somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রক্তাক্ত প্রান্তর(প্রথম পর্ব)

০১ লা মে, ২০১৬ রাত ৮:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মোর্শেদ বিছানায় বিমর্ষ হয়ে শুয়ে থাকে।ঘুম আসতে চায়না।প্রতিদিন ব্লগে লিখা শেষ করে তারপর ঘুমাতে যায়।আজ ব্লগ খুলেই অবাক হয়ে যায়।গতকাল কাদের মোল্লাকে নিয়ে তার লেখায় কয়েকজন বিশ্রী বিশ্রী মন্তব্য করেছে। একজন তো অতি উৎসাহী হয়ে হত্যার হুমকি পর্যন্ত দিয়েছে।মোর্শেদ ভেবে পায়না স্বাধীন বাংলাদেশে এত রাজাকার প্রীতি কোথা হতে আসে।শেষ পর্যন্ত পিয়াল ভাইকে ফোন করে।
-হ্যালো পিয়াল ভাই,জেগে ছিলেন?
-কি হয়েছে বল।
-ভাবছি ব্লগে লিখা ছেড়ে দেব।
-কেন ?
-আপনি কি আমার গতকালের লিখা পড়েছেন?
-পড়েছি।খুব ভাল হয়েছে।আসলে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় যারা দেশ বিরোধী ভূমিকায় ছিল,তারা এখন আমাদের সমাজে সুপ্রতিষ্ঠিত।রাজনৈতিকভাবে বল আর ব্যবসা-বাণিজ্যে বল ,ওদের শিকড় অনেক গভীরে। আওয়ামিলীগ ক্ষমতায় না থাকলে ওদের আর বিচার করা সম্ভব হতোনা।
-কি সব মন্তব্য করেছে কিছু ব্লগার আমার লিখাটাতে।একজন তো হুমকী পর্যন্ত দিয়েছে।
-ধুস,ওই সব ভুলে যাতো।আর ঘুমিয়ে পড় আগামীকাল অফিসে দেখা হবে।তখন আলাপ হবে।

বড়পা ঘুম থেকে ডেকে তোলে মোর্শেদকে।
-কিরে অফিস যাবিনা?
মোর্শেদ রেডি হয়ে নাস্তা খেতে আসে।ছোট বোন শীলা কলেজ যাবার জন্য তৈরি হয়ে বসে আছে।মোর্শেদ অফিস যাবার সময় বাংলা কলেজে নামিয়ে দিয়ে যায় বোনকে।শীলা অনুযোগ করে ওর দেরী হয়ে যাচ্ছে বলে। নাকে মুখে দিয়েই মোর্শেদ বোনকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে।
কাওরান বাজারে মোর্শেদের অফিস।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে সাংবাদিকতায় পাশ করেছে।ওর পত্রিকায় ও জুনিয়র স্টাফ রিপোটার।অফিসে ডুকে ডেস্কে বসে। পিয়ন রফিক খবর দেয় ওকে সম্পাদক ডেকেছে। সম্পাদকের ঘরে যায় ।
-মোর্শেদ এ সপ্তাহের বিনোদন বার্তায় তুমি একটা ফিচার দেবে।মাশরাফিকে নিয়ে লিখবে।ছবির জন্য পিয়ালের সাথে যোগাযোগ করো।
ডেস্কে গিয়ে বসে ভাবে-এতদিন পিয়াল ভাই খেলোযাড়দের নিয়ে ফিচার লিখতো,এবার ওকে কেন সম্পাদক এই দায়িত্ব দিল।ঠিক বুঝে উঠতে পারেনা।পিয়াল ভাই অফিসে নেই।গিয়েছে কাদের মোল্লার বিচার সংক্রান্ত রিপোর্ট সংগ্রহের জন্য।বিকেলে ফিরবে।বিকেলেও অফিসে আসেনা পিয়াল।মোর্শেদ অফিস থেকে বেরিয়ে টি এস সিতে চলে যায় দীপার সাথে দেখা করতে।দীপার সাথে দেখা না হলে ওর মনটা বড় অস্থির হয়ে পড়ে।দীপা বরিশালের মেয়ে।কেমিস্ট্রিতে পড়ছে।দীপার রুমমেট লাভলী আপার সূত্রে দু’জনের পরিচয়।

