০১
‘হোয়াট?’ বিস্ময়ে চেঁচিয়ে উঠি আমি।
‘ইয়েস,’ মাথা নিচু করে বলে ও, ‘আই এম রেপড।’
দ্বিতীয়বার কথাটা শুনে মাথায় যেন আগুন ধরে গেলো আমার।
সন্ধ্যের মৃদু অন্ধকার জাঁকিয়ে বসেছে চারদিকে। পশ্চিম আকাশে সূর্যটা বিদায় নিয়েছে বেশীক্ষন হয়নি। এখনো পশ্চিমাকাশে লাল আভা বিরাজমান। সেদিকে তাকিয়ে সিগারেটে মৃদু চুমুক দিচ্ছিলাম আমি। এমনসময় আমার পাশে এসে বসে পড়ে মেয়েটি।
কণা! আমার ক্লাশমেট, সেইসাথে আমার খুব ভাল বান্ধবী। আরো একটা পরিচয় আছে ওর, যেটা আমি ছাড়া আর কেউই জানে না। মনে মনে মেয়েটাকে ভালবাসি আমি।
প্রথমবার ওর মুখে কথাটা শুনেই মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠে আমার। ভেতরের সমস্ত ক্রোধ যেন একটা হিংস্র সাপের মতো গলা বেয়ে উপরে উঠতে থাকে। চিৎকারটা তারই বহিঃপ্রকাশ।
‘কে?’ ওর চোখের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করি আমি।
‘আমার বয়ফ্রেন্ড,’ চোখ দিয়ে পানি বেড়িয়ে আসে ওর, ‘আবিদ। আজ বিকেলে ডেট ছিল আমাদের।’
হা করে ওর দিকে তাকিয়ে থাকি আমি।
আবিদ মাহমুদ! আমাদের দুই বছরের সিনিয়র। কণার বয়ফ্রেন্ড। সে এই কাজ করেছে!
‘আমি অনেকবার মানা করেছিলাম,’ ফুঁপিয়ে উঠে ও, ‘কিন্তু জানোয়ারটা শুনেনি। জোড় করে আমাকে...’
আর কিছু শোনার রুচি হলো না আমার। ঝট করে উঠে দাঁড়ালাম আমি। হাতের সিগারেটটা ততক্ষনে তালু আর আঙ্গুলের ভাজে চ্যাপ্টা হয়ে গেছে। মাথাটাকে একবার ঝাকালাম আমি।
‘তুমি বাসায় যাও,’ গম্ভীরগলায় বলে উঠলাম আমি, ‘আসছি আমি।’
আর বিন্দুমাত্র কালক্ষেপন না করে ছুটলাম আমি। নিজের সাথে বোঝাপড়া করা হয়ে গেছে আমার।
০২
পর পর দু’বার নক করলাম দরজাটাতে। অপেক্ষা করছি আমি। একটু পরেই ভেতর থেকে পায়ের আওয়াজ পাওয়া গেলো।
বাসাটাতে আবিদ একাই থাকে। বড় একটা ফ্ল্যাটের নিচতলায় দুইরুমের এক বাসা এটা। ব্যচেলরদের জন্য তৈরী। সুবিধা হয়েছে আমার বলা যায়।
দরজাটা খুলে দিয়ে সেখানে দাঁড়ালো আবিদ। কিন্তু তা বড়জোর তিন সেকেন্ডের জন্য। তারপরই আমার ঘুষি খেয়ে পিছিয়ে গেলো কিছুটা। আমিও আর দেরী না করে ভেতরে ঢুকে পড়লাম।
প্রথমে বাঁহাতের ধাক্কায় দরজাটা লাগিয়ে দিলাম, সেইসাথে ডানহাতের একটা আপারকাট গিয়ে পড়ল আবিদের উপর। মারটা সহ্য করতে না পেরে মেঝেতে লুটিয়ে পড়লো সে।
দ্রুত তার পাশে দাঁড়িয়ে গেলাম আমি। পজিশন নিয়ে শুরু করলাম এলোপাথাড়ি লাথি।
‘হারামজাদা,’ বাছা বাছা কিছু খিস্তি বেড়িয়ে এলো আমার মুখ থেকে, ‘এই তোর ভালোবাসা? বানচোত! কুত্তার বাচ্চা, তোর প্রেম ছুটাচ্ছি আজকে। শালা ***র পোলা।’
