রুত প্লেট নিয়ে উঠে দাঁড়ালাম আমি। প্লেটটা রেখে এসে একটা ডায়েরী আর কলম নিয়ে বসে পড়লাম টেবিলটাতে। দ্রুত নওরিন হায়দারের ভিডিও লিঙ্কটা টুকে নিলাম ডায়েরীতে। তারপর ল্যাপটপ রিস্টার্ট করার অপশন বেছে নিলাম। আমি জানি আমাকে কি করতে হবে।
আমার ল্যাপটপে তিনটে পার্টিশন দেয়া। একটাতে উইন্ডোজ এইট, একটা লিন্যাক্স, অন্যটাকে স্কাইব্লু। ল্যাপটপ আবার স্টার্ট হওয়ার সময় স্কাইব্লুর সাহায্যে ওপেন করলাম আমি। কাজটা লিন্যাক্স দিয়েও করা যায়, তবে তাতে ফুটপ্রিন্টের ভয় থাকে। স্কাইব্লুতে এই ভয়টা নেই।
স্কাইব্লু ওপেন হতেই সেখানে স্ক্রিমকিউ ব্রাউজারটা ওপেন করে wdw.diaryofcontract.org এ লগইন করি আমি। অন্য একটা উইন্ডো খুলে সেখানে ইউটিউবের সেই লিঙ্কটা টাইপ করে এন্টারে চাপ দিতেই চলে আসে সেই ভিডিওটা। আশা করি যা করতে চাই আমি, এবার তা হবে।
আমার ধারনা সঠিক। সত্যি সত্যি আপলোডারের প্রোফাইলে ঢুকতে পারলাম আমি। এবার আমার কাছে কাহিনী পরিস্কার।
ডিপওয়েবের কিছু কিছু জিনিস, যেগুলো কম সিকিউরিটি দেয়া, সেগুলো মাঝে মাঝে গুগলে বা অন্য ওয়েবসাইট, যেমন ইউটিউব, মার্ডার অরগ, মার্ডারপিডিয়া বা ক্রাইমপিডিয়াতে চলে আসে। এই ভিডিওটাও একইরকম ছিল। শুধু মাত্র এই লিঙ্কটা কোনভাবে সিকিউরিটির ঘাটতির ফলে ইউটিউবে দেখা যাচ্ছিল, যার ফলে আমার চোখে পড়ে ব্যাপারটা।
আপলোডারের প্রোফাইল ঘাটতেই বুঝতে পারলাম, এটা আসলে সেই FR87ই, যার সাথে আমার কথা হয়েছিল। আমাকে দেয়া কন্ট্রাক্টটা আমি না নেওয়ায় সেটা চলে যায় আরেক কিলারের কাছে। এই জগতে কিলারের অভাব নেই। আমি যদি কোন কাজ না করি, সেটা আরেকজন করবে, এটাই নিয়ম।
কিন্তু আমার মাথায় একটা জিনিস ঘুরছে, এই মেয়েটাকে যেভাবে খুন করার কথা বলেছিল FR87, ঠিক একইভাবে খুন করতে বলা হয়েছিল চিত্রনায়ক অঙ্কুর খানকেও। কন্ট্রাক্ট দুটোর ধরন একই। তারমানে কি অঙ্কুর খানের মৃত্যুর দৃশ্যও ভিডিও করে আপলোড করা হয়েছে!
সম্ভব, এটা অবশ্যই সম্ভব। কারন অঙ্কুর খানকে আমি মেরেছি FR87এর বলা জায়গায়তেই। আগে থেকে যদি সেখানে ক্যামেরা ফিট করে রাখে সে, তাহলে পুরোটা ধরা পরে যাবে ক্যামেরায়।
ওহ মাই গড! যদি তাই হয়, তাহলে আমি শেষ। আমার পরিচয় নিশ্চয়ই এতোদিনে ফাঁস হয়ে গেছে সবার সামনে। সত্যি কি তাই?
জানার উপায় এখন আমার একটাই। দ্রুত আপলোডারের আপলোড করা ভিডিওগুলোর শিরোনাম চেক করলাম আমি। মোট আটশত বাহাত্তরটা ভিডিও, প্রত্যেকটা ভিডিওয়ের শিরোনাম টার্গেটের নাম অনুসারে। কিন্তু এর মধ্যে কোথাও অঙ্কুর খানের নাম নেই। তবে কি ভিডিওটা আপলোড করা হয়নি এখনো?
