এ ক )
"আসেন ভাই! আসেএএএএন। মা খালা আসেএন। কাঁচা তরকারি আছেএএএ। কাঁচা তরকারি। নিয়ে যান।"
ভ্যান নিয়ে তরকারি বিয়াড়ি রফিক। প্রত্যেক সন্ধ্যর আগে। মফস্বল শহরের অপরিকল্পিত গড়ে উঠা ঘিঞ্জি এলাকার আঁকাবাঁকা রাস্তা ধরে উঁচু গলায় ডেকে বেড়াই। আঁকাবাঁকা রাস্তার হাজারটা মোড়। এক মোড় ঘুরতেই আরেক মোড়। একেক মোরের একেক ঘরের দুয়ার থেকে মা খালা ডাক দে। " অ তরকারি বিয়ারি কি আছেরে আজ? "
রফিক আদরে কণ্ঠে বলে উঠে। "খালা, মৌসুমের তরকারি আছে সব। পঠল, করালা, ঝিঙে, কদু সবি আছে। সস্তায় নিয়ে নেন। "
রফিকের অনেক বয়সী মেয়ের দেখা হয়। কাউকে ভাবি ডাকে কাউকে খালা কাউকে ডাকে আপা, মা। রফিকের ডাকার ধরণ অনেক। ভাবি খালাম্মরদের সাথে যত শান্ত করে কথা বলা যাবে। এদের কে তরকারি বিক্রি করাও তত সহজ হয়ে উঠে। রফিক নিয়মিত যাওয়া আসায় এলাকার বাসিন্দারাও তার নাম মুখস্থ করে পেলছে।
দু ই )
"আইচ্ছা রাইখেন তো। কথা কইতে মন চাইনা আপনার সাথে। আসবেন আসবেন বলে আইসেন না কত যে বছর হচ্ছে। তা কি জানা আছে আপনার। যাওয়ার আগে একটা লাঠি হইলেও ধরাই দিয়া যাইতেন। মনটারে বুঝাতে পারতাম। " জামাইয়ের সাথে এই সেই কথা নিয়মিত হয় রেহানার।
রেহানা। শাশুড়ী আর একজন ননদ নিয়েই তার সংসার। প্রবাসী জামাই রহিম উদ্দিন কাতারে থাকে । বিয়ের দুই সপ্তাহ পরেই কাতারে পাড়ি দিয়েছে সে। অর্ধদিবস রেস্টুরেন্টে কাজ করে বলে বাদবাকি সময় বউকে দে।
রেহানা জামাইয়ের সাথে কথা বলা শেষ করেই ছাদ থেকে শুকনো কাপড় আনতে যাবে। এমন সময় বিয়ারি রফিকের হাঁক। "আসেন ভাই! আসেএএএএন। মা খালা আসেএন। কাঁচা তরকারি আছেএএএ।"
রফিকের সাথে রেহানার হাবভাব গলায় গলায়। প্রতিদিন কিছু না কিছু নেওয়া হবেই তার। মিষ্টি মিষ্টি কথা বলা তার স্বভাব। রফিক ও কম যায় না। "ভাবি একলা আর কত থাকবেন। ভাইয়াকে চলে আসতে বলেন। লাঠি দুএক টা তো না থাকলে সংসার জীবন পানসে যাবে।"
রেহানাও টুকটাক কিছু না বলে রফিক কে ছাড়বেনা। "তো রফিক ভাই রিনা ভাবি কেমন আছে। আজকাল প্রতিদিন চলে নাকি। খেয়াল করলাম ভ্যান টা ধীরে ধীরে চালাচ্ছেন। "
রফিক হেসে উঠে। দুজনে এভাবে কথা বলে দশ-পনেরো মিনিটের সময় পার করবে। তারপর রফিক বলে উঠে। " ভাবি অনেক টাকা তো পাওনা রেখে দিছেন। কবে যে দিবেন। কত হইছে তা কি খেয়াল রাখেন। এইসব কষ্টের মাল বুঝা করে আনি আপনাদের জন্য। আর আপনারা মুখে মধু নিয়া কথা বলে আমারে ফকির বানাই দিচ্ছেন গো। আমার পাওনা টাকাগুলো কবে দিবেন। কাল থেকে মাল আর পাবেন না। বলে দিচ্ছি।" শুধু এর রেহানা না। আরো অনেকে রফিক থেকে বাকিতে তরকারি নে। টাকা দেয়ার কথা তারা ভুলেই যাই। কিন্তু রফিক এদের সাথে কথা বলে তরকারি বিক্রি করেই জীবনের সুখ খুজে পাই।
তি ন )
আর এভাবেই রফিক তরকারি বিক্রি করে দুই ছেলে মেয়ে আর রিনা মিলে গরিবী সংসারটা চালিয়ে যাচ্ছে। অন্যের মুখে খাবার যুগান দিয়ে নিজের ঘরে বাসিপচা তরকারি খেয়ে জীবনটা সুখেই যাচ্ছে তাদের। সন্তানদুটো সপ্তাহে দুএক দিন ভালো মাছমাংস পাইলেও বাকি দিনগুলো বাসিপচা তরকারি দিয়েই তাদের খাবার চলে। ছোট্ট একটা পাকঘর আর একটা রুম নিয়েই তাদের সংসার। দিব্যি কেটে যাচ্ছে দিন। সুখের মাঝে অজস্র দুঃখের গল্প নিয়ে।