একনাগাড়ে বেশ কিছুক্ষণ লাথিয়ে থামলাম আমি। মুখ দিয়ে অনবরত বড় বড় নিঃশ্বাস বেড়িয়ে আসছে আমার। হাঁপিয়ে উঠেছি একেবারে। কিন্তু তাই বলে ওকে রেহাই দেওয়ার কোন ইচ্ছেই আমার নেই। লাথিতে বিরতি পড়ার কিছুক্ষণের মধ্যে একটু নড়ে উঠতেই ওর পিঠ বরাবর আরেকটা লাথি ঝেড়ে দিলাম আমি।
বেশ কিছুক্ষন নড়লো না ও। ততক্ষনে আমিও কিছুটা সুস্থির হয়ে গিয়েছি।
শ্বাসপ্রশ্বাস স্বাভাবিক হতেই আমার চারপাশে তাকাতে শুরু করলাম আমি। রাগের মাথায় চলে এসেছি খালি হাতেই। অস্ত্র বলতে কিছুই নেই আমার কাছে। অন্তত একটা ছুড়ি আনা প্রয়োজন ছিল।
ইতিউতি তাকাতেই রান্নাঘরটা চোখে পড়লো আমার। ওখানে কিছু থাকতে পারে। একবার আবিদের দিকে তাকালাম আমি। নড়ছে না সে। থুহ করে একদলা থুতু ছুঁড়ে দিয়ে রান্নাঘরের দিকে পা বাড়ালাম আমি।
যা ভেবেছিলাম তাই। রান্নাঘরে একটা ছোট ছুড়ি আছে দেখছি। ছুড়িটা হাতে নিয়ে ফিরে এলাম আমি। এবার আবিদের রিডিং টেবিলের দিকে পা বাড়ালাম আমি। একটু খুঁজতেই একটা হাতুরী, একটা স্কচ-টেপ, কয়েকটা লোহার আলপিন, একটা স্ক্রু-ডাইভার ও একটা প্লায়ারস পাওয়া গেলো। সেইসাথে একটা নাইলনের রশি। আর কি চাই!
একটা চেয়ার টেনে আবিদের সামনে এনে রাখলাম আমি। তারপর তার শার্টের কলার ধরে টেনে তুলে চেয়ারটাতে বসিয়ে দিলাম। হাত আর পাগুলো শক্ত করে নাইলনের রশি দিয়ে বেঁধে নিলাম।
রক্তে ভিজে যাচ্ছে তার পুরো মুখমন্ডল। সামনের দিকের দুটো দাঁতের দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু এতোসব দেখার সময় নেই আমার। এখন একটাই কাজ বাকি। ওকে খুন করা। তার আগে যতটা সম্ভব কষ্ট দিতে হবে ওকে।
পকেট থেকে রুমালটা বের করে গুজে দিলাম ওর মুখে। তারপর স্কচটেপ দিয়ে মুখের সামনে ব্যারিকেড তৈরী করে দিলাম। এখন আর ও বেশী শব্দ করতে পারবে না।
প্লায়ারস দিয়ে ওর বা পায়ের একটা আঙ্গুলের নখ চেপে ধরলাম আমি। তারপর এক হেঁচকা টানে তুলে ফেললাম সেটা। গুঙিয়ে উঠলো ও, সেইসাথে লাফ দিয়ে সরে যাওয়ার চেষ্টা করলো। ঝটকা দিয়ে হাতের বাধন খুলে ফেলার চেষ্টাও করলো। কিন্তু পারলো না। মুখে রুমাল গুজে দেওয়ায় মনের সুখে চেঁচাতেও পারছে না।
‘কষ্ট হচ্ছে, তাই না?’ মৃদুস্বরে বলে উঠলাম আমি, ‘বানচোত শালা! কণাকে রেপ করার আগে মনে ছিল না? তুই তো মরবি, এটা শিওর। কিন্তু মেয়েটা কি যন্ত্রনা পাবে সারাটা জীবন, সেটা ভেবে দেখ একবার। যদি একবার জানাজানি হয়ে যায় যে তুই ওকে রেপ করেছিস, তাহলে ওর কি অবস্থা হবে?’