প্রত্যেকটা ভিডিওয়ের সাথে লেখা ব্রুটাল মার্ডার এক্সক্লুসিভ ভিডিও। সত্যি বলতে ব্রুটাল মার্ডার বলতে আমার তেমন কোন ধারনা নেই। শুধু জানি, ব্রুটাল মার্ডার শব্দের মানে হচ্ছে পাশবিক খুন।
দ্রুত নেট ঘাটতে লাগলাম আমি। পেইজের পর পেইজ লেখা আছে এসব নিয়ে। কিন্তু এধরনের মার্ডারের কারন অজানা।
এমনসময় FR87 এর নিজের লেখা একটা আর্টিকেল চোখে পড়লো আমার। সেখানে ব্রুটাল মার্ডারের মাহাত্য বর্ণনা করেছে সে।
‘ব্রুটাল মার্ডার হচ্ছে এমন একটা খুন, যা অত্যন্ত পাশবিকভাবে করা হয়। সাধারনত সাইকো/মানষিকভাবে বিকৃত রোগীরা এই কাজটা করে থাকে। কিছু ব্রুটাল মার্ডার দুর্ঘটনাবশত হয়, কিছু হয় পূর্বপরিকল্পিত।
শুধু যে সাইকো বা মানষিকভাবে বিকৃত লোকই ব্রুটাল মার্ডার করে এমন নয়, তবে তাদের সংখ্যাটাই বেশী। অনেক সুস্থ ব্যক্তি নিজের হীনস্বার্থ চরিতার্থ করতে এগুলো করে, অনেক রাজনীতিবিদ দেশে আন্দোলনের নামে এসব করে। আবার অনেক জঙ্গিগোষ্টীও এগুলো করে থাকে।
তবে সব খারাপ কাজে যেমন আমাদের মতো মানুষ ফায়দা খুঁজে, এখানেও আময়া ফায়দা খুঁজে নিয়েছি। ব্রুটাল সেক্সের মতো ব্রুটাল মার্ডারকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে যাবো আমরা।
কি? অবাক হলেন?
অবাক হবার কিছু নেই। ব্যাপারটা বুঝিয়ে দেয়া হবে আপনাদের। এই ব্রুটাল মার্ডার নিয়ে আমার পরিকল্পনা অনেকটা পর্ণের মতো। পর্ণ দিয়েই বোঝাচ্ছি আপনাদের।
পর্ণ ভিডিওগুলোতে আমরা কি দেখতে পাই? এর বিজনেস কিভাবে হয় বা এর ইন্ড্রাষ্টি কিভাবে গড়ে উঠেছে জানেন?
পর্ণ ভিডিওগুলোতে আমরা তাই দেখি, যা পরিচালক এবং অভিনেতা অভিনেত্রীরা আমাদের দেখায়। টাকার বিনিময়ে তারা তাদের যৌনশিল্প প্রদর্শন করে। হ্যাঁ, এখানে তাদের কাছে টাকাটাই মুখ্য। আপনি হয়তো বলতে পারেন, এখানে ওদের লাভটা কি? এটা ঠিক যে, প্রফেশনাল পর্ণ আর্টিস্ট ছাড়া আর কারো কোন লাভ নেই। যারা অ্যামেচার, তারা হয়তো নিজেদের ভাল সময়ে ওগুলো ভিডিও করে রাখে, কিন্তু যখন সম্পর্কে তিক্ততা এসে যায়, তখন সেগুলো নেটে আপলোড করে। এবার আসি প্রফেশনালদের কথায়।
প্রফেশনালী যারা পর্ণে অভিনয় করে, তাদের সবকিছুই থাকে পরিকল্পনামাফিক। এখানে যৌনতৃপ্তি থাকে না, শুধু অভিনয়ের স্বার্থে অভিনয় করে ওরা। তাদের কাছে নির্দিষ্ট স্ক্রিপ্ট থাকে, সেই অনুযায়ী তারা শুধু অভিনয় করে যায়। আর সাধারন দর্শক সেসব দেখে শিহরিত হয়।
