একেতো রাতে ভালো ঘুম হচ্ছেনা, তার উপর সাত সকালেই তাদের হই হুল্লোড়ে মেজাজটা খিঁচড়ে যায়। প্রতিদিনই এমনটি হয়। কাহাতক সহ্য হয়। আজ মনে হচ্ছে একটা হেস্তনেস্ত করতেই হবে। আশ্রয় দিয়েছি বলে এমন মাথায় চড়ে বসবে? এ কেমন কথা? নেমকহারাম! মনে মনে বিড়বিড় করি।
দুপুরে বিশ্রাম নেবার জো নেই। তলু, মলুদের হই হুল্লোড়ে মাথা ধরে যায়। মা, বাবার অনুপস্থিতিতে তারা লাগামছাড়া শয়তানি করে। ঘরে ফিরে মা'টা তবু জিজ্ঞাসা করে তলু, মলু বেশী দুষ্টূমি করোনি তো। এমন বদমাইশ বাচ্চাগুলো! কি নিরিহ ভাবে বলে, " না মা, দুষ্টুমি করিনি"! বাবাটার কথা শুনলে হাড়-পিত্ত্বি জ্বলে যায়। " আহা! বাচ্চারা তো একটু আধটু দুষ্টুমি করবেই"। একটু আধটু? হুহ! মনে হয় গলা টিপে ধরি।
নিজের পায়ে নিজেই কুড়োল মেরেছি। নতুন দম্পতি দেখে আশ্রয় দিয়েছি। আদর, যত্ন করেছি। প্রচন্ড গরমে যখন সবার প্রান ওষ্ঠাগত, তখনও তাদের হাওয়া, পানির খেয়াল করেছি। জমজ দুটো হবার পর অতি আহ্বলাদে নামকরনও করেছি। তলু আর মলু। কুম্ভকর্ণ নাক কুঁচকে বলেছেন, আদিখ্যেতা! আমি পাত্তা দিয়েছি? ঐ যে টিভি সিরিয়ালের জমজগুলোর নামই রেখেছি। আর এখন তারা স্বগুষ্টি আমাকেই ঘর ছাড়া করার মতলবে আছে। এ জন্যই প্রবাদ আছে। " কারো ভালো করতে নেই"।
আমার দক্ষিনের বারান্দার সামনে রোজ তলু, মলু নোংরা করে রাখে। বুয়া ঝাড়ু দেবার সময় গলা ছেড়ে গজগজ করে, " রোজ রোজ হেতেগো গু সাফ করন লাগপে ক্যা? চিৎকার কোরোনা বুয়া। আর গু গু করবেনা, বলো ময়লা। আমি ওপরে ওদের হাই কমোডের ব্যাবস্থা করে দিবো। ঐ দিবো দিবো করে আর দেয়াও হচ্ছেনা আর বুয়ার বানী ও গলার স্বরও কমছেনা। রাতে তাদের পারিবারিক গাল-গল্প, আলাপ-আলোচনা এতো উচ্চস্বরে চলে যে আমি ইদানিং বাধ্য হয়ে টিভি দেখা শুরু করেছি। তবুও টিভির শব্দ ছাড়িয়ে মাঝে মধ্যেই ওদের গলা শুনতে পাই। এই ছাড়ো তো! বেশরম বাচ্চাদের চোখে পড়েনা? " আলেপ্পেয়ে মিনসে! তোমার জন্য আমার জীবন ছাড়খার হয়ে গেলো! আছো তো শুধু সারাদিন ঘুরে বেড়াতে আর আন্ডেপিন্ডে গিলতে"! এই! এই! খাবার খোঁটা দেবেনা কিন্তু!" ইস! কি আমার মরদরে! খাবার খোঁটা দেবোনা? বাচ্চাগুলোও তো হয়েছে বাপেরই মত নিমকহারাম"! একটাও যদি কথা শোনে! ঝেটিয়ে বিদেয় করবো বলে দিলেম"!
আচ্ছা মলু, মা সব সময় এতো জল্লাদের মত ঘাউ ঘাউ করে কেনোরে?
মা হলে এরম করতে হয়" বিজ্ঞের মত বলে মলু"। দেখিসনা এ বাসার আন্টি কেমন চিৎকার করে?"
হুম! কিকমু আর আঙ্কেলটা বাবার মতই চুপ মেরে থাকে"। তাইনা?"
চুপ না থাকলে ক উপায় আছে? ঝেটিয়ে বিদেয় করে দেবেনা???
আতংকে হাত পা ..... মা কি সত্যি সত্যি আমাদের বিদেয় করে দেবে?"
দেবেই তো! তুই আলাদা বাড়ি করতো তলু, আমিও করবো ভাবছি।
সেদিন প্রচন্ড গরমে রাতে মা আমাদের ঘর থেকে বের করে দেয়নি? সারা রাত আমরা বারান্দায় কাটালাম।
বাড়ি করতে হলে ভালো লোকেশন তো পেতে হবে? বাড়িওয়ালি কেমন তাও দেখতে হবে?
সব তো আর আন্টির মত না। আন্টি যতই মেজাজী হোকনা কেনো, মনটা কিন্তু নরম আছে"।
ওদের আলাপ শুনে মনটা দ্রবিভূত হয়ে যায়। আহারে! ওরাতো তবুও আমার মন বুঝতে পেরেছে। এতো বছর যার সাথে ঘর-সংসার করলাম সেই কি কোনদিন বলেছে, " আহা! মেজাজী হলেও আমার বউটা মায়াবতী"।
থাক ওরা! হলোই বা আমার বারান্দা নোংরা! হলোইবা ওদের কিচির মিচির শুনে ঘুমের ব্যাঘাত! নুন না খেলেও ওরা আমার সাথে নেমক-হারামি তো করছেনা। একটি লাইটের শেড দখল করে ঘর বানিয়ে আছে। একটি ভেন্টিলেটারে বসে ওদের প্রাতকম্ম করছে। তবুও ওরা আমায় বোঝে, ভালোবাসে। থাক তলু, মলু আর ওদের মা বাবাটা!
তলু মলুর ছোট্ট বাসা দেখতে যদি চাও
আমার বাসায় এসে তবে একটু ঘুরে যাও"