আবার গুঙিয়ে উঠলো ও। কিছু একটা বলতে চাইছে সম্ভবত। চোখ দিয়ে পানি বেড়িয়ে এসেছে ওর। কিন্তু সেদিকে ভ্রূক্ষেপ করলাম না আমি।
‘বেশী কিছু না,’ মাথা নেড়ে বললাম আমি, ‘মাত্র একটা কথা দিচ্ছি তোকে। মারা যাওয়ার আগে নরকযন্ত্রনা ভোগ করতে হবে তোকে। এটা গ্যারান্টি দিতে পারি আমি।’
মেঝে থেকে একটা আলপিন আর হাতুরীটা তুলে নিলাম আমি। নখ উপড়ে ফেলা আঙ্গুলটার উপরে আলপিনটা রেখে হাতুরী দিয়ে একটা বাড়ি দিলাম আমি। সাৎ করে এফোঁড় ওফোঁড় হয়ে ঢুকে গেলো সেটা। আবার গুঙিয়ে উঠলো আবিদ।
ছুড়িটাকে হাতে নিলাম আমি। প্রথমে আলতো করে ছোঁয়ালাম আবিদের ডানহাতের কব্জির উপর। ছুড়ির ডগাটা কব্জির উপর রেখে বাটের উপর হাতুরী দিয়ে একটা বাড়ি দিলাম। আবার গুঙিয়ে উঠলো ও। হাতটা ভরে উঠেছে রক্তে। তাজা, লাল, উষ্ণ রক্ত। গোঙানোর তীব্রতার জন্যই সম্ভবত ওর গলার কয়েকটা রগ ফুলে উঠেছে।
বুঝতে পারছি, অমানষিক কষ্ট হচ্ছে ওর। কিন্তু কিছুই করার নেই। এটা ওর প্রাপ্য। ও যা করেছে, তার তুলনায় এটা কিছুই না।
এবার প্লায়ারসটাকে আবার ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিলাম আমি। বা হাতের কড়ে আঙ্গুলটা প্লায়ারস দিয়ে চেপে ধরে হাতুরী দিয়ে জোড়ে বাড়ি বসালাম একটা। কট করে একটা শব্দ হলো। কড়ে আঙ্গুলের হাড়টা ভেঙ্গে গেছে সম্ভবত।
মুখে রুমাল থাকায় চিৎকার করতে কষ্ট হচ্ছে ওর। ব্যথাটা চিৎকারের সাথে বের করে দিতে পারছে না ও। গুঙিয়ে যাচ্ছে শুধু।
এবার একটু বিরতি নিলাম আমি। যন্ত্রগুলোকে মেঝেতে রেখে উঠে দাঁড়ালাম। ঘরের এককোনায় একটা রেফ্রিজারেটর দেখা যাচ্ছে। ডালা খুলতেই ভেতরে একটা পানির বোতল দেখতে পেলাম আমি। তুলে নিলাম সেটা।
ঢক ঢক করে পানির বোতলটা খালি করলাম আমি। তারপর আবার তা ভেতরে রেখে দিলাম।
গোঙানো কিছুটা কমেছে ওর। পাশ থেকে আরেকটা চেয়ার টেনে ওর সামনে বসলাম আমি। এক হাতে ওর মুখটাকে ধরলাম।
‘ঐ,’ হালকা চাপড় দিলাম ওর গালে, সেইসাথে ধমকে উঠলাম, ‘ঐ, ঐ উঠ শালা। এতো আগেই ঝিমিয়ে পড়লে চলবে? ঐ, উঠ।’
মৃদু গুঙ্গানি শোনা গেলো আবার। সম্ভবত অজ্ঞান হয়ে পড়েছিল ও। আরো কয়েকটা চাপড় দিতেই ধীরে ধীরে নড়তে শুরু করলো।
একটানে ওর মুখ থেকে স্কচটেপ খুলে ফেললাম আমি। রোমালটা সরিয়ে নিতেই হড়বড় করে বমি করে দিলো ও।
বেশ কিছুটা পিছিয়ে এলাম আমি। বিরক্ত লাগছে আমার। বমি করা শেষ হতেই হাঁপাতে লাগলো ও। বেশ কিছুক্ষণ পর মুখ খুললো, ‘আ... আম... আমি কিছু করি...ন...নি। ছেড়ে দাও আ...আ...আমা’
দড়াম করে একটা ঘুষি বসিয়ে দিলাম ওর নাক বরাবর। তারপর আবার দ্রুত রুমালটা ওর মুখে ঢুকিয়ে আরো কিছু স্কচটেপ ছিড়ে মুখের সামনে লাগিয়ে দিলাম।
‘মিথ্যে বলছিস,’ শান্তকন্ঠে বলে উঠলাম আমি, ‘মিথ্যে বলছিস শালা। এখনো মিথ্যে বলার সাহস পাস কোত্থেকে রে? মনটা চায় তোকে...’
কথাটা শেষ করার সুযোগ পেলাম না আমি। তীক্ষ্ণস্বরে একটা সেলফোন বেজে উঠলো।
আশে-পাশে তাকাতে লাগলাম আমি। টেবিলের উপর চোখ পড়তেই দেখতে পেলাম সেলফোনটা। আবিদের সেলফোন।
উঠে দাঁড়িয়ে টেবিলটার সামনে দাঁড়ালাম আমি। সেলফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকালাম। সেখানে ‘ইকবাল’ লেখাটা জ্বলজ্বল করছে। রিসিভ করলাম আমি।
-‘হ্যালো?’
-‘ঐ শালা, কই তুই?’
-‘বাসায়।’
-‘আজকে শুনলাম সেই মজা করছোস? কই কই গেছিলি? শালা, আমারে খবর দিলি না ক্যান?’