ঘাস ছিড়তে ছিড়তে দীপা মোর্শেদকে প্রশ্ন করে মন খারাপ কিনা।মোর্শেদ মাথা নাড়ায়।এজন্যই দীপাকে ভীষণ ভালবাসে মোর্শেদ।মুখ দেখেই দীপা ওর মনের খোঁজ পেয়ে যায়।
-আকাশের রঙটা দেখ।শেষ বিকেলের আলো কিভাবে ছড়িয়ে পড়েছে আকাশ জুড়ে।জানো আমি যখন নবম শ্রেণীতে তখন প্রায়ই এক বান্ধবীর বাড়িতে বেড়াতে যেতাম।ওদের বাড়ি হতে নদী ছিল খুব কাছে।বিকেলে আমরা দু’জন নদীর পারে গিয়ে বসতাম।নদীর পানিতে পা দিয়ে বসে চুপচাপ আকাশ দেখতাম।কোন কথা বলতাম না।সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত আলোর খেলা দেখতাম।
মোর্শেদ দীপার দিকে চায়।মেয়েটিকে যতই জানছে ততই অবাক হচ্ছে।সেও আকাশের দিকে চায়।শীতের শেষ বিকেল।ঢাকায় অবশ্য গরম পড়া শুরু হয়েছে।দীপার চুল উড়ে বাতাসে।আর অন্যরকম এক ঘ্রাণ এসে নাকে লাগে।মিষ্টি এক আমেজে মন ভরে যায় মোর্শেদের।
-আমাকে মাশরাফিকে নিয়ে একটা ফিচার লিখতে বলা হয়েছে।কি যে লিখবো ভেবে পাচ্ছিনা।এতদিন খেলোয়াড়দের নিয়ে পিয়াল ভাই লিখতেন।আজ থেকে আমার দায়িত্ব পড়লো।কি লিখবো বলতো?
-নেতৃত্বের গুণাবলী আর দেশের প্রতি ওর যে তীব্র ভালবাসা তার উপর লিখতে পারো।
দীপার আইডিয়াটা মোর্শেদের বেশ মনে ধরে।

রাতে আইডিটা ওপেন করে মোর্শেদ।ল্যাপটপটা বড় আপা কিনে দিয়েছে।দুলাভাই দুবাই থাকেন।প্রথম পাতায় পিয়াল ভাইয়ের একটা লিখা পেয়ে যায়।পিয়াল ভাই মুক্তিযুদ্ধ আর যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে ধারাবাহিক ভাবে লিখছেন।ব্লগে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির চেয়ে দিন দিন বিপক্ষের শক্তির লেখাই বেশী চোখে পড়ছে ওর।কেউ কেউ ইনিয়ে বিনিয়ে লিখছে এই কাদের মোল্লা সেই কাদের মোল্লা কিনা।অযথা বিতর্ক সৃষ্টির অপপ্রয়াস। এইসব লেখা চোখে পড়লে মোর্শেদ দাঁতভাঙ্গা জবাব দিয়ে মন্তব্য লেখে।আর তার উত্তরে লেখক ম্যাৎকার শুরু করে দেয়।যতসব ছাগলের দল।ওরা সম্ভবত একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের সদস্য।ওদের কেউ কেউ ধর্ম নিয়ে আবাল মার্কা লেখা পোষ্ট করে।আগে ব্লগ পড়ে যে মজা পাওয়া যেত এখন কেমন যেন পানসে হয়ে যাচ্ছে।ফেসবুক খুব দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।।

