(১)
প্রায় শুকনো বিলের কাদা জলে-
ধ্যানমগ্ন বক
আর মাছেদের দীর্ঘশ্বাস মিশে আছে
আর দূরের বাঁশ বাগানের ওই নিঃসঙ্গ বিদায়ী আলো সেও ঝুলে আছে।
এই স্থানে,কচুরীপানার ফুলগুলি-না ডাকে ভ্রমর
-না মাকড়
তবুও আমার ইচ্ছা করে,খুব ইচ্ছা করে,-ফিরে যেতে
নির্জন বিকেলে,
চলন বিলের মেঠো পথে।
আমি হয়তো পা বিছিয়ে বসতে চাইবো ভেজা ঘাসের বিরহীনরম বুকে
আমি হয়তো খুঁজবো শিববাড়ি
পাল পাড়ার ধূসর মেঠো পথ
একটি মন্দির অথবা ভাগের বাড়ি।
কি অদ্ভুদ নাম-ভাগের বাড়ি!সবাই ভাগ পায় বুঝি-
মরণের পর,
আমিও কোন একদিন ভাগ পাবো-ওই বাড়ির।
কত সমাধি ভাসিয়ে নিল বেনোজল
কে কার হিসাব রাখে?
যে যায় ভাগের বাড়ি,সে কি ফিরে আসে?
তবুও ইচ্ছা হয়-ফিরে আসুক তারা
যারা কিনা
যাওয়ার সময় নিয়ে গিয়েছে আমার কৈশোর।
(২)
মায়াবী সন্ধ্যার মায়াজালে
জড়িয়ে পরে শরতের মিষ্টি বিকেল।
বিকেল,ও বিকেল হারিয়ে যেওনা-সন্ধ্যার মায়াজালে
আমি শুধু তোমাকে দেখবো বলে
সেই কতদিন ধরে বসে আছি,ভেজা ঘাসে
অপেক্ষা…..অপেক্ষা……
তবুও ওই বিকেল
হারিয়ে ফেললো নিজেকে-সন্ধ্যার মায়াবীনরম আঁধারে।
শুকতারাটি জ্বালিয়ে দেয় কুপি-প্রতিটি ঘরে
আর সেই সাথে নিঃশব্দে নেমে আসে কুয়াশা
সেই কুয়াশায় জ্যোৎস্না ভাসিয়ে দেয় তার স্বপ্ন।
বাতাসে বুঝি এলাচের ঘ্রাণ-সন্দেশের নরম পাক
বড়মামা নাড়ছে কাঠের হাতা,
লোহার কড়াই-
এলাচ দানার মিষ্টি ঘ্রাণ-
গাঢ়ো হয়ে আসা ক্ষির-ঘুরছে,দুলছে
সন্দেশ-সেও হারিয়ে গেলো কোন এক সন্ধ্যার আঁধারে।
সবকিছু এড়িয়ে,সবার দৃষ্টি ফাঁকি দিয়ে
নদী আমায় ডাক দেয়,-আয় আমার কাছে আয়।
বালুকণা হেসে উঠে চাঁদের আলোয়;
স্থির হয়ে আছে ওই নদী
ততোধিক স্থির জলরাশি
স্থির ওই জেলেডিঙ্গি,
আর এক জন্মে আমি হয়তো ফিরে আসবো এই স্থানে
-চিত্রশিল্পী হয়ে
পটে উঠে আসবে মায়াবী সন্ধ্যা
তবে ভ্যানগগ হতে চাইবোনা
জয়নুল আবেদিন
কিম্বা শাহাবুদ্দিন
এই ঢের,
ক্যানভাস জুড়ে থাকবে গ্রাম বাংলার সন্ধ্যার নির্জনতার রঙ
দিগন্তের নিকষ আঁধার
আর জ্যোৎস্নার আলো,
শুকতারা কি হাসছে?
(৩)
এক সময় শুকতারাটি চলে যায়
আমি উঠতে থাকি কাঠের সিঁড়ি বেয়ে,
ঘুমপরীর দেশে হারিয়ে যেতে যেতে
শুনি ঝরাপাতার শব্দ-টুপ….টুপ….-টিনের চাল।
রাতের নিরবতাকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিতো অদ্ভুদ এক শব্দ
দিদা বলতো,ঘুমো বাপ।ওই যে এলো
মা বলতো-বাঁশে বাঁশে ঘষা খেলে এমন ধারার শব্দ হয়।
কোন রাত বয়ে আনতো কুহুকের বিষণ্ণ ডাক
কিম্বা ওই লক্ষ্মী পেঁচাটিকে
যে কিনা বসে থাকতো গাব গাছের ভাঙ্গা ডালে-জ্যোৎস্না ভেজা রাতে।
মাঝ রাতে মাঝে মাঝে নিশি পেতো আমাদের
নিচে নেমে আসতাম একসাথে
ঠিক সেই সময় মাটির উঠোন নিজেকে সাজিয়ে নিতো জ্যোৎস্না দিয়ে
আমরা সন্ধান পেতাম রপকথার গল্পের নদীর।
(৪)
শিউলি গাছটি আজও কি আছে?
আজও কি ফুল ঝরে?
যাওয়া হয়নি কতদিন?
বাঁশ ঝারের দাতন গাছ
আর
চায়ের সুবাস ডেকে আনতো প্রতিটি সকালকে
ভাঙ্গা বাজার
জেলে নৌকো
আর মাছরাঙ্গার ধ্যানের ফাঁক গলে
হারিয়ে গেলো সময়
হারিয়ে যায় বুঝি?……কৈশোর…..
২০/১০/২০১৮
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে অক্টোবর, ২০১৮ রাত ৯:৪৬