এগুলোর বাজারজাত হয় কিভাবে? আপনি হয়তো জানেন যে, বর্তমান পৃথিবীতে পর্ণের বাজার সবচেয়ে দামী। কিন্তু এগুলো কিভাবে বাজারজাত হয়, তা আপনি জানেন না। এগুলো তো আর সামাজিক ভিডিও নয় যে হলে হলে বা সিনেপ্লেক্সে মুক্তি দেয়া হবে! এগুলো প্রথমে নির্দিষ্ট কোম্পানীর ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়, বাট দে আর নট ফর ফ্রি। প্রথমে যে ভিডিওগুলো ছাড়া হয়, সেগুলো দেখতে গেলে আপনাকে নগদ টাকা গুনতে হবে ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে। ডাউনলোড করতে গেলেও তাই। প্রত্যেকটা ভিডিও প্রকাশের প্রথম দু-পাঁচমাস পর্যন্ত এগুলো চড়া দামে কিনতে হয়। তারপর সেগুলো বিভিন্ন সাধারন ওয়েবসাইটে ফ্রিতে পাওয়া যায়। তখন আর এগুলো নিয়ে পরিবেশকদের মাথাব্যাথা থাকে না। এগুলো বিক্রি হলো না মানুষ ফ্রিতে নিলো, সেগুলো তাদের দেখার বিষয় নয়। কারন ইতোমধ্যে তারা যা লাভ করার তা করে নিয়েছেন।
পৃথিবীতে পর্ণ বিজনেস অন্যতম দামী একটা বিজনেস। হলিউডের মুভিগুলোও তাদের ধারে কাছে ঘেষতে পারে না। আর কখনো পারবে বলেও মনে হয় না। তবে হ্যাঁ, আমরা পারবো। আর তা করবো ব্রুটাল মার্ডার দিয়ে।
আপনি হয়তো ভাববেন, এটা কিভাবে সম্ভব? হ্যাঁ, এটা সম্ভব। কারন, প্রত্যেকটা মানুষের ভেতরেই ভায়োলেন্স বলে একটা জিনিস থাকে। এটা মানুষের জিনের সাথে মিশে আছে। ছেলেরা পর্ণ দেখে কেন? কারন সে নিজে ঐসব মেয়ের কাছে যেতে পারে না বা নিজে সুখ পায়না। তাই এইসব ভিডিও দেখে নিজেকে ঐসব মুভির নায়ক বলে কল্পনা করে নিজের বিকৃত লালসা মেটায়। মেয়েদের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। এসবকিছুর মুলে মানুষের বিকৃত লালসা। এর জন্যই এই ইন্ড্রাষ্ট্রি টিকে আছে।
একই কথা খাটবে ব্রুটাল মার্ডারের ক্ষেত্রেও। প্রত্যেকটা মানুষের কিছু না কিছু শত্রু আছে, আর তারা তাদেরকে পাশবিকভাবে খুন করতে চায়, কিন্তু বেশীরভাগ ক্ষেত্রে তা তারা করতে পারে না। আমরা তাদের ভেতরের পশুকে এইসব ভিডিওর মাধ্যমে জাগিয়ে দেবো। তারা নিজের শত্রুকে টার্গেটের জায়গায় কল্পনা করবে, আর খুনীর জায়গায় নিজেকে। এভাবেই নিজের বিকৃত ইচ্ছে মেটাবে ভিডিওয়ের সাহায্যে।
আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি মাত্র পাঁচ বছর, হ্যাঁ, মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যেই পর্ণের জায়গা দখল করবে ব্রুটাল মার্ডার বা বিএম। কথাগুলো হাস্যকর লাগলেও আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি, এটাই হবে। আমি, আমরাই এটা করবো।
ধন্যবাদ পুরোটা পড়ার জন্য।’
দ্রুত আর্টিকেল পোষ্টের তারিখটার দিকে নজর দিলাম আমি। ২৮/৩/২০০৮। ওহ মাই গড! আর এখন ২০১৪! এর মানে প্রায় ছয়বছর আগে থেকে এসব ভিডিও বাজারজাত করা শুরু হয়েছে?
কিন্তু একটা জিনিস আমি বুঝতে পারছি না, মিষ্টার FR87 এর পরিকল্পনা কি সফল হয়েছে? যদি সফল হতো, তাহলে তো সবার মুখে মুখে পর্ণের মতো জিনিসটার নাম থাকতো।
নাহ! আমার মনে হয় FR87 তার পরিকল্পনা সফল করতে পেরেছে। হয়তো এটা এমন একটা বাজার, যা সম্পর্কে বাংলাদেশের সাধারন মানুষ জানেও না। জানে না বলে কি জানবেও না?