পরদিন অফিসে গিয়ে পিয়াল ভাইকে পেয়ে যায়।নিজের ডেস্কে গম্ভীর মুখে বসে আছে পিয়াল ।মোর্শেদ পাশে গিয়ে বসে।
-কোন সমস্যা পিয়াল ভাই?
-আর বলিস না।আমার মনে হয় এখানে আর থাকা হবেনা।
-কেন?
-এতো খেটে কাদের মোল্লার উপর একটা লেখা দাড় করালাম।এখন সম্পাদক বলছে এই অংশ বাদ দাও।ওই অংশ এভাবে লিখ।শালা ,সব জায়গায় জামাতের টাকা আর লবিস্ট কাজ করছে।আর আমরা কয়েকজন ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়াচ্ছি।দেখিস এই সব নিয়ে উল্টো আমরাই একদিন বিপদে পড়বো।
মোর্শেদ কোন উত্তর করেনা।চুপচাপ পিয়াল ভাইয়ের কথা শুনে যায়।ভাবে এই লোকটা কত ব্রিলিয়েন্ট ছিল।ডাক্তারি পাশ করে ডাক্তারি না করে লেখালেখির জগতে ডুকে পড়ে।বাংলাদেশের ,মুক্তিযুদ্ধ, শেখ মুজিব আর রাজাকারদের নিয়ে অনবরত লিখে যাচ্ছেন।এই লোকটার সংস্পর্শে এসেই ও ব্লগের জগতে পা দেয় আর মুক্তিযুদ্ধ আর বাঙালী চেতনা নিয়ে লেখালেখি শুরু করে।
-পিয়াল ভাই,আপনার সাহায্য লাগবে আমার।
-তোর জি মেইলে মেইল করে দিয়েছি কাল রাতে।মাশরাফিকে নিয়ে অনেক তথ্য আছে ওখানে।

আজ দীপা আকাশি রঙের শাড়ি পড়ে এসেছে।পাশাপাশি বসে তীব্র এক অনুভূতি টের পায় মোর্শেদ।সব যুবকেরই কি এমন অনুভূতি হয় প্রেয়সীর পাশে বসে।গল্প করতে করতে দীপা আড়চোখে চায়।
-তোমার ফেসবুকে দিন দিন মেয়ে বন্ধু বেড়ে যাচ্ছে দেখি।বেশ সুন্দর দেখতে তাদের।
-আমাকে কেউ রিকোস্ট পাঠালে একসেপ্ট করে নিই।
-দেখো বাপু।
গল্প করতে করতে সন্ধ্যা নেমে আসে।মোর্শেদের খুব ইচ্ছা হয় দীপাকে জড়িয়ে ধরবার।দীপা বুঝেই কিনা মোর্শেদের আরও কাছে ঘেঁষে আসে।দীপার শরীরী উত্তাপে মোর্শেদের ঘোর লাগে।আর সেই সময় দীপা ফিসফিস করে বলে-আমাকে চুমু খেতে পারো।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মে, ২০১৬ রাত ৮:৩৫
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখানে সেরা ইগো কার?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪






ব্লগারদের মাঝে কাদের ইগো জনিত সমস্যা আছে? ইগোককে আঘাত লাগলে কেউ কেউ আদিম রোমান শিল্ড ব্যবহার করে,নাহয় পুতিনের মত প্রটেকটেড বুলেটপ্রুফ গাড়ি ব্যবহার করে।ইগো আপনাকে কোথায় নিয়ে গিয়েছে, টের পেয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবং আপনারা যারা কবিতা শুনতে জানেন না।

লিখেছেন চারাগাছ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮

‘August is the cruelest month’ বিশ্বখ্যাত কবি টিএস এলিয়টের কালজয়ী কাব্যগ্রন্থ ‘The Westland’-র এ অমোঘ বাণী যে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এমন করে এক অনিবার্য নিয়তির মতো সত্য হয়ে উঠবে, তা বাঙালি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×