‘শালা হারামী!’ মনে মনে শব্দ দুটো উচ্চারন করলাম আমি। এতো বড় ঘটনা ও ওর বন্ধুদেরও জানিয়েছে? তীব্র ঘৃণায় চেহারা কুঁচকে ফেললাম আমি। ওপাশ থেকে ইকবাল বলেই চলেছে,
‘ঐ শোন, আমি আসতেছি তোর বাসায়। পার্টি দিতে হবে। পনেরো মিনিট। সাথে আরো কয়েকজন আছে। হে হে হে।’
‘ওকে,’ সংক্ষেপে কথাটা বলে ফোন কেটে দিলাম আমি। দ্রুত কাজ সারতে হবে আমাকে।
মেঝে থেকে ছুড়িটা কুড়িয়ে নিলাম আমি। আবিদের বাহাতে বাধা নাইলনের রশিটা একটু সরালাম আমি। সেইসাথে কব্জির কাছের শিরাটাতে একটা নিখুঁত পোঁচ বসিয়ে দিলাম। ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হতে লাগলো সেখান দিয়ে।
এবার আরেকটা কাজ করলাম, ছুড়িটা দিয়ে ওর পেটে একটা বড়সড় পোঁচ বসিয়ে দিলাম। বড়জোড় দশ মিনিট, তারপরই মারা যাবে ও। তবে মৃত্যুটা হবে অত্যন্ত কষ্টের। নরকযন্ত্রনা কাকে বলে, হাড়ে হাড়ে টের পাবে ও।
দ্রুত রান্নাঘরে গিয়ে ঢুকলাম আমি। ভালোভাবে হাতের আঙ্গুল, কব্জি, কনুই ধুয়ে পরিষ্কার করে ফেললাম। সেইসাথে যন্তপাতিগুলোও ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করে নিজ নিজ জায়গায় রেখে দিলাম।
আর মাত্র একটা কাজ বাকি। একটা তোয়ালে দিয়ে যতটা সম্ভব আঙ্গুলের ছাপগুলো গায়েব করতে হবে। অন্তত আমাকে যেন কোনভাবেই ট্রেস না করতে পারে, তার ব্যবস্থা করতে হবে আর কি।
আট মিনিটের মাথায় নিশ্চিত হলাম, এখানে আমি কোন নিশান রেখে যাচ্ছি না। আবিদের দিকে তাকালাম আমি। অনবরত ঝাঁকি খাচ্ছে ও। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই মারা যাবে ও। ওকে নিয়ে আর কোন চিন্তা নেই। বের হতে হবে এবার আমাকে।
কি মনে হতে আবিদের সেলফোনটা তুলে নিলাম আমি। সাইলেন্স মোডে নিয়ে সেটাকে পকেটে চালান করে দিলাম। তারপর শেষবারের মতো রুমের চারদিকে একবার নজর বুলিয়ে বেড়িয়ে এলাম।
০৩
বেশ কয়েকবার ফোন করেও কণার কোন সাড়া পাওয়া গেলো না। ওপাশে কেউ রিসিভ করছে না।
হলোটা কি? ও কি ফোনের কাছে নেই? নাকি আত্নহত্যা করতে গেলো? এরই মধ্যে খারাপ কিছু ঘটিয়ে বসেনি তো? অজানা আশংকায় বুকের ভেতর কাঁপন উঠলো আমার। দ্রুত ওর বাসার দিকে ছুটলাম আমি।
ওর বাসায় পৌছতে বেশী সময় লাগলো না আমার। ওর দরজার এপাশে দাঁড়িয়ে পাগলের মতো কলিংবেল টিপলাম আমি। ইতোমধ্যে ভেতরে খারাপ কিছু হয়ে যাবার আশংকায় মাথা কাজ করছে না আমার।
দরজাটা খুলতেই অবাক হলাম আমি। একেবারে সাধারণভাবে দাঁড়িয়ে আছে কণা। সবকিছুই স্বাভাবিক। যেন কিছুই হয়নি। কিন্তু এ কি করে সম্ভব? মাত্র দুঘন্টা আগেও ওকে অন্যরকম দেখেছি আমি।
‘ভেতরে এসো শুভ,’ একেবারেই স্বাভাবিক কন্ঠে বলল কণা।
দ্বিরুক্তি না করে ভেতরে প্রবেশ করলাম আমি। আমার পেছনে দরজাটা আটকে দিলো ও।
শান্তভঙ্গিতে একটা চেয়ার দেখিয়ে দিলো ও। বলল, ‘এখানে বসো। আমি আসছি।’