*******
-‘I want to track him. Will you help me?’
-‘Give me the money, I’ll finish your job.’
-‘Are you sure? Can you do that?’
-‘Of course.’
-‘Ok. You’ll get your money after 15 minutes.’
-‘Waiting bro.’
চ্যাট অফ করে চেয়ারে হেলান দিলাম আমি। টেবিলে থেকে প্যাকেটটা তুলে নিয়ে সেখান থেকে একটা সিগারেট বের করে ধরিয়ে ঠোটে ঝুলালাম। ভাবছি আমি।
FR87কে ট্র্যাক করতে চাই আমি। যেভাবেই হোক তাকে ট্র্যাক করা প্রয়োজন আমার জন্য। কারন তার কাছে আমার খুন করার প্রমাণ আছে, আর তা সে ব্রুটাল মার্ডারের ভিডিওয়ের সাথে আজ না হয় কাল আপলোড করবেই। তার আগেই তাকে থামাতে হবে।
কে কি করলো, কে কিভাবে টাকা কামালো, এসব নিয়ে আমার মাথাব্যাথা নেই। আমার দরকার নিজে বাঁচা। বিবেক বলে যে জিনিসটা, তা আমার নেই। আমি স্বার্থপর।
আমি জানি FR87কে ট্র্যাক করা সহজ হবে না। সাধারন ইন্টারনেটের একটা সামান্য একাউন্ট হ্যাক করতে গেলে অনেককে গলদঘর্ম হতে হয়, আর এ তো ডিপওয়েব। তাই পৃথিবীর হাইয়েষ্ট পেমেন্ট হ্যাকারকে ভাড়া করতে যাচ্ছি আমি এই কাজের জন্য। FR87এর প্রোফাইল, তার ওয়েবসাইট, ব্রুটাল মার্ডারের ভিডিও আপলোডের সাইট, এগুলো হ্যাক করার দায়িত্ব দিয়েছি আমি তাকে। এই সাইবার জগতে হি ইজ দ্য বেষ্ট।
ধীরে ধীরে সিগারেটে টান দিচ্ছি আমি। এমনসময় আমার সেলফোনটা তীক্ষন্স্বরে বেজে উঠলো। ভ্রু কুঁচকে তার দিকে তাকাতেই দেখতে পেলাম রায়হানের কল।
-‘হ্যালো?’
-‘হ্যাঁ হ্যালো। কই তুই?’
-‘বাসায়। কেন?’
-‘তোর না আজ পার্টিতে আসার কথা? আমার মুভির সাক্সেস পার্টির কথা ভুলে গেছিস?’
-‘সরি দোস্ত। হঠাত করেই মাথাটা ধরেছে। বিছানায় শুয়ে আছি আমি। আমার পক্ষে আসা সম্ভব নয়।’
-‘ওহ!’
-‘সরি এগেইন। রাখলাম আমি।’
বলেই ফোনটা কেটে দিলাম আমি। আবার মনোযোগ দিলাম সিগারেটে।
সিগারেট শেষ করে আবার ল্যাপটপের দিকে নজর দিলাম। সুইস ব্যাংকের একাউন্টে লগইন করে টাকাটা হ্যাকারের একাউন্টে পাঠিয়ে দিলাম। তারপর আবার নক করলাম হ্যাকারকে।
-‘Sent.’
-‘Got it bro. Now Details.’
-‘Profile link: wdw.diaryofcontract.com/profile:22218765265787. Website link: wdw.brutalmurder.fr87.org.’
-‘After two days. Savvy.’
-‘Bye.’
ভেতর থেকে একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস বের করে দিলাম আমি। FR87 কে ট্র্যাকিং এর কাজটা ভালোভাবে হলেই হয়!
*******
-‘All yours.’
-‘Thanks bro.’
-‘My pleasure. Bye. See you again.’
-‘Anytime.’
