মেধাবীদের পীঠস্থান বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) প্রশাসনে দলীয়করণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশের ৩৪ নম্বর ধারায় শিক্ষক-কর্মচারীদের রাজনীতি করার বৈধতা নেই। কিন্তু ক্যাম্পাসে জোরদার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন দলের অনুগত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গড়া ‘বঙ্গবন্ধু পরিষদ’। জানা গেছে, এই পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কামাল আহম্মদ একজন ডিপ্লোমা প্রকৌশলী, তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
বুয়েট শিক্ষক সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘রেজিস্ট্রার নিয়োগের বিষয়টি আসলে টেস্ট কেস। এই প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন হলে বুয়েট প্রশাসনে দলীয়করণ শুরু হবে। আর এতে বুয়েটের পরিবেশ ও ঐতিহ্য ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যাবে।’ জানতে চাইলে বুয়েটের উপাচার্য নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, প্রশাসনে দলীয়করণ হচ্ছে না।
সহ-উপাচার্য হাবিবুর রহমান বলেন, আগের প্রশাসনগুলো অনেক বেশি দলীয় ছিল। বর্তমান প্রশাসনের বিরুদ্ধে দলীয়করণের অভিযোগ সত্য নয়।
ডিপ্লোমাধারী ব্যক্তি হচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার: ২০১০ সালের জুনে রেজিস্ট্রার মো. শাহজাহানের মেয়াদ শেষ হয়। নিয়ম অনুযায়ী কম্পট্রোলার মো. জসিম উদ্দিন আকন্দকে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ৩১ আগস্ট নিয়োগ পাওয়ার এক ঘণ্টার মধ্যেই উপাচার্য নজরুল ইসলাম ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার হিসেবে উপরেজিস্ট্রার কামাল আহম্মদকে দায়িত্ব পালনের জন্য অফিস আদেশ জারি করেন। এরপর থেকে দুই দফা রেজিস্ট্রার পদে আবেদন চেয়ে বিজ্ঞাপন দিলেও প্রতিবারই নানা কারণ দেখিয়ে কর্তৃপক্ষ নিয়োগ-প্রক্রিয়া বন্ধ রাখে।
সম্প্রতি আবার পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে। তাতে রেজিস্ট্রার পদের জন্য কামাল আহম্মদও আবেদন করেছেন। সূত্র জানায়, রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব পালনের জন্য উপরেজিস্ট্রার হিসেবে অন্তত পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হয়। কিন্তু কামাল আহম্মদ উপরেজিস্ট্রারের দায়িত্ব পান ২০০৯ সালের ৩০ জুন। অর্থাৎ মাত্র এক বছর নয় মাস ধরে তিনি এ দায়িত্ব পালন করছেন।
সূত্র জানায়, রেজিস্ট্রার নিয়োগ-প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে গত পয়লা ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট কামাল আহম্মদকে আপগ্রেডেশন পদোন্নতি দেয়। সেখানে উপরেজিস্ট্রার হিসেবে তাঁর নিয়োগ দেখানো হয়েছে ২০০৪ সালের ১৬ মার্চ থেকে। নথি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ওই সময় কামাল আহম্মদ ছিলেন প্রশাসনিক কর্মকর্তা। তিনি সহকারী রেজিস্ট্রার হিসেবে পদোন্নতি পান ২০০৫ সালের ২৯ জুন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেশের সেরা একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের সনদে সই করবেন একজন ডিপ্লোমা প্রকৌশলী—এটা মেনে নেওয়া যায় না।’
উপাচার্য বলেন, বিজ্ঞাপন দেখে যেকোনো ব্যক্তি আবেদন করতে পারেন। সেগুলো দেখার জন্য বাছাই কমিটি আছে। কামাল আহম্মদ যোগ্যতাসম্পন্ন না হলে সিলেকশন কমিটি তাঁকে বাদ দেবে।
আপগ্রেডেশন পদোন্নতির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সহ-উপাচার্য বলেন, সিন্ডিকেট নিয়ম অনুযায়ী তাঁকে উপরেজিস্ট্রার হিসেবে পদোন্নতি দিয়েছে। পছন্দের ব্যক্তিদের দিয়ে নিয়োগ কমিটি: অভিযোগ উঠেছে, বর্তমান প্রশাসন এসব কমিটি করছে নিজেদের পছন্দের লোকদের দিয়ে। আর প্রথমবারের মতো উপাচার্যের পরিবর্তে কয়েকটি কমিটির সভাপতি হয়েছেন সহ-উপাচার্য হাবিবুর রহমান।
সূত্র জানায়, সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ডের (এসএসবি) সভাপতি সহ-উপাচার্য। কমিটিতে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকেরা আছেন। নির্বাচনী বোর্ডের সভাপতি উপাচার্য। আর এসএসবির তিনজন সদস্য এই কমিটির সদস্য হিসেবে আছেন। অর্থাৎ একই ব্যক্তিদের দিয়ে গঠন করা হচ্ছে এসব কমিটি।
শিক্ষকদের অভিযোগ, উপাচার্য ও সহ-উপাচার্যের অনুগতদের নিয়োগ ও পদোন্নতির সুবিধার জন্যই পছন্দের ব্যক্তিদের দিয়ে এসব কমিটি করা হয়েছে।
কমিটিতে পছন্দের ব্যক্তি রাখার বিষয়টি অস্বীকার করে উপাচার্য বলেন, এসব কমিটিতে কারা থাকবেন সে বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে কিছু বলা নেই। আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে সহ-উপাচার্য ছিলেন না। বর্তমানে সহ-উপাচার্য থাকায় তাঁকে কয়েকটি কমিটির সভাপতি করা হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু পরিষদের সিদ্ধান্তে হবে নিয়োগ: আওয়ামী লীগ সমর্থক কর্মকর্তাদের নিয়ে ২০০৬ সালে বুয়েটে গঠিত হয় বঙ্গবন্ধু পরিষদ। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষক-ছাত্র-কর্মচারীদের রাজনীতি করার বৈধতা বুয়েট অধ্যাদেশে দেওয়া হয়নি। তারপরও কর্মকর্তাদের এই সংগঠনটি প্রকাশ্যে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে, নিয়মিত বৈঠকও করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
সূত্র জানায়, ২০১০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর বুয়েট ক্যান্টিনে পরিষদের কার্যনির্বাহী পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বুয়েটের প্রশাসনিক পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু পরিষদের সুপারিশ মানতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানানোর সিদ্ধান্তও হয়। যোগাযোগ করা হলে পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কামাল আহম্মদ বলেন, এ বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না।
সূত্র