এই বলে ভেতরের রুমে চলে গেলো ও। আমি ধীরে ধীরে চেয়ারটাতে বসে পড়লাম।
এর আগেও এ বাসায় এসেছি আমি। আবিদের মতোই একাই থাকে কণা। ওর বাবা-মা চট্টগ্রাম থাকেন। ও পড়াশোনার জন্য এখানে একটা রুম ভাড়া করে একা থাকে।
রুমের দিকে নজর দিলাম আমি। সবকিছুই স্বাভাবিক লাগছে। এর আগে যতোবারই এসেছি, এখনো সেরকমই লাগছে রুমটা। একপাশে একটা বেড, তার পাশে একটা রিডিং টেবিল, দুটো চেয়ার। যার একটাতে এখন আমি বসে আছি। সব সাজানো-গুছানো। কোথাও কোনরকম অস্বাভাবিকতা নেই। যেন কিছুই হয়নি ওর সাথে। অথচ মাত্র দু’ঘন্টা আগেও ভেঙ্গে পড়েছিল ও।
একটা ট্রেতে দুটো কফির মগ, আর সাথে একটা পিরিচে করে চানাচুর নিয়ে ফিরে এলো ও। রিডিং টেবিলের উপর ট্রেটা রেখে আমার পাশের চেয়ারটাতে বসলো। তারপর একটা মগ তুলে নিয়ে চুমুক দিল শান্তভঙ্গিতে।
‘নাও,’ অপর মগটার দিকে ঈশারা করলো ও, ‘কফি খাও।’
‘এতোটা স্বাভাবিক থাকছো কিভাবে?’ অবাক হয়ে প্রশ্ন করলাম আমি।
‘আগে এটা শেষ করো,’ নিজের হাতে ট্রের উপরে রাখা বাকি মগটা তুলে দিল ও, ‘তারপর বলছি।’
কফির কাপটা নিয়ে একটা চুমুক দিলাম আমি। তারপর ওর দিকে তাকালাম। দ্রুত ছোট ছোট চুমুক দিচ্ছে ও মগে। আমার দিকে আবার ঈশারা করলো ও কফিটা শেষ করতে। তিন চুমুকে পুরোটা শেষ করে ট্রের উপরে রাখলাম আমি। তারপর আবার ওর দিকে তাকালাম।
‘এবার,’ ওর চোখের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলাম আমি, ‘এবার বলো।’
‘এক সেকেন্ড,’ মাথা নেড়ে বলল ও, ‘কফিটা শেষ করে নিই আগে।’
ব্যাপারটা কি? মাথা-টাথা খারাপ হয়ে গেলো নাকি ওর? এতোটা স্বাভাবিক, এতোটা শান্ত থাকছে কি করে ও?
কফিটা শেষ করতে এক মিনিটের মতো সময় নিলো ও। মগটা ট্রেতে নামিয়ে রেখে আমার দিকে তাকালো। তারপর বললো, ‘আই এম সরি শুভ।’
‘মানে কি?’ ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করলাম আমি।
‘মানে হচ্ছে এই,’ মাথাটা একবার বাঁকিয়ে আমার দিকে তাকালো ও, ‘আবিদ আমাকে রেপ করেনি। বরং ওকে খুন করার জন্যই কথাগুলো তোমাকে বলতে হয়েছিল আমাকে। ইট ওয়াজ মাই প্ল্যান।’
‘হোয়াট,’ জোড়ে চিৎকার করে উঠতে চাইলাম আমি। কিন্তু কোন এক কারনে আমার গলা দিয়ে কোন শব্দই বের হলো না।
হঠাতই একটা পরিবর্তন লক্ষ্য করলাম আমি। ধীরে ধীরে একটা চিনচিনে ব্যাথা যেন আমার ভেতর থেকে উঠে আসছে, গলার কাছে এসে থেমে গেলো সেটা। আমি দু’হাত দিয়ে আমার গলাটা চেপে ধরতে চাইলাম, কিন্তু একটা আঙ্গুল পর্যন্ত নাড়ানো আমার পক্ষ্যে সম্ভব হলো না। বিস্ফারিত দৃষ্টিতে কণার দিকে তাকালাম আমি।
‘পারবে না,’ দুপাশে মাথা নাড়িয়ে বললো কণা, ‘আর নড়াচড়া করতে পারবে না তুমি। যে কফিটা তোমাকে দিয়েছিলাম আমি, সেটাতে একটা বিশেষ জিনিস মিশিয়ে দিয়েছি। যার ফলে আর কিছুক্ষণের মাঝখানেই মারা যাবে তুমি।’
অবিশ্বাসে তাকিয়ে রইলাম আমি কণার দিকে। শুধু একটা প্রশ্নই আমার মাথায় ভাসছে এখন, “কেন?”