চ্যাট অফ করে ল্যাপটপের ডালাটা নামিয়ে রাখলাম আমি। কাজ হয়েছে। দুইদিনের মধ্যেই কাজটা শেষ করেছে হ্যাকার। FR87কে ট্র্যাক করেছে, তার একাউন্ট, ওয়েবসাইট আর ব্যাংক একাউন্ট সব হ্যাক করে পুরোটা পাঠিয়ে দিয়েছে সে আমার কাছে।
খুশীর খবর হলো, FR87 একজন বাংলাদেশী। ঢাকাতেই থাকে সে। আসল নাম ফারদিন রহিম। রায়হানের বন্ধু সেই চিত্র পরিচালক।
‘গট ইউ,’ মৃদুস্বরে বলে উঠি আমি, ‘তুমি ঠিক যেভাবে কাজগুলো করতে সবাইকে কন্ট্রাক্ট দিতে, ঠিক সেভাবেই মরবে তুমি। আর তোমার ভিডিও আপলোড হবে তোমারই ওয়েবসাইট থেকে।’
*******
‘কেমন লাগছে?’ ফারদিন রহিমের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলাম আমি, ‘কষ্ট হচ্ছে নাকি মিষ্টার FR87?’
ব্যথায় তার মুখটা বিকৃত হয়ে আছে। মাথার মধ্যে একটা বাড়ি মেরেছিলাম, ফলাফল সঙ্গে সঙ্গে অজ্ঞান এবং কিছুক্ষন পর মাথার ঐ জায়গায় বড়সড় একটা আলু। সেই ব্যাথায় তার মুখটা বিকৃত হয়ে আছে।
‘হোয়াট ইজ দিস?’ খেঁকিয়ে উঠলো সে, ‘এসব কি?’
‘দ্যা সেট অফ এনাদার ব্রুটাল মার্ডার,’ শান্তকন্ঠে উচ্চারন করলাম আমি, ‘কাজটা শুরু করেছিলে তুমি, তাই ভাবলাম, তোমার মৃত্যুটাও এভাবেই হোক।’
‘মানে কি?’ কিছুটা ধাতস্ত হয়েছে সে, ‘তুমি একজন খুনী?’
‘মানে হচ্ছে এই,’ তার তার সামনে রাখা টেবিলটার অপর পাশে একটা চেয়ারে বসে বললাম আমি, ‘তুমি আমাকে কন্ট্রাক্ট দিয়েছিলে অঙ্কুর খানকে ব্রুটালি কিল করতে। তুমিও ঠিক একইভাবে মারা যাচ্ছো ফারদিন রহিম। হ্যাঁ, আমি একজন খুনী। AS666 আমার ছদ্মনাম।’
ধীরে ধীরে তার চোখগুলো যেন বিস্ফারিত হয়ে উঠলো। তারপর মৃদু মাথা নেড়ে হাসতে শুরু করলো সে।
‘কেন করলে এসব?’ গম্ভীরগলায় বলে উঠলাম আমি।
‘কাম অন,’ মাথা নেড়ে বলে উঠলো সে, ‘তুমি তো বুদ্ধিমান মানুষ। একটু বিষয়টা বোঝার চেষ্টা করো, ইট’স মাই মেইন বিজনেস। ব্রুটাল মার্ডার, মাই বিজনেস।’
‘বিজনেস?’ রেগে উঠলাম আমি, ‘চড়িয়ে দাঁত ফেলে দেয়া দরকার তোমার।’
'ইয়েস, দিস ইজ বিজনেস,' শান্তভঙ্গিতে বলে উঠলো ও, 'পিওর বিজনেস। অনেকেই মনে করে অনলাইন জগতে পর্নোগ্রাফির বাজার সবচেয়ে বেশী। মুভি, নাটক বা অন্যান্য ভিডিওয়ের তুলনায় আসলেই বেশী। কিন্তু আমি যা করছি, সেটার সামনে পর্ণোগ্রাফি কিছুই নয়। সারাবিশ্বে পর্ণোগ্রাফি বাজার দখল করে আছে মাত্র একত্রিশ শতাংশ। মুভি, সিরিয়াল, ভিডিও সং দখল করতে পেরেছে মাত্র আঠেরো শতাংশ। আর এসব জিনিস! ইউ কান্ট ইমাজিন, ফরটি সেভেন পার্সেন্ট!'
'তাই,' তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে তার দিকে তাকালাম আমি, 'নিজের পকেট ভরতে গিয়ে আরেকজনকে এভাবে....'
