০১.
খুব ধীরে ধীরে বিছানার কাছে এগিয়ে যাচ্ছে ও। ডান হাতে শক্ত করে ধরে রেখেছে ছ'ইঞ্চি ব্লেডের ছোড়াটা। বেল্টের মাঝে সতর্কতার সাথে ঝোলানো আছে একটা কোল্ট পাইথন পয়েন্ট থ্রি ফিফটিসেভেন ম্যাগনাম। অবশ্য খুব প্রয়োজন ছাড়া এটা ব্যবহার করে না ও। নিঃশব্দে কাজ সারতেই পছন্দ করে ও।
গভীর রাত। সুনসান নিরবতা বিরাজ করছে চারদিকে। ঘরে একটা ডিমলাইট ছাড়া সবগুলো লাইট নেভানো। আবছা অন্ধকারের মাঝে খুব ধীরে ধীরে বিছানার কাছে চলে এলো ও। বিছানায় কাথা-মুড়ি দিয়ে ওপাশে মুখ করে শুয়ে আছে ওর শিকার। হ্যা। যেমনটা আন্দাজ করেছিলো ও। একা।
ধীরে ধীরে ডানহাতটা উপরে উঠে যাচ্ছে উপরের দিকে। এমনসময় হঠাত করেই ওর শিকার ঘুমের ঘুরে পাশ ফিরল। তা দেখে সাবধানে কিছুটা পিছিয়ে দাড়াল ও। বেশ কিছুক্ষণ কেটে গেলেও একচুল নড়ল না ও। না, ঘুম ভাঙ্গেনি শিকারের। আবার কাছে গিয়ে দাড়াল ও। ধীরে ধীরে শ্বাস নিচ্ছে ও। খুব তাড়াতাড়ি কাজটা সারতে হবে ওকে। ছোড়াটা আবার উপরে উঠতে শুরু করল।
এমন সময় ওর চোখ পড়ল ওর শিকারের মুখের দিকে। একি!!! এ যে মেহবুবা!!! বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেলো স্বপন।
০২.
চলন্ত ট্রেনের জানালা থেকে যেভাবে বাইরের দৃশ্যগুলো দেখা যায়, অনেকটা সেভাবে গত আটবছরের প্রত্যেকটা মুহূর্ত ওর চোখের সামনে সচল হয়ে উঠল যেন। ভার্সিটি, ক্যাম্পাস, ফাস্টফুড, লাইব্রেরী, শহীদমিনার, সব। অনেক অনেক কথা মনে পড়ে যাচ্ছে ওর।
আটবছর আগে ওরা একই ভার্সিটিতে, একই ডিপার্টমেন্টে ভর্তি হয়েছিল। পাঁচটা বছর একসাথে কাটিয়েছে সবাই মিলে। শরীফ, তারেক, শাওন, সিরাজ, জিনিয়া, তাহমিনা, মেহবুবা- আরো অনেকে। হাসি-ঠাট্টাতে দিনগুলো কেটে যেত বেশ। তারপর একসময় ভার্সিটিলাইফ শেষ করে কর্মজীবনে প্রবেশ করল ওরা। সবাই ভালো একটা জায়গায় চলে গিয়েছে। শুধু স্বপন ছাড়া। কিভাবে কি হয়ে গেলো, তা বলতে পারবে না ও। শুধু জানে, এটাই এখন ওর জীবন। এটাই ওর পেশা।
নিজের এই পরিণতির জন্য কাউকে দোষারোপ করেনা ও। যা হবার, তা হয়ে গেছে। তাই কারো সাথেই যোগাযোগ রাখেনি আর। কেন রাখবে? কি লাভ রেখে? যেখানে ওর সহপাঠীরা বড় বড় জায়গায় চলে গেছে, আর ও পড়ে রয়েছে অন্ধকারের মাঝে। তাই কখনো কারো সাথে দেখা করেনি ও। কারো সাথেই না।
ভাবছে স্বপন। কি করবে এখন? চলে যাবে? নাকি কাজটা করবে? বুঝতে পারছে না ও। মানুষ খুন করাই ওর পেশা। এতেই ওর জীবন চলে। কাজটা না করলে সমস্যা ওর জন্য। একবার আন্ডারওয়ার্ল্ডে খবর পৌছে গেলে ওর আড়াই বছরের ক্যারিয়ার বিরাট একটা ধাক্কা খাবে। কেউ আর ওকে কাজ দিতে চাইবে না। চাইলেও দিতে ভয় পাবে। কারন এই কাজটা ও পেয়েছে অনেক প্রভাবশালী একজনের কাছ থেকে। কাজটা না করলে নিশ্চয় ওরা ওকে ভাল চোখে দেখবে না। কিন্তু মেহবুবাকে কিভাবে খুন করবে ও? একসময় ওর ঘনিষ্ট বান্ধবীদের মধ্যে একজন ছিলো মেয়েটা। ওফ! কি করবে ও।
খুব ধীরে ধীরে বারান্দায় চলে এলো ও। ভাবছে। ভাবছে। ভাবছে। মিনিট পাঁচেকের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল ও। হ্যা। মনস্থির করে ফেলেছে ও। যাই হোক, পরোয়া করেনা ও। যে যাই বলুক, ওর কিছুই যাই আসে না।
ধীরে ধীরে বেডরুমে চলে এলো ও। ভালভাবে তাকালো মেয়েটার দিকে। গভীর ঘুমে রয়েছে মেয়েটা। অনেক সুন্দর লাগছে দেখতে। কিভাবে এই মেয়েকে কেউ খুন করতে পারে!!!
০৩.
মিনিট সাতেক পর। অন্ধকার রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছে স্বপন। কিছুদুরেই দাঁড়িয়ে আছে ওর গাড়িটা। গাড়ির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ও। হঠাত খেয়াল করল, ওর হাতে একটু রক্ত লেগে আছে। কি ব্যাপার??? বাথরুমে ঢুকে ভালভাবেই তো হাত ধুয়েছিল ও। তারপরও পুরোটা পরিস্কার হয়নি???
কি আর করা! পকেট থেকে রুমাল বের করে হাতটা মুছল ও। তারপর আবার ফিরে তাকাল ফেলে আসা বিল্ডিংটার দিকে। যেখানে একটু আগেই একটা হত্যাকান্ড সংগঠিত হয়েছে।
হ্যা। হেরে গেছে ও নিজের কাছে। নিজের জীবনের কাছে। ইচ্ছে না থাকলেও কাজটা করতে হয়েছে ওকে। কারন ওর কাছে বন্ধুত্বের চেয়ে নিজের জীবনটা বেশী প্রিয়।
হ্যা, ও একটা স্বার্থপর।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ৮:৪৫