বেশ কিছুক্ষণ নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো ও। তারপর মুখ তুলে তাকালো আমার দিকে।
‘শুভ,’ মৃদুস্বরে বলল ও, ‘তোমার নিশ্চয়ই জানতে ইচ্ছে করছে, কেন আমি এই কাজটা করলাম? তাই না? প্রথমে ভেবেছিলাম, বলবো না তোমাকে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, মৃত্যুর আগে “কেন মারা যাচ্ছ”, সেটা জেনে যাওয়া প্রয়োজন তোমার। তোমাকে এখন একটা গল্প শোনাবো আমি। শুধু একটাই অনুরোধ, পুরোটা না শুনে মারা যেও না তুমি।’
অবাক চোখে দেখছি আমি এই মেয়েটিকে। কণা! যাকে আমি এতোটা ভালোবাসি, কিন্তু বলতে পারিনি কখনো। আজ সেই আমাকে মেরে ফেলতে উদ্ধত হয়েছে!
‘শোন,’ শুরু করলো ও, ‘তোমরা সবাই জানো আমি আমার মা-বাবার একমাত্র সন্তান। কিন্তু বাস্তবতা আসলে তা নয়। আমার এক বড় ভাই ছিল। আমার চেয়ে মাত্র একবছরের বড়।
ছোটবেলা থেকেই আমরা দুজন বন্ধুর মতো থেকেছি। আমাদের মধ্যে কখনো সামান্যতম বিষয় নিয়েও মনোমালিন্য হয়নি। ও ছিল আমার সবথেকে প্রিয় ব্যক্তিত্ব।
লেখাপড়ায়ও ও আমার চেয়ে একবছরের সিনিয়র ছিল। এইচএসসি পাশের পর ও ভর্তি হয় ঢাকায়, আর আমি রয়ে যাই চট্টগ্রাম। এই প্রথম আমরা একে অপরকে ছাড়া থাকা শুরু করি। আমার অনেক ইচ্ছে ছিল, এইচএসসি পাশের পর আমিও এখানেই এসে ভর্তি হবো।’
এই পর্যন্ত বলে থামলো ও। চোখ দিয়ে পানি বেড়িয়ে আসছে ওর। ডান হাত দিয়ে পানিটা মুছে আবার শুরু করলো ও, ‘ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার এগারো মাসের মাথায় কিডন্যাপ হয় ও। কিডন্যাপাররা বেশ বড় অংকের টাকা দাবী করে মুক্তিপন হিসেবে। টাকাটা ওদের দিয়েও দেয়া হয়। কিন্তু ফেরত আসে নি আমার ভাই। ওকে মেরে ফেলা হয়েছিল।
আমার ভাইটা আমার পৃথিবী ছিল, জানো! অনেক ভালবাসতাম আমি আমার ভাইটাকে। ওর মৃত্যুতে আমার জীবনের কতোটা ক্ষতি হয়ে গেলো, তা তুমি ভাবতেও পারবে না শুভ। আমরা ভাইবোন কম, বন্ধু ছিলাম বেশী। কত আশা ছিল, আমি আর আমার ভাইটা একই ভার্সিটিতে পড়বো। কিন্তু আশাটা ভেঙ্গে গেলো।
এইচএসসি শেষ করে তখন ভর্তি কোচিং করছিলাম আমি। এমনসময় ওর মৃত্যুতে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছিলাম। কোন কিছু ভাল লাগতো না। শুধু কাঁদতাম বসে বসে। জীবনের সব আশা ভরসা ছেড়ে দিয়েছিলাম আমি। কয়েকবার আত্নহত্যা করার প্ল্যানও করেছিলাম, কিন্তু মা-বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে সে পথ থেকে ফেরত এসেছি।’
আবার থেমে চোখের পানি মুছলো ও। তারপর আবার বলতে লাগলো,
‘ভাইয়ার মৃত্যুর পাঁচ মাস পর একটা খবর পেলাম আমি। ভাইয়া যখন কিডন্যাপ হয়, তখন তার সাথে এই ভার্সিটির আরো একজন কিডন্যাপ হয়েছিল। আবিদ মাহমুদ। ভাইয়ার ক্লোজ ফ্রেন্ড। তার জন্যও মুক্তিপণ দাবী করা হয়েছিল। এবং, মজার কথা হলো, সে ছাড়াও পেয়েছিল।
এখানেই খটকা লাগে আমার। একইসময় একই ভার্সিটির দুজন ছাত্র কিডন্যাপ হলো, যারা আবার কি না একে অন্যের খুব ভাল ফ্রেন্ড ছিল, তাদের একজনকে কিডন্যাপাররা মেরে ফেললো। কিন্তু অপরজনকে ছেড়ে দিলো কেন?
