এর আগে দিল্লী এসে লালকেল্লা দেখা হলেও লাইট এন্ড সাউন্ড শো প্রোগ্রামটি দেখা হয়নি সময়-সল্পতার জন্য। এবার প্ল্যান করেই এসেছিলাম যে লালকেল্লা দেখার মত আর তেমন কিছুই নেই। বেশীর ভাগ অংশ জুড়েই আর্মির দখলে। তাই লাইট এন্ড সাউন্ড শো দেখবোই দেখবো। এটা দেখানো হয় সন্ধ্যা ৭টা থেকে ৮টা পর্যন্ত হিন্দিতে, ৮টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ইংলিশে। বিকেল সাড়ে তিনটাতে রওনা দিলাম। জামা মসজিদের সামনেই লালকেল্লা। কিন্তু সেখানে পৌঁছাতেই বিকেল ৫টা সাড়ে ৫টা বে্জে গেলো। রাস্তায় প্রচন্ড জ্যাম।
লালকেল্লায় পৌঁছে টিকিট কেটে বাইরের বিশাল পরিখার ধারে কিছুক্ষন বসে থাকলাম। এক কালে এই পরিখা যমুনার জলে পরিপূর্ণ থাকতো। এখন শুখনো। ঘাসের জঙ্গলে ভর্তি। আস্তে আস্তে ভিতরে গেলাম। প্রাসাদের অলিন্দের দুধারে দোকানের সারি দেখে অবাক হলাম.
। শুধু দেওয়ানে আম দেখা যায়। তাও লোহার শিকল দিয়ে ঘেরা। আরো হাটতে হাটতে একটি খোলা মাঠের কাছে গেলাম। হয়তো কোনো কালে এখানে বাগিচা ছিলো। এখন শুধুই ঘাস। তার এক পাশে খোলা আকাশের নিচে কয়েক সারি বেঞ্চ পাতা আছে। সবাই ওখানে বসছে দেখে আমরাও গিয়ে বসলাম। সামনে দেওয়ানে খাস, মমতাজ মহল। এর পিছনেই যমুনা নদী। পূর্নিমার চাঁঁদ তখন দেওয়ানে খাসের উপরে উঁকি দিচ্ছিলো। দেওয়ানে খাসের পাশে সম্রাট আওরঙ্গজেবের তৈরী মোতি মসজিদ।
দেওয়ানে খাস। সম্রাটের আমলে এখানে খাস দরবার বসতো। এখানেই ছিলো সেই ঐতিহাসিক ময়ুর সিংহাসন। আজ শুরু এক ইটের খাঁচা ছাড়া এটা আর কিছুই নয়।
মমতাজ মহল।
মোতি মসজিদ।
নহবতখানা।
সামনে কোনো স্ক্রিন নেই। বুঝতে পারছিলাম না কি ভাবে কি দেখবো। এমন সময় চারিদিকের সব আলো নিভে গেলো। মাঝ খানের মহল থেকে গমগম স্বরে ভেসে এলো আমি মহাকাল। আমি সব সময়ের সাক্ষী। এই সেই লালকেল্লা, যেখানে সব সময় মানুষের কলরব, আরজি, বিচার, আর্তি, নুপুরের নিক্কন, সরাবের নহর বয়ে যেতো আজ সে শুধুই সময়ের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে । আজ এখানে আঁধার। কিন্তু এক সময় এখানে ছিলো মানুষের ঢল। ধারা-বর্ণনার সাথে সাথে দেওয়ানে খাস,
মমতাজ মহল, কখনো মোতি মসজিদ বিভিন্ন রঙের আলোতে ঝলমল করে উঠছিলো।
সেই সঙ্গে যমুনার জলের কুলকুল ধারার শব্দ,মিনা বাজারের মেয়েদের কাঁচভাঙ্গা হাসি,কলরব, বাইজীদের নুপুরের নিক্কন, গজলের সুর...... সময় যেন জীবন্ত হয়ে উঠলো। আর আমরা সব স্তব্ধ, পাথর। ঘোড়ার খুঁরের শব্দ এতোটাই বাস্তব মনে হচ্ছিলো যে আমরা শিউরে উঠছিলাম। একে একে দিল্লীর পতন পর্যন্ত বর্ননা করে ১ ঘন্টার অনুষ্ঠান যখন শেষ হলো। খোলা আকাশের নিচে হিমে আমাদের মাথা তখন জমে গিয়েছিলো। ফিরে এসেও পুরো রাত মুগ্ধতার, কষ্টের রেশ রয়ে গেলো।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:৫৩