'গ্রো আপ' আমাকে বাধা দিয়ে বললো সে, 'দিস ইজ রিয়েলিটি ম্যান। আগেই বলেছি, ইটস জাস্ট বিজনেস। আজকে আমি বাদ দেবো, কাল আরো দশজন করবে। লাইক পর্ণ। একজন পর্ণস্টার অভিনয় করা ছেড়ে দিলেই জগতটা বিশুদ্ধ হয়ে যাবে না। সানি লিয়নকে দেখ। ও পর্নগ্রাফি বাদ দিয়েছে বলে কি ইন্ড্রাস্টি থেমে আছে? না, ওর জায়গায় আরো দশটা সানি এসেছে। এটাও ঐরকম।'
‘আমাকে এর মধ্যে জড়ালে কেন?’ শান্তভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করলাম আমি।
‘আমি জানতাম না,’ মাথানিচু করে বললো সে, ‘আমি জানতাম না যে তুমিই AS666. আমি ভেবেছিলাম তুমি অন্যদেশী। আর কাজের কথা বলছো? গত ছয় বছরে আমরা অনেক পরীক্ষা করেছি এর উপর। মানুষকে বিভিন্ন স্বাদের বিনোদন দিতে হয়। তাহলেই তারা টাকা দেয়। আর জানোই তো, মানি ইজ দ্যা গড। অবশেষে আমি ঠিক করি যে, কাজগুলো প্রফেশনাল কিলারদের দিয়ে করালে আরো নিখুঁত হবে। কিলারদের কন্ট্রাক্ট দেয়া হবে খুন করার জন্য। তারা ব্রুটালি খুন করবে। আর সেগুলো আমরা চড়া দামে বেচবো। প্ল্যান অনুসারেই হচ্ছিল সব। প্রচুর টাকা কামাচ্ছিলাম আমরা। আমাদের দেখাদেখি আরো অনেকেই প্রফেশনালী এগুলো শুরু করে। কিন্তু সবই হয় গোপনে। মেকিং থেকে রিলিজ, ডিস্ট্রিবিউশন, সবই হয় ডিপওয়েবের মাধ্যমে। গত ছয় বছরে একটা বিএম ইন্ড্রাষ্টি দাঁড়িয়ে গেছে গ্লোবালি। অনেকটা ফিল্ম ইন্ড্রাষ্টির মতো। সবকিছু এখনো গোপনেই করা হয়, তবে ২০১৫ থেকে আমরা সবাইকে জানিয়ে এগুলো রিলিজ করবো। এমনকি আমাদের এই ইন্ড্রাষ্টিকে পর্ণের মতো স্বীকৃতিও দেয়া হবে। কিন্তু আমি সত্যি জানতাম না যে এর মধ্যে তুমি এসে পড়বে। ইট ওয়াজ ইউর ব্যাড লাক।’
‘মাই ব্যাড লাক?’ তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে তাকাই আমি তার দিকে, ‘কিভাবে?’
‘হা হা হা,’ হেসে উঠলো সে, ‘তুমি কি ভেবেছো, এই ইন্ড্রাষ্টিটা খুবই ছোট? আর এই ইন্ড্রাষ্টির হেড আমি? আর আমাকে মারলেই এই ইন্ড্রাষ্টির সব কাজ বন্ধ হয়ে যাবে? হা হা হা। ভুল ভেবেছো তুমি। আমি এর একটা কানেকশন মাত্র। আমার মৃত্যুতে এই ইন্ড্রাষ্টির কিছুই আসবে যাবে না। আর FR87 নামে আমি তোমার সাথে কন্ট্রাক্ট করলেও আসলে আমি FR87 নই। আমি শুধু তার একাউন্ট ব্যবহার করে কিলারদের সাথে কন্ট্রাক্ট করতাম। আসল FR87 এর টিকিটিও ছুতে পারবে না তুমি। তোমার সামনেই সে বসে থাকবে, আর তবুও তুমি তাকে চিনতে পারবে না।’
‘তোমার কেন এমন মনে হলো যে,’ শান্তভঙ্গিতে বলে উঠলাম আমি, ‘আমি তোমাদের ইন্ড্রাষ্টি ধ্বংস করবো বলে তোমাকে ধরে এনেছি?’
‘তাহলে?’ অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো সে।
‘তুমিই তো একটু আগে বললে যে,’ মাথা নেড়ে বললাম আমি, ‘এই কাজ তুমি না করলে আরেকজন করবে। আমি জানি তোমাকে মেরে আমার কোন লাভ নেই। আর একটা কথা, এই ইন্ড্রাষ্টির কি হলো, কেন হলো, এটা স্বীকৃতি পেলো কি পেলো না, এসব নিয়ে আমার কোন মাথাব্যাথা নেই। আমি অলরেডি তোমাদের ওয়েবসাইট এবং ব্যাংক একাউন্ট হ্যাক করেছি। তোমাদের ব্যাংক একাউন্ট খালি করে দিতে বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করিনি আমি। তোমাদের ব্যাংকে এখন একটা ফুটো কড়িও নেই। আমি তোমাকে মারতে চাই এই কারনে যে, তুমি আমাকে ব্যবহার করেছো আমার অজান্তে নিজের ফায়দার জন্য। বুঝেছো?’
‘ওও,’ মাথা নিচু করে বলল সে, ‘তাহলে আর কি! মেরে ফেলো আমাকে।’
‘এতো সহজে?’ ওর দিকে ঝুঁকে এলাম আমি, ‘এতো সহজেই বলে দিলে যে “মেরে ফেলো আমাকে”! নাহ! তোমাকে তো আমি আগেই বলেছি যে তোমার মৃত্যুটাও হবে একটা ব্রুটাল মার্ডার। যথাসম্ভব কষ্ট পেয়ে মরবে তুমি। আর সেই ভিডিও আপলোড হবে তোমাদেরই ওয়েবসাইট থেকে। বুঝলে?’
এবার আতঙ্ক দেখা দিলো ফারদিনের চোখে। নিচ থেকে একটা ব্যাগ টেবিলের উপরে তুললাম আমি। ভেতর থেকে একটা পেরেক আর একটা হাতুরী বের করে আনলাম।
‘অঙ্কুর খানের কথা মনে আছে?’ উঠে দাঁড়ালাম আমি, ‘ওকে কিভাবে মেরেছিলাম মনে আছে? একইভাবে মরবে তুমি।’
‘না,’ আতঙ্কে চিৎকার করে উঠলো ফারদিন করিম, ‘আমাকে মারতে চাও মারো, কিন্তু ওভাবে না। আমি ওভাবে মরতে চাই না। প্লিজ।’
ওর ডানহাতের বাধন খুলে দিলাম আমি। তারপর সেটাকে টেবিলের উপর চেপে ধরলাম।
‘প্লিজ,’ চোখ দিয়ে পানি বেড়িয়ে এসেছে তার, ‘প্লিজ।’
মৃদু হেসে উঠলাম আমি।
*******
ল্যাপটপের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে আছি আমি। সামনে সুইচ ব্যাংকে FR87এর একাউন্ট শো করছে।
ফারদিন রহিমের মার্ডারের ভিডিওটা আপলোডের পর একসপ্তাহ কেটে গেছে। অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম আমি, মাত্র একসপ্তাহের মধ্যেই ভিডিওটা আয় করেছে সাড়ে তিনশ কোটি মার্কিন ডলারের মতো। কারা ডাউনলোড করে এগুলো, যদি জানতে পারতাম!
ফারদিনকে মারার আগে ওর ল্যাপটপ থেকে আমার আর অঙ্কুর খানের ভিডিওটা উদ্ধার করি আমি। ও শপথ করে বলেছে, এর কোন কপি করা হয়নি। ওর চোখের সামনেই ভিডিওটা ডিলেট করে দিয়ে ঐ ফোল্ডারটা কয়েকবার ফুল করি আর ডিলিট মারি, যাতে কখনো কোনভাবেই ভিডিওটা আর না পাওয়া যায়।
এমনসময় কলিংবেলের শব্দে সচকিত হলাম আমি। ল্যাপটপের ডালাটা বন্ধ করে দরজা খুললাম। দরজায় দাঁড়িয়ে আছে রায়হান।
‘ভেতরে আয়,’ ওকে নিয়ে ভেতরের রুমে গিয়ে বসলাম আমি।
‘দোস্ত,’ একটা সোফায় বসে পড়লো রায়হান, ‘তোর কাছে একটা দরকারে এসেছি আমি।’
‘জানি,’ পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেটতা বের করে একটা শলা বাড়িয়ে দিলাম ওর দিকে। আরেকটা নিজে ধরিয়ে ঠোটে ঝুলিয়ে নিলাম, ‘আমি জানি তুই কেন এসেছিস। কিন্তু অবাক লাগছে এটা ভেবে যে এতো পরে কেন এলি।’
‘তুই,’ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো ও, ‘তুই জানতিস?’