এই প্রশ্নটাই আমাকে আবার উঠে দাড়াতে সাহায্য করেছিল। তাই বাবা-মাকে ঢাকায় কোচিং করবো বলে এখানে চলে আসি। খোঁজ-খবর নেয়া শুরু করি ওর সম্পর্কে। কিন্তু বলতে গেলে প্রায় কিছুই জানা সম্ভব হয়নি তখন।
একসময় হঠাত করেই আবিস্কার করি, আমার সম্পর্কে জানা সম্ভব হবে তখন, যখন কাউকে আমি জানাবো। কিন্তু আমি যদি আমার সম্পর্কে কাউকেই কিছু না জানাই, তবে তা আর কেউই জানতে পারবে না। এতে করে পুরো ব্যপারটাই পরিষ্কার হয়ে যায় আমার কাছে। বুঝে ফেলি আমি, কিডন্যাপিংয়ের পেছনে আর কারো হাত ছিল না, ছিল আমার ভাইয়া আর আবিদের হাত। নিজেরাই প্ল্যান করে নিজেদের কিডন্যাপ করে ওরা। তারপর বাড়ির লোকদের জানিয়ে দেয় মুক্তিপণের কথা।
এরপরের কাহিনী বুঝতে বেগ পেতে হয়নি আমাকে। কোন এক কারনে ভাইয়ার সাথে অমত হয় আবিদের। যার ফলে ভাইয়াকে নিজের প্রাণ খোয়াতে হয়। আমার ভাইয়ের প্রাণহননকারী আর কেউ নয়, আবিদ মাহমুদ স্বয়ং।
পুরো বিষয়টা বুঝতে পারার পর পাল্টা প্ল্যান করি আমি। নিজের সাথে প্রতিজ্ঞা করি, আবিদকে যেভাবেই হোক খুন করবো। সেই প্ল্যান বাস্তবায়ন করার জন্য এবছর তোমাদের সাথে এই ভার্সিটিতে কেমিস্ট্রিতে এডমিশন নিই আমি।
আবিদ আমাকে চিনতো না। আমাকে দেখেনি কখনো। এই সুযোগটাই কাজে লাগাই আমি। আবিদের গার্লফ্রেন্ড হয়ে যাই। তারপর থেকেই তক্কে তক্কে ছিলাম ওকে খুন করার জন্য।
এর মাঝেই তোমাকে নজরে পড়ে আমার। আমি স্পষ্ট বুঝতে পারি যে, তুমি আমাকে ভালোবেসে ফেলেছো। প্রথমে নিজেকে আটকানোর চেষ্টা করেছিলাম আমি। কিন্তু পরে আর উপায়ান্ত না পেয়ে তোমাকেই কাজে লাগাবো বলে সিদ্ধান্ত নিই। আজ আমার প্ল্যান সার্থক। আমি জিতে গেছি।’
আবার কিছুক্ষণ নিরবতা। মাথা নিচু করে কি যেন ভাবছে ও। তারপর বলল, ‘আমি আসলেই দুঃখিত শুভ। তোমাকে এই প্ল্যানে জড়ানোর বিন্দুমাত্র ইচ্ছে ছিল না আমার। কিন্তু এছাড়া আর কোন উপায়ও চোখে পড়ছিল না। বলতে গেলে একপ্রকার বাধ্য হয়েই কাজটা করতে হয়েছে আমাকে। প্লিজ, ডোন্ট টেক ইট পার্সোনালি। বুঝতেই পারছো, কেন তোমাকে সরিয়ে দিতে হচ্ছে। আমি কোন সাক্ষী রাখতে রাজি নই। আই এম রিয়েলি সরি।’
একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লাম আমি। যাকে এতোটা ভালবাসলাম, যার জন্য জ্বলজ্যান্ত একটা ছেলেকে খুন করে এলাম, সেই আমাকে মেরে ফেলতে চাইছে! এটাই বোধহয় পৃথিবীর নিয়ম!
এমনসময় দরজায় নকের শব্দ পাওয়া গেলো। ঝট করে সেদিকে তাকালো কণা।
‘কে এলো এসময়?’ যেন নিজেকেই প্রশ্ন করলো ও।
‘ইকবাল,’ শান্তকন্ঠে জবাব দিলাম আমি, ‘সাথে করে পুলিশ নিয়ে এসেছে। এবার আর আমাদের কারোরই বাঁচবার উপায় নেই।’
ঝট করে আমার দিকে তাকালো ও। বিস্ময়ে ওর চোখ যেন বিস্ফোরিত হবে এখনই। আর বিস্ফারিত দৃষ্টির সামনে শান্তভঙ্গিতে উঠে দাড়ালাম আমি।
‘অসম্ভব!’ বুঝতে পারলাম, অনেক কষ্ট উচ্চারন করলো ও শব্দটা।
০৪
আবিদের বাসা থেকে বেরুতেই আবারো ইকবালের কল আসে আবিদের ফোনে, যেটা আমি আমার পকেটে ভরে নিয়েছিলাম।
রিসিভ করবো না করবো না বলেও কেন যেন রিসিভ করি আমি। আর তখনই জানতে পারি, আবিদ আজকে সারাদিন শহরে ছিল না। নতুন এক গার্লফ্রেন্ড হয়েছে ওর, তাকে নিয়ে গাজীপুরে গিয়েছিল ডেট করতে। আর সেই সুবাদে ইকবাল জোড় করছিল পার্টি দেয়ার জন্য।
কথাটা শোনার পর আমার মাথায় চক্কর দিয়ে উঠে আবার। তাহলে কণার কথা কি মিথ্যে?
ব্যাপারটা নিয়ে ইকবালের সাথে কথা বলি আমি। ইকবালকে সব খুলে বলতেই প্রথমে রেগে গিয়ে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করতে থাকে আমাকে। পরে একটু ঠান্ডা হলে আমার বলা জায়গায় চলে আসে ও ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনা করতে।
সেখানেই দুজনে একমত হই যে, কণা মিথ্যে বলেছে আমাকে। আবিদ কণাকে রেপ করেনি। কারন, আবিদ যাই করুক না কেন, ইকবাল তা জানবে। আবিদ এ বিষয়ে ইকবালকে কিছুই বলেনি। কিন্তু আমার মাথায় ঢুকছিল না, একটা মেয়ে কেন নিজের সম্পর্কে এতো বড় মিথ্যে বলতে যাবে?
কণা কেন এধরনের কথা বলেছে আমাকে, তার ব্যাখ্যা আমার কাছে ছিল না। তবে এটুকু বুঝতে পেরেছিলাম, এর পেছনে নিশ্চয়ই কোন কিন্তু আছে।
এই কিন্তুটা না জেনে কণার সাথে দেখা করতে যাওয়া বিপদজনক হতে পারে বলে মনে হয়েছিল আমার। তাই একটা ছোট্ট প্ল্যান করি আমি। আমাদের এক বান্ধবী ঈশিতাকে ফোন করে পুরো ব্যপারটা খুলে বলি আমি। সব শোনার পর সে রাজি হয় হেল্প করতে।
ঈশিতাকে প্রথমে কণার বাসায় পাঠিয়ে দেখতে বলি যে কণার অবস্থা কি। কিন্তু সেখানে গিয়ে সে সবকিছু স্বাভাবিক দেখতে পায়। অন্যসব সময় কণাকে যেমন দেখতো, এর সাথে বর্তমান কণার কোন অমিলই ছিল না। কণার বাসায় থাকার সময়ই ঈশিতা মেসেজ করে সে কথা জানিয়ে দেয় আমাদের।
সবকিছুই স্বাভাবিক ছিল কণার বাসায়। এমনকি কণা যে রেপড হয়েছে, তা আমাকে ছাড়া আর কাউকেই বলেনি ও। কিন্তু কেন?
এই কেন’র উত্তর ভাবতে গিয়ে একটা জিনিস মাথায় আসে আমার। যে মেয়ে একটা ছেলেকে এরকম প্ল্যান করে খুন করাতে পারে, সে যে আমাকেও খুন করবে না, তার কি গ্যারান্টি আছে?
সন্দেহটা মাথায় আসতেই ঈশিতাকে মেসেজ করে জানিয়ে দিই, কণার বাসার প্রত্যেকটা জিনিস চেক করে দেখতে। মানুষ খুনের মতো কিছু যেন কণার বাসায় না থাকে। থাকলে তা যেন কণার অগোচরে সরিয়ে ফেলে ও।
খুঁজতে গিয়েই ইশিতা কণার কিচেনে একটা বোতলে একধরনের লবনের মতো দেখতে রাষায়নিক পদার্থের দেখা পায়। জিনিসটা ছিল পটাশিয়াম সায়ানাইড।
বাকিটা বুঝতে ওর আর বাকি থাকে না। তাই দ্রুত পটাশিয়াম সায়ানাইডকে ফেলে দিয়ে বোতলটা লবন দিয়ে পূর্ণ করে চলে আসে ও।
এর পর শান্তিপূর্ণভাবে ওর বাসায় যাই আমি। ও যখন রান্নাঘরে গিয়েছিল, তখনই আমার সেলফোনটা বের করে রেকর্ডিং মোডে এনে রাখি। যার ফলে ওর পুরো বক্তব্য রেকর্ড হয়ে আছে।
পরিশিষ্টঃ আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি আমি। এখানে পুরো আকাশটা দেখা যাচ্ছে না ভালোভাবে। কারন, লোহার খাঁচা! জেলখানার বারান্দায় বসে আছি আমি। অপেক্ষা করছি, কবে রায় হবে।
আবিদের খুনের আসামী আমি। হয়তো যাবজ্জীবন, না হলে মৃত্যুদন্ড দেয়া হবে আমাকে। সেটা নিয়ে আমার বিন্দুমাত্র আফসোস নেই। আফসোস শুধু এটুকুই, আর কোনদিন হয়তো বাইরের খোলা বাতাসে শ্বাস নিতে পারবো না।