‘হ্যাঁ,’ সিগারেটে একটা জোড়ে টান দিয়ে বলে উঠলাম আমি, ‘জানতাম। তোর পুরো নাম ফাহাদ রায়হান, আমরা শুধুই রায়হান বলে ডাকতাম। ফাহাদ রায়হান, ওরফে FR87. ফারদিন রহিমকে মারার আগে ওর পেট থেকে সব কথা বের করে নিয়েছিলাম আমি। তারপর ভিডিওটা এডিট করে আমার চেহারা ঝাপসা করে দিয়ে আপলোড করেছি তোর ওয়েবসাইট থেকে।’
হতাশভঙ্গিতে মাথা নিচু করে ফেললো ও। কিছু বলছে না।
সময়টা যেন থেমে আছে। বয়ে যাচ্ছে অনেক ধীরে ধীরে। চোখের সামনে সিগারেটের ধোয়াগুলো পাক খেয়ে উপরে উঠে যাচ্ছে। তারপর মিলিয়ে যাচ্ছে শূন্যে।
‘শূন্য থেকে এসেছি আমরা,’ ধীরে ধীরে বলে উঠলাম আমি, ‘আবার শূন্যেই মিলিয়ে যাবো। সিগারেটের এই ধোঁয়ার মতো। এটাই জীবন।’
‘তুই,’ ধরা গলায় বলে উঠলো ও, ‘তুই ফারদিনকে মেরে দিলি, আমাকে বাঁচিয়ে রাখলি কেন?’
‘কারন,’ শান্তভঙ্গিতে বলে উঠলাম আমি, ‘তোকে মেরে কোন লাভ নেই। বরং বাঁচিয়ে রেখে লাভ আছে।’
‘মানে?’ অবাক হয়ে বলে উঠলো ও, ‘কি বলতে চাস তুই?’
‘মানে হচ্ছে,’ সিগারেটের গোড়া অ্যাসট্রেটে গুজে দিয়ে বললাম আমি, ‘জীবনটা খুবই ছোট। আর এই ছোট্ট জীবনেই অনেককিছুর প্রয়োজন আছে আমাদের। ফারদিন আমাকে দিয়ে কাজটা করিয়েছিল। আমার সাথে কন্ট্রাক্ট করেছিল, অর্ডার দিয়েছিল, কিন্তু আসল ব্যাপারটা আমাকে জানায়নি। তুই হয়তো জানিস না, তোদের কামানো পুরো টাকাটাই নিজে মেরে দেবার তালে ছিল ও। এমনিতেও তোর বারোটা বাজতো, আমি ওকে মারলেও, না মারলেও। তাই তোকে বাঁচিয়ে রেখেছি এখনো।
‘ওওও,’ মৃদুস্বরে বললো ও, ‘তারমানে আমাকে মেরে তোর কোন লাভ নেই বুঝেই তুই আমাকে মারিস নি। হ্যাঁ, ঠিক বলেছিস তুই। পথে বসে গেছি আমি।’
‘হতাশ হবার কিছুই নেই,’ ওর দিকে ঝুঁকে এলাম আমি, ‘লেট’স মেক এ ডিল।’
‘ডিল?’ অবাক হলো ও।
‘হুম,’ মাথা নাড়লাম আমি, ‘ফারদিন ঠিক বলেছিল, মানি ইজ দ্যা গড। তোদের এই জগতটা আমি ভালোভাবে চিনি না। আমার চেয়ে তুই ভাল চিনিস এটাকে। সো, আই থিঙ্ক, উই ক্যান মেক আ পারফেক্ট পার্টনারশিপ।’
বেশ কিছুক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে রইলো ও। তারপর ধীরে ধীরে হাসি ফুটে উঠলো ওর মুখে।
মৃদু মৃদু হাসি আমার মুখেও ফুটে উঠছে।
(গল্পে উল্লেখিত বিভিন্ন লিঙ্ক, ডায়েরী অফ কন্ট্রাক্ট স্যোশাল নেটওয়ার্কিং ওয়েবসাইট স্ক্রিমকিউ ব্রাউজার আর স্কাইব্লু অপারেটিং সিষ্টেম সম্পূর্ণ কাল্পনিক। বাস্তবের সাথে এর কোন